পহেলা বৈশাখ এলেই আমাদের মধ্যে পান্তা-ইলিশ খাওয়ার ধুম পড়ে যায় । না হলে যেন বাঙালিই নয় । সারা বছর বিদেশী পোশাক, বিদেশী ভাষা, বিদেশী সংস্কৃতির চর্চা চলে- কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই, অথচ এদিন ‘একদিনের –বাঙালি’ হওয়ার জন্য ধুন্ধুমার কান্ড বাধিয়ে দেই। এ দেখি ‘জুম্মাবারের নামাজি’র গায়ে আতর মেরে নামাজে যাবার মতোই হলো। এই প্রশ্নটির উত্তর আমি খুঁজে বেড়াচ্ছি যে, ঠিক কত সাল থেকে পান্তা-ইলিশ খাওয়া বাঙালি সংস্কৃতির অংশ হলো? আমরা নাকি শেকড়ের টানে দিনটি উদযাপন করি । এই শেকড় কত গভীরে প্রথিত তা কারো জানা থাকলে আওয়াজ দিয়েন। কোনো দেশের সংস্কৃতি বলতে সেই দেশের আপামর জনতার নিত্যদিনের কৃষ্টিকে বোঝায় । সেক্ষেত্রে পান্তা-ইলিশ খাওয়াও দেশের সর্বশ্রেণির মানুষের পুরোনো ঐতিহ্য হওয়ার কথা । তারমানে আগে হয় পুকুরে পুকুরে ইলিশ চাষ হতো নয়তো তখন বাঙালি জাতি অনেক ধনী ছিল, কালক্রমে গরীব হয়ে গেছে । তাছাড়া ইলিশের দাম কখনো কম ছিল বলে মনে হয় না, আর বর্তমানে তো ইলিশ মেঘের ওপারে । একসময় এদেশের লোক ‘মাছে ভাতে বাঙ্গালি’ বলে পরিচিত ছিল শুনেছি, কিন্তু ‘ইলিশে-ভাতে বাঙ্গালি’ ছিল বলে তো শুনিনি কখোনো। অনেকে বলতে পারেন, ‘এই নিয়ে এত মাতামাতির কী আছে বাপু, খেলাম না হয় একদিন পান্তা-ইলিশ !’ বলি, দেশের দারিদ্র্যপীড়িত অধিকাংশ জনতাকে নিয়ে এভাবে ঠাট্টা করবেন না । আজ ভেবে দেখার সময় এসেছে, এই দিন আমরা ঘটা করে খেটে খাওয়া মানুষগুলোকে অপমান করছি নাতো ? নুন আনতে পান্তা ফুরায় যাদের তাদের পান্তার সঙ্গে ই-লি-শ ! তাই বলে কি আমাদের দেখে তাদেরও শখ হয় না? তাই আমাদের খতিয়ে দেখা উচিত, পান্তা-ইলিশ কি সত্যি বাঙ্গালি সংস্কৃতির অংশ নাকি এটাও আমদানি । সন্দেহের কারণ আরো আছে, পান্তার সঙ্গে ইলিশ কোনোভাবেই সাযুজ্যপূর্ণ নয় । বুদ্ধিমান বাঙ্গালির এই দেশে এমন জগাখিচুড়ী সংস্কৃতি ছিল বিশ্বাসই হয় না । এ যেন সেই গ্রাম্য প্রবাদ ‘ডাল দিয়ে পোলাও’ এর মতোই। পান্তা এদেশের গরীব জনগোষ্ঠীর একটি সাধারণ খাবার । তার সাথে ইলিশের মতো এরিস্টোক্র্যাটিক মাছের মিশ্রণ আমার কাছে ‘গুরুচণ্ডালী দোষ’ বলেই মনে হয় । এ যদি বাঙ্গালি সংস্কৃতিই হয়, তাহলে অন্তত এদিন সবার জন্য ইলিশ খাওয়া নিশ্চিত করা সরকারের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে, কী বলেন?


অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




