-চল গুম হয়ে যাই!
-পালাবে?
-হুম।সব গুছিয়ে নাও।৩দিনের জন্যে চল যাই।চল চল।
-কি বল!!সপ্তাহ পরে আমার বিয়ে,আর তুমি বলছ...?!
-হ্যা।নয়তো কি?তোমার তো বিয়ে হয়েই যাবে।তার আগে না হয় শেষ বারের মত আমার সাথে কাটালে!
-আমরা দুজন,একসাথে...
-হুম।একদম হাওয়া।
একটু ভেবেই আমি সায় জানিয়ে ফেললাম।একদম ঝোঁকের বসে।
বড় অদ্ভূত আমাদের ভালোবাসা।আমাদের বলতে,আমরা দুজন।মুগ্ধ আর দীহা।
যে দুজন একে অপরকে প্রানপনে ভালোবাসে।যে ভালোবাসার মধ্যে কোন ছেদ নেই,সামান্যতম খাদ নেই,যেখানে দুঃখেরা অচেনা।যে ভালোবাসা স্বর্গীয় পরশ দিয়ে ঢেকে রাখে আমাদের প্রতিটাক্ষন।যে ভালোবাসায় আজ আমরা মাটিতে থেকেও আকাশে পাখা মেলতে শিখেছি।সেই আমাদের ভালোবাসা। দুইটি বছর আগে এমন পাগলামীর কাছে হেরেই মুগ্ধ'র প্রেমে পড়েছিলেম আমি।আহসান মুগ্ধ।অদ্ভূত রকম ভাবে আমাকে তার ভালোবাসার জালে বন্দি করে ফেলেছিল।আর আমি? মহানন্দে সেই ফাঁদে বাস করে চলেছি।একটিবারের জন্যেও আমাকে কোন আঘাত পেতে দেয়নি সে।আনন্দ আর উচ্ছাস এর স্রোতে ভেসে ভেসে আমি চলে এসেছি এতটাই দূর যে,নিশ্চিন্ত মনে তার হাতটি ধরে পথে নেমে যেতে পারি।
কিন্তু,আজ অনেক কিছুই বদলে গেছে আমাদের।জীবনের তাগিদেই এগোতে এগোতে আজ আমরা বিচ্ছিন্ন হতে চলেছি,আমাদের এই অবুঝ প্রেম আজ বন্দিনী পাতালপুরে।সেই বন্দিত্ব থেকে সে যদি একটু ছাড়া পেতে চায় তবে আমি আর বাধা দেই কেন! তার উপর পরিবারের চাপে নিজেও বন্দি হতে যাচ্ছি বিয়ে নামক বুহুমূখী বাঁধনে।এইতো আমার উদ্যামতার শেষ অধ্যায়। তাই,চোখ কান বন্ধ করে,বাস্তবের কথা বস্তা বন্দি করে ফেলে রেখে বের হয়ে এলাম মুগ্ধ'র কথায়।
৩দিন পরে যেই মেয়ের গায়ে হলুদ,সেই মেয়ে ঘর থেকে নিরুদ্দেশ হতে চলেছে।সমস্ত আয়োজন শেষ।দাওয়াত দেয়া থেকে শুরু করে ঘর সাজানো,নিজেকে গুছানো,কেনাকাটা করা ইত্যাদি সঅব নিজে হাতে সেরেছি আম্মুর সাথে সাথে থেকে।কিন্তু আজ সেই আমি ভাগছি।প্রেমের টানে ভাগছি।
ব্যাগ এ বই খাতার বদলে ২সেট কাপড়,আর কটা টুকিটাকি।ক্লাশ সেরে সোজা চলে এলাম শ্যমলী বাস স্ট্যান্ড এ। ওইতো,মুগ্ধ টাকে দেখা যাচ্ছে।হাতে কেবল একটা শপিং ব্যাগ।এটাই থাকার কথা।হঠাৎ যাত্রায় এত্ত গুছগাছের কিচ্ছু থাকেনা। গুছগাছ করে সব নিয়ে তো আর গুম হওয়া যায়না!
ছোট্ট একটা দৌড় দিয়ে প্রায় ঝাপিয়ে পড়লাম ছেলেটার উপর।নিজেকে পুরো নির্ভার মনে হচ্ছে।মাথায় কিচ্ছু নেই।ভবিষ্যতের পায়ে অতীত কে বেধে উড়িয়ে দিয়ে এসেছি।আজ কেবল সামনে যা আসে তাই আমার সব,তাই আমার জীবন।তাইতো সামনে মুগ্ধ দাঁড়িয়ে!ওর হাতে টিকিট।সিট বের করেই রেখেছে।উঠে পড়লাম। আমি বসলাম জানালার পাশে,ও আমার ডানে।
বিকেলের সোনালী আলো ঠিকরে পড়ছে।বাস ছেড়ে দিল।গন্তব্য বান্দরবান।
-এই,ঘুম গেলে নাকি?
-আরে নাহ,আকাশটা দ্যাখ,কি সুন্দর হয়ে আছে!
-হুম,আকাশ পড়ে।আয়না আনছ?
অবাক হয়ে ফিরলাম তার দিকে,
-আয়না দিয়ে কি করবা?আনছি।
-বের কর,চেহারা দেখবো।
-ও হ্যলো!পাত্রী তোমার কাঁধে মাথা রেখে পড়ে আছে,তুমি চেহারা দেখাবা কাকে?
-তোমার কি এক কোথায় কাজ করতে ভাল্লাগেনা?বের করনা!
বের করলাম আয়নাটা।সে সেটা খুলে আমার সামনে মেলে ধরল।
-কি?আমাকে দেখা যাচ্ছে!
-উহু,শুধু তোমাকে না গো।রোদের খেলাটা দেখেছো?
-কি? ...
অবাক হয়ে দেখলাম রোদের নরম আলোটা কেবল আমার আর ওর মুখের উপর পড়েছে।দুজনের মুখ দুটো থেকে যেন উচ্ছাসের ছটা ঠিকরে পড়ছে,ভেতরে যে অবারিত সুখ খেলছে সেটার প্রতিচ্ছবি যেন বিচ্ছুরিত হচ্ছে।
ওর দিকে তাকিয়ে হাসলাম।এইই ছিল আমাদের টুকটাক ভালোবাসাবাসি।
মোবাইলটা বের করে মেসেজ টাইপ করলাম, "চিন্তা করো না বাবা।ফিরে আসবো"।দু জনের মোবাইল থেকে একই লেখা পাঠিয়ে দিলাম ২বাবার কাছে।ফোনের অফ মুড টা অন হয়ে গেল সাথে সাথে।একদম নেটোয়ার্কের বাইরে!!
তাকালাম মুগ্ধ'র দিকে।ওর হাসি হাসি মুখটা দেখে ফিক করে হেসে ফেললাম।দুজনের মাথায় এক কথাই খেলছে।বাবার সামনে দাঁড়িয়ে মেসেজের কথাটা বলতে গেলে সারাজীবন চেষ্টা করেও গলা থেকে বেরোত না যা,তাই লিখে ফেললাম!কত্ত বড় সাহস!!
যাক,পড়ে রইলো সমস্ত পৃথিবী।আমি ডুব দিলাম মুগ্ধ'র মাঝে।সে হারালো আমার মাঝে।
নামটা খুব সুন্দর।মিলনছড়ি রিসোর্ট।যেন সকলের মিলন স্থল। হা হা।
২৪৩নম্বর রুমটা আমাদের।কোন কলুষতা নেই আমাদের দুজনের মনে।বন্ধন টা যে খুব পবিত্রতা দিয়ে গড়া।
সারাটা দিন রাত পার হতে লাগলো হাতে হাত রেখে।চোখের গভীরে ডুব দিয়ে।আর, স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করে করে।এভাবে হারিয়ে যাওয়ার মাঝে যে কি রকম পুলক তা প্রত্যেকটা ক্ষনে আমি টের পাচ্ছি।কোনমতেই আনন্দ থামাতে পারছিনা।বিনা কারনেই উৎফুল্ল।ইচ্ছে করছে সমস্ত টা পৃথিবী আমার পায়ের নিচে,আর আমি তাকধিনাধিন করে নেচে বেরাচ্ছি...
দুজন দুজনের অস্তিত্ব কে নিংড়ে অনুভব করছি।
উড়ে চলে গেল ২টা দিন।ঠিক যেমন জিঙ্গেলটির মতন-
"তুমি আমি আমি তুমি একই সুরে গাথা সারাক্ষন,
আমি তুমি তুমি আমি একই মায়া ভরা তনু মন,কাছাকাছি আছিইইই....."
বিশাল বড় বড় দুটো হাসি দুজনের মুখে।মুক্ত আকাশে নিজের ইচ্ছে মতন ভেসে বেড়ানোর তৃপ্তি মাখা সে হাসি আমাদের।নতুন করে নিজেকে ফিরে পাওয়ার সে হাসি।
ঢাকার বাসে উঠলাম।ওর কাঁধে মাথা রেখেই যাত্রা শেষ হল।
-এই শোন,ভালো থেকো।
পিছন ফিরে তাকালাম। ও আমাকে নামিয়ে দিয়েই সরে পড়ছে।শেষ দেখা দুজনের।আজ বিকেলে গায় হলুদ আমার।পরশু বিয়ে।
-হুম।তুমিও।,বলেই আর দাড়ানোর সাহসে কুলালো না।ঘরে পা রাখলাম।
আত্মীয় স্বজনে ঘর ভর্তি।যারা দেখলো এগিয়ে এল।আমি মা কে খুজছি।মনে উৎকন্ঠা।চাচী এসে বলল,পিকনিক কেমন করলে?
ওহ!তাহলে ব্যপারটা বাবা সামলেছে!আস্তে করে সায় জানিয়ে আমার রুমে চলে এলাম।মা হলুদের ডালা গুছাচ্ছে।আমি চুপ করে বসলাম চোরের মতন।মা ভুত দেখার মতন চমকে উঠ তে যেয়েও সামলে নিল মানুষজনের জন্যে। বলল,আসলি কখন! শিগগির উঠ।পার্লারে যাবি কখন!
আমার মন তখন আর ঘরে নেই।অন্য কোথাও।হাতে আমার বিয়ের একটা কার্ড। উপরে লেখা,
Mugdho weds Deeha
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৫০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




