somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ শেষ গন্তব্য

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-তোমার পছন্দ কোন রঙ?
-নীল আর সাদা।
-নীল?কোন নীল টা?
-আকাশী নীল।
-ওয়াহ!আমারো তাই।কিন্তু সাদার সাথে মিললো না।আমার কালো।
-ও আচ্ছা।রং নিয়ে এত্ত ক্যাচাল করার কি আছে?একটা হলেই হল।
-তা কেন?আমি তোমায় ভালোবাসি।তোমার পছন্দের রঙ্গটা আমারো পছন্দ হওয়া উচিৎ?
-এটা কোন কথা হল ধ্রুব?আরে!ভালোবাসলেই কি তাঁর সব কিছুই ভালোলাগাতে হবে নাকি?জোর করে হলেও!!আজব!
-তুমি হয়তো মন থেকে ভালো বাসোনা,তাই এমনটা মনে হচ্ছে।কিন্তু আমার ধারনা ভিন্ন।সত্যিকার ভালোবাসলে জোর করে পছন্দ করতে হয়না।কখন পছন্দ হয়ে যায়,টেরই পাওয়া যায় না।
-উফফ!তোমার যত্তসব ফালতু সেন্টিমেন্ট।শুনতে শুনতে কান পচায় ফেললাম।প্লিজ।লিভ মি এলোন।তোমার এই মান্ধাতার আমলের ভালোবাসার কচকচানি আমার আর সহ্য হচ্ছেনা।অনেক করেছি,আরনা।
-মানে!কি বলছো এসব?তারা? !
-তারা তারা করে চিল্লাবা না।ধ্রুব'র সাথে তারা মানায়।আমাকে না।আমার একটা আসল নাম আছে,তানি।বুঝছো।আর শোন,প্লিজ তুমি আমাকে আর জ্বালিও না।প্লিজ।তুমি আমাকে একাকীত্বে সঙ্গ দিছ,আমার সমস্যার সময় আমাকে সাহায্য করছ অনেক করছ।তোমার কাছে আমি মহা কৃতজ্ঞ।এজন্যে অনেক ধন্যবাদ,এজন্যেই কেবল তোমাকে অনেক সহ্য করছি।কিন্তু আমি আর পারবোনা।আমার একটা আলাদা লাইফ আছে,আলাদা স্বপ্ন আছে।ভালোবাসা দিয়ে আমার দুনিয়া চলবে না।বুঝছ?

মুখের উপর লাইনটা কেটে দিয়েছিল তানি।হয়তো নিজের ভাগ্যের লাইনটাও।সিম টাও বদলে ফেলল। ২বছর আগের এক বিকেলে এমন করেই সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল সে।চোখে অনেক গভীর একটা কালো পর্দা ছিল তার।তাই বুঝতে পারেনি জীবনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসটার মর্যাদা।রাখতে পারেনি নিজের করে।এখন সে একদমই একা।জীবন তাকে অনেক কিছু দেখিয়েছে।ভালোবাসা কে পদদলিত করেছিল বলে কলুষতার সর্বোচ্চ স্তর তাঁর পাওনা ছিল,হয়েছেও তাই।প্রতিটা পদে পদে সে টের পেয়েছে,বাবা-মা হারা একলা একটা মেয়ে কত সস্তা পন্য এই সমাজের কাছে।কত সহজে সবাই একে নিজের দরকারে ব্যবহার করে ফেলে।অনেক লড়েছে সে এগুলোর সাথে।কিন্তু পারেনি।হার মেনেছে।নারীলোভী নরপশু গুলো সমাজে এত বেশী বিস্তৃত যে তাকে মাথা উচু করে দাড়াতেই দেয়নি।মিথ্যে আশ্বাসে ফেসে,প্রতারনার আঘাতে ভেসে আজ আবারো সে একা।জীবনের চরম সঙ্কট আবার তাঁর সামনে।
পুরোনো সেই পার্কের সেই শিমূল গাছটার নিচে সে এসে দাঁড়িয়েছে।এখানেই তাঁর দেখা হত ধ্রুব'র সাথে।কত বিকেল পার করেছে তারা এখানে।তখন খুব বিরক্ত লাগলেও আজ সে বুঝছে,ওইটাই ছিল জীবনের অর্থ।কিন্তু আজ! গাছটার কাছে এগিয়ে যায় সে।ধ্রুব যখনই আসতো তখনি গাছটার গায়ে খোদাই করে "ধ্রূবতারা" শব্দটা লিখত।পুরনো কালসিটে লেখাগুলোয় হাত বুলালো আস্তে করে,যেনো ধ্রুব কে স্পর্শ করছে সে।অনেকগুলো লেখা।পুরো গাছটাই যেন ধ্রুবতারা ময়,দেখে হাসি এলো তানির।কি পাগলই না ছিল ধ্রুবটা!! আস্তে আস্তে নিচের দিকের লেখা গুলো কেমন যেন সবুজাভ ঠেকলো তানির!অবাক হয়ে দেখলো,একটা একটা করে শব্দ আস্তে আস্তে সবুজ হয়ে আসছে!দেখে মনে হচ্ছে নতুন লেখা!
মানে বুঝতে পারল না তানি।একদন নিচের দিকের শেষ লেখাটা দেখে জমে গেল তানি।এত্তটা টাটকা লেখা যে খোদাই করা সবুজ সবুজ গুড়িগুলো আলগা হয়ে আছে লেখার উপর,আর হাত ছোঁয়াতেই ঝরে পড়ল ভেজা ভেজা গুড়োগুলো।ভীষব রকম অবাক হয়ে গেল তানি।এই মাত্র লিখে রেখে গেছে কেউ যেন!! কিন্তু কে?!
আশেপাশে দ্রুত চোখ ঘুরাতে লাগলো সে।পাগলের মতন খুঁজতে লাগল পকেটে হাত দিয়ে চলা কোন মানুষকে। ওইতো!! তানি দেখতে পায় তাকে।হেটে যাচ্ছে। ধূসর রঙের একটা ফতূয়া গায়ে,নীল জিন্স পরনে,হাত দুটো পকেটে ঢোকানো!

ধ্রুব যখন হাটতো,হাত দুটো সবসময় প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে রাখতো।দেখতে উদ্ভট লাগতো বলে কত্ত মানা করত তানি।ধ্রুবর একটাই উত্তর,হাত বাইরে রাখলে তাঁর নাকি তানির হাত ধরে রাখতে ইচ্ছে করে,তাই।বিরক্ত তানি কিচ্ছু বলতনা আর।
ঠিক এই মুহূর্তে ওই হাতদুটো টেনে নিজের হাতে তুলে নিতে ইচ্ছে করছে তানির।চিৎকার করে ডাকতে চাইলো দূরে সরে যাওয়া ধ্রুব কে।কিন্তু গলা দিয়ে আওয়াজ বের হল না!কি অধিকারে ডাকবে সে?কোন মুখে দাঁড়াবে সে ধ্রুবর সামনে?
ঠিক তখনই,ধ্রুব ফিরে চাইলো।বুকে ধ্বক্ করে উঠলো তানির!
তাঁর দিকে এগিয়ে আসছে ধ্রুব।কি চেহারা হয়েছে ছেলেটার!হলদেটে সাদা চেহারাটার মধ্যে কত না যন্ত্রনার ছাপ দেখা যাচ্ছে।চোখে নির্লিপ্ত ক্লান্ত চাহনি। কাছে এসে থামে ধ্রুব।
-এসেছো তুমি?
-ধ্রুব?!!
-আমি জানতাম,তুমি আসবে।তাইতো দেখোনা,আমি এসেছি।প্রত্যেকটা দিন পারিনা।অফিসে কাজ থাকেতো।আজ ছুটি।তাই সকাল বেলাই চলে এসেছি,অনেক্ষন তোমার সাথে থাকবো বলে।কেমন আছো বলত,তারা?
তানির মাথা চক্কর দিয়ে উঠে।কি সাবলীল ভাবে বলে চলেছে ধ্রুব!যেন,গতকাল ও কথা হয়েছে,আজ এখানে আসার কথা ঠিক করা ছিল।মুখ থেকে কোন কথা বেরোয় না তানির।
-চুপ করে আছো কেন,তারা?এভাকে আমাকে দেখছো কেন? আচ্ছা চল,বাসায় যাই।জানো,আমার বাসাটা এখন ভীষন সাজানো।তোমার জন্যেই গুছিয়ে রেখেছি।তোমার দরকারি সব কিনে রেখেছি।কখন তুমি চলে আসো,আর জিনিসটা পেলেনা,তখন তোমার কষ্ট হবে।তাই।চলতো। খুব ক্লান্ত লাগছে আমার।কতদিন আরাম করে একটু ঘুমুই না।বাসায় চল।তুমি মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিবে আমায়।তারপর ঘুম ভেঙ্গে উঠে আমি নিজ হাতে তোমার জন্য চা বানাবো।চা হাতে বারান্দায় বসে দুজনে গল্প করব।এসোতো।
তানির হাত ধরে টান দেয় ধ্রুব।নড়তে পারেনা তানি।তীব্র অপরাধবোধ তাকে থামিয়ে রাখে।কিন্তু ভালবাসা টানটা বোধহয় অনেক মজবুত।পালকের মতন আগলে ফেলে তানিকে।এক নিমিষে "তারা" হয়ে যায় সে।

ধ্রুবর হাত আজ পকেটে নয়।সে তাঁর তারা কে জরিয়ে ধরে রেখেছে।জীবন পথের উল্লাসে ভেসে হেটে চলেছে দুজন,হাতে হাত রেখে।জ্বল জ্বল করছে একজন আরেকজনের সঙ্গ পেয়ে।চিরন্তন তাদের অস্তিত্ব। ধ্রুব-তারা
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×