-তোমার পছন্দ কোন রঙ?
-নীল আর সাদা।
-নীল?কোন নীল টা?
-আকাশী নীল।
-ওয়াহ!আমারো তাই।কিন্তু সাদার সাথে মিললো না।আমার কালো।
-ও আচ্ছা।রং নিয়ে এত্ত ক্যাচাল করার কি আছে?একটা হলেই হল।
-তা কেন?আমি তোমায় ভালোবাসি।তোমার পছন্দের রঙ্গটা আমারো পছন্দ হওয়া উচিৎ?
-এটা কোন কথা হল ধ্রুব?আরে!ভালোবাসলেই কি তাঁর সব কিছুই ভালোলাগাতে হবে নাকি?জোর করে হলেও!!আজব!
-তুমি হয়তো মন থেকে ভালো বাসোনা,তাই এমনটা মনে হচ্ছে।কিন্তু আমার ধারনা ভিন্ন।সত্যিকার ভালোবাসলে জোর করে পছন্দ করতে হয়না।কখন পছন্দ হয়ে যায়,টেরই পাওয়া যায় না।
-উফফ!তোমার যত্তসব ফালতু সেন্টিমেন্ট।শুনতে শুনতে কান পচায় ফেললাম।প্লিজ।লিভ মি এলোন।তোমার এই মান্ধাতার আমলের ভালোবাসার কচকচানি আমার আর সহ্য হচ্ছেনা।অনেক করেছি,আরনা।
-মানে!কি বলছো এসব?তারা? !
-তারা তারা করে চিল্লাবা না।ধ্রুব'র সাথে তারা মানায়।আমাকে না।আমার একটা আসল নাম আছে,তানি।বুঝছো।আর শোন,প্লিজ তুমি আমাকে আর জ্বালিও না।প্লিজ।তুমি আমাকে একাকীত্বে সঙ্গ দিছ,আমার সমস্যার সময় আমাকে সাহায্য করছ অনেক করছ।তোমার কাছে আমি মহা কৃতজ্ঞ।এজন্যে অনেক ধন্যবাদ,এজন্যেই কেবল তোমাকে অনেক সহ্য করছি।কিন্তু আমি আর পারবোনা।আমার একটা আলাদা লাইফ আছে,আলাদা স্বপ্ন আছে।ভালোবাসা দিয়ে আমার দুনিয়া চলবে না।বুঝছ?
মুখের উপর লাইনটা কেটে দিয়েছিল তানি।হয়তো নিজের ভাগ্যের লাইনটাও।সিম টাও বদলে ফেলল। ২বছর আগের এক বিকেলে এমন করেই সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল সে।চোখে অনেক গভীর একটা কালো পর্দা ছিল তার।তাই বুঝতে পারেনি জীবনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসটার মর্যাদা।রাখতে পারেনি নিজের করে।এখন সে একদমই একা।জীবন তাকে অনেক কিছু দেখিয়েছে।ভালোবাসা কে পদদলিত করেছিল বলে কলুষতার সর্বোচ্চ স্তর তাঁর পাওনা ছিল,হয়েছেও তাই।প্রতিটা পদে পদে সে টের পেয়েছে,বাবা-মা হারা একলা একটা মেয়ে কত সস্তা পন্য এই সমাজের কাছে।কত সহজে সবাই একে নিজের দরকারে ব্যবহার করে ফেলে।অনেক লড়েছে সে এগুলোর সাথে।কিন্তু পারেনি।হার মেনেছে।নারীলোভী নরপশু গুলো সমাজে এত বেশী বিস্তৃত যে তাকে মাথা উচু করে দাড়াতেই দেয়নি।মিথ্যে আশ্বাসে ফেসে,প্রতারনার আঘাতে ভেসে আজ আবারো সে একা।জীবনের চরম সঙ্কট আবার তাঁর সামনে।
পুরোনো সেই পার্কের সেই শিমূল গাছটার নিচে সে এসে দাঁড়িয়েছে।এখানেই তাঁর দেখা হত ধ্রুব'র সাথে।কত বিকেল পার করেছে তারা এখানে।তখন খুব বিরক্ত লাগলেও আজ সে বুঝছে,ওইটাই ছিল জীবনের অর্থ।কিন্তু আজ! গাছটার কাছে এগিয়ে যায় সে।ধ্রুব যখনই আসতো তখনি গাছটার গায়ে খোদাই করে "ধ্রূবতারা" শব্দটা লিখত।পুরনো কালসিটে লেখাগুলোয় হাত বুলালো আস্তে করে,যেনো ধ্রুব কে স্পর্শ করছে সে।অনেকগুলো লেখা।পুরো গাছটাই যেন ধ্রুবতারা ময়,দেখে হাসি এলো তানির।কি পাগলই না ছিল ধ্রুবটা!! আস্তে আস্তে নিচের দিকের লেখা গুলো কেমন যেন সবুজাভ ঠেকলো তানির!অবাক হয়ে দেখলো,একটা একটা করে শব্দ আস্তে আস্তে সবুজ হয়ে আসছে!দেখে মনে হচ্ছে নতুন লেখা!
মানে বুঝতে পারল না তানি।একদন নিচের দিকের শেষ লেখাটা দেখে জমে গেল তানি।এত্তটা টাটকা লেখা যে খোদাই করা সবুজ সবুজ গুড়িগুলো আলগা হয়ে আছে লেখার উপর,আর হাত ছোঁয়াতেই ঝরে পড়ল ভেজা ভেজা গুড়োগুলো।ভীষব রকম অবাক হয়ে গেল তানি।এই মাত্র লিখে রেখে গেছে কেউ যেন!! কিন্তু কে?!
আশেপাশে দ্রুত চোখ ঘুরাতে লাগলো সে।পাগলের মতন খুঁজতে লাগল পকেটে হাত দিয়ে চলা কোন মানুষকে। ওইতো!! তানি দেখতে পায় তাকে।হেটে যাচ্ছে। ধূসর রঙের একটা ফতূয়া গায়ে,নীল জিন্স পরনে,হাত দুটো পকেটে ঢোকানো!
ধ্রুব যখন হাটতো,হাত দুটো সবসময় প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে রাখতো।দেখতে উদ্ভট লাগতো বলে কত্ত মানা করত তানি।ধ্রুবর একটাই উত্তর,হাত বাইরে রাখলে তাঁর নাকি তানির হাত ধরে রাখতে ইচ্ছে করে,তাই।বিরক্ত তানি কিচ্ছু বলতনা আর।
ঠিক এই মুহূর্তে ওই হাতদুটো টেনে নিজের হাতে তুলে নিতে ইচ্ছে করছে তানির।চিৎকার করে ডাকতে চাইলো দূরে সরে যাওয়া ধ্রুব কে।কিন্তু গলা দিয়ে আওয়াজ বের হল না!কি অধিকারে ডাকবে সে?কোন মুখে দাঁড়াবে সে ধ্রুবর সামনে?
ঠিক তখনই,ধ্রুব ফিরে চাইলো।বুকে ধ্বক্ করে উঠলো তানির!
তাঁর দিকে এগিয়ে আসছে ধ্রুব।কি চেহারা হয়েছে ছেলেটার!হলদেটে সাদা চেহারাটার মধ্যে কত না যন্ত্রনার ছাপ দেখা যাচ্ছে।চোখে নির্লিপ্ত ক্লান্ত চাহনি। কাছে এসে থামে ধ্রুব।
-এসেছো তুমি?
-ধ্রুব?!!
-আমি জানতাম,তুমি আসবে।তাইতো দেখোনা,আমি এসেছি।প্রত্যেকটা দিন পারিনা।অফিসে কাজ থাকেতো।আজ ছুটি।তাই সকাল বেলাই চলে এসেছি,অনেক্ষন তোমার সাথে থাকবো বলে।কেমন আছো বলত,তারা?
তানির মাথা চক্কর দিয়ে উঠে।কি সাবলীল ভাবে বলে চলেছে ধ্রুব!যেন,গতকাল ও কথা হয়েছে,আজ এখানে আসার কথা ঠিক করা ছিল।মুখ থেকে কোন কথা বেরোয় না তানির।
-চুপ করে আছো কেন,তারা?এভাকে আমাকে দেখছো কেন? আচ্ছা চল,বাসায় যাই।জানো,আমার বাসাটা এখন ভীষন সাজানো।তোমার জন্যেই গুছিয়ে রেখেছি।তোমার দরকারি সব কিনে রেখেছি।কখন তুমি চলে আসো,আর জিনিসটা পেলেনা,তখন তোমার কষ্ট হবে।তাই।চলতো। খুব ক্লান্ত লাগছে আমার।কতদিন আরাম করে একটু ঘুমুই না।বাসায় চল।তুমি মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিবে আমায়।তারপর ঘুম ভেঙ্গে উঠে আমি নিজ হাতে তোমার জন্য চা বানাবো।চা হাতে বারান্দায় বসে দুজনে গল্প করব।এসোতো।
তানির হাত ধরে টান দেয় ধ্রুব।নড়তে পারেনা তানি।তীব্র অপরাধবোধ তাকে থামিয়ে রাখে।কিন্তু ভালবাসা টানটা বোধহয় অনেক মজবুত।পালকের মতন আগলে ফেলে তানিকে।এক নিমিষে "তারা" হয়ে যায় সে।
ধ্রুবর হাত আজ পকেটে নয়।সে তাঁর তারা কে জরিয়ে ধরে রেখেছে।জীবন পথের উল্লাসে ভেসে হেটে চলেছে দুজন,হাতে হাত রেখে।জ্বল জ্বল করছে একজন আরেকজনের সঙ্গ পেয়ে।চিরন্তন তাদের অস্তিত্ব। ধ্রুব-তারা

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




