somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ ভালোবাসার জলকণা.....

১৮ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ১২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-হ্যালো।অর্নব ভাই?
-আরে নীলা!কি খবর বল?কেমন চলছে সময়?
-ভালো চলছে ভাই।আপনার?আপনার তো কোন খোজ ই নাই!
-কোম্পানি পয়সা দিয়ে কিনে নিয়েছে,বুঝছ?গাধার মতন কাজ করায়,আমাদের কিছু করার নাই।মেশিন বানায় ফেলছে।
-তাইতো দেখা যাচ্ছে।আগেতো মাঝে মাঝে আসতেন,এখন একদমই না।কতদিন লেকের পারে একসাথে বসে আড্ডা দেইনা!
-হুম,মনটাও বুঝি মরে যাচ্ছে।আর তাছাড়া...আচ্ছা বাদ দাও।তোমার পড়াশোনা কেমন চলছে গো কন্যা?
-আপনি যা বলেন না!চলছে।এখন বন্ধ।শীতের ছুটি।
-ও!তাহলেতো বাড়ি যাচ্ছ!
-কেন?থাকলে আসতেন নাকি?
-এ্যা!না,ইয়ে মানে...নাহ,আমার আর সময় কোথায় বল?তা কবে যাচ্ছ?
-আসলেইতো,আপনার আর সময় হল কই?আমি এইবার একটু ঘুরে বাড়ি যাচ্ছি।কক্সবাজার যাব।রাতের বাসে করে ডাইরেক্ট কক্সবাজার।সারাদিন সাগর পাড়ে কাটিয়ে আবার রাতের বাসে চড়ে বাড়িতে।একদিনে সাগর দেখা।
-একদিনে সাগর দর্শন প্রকল্প!ভালোইতো।তোমার সঙ্গী কে কে?গ্রুপ পুরাটা?
-......উম, আপনি যাবেন?একদিনের ছুটি নিলেন।একসাথে সমুদ্র দেখলেন। পরদিন ফিরে অফিস করলেন?
-কিযে বল।এভাবে হয়?যাচ্ছ,যাও।একসাথে সমুদ্র দেখা অন্য কখনও..
-সত্যিই যাবেন না?
-নাহ।
-........
-মন খারাপ টা পুষে রাখো।সমুদ্র পারে গেলেই দেখবে মন ভাল হয়ে গেছে।
-কে করবে?সমুদ্র কি আপনার মতন মজা করে কথা বলবে নাকি?
-না,সমুদ্রের ঢেউ বলবে।সমুদ্রের অর্নব বলবে। রাখছি নীলা।ভালো থেকো।বাই।
-জি,বাই।

চোখের জলের কনা গুলো মুছে নিল নীলা।কেন এগুলো বেরোল সে জানে।যা চেয়েছিল,তা হয়নি।যাকে চেয়েছিল,সে সাড়া দেয়নি।অবশ্য,আবদার টাও অন্যায় ছিল,বলতে হয়।বান্ধবীর হাসবেন্ডের বন্ধু সে।একসাথে থাকাতে মাঝে মাঝেই জম্পেশ আড্ডা জমে।সেই হিসেবে পরিচয়ের পাখনা মেলা।এইতো!এটাকে সে একা চাইলেই ভালবাসায় রুপান্তর করতে পারেনা।
সবাই হোস্টেল ছেড়ে চলে যাচ্ছে।নীলা বের হল আজ।কাঁধের বড় ব্যাগ টাতে প্রয়োজনীয় সব জিনিস নিয়ে নিয়েছে।সে যাবে কক্সবাজার।অনেক নাম শুনেছে যায়গাটার।কখনই যাওয়ার সুযোগ হয়নি।এইবার সে সুযোগ যোগাড় করে নিচ্ছে।বাসায় জানায়নি,ছুটি কবে থেকে শুরু।রাতের বাসে চড়ে ডাইরেক্ট কক্সবাজার।বাস থেকে নেমে সোজা সমুদ্র পারে।সারাদিন সমুদ্র পারে কাটিয়ে রাতের বাসে উঠে আবার চিটাগাং।সেখান থেকে বাড়ির বাস ধরবে।অর্নব ভাই সাথে থাকবে এরকম একটা ইচ্ছে থেকে সে প্ল্যান টা করেছিল।কিন্তু এখন সে একাই বেরোচ্ছে।একা কোন সমস্যা তার নজরে পড়ছে না,যদি না বাস গুলো ঠিক ঠাক মত চলে।অনেকদিন ধরেই একটা সময় কাটনোর জন্য এই প্ল্যান টা করছে।এইবার তবে...

বাসের চাকা ঘুরতে শুরু করল।জানালার পাশেই সিটটা পেয়েছে নীলা।গ্লাস টা খোলা ছিল।টেনে লাগিয়ে দিল।ঢাকার রাস্তার জ্যাম আর সহ্য হচ্ছেনা।আস্তে আস্তে ঢাকার কোলাহল দূরে ফেলে এল বাস।এবার জানালার গ্লাসটা পুরোই খুলে দিল।বাতাসে চুল উড়াতে তার অসম্ভব ভাল লাগে।সিটে হেলেন দিয়ে আধশোয়া হয়ে রাতের অন্ধকার উপোভোগ করতে লাগল।আর তাড়াতে লাগলো মনের দুঃখ টাকে।কেন সে এমন করে বলে বসল!এভাবে কি হয়?সে জানেইনা,অর্নব ভাই কাউকে পছন্দ করে কিনা,তাকে খারাপ লাগে কিনা! রাতের বাতাস ঘুম নামিয়ে দিল চোখে।



ভোরের সূর্যটাকে নীলা আলিঙ্গন করল কোমল হাতে।কি চমৎকার লাল টকটকে ভোরের সূর্য!কোন তপ্ততা নেই!কি নিস্পাপ তার রূপ!!একটা রিকশা ডেকে সী বিচ ভাড়া করে উঠে পরল।কিছুক্ষনের মধ্যেই নীলা আর সমুদ্রের মাঝে কেবল এক পা ব্যাবধান।আস্তে করে পা রাখল নীলা,সাগরে।এই প্রথম নোনা জলে পা ভেজালো।শরীরটা শির শির করে উঠল।



কক্সবাজারের মাটিতে পা রাখল অর্নব।বাস জয়ম ঠেলতে ঠেলতে এসে পোউছুলো ১১টায়।অনেক দেরী হয়ে গেল!একটা রিকশা ডেকে উঠে পরল,সী বিচ ভাড়া।
-হ্যালো,নীলা?

খুব অবাক হয়ে বিষন্ন মনে ফোনটা রিসিভ করল নীলা।
-জী।বলেন।
-কি করছ?
-সাগর পারে মানুষ কি করে?
-ও! পৌছে গেছ?বাহ!সাগর পারে কি মৎস শিকার করছ নাকি?তোমার গলার আওয়াজে মনে হচ্ছে,সারাদিনে একটাও মাছ না পেয়ে বিষন্ন জেলেনী! হা হা!
-আপনি হাসানোর চেষ্টা করছেন কেন?কি বলবেন তাড়াতাড়ি বলেন।আমি এখানে ফোনে গল্প করতে আসিনি।
-হুম,কোথায় আছো বলবেতো?আচ্ছা,ঝাউবনটা দেখেছো? ওটার পরে সম্পূর্ন ফাকা জায়গা,মানুষের ভীর কম। প্রবাল পাথরের উপর দাঁড়িয়ে সমুদ্র দেখা যায়।না গেলে মিস করছ কিন্তু।
-আচ্ছা?আসলেই,এখানে মানুষের ভীষন যন্ত্রনা।আপনি এতক্ষন বক বক করছেন কেন?আপনার কামলা খাটার কাজ নেই?
-আছেতো!ভাবলাম,সাময়িক বিরতি দিই।
-সেই বিরতিতে আমাকে কল কেন?
-বিরতি টা তোমার জন্যেই নিলাম তো।ভাবলাম মেয়েটা একা গেছে,কি না কি দেখবে,তাই একটু ডিরেকশন দেই।
-আপনি জানলেন কীভাবে?!পান্না বলেছে?ও ও তো জানেনা!
-সে তার জামাইএর সাথে আমার বাসায় এসেছিল কালকে।ওকেই যখন নাওনি,তখন তোমার একা ছাড়া কোন গতি নেই,বুঝলাম।
-বারে!না জিজ্ঞেস করেই বুঝে ফেললেন!হাহ।
-অনুভবে কি বুঝতে নেই,নাকি?
-সে ক্ষমতা আপনার থাকলেতো!
-সেটা বোঝার ক্ষমতাটা তোমার নেই,এটাই সমস্যা।
-তাই নাকি?
-নয়তো কি?
-কি বুঝিনি বলেনতো?
-তুমি বোঝনি,নীলা।একবার চাওয়াতে সব বোঝা যায় না।

নীলার কাছে কথাগুলো কেমন যেন ঠেকে।সে সেই ফাকা জায়গাটাতে চলে এসেছে কথা বলতে বলতে।পানির ধার ঘেষে দাঁড়িয়ে তন্ময় হয়ে ছেলেটার কথা শুনছে।কিন্তু...

-নীলা,আছো লাইনে?
-উ! হুম।
-বাড়ানো হাতটা কি কখোনই দেখতে পাওনি?
-চেষ্টা করেছিলাম খুব।
-এবার যদি সামনে এসে বাড়িয়ে দেই,ধরবে?
ঠোঁট দুটো কেপে উঠলো নীলার।সাথে কানে আসছে বুকের ধুকপুকানি আওয়াজটা।
চোখ ঘুরিয়ে তাকালো সে।

অবাক নীলার অভিমান দুমড়ে মুচড়ে বালিয়াড়িতে মিশে যায় সমস্ত সঙ্কা আর দীর্ঘশ্বাস কে সাথে নিয়ে।নোনা জলে পা ভেজায় কেবল ওরা দুজন।নীলা আর অর্নব।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই নভেম্বর, ২০১১ রাত ১২:০৭
১১টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×