somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

http://amarsangbad.info/news/1238/

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ৩:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

http://amarsangbad.info/news/1238/

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র শহীদ আবদুর রহিমের খুনি রাজাকারদের বিচার কবে হবে ?

॥ জামাল হোসেন বিষাদ ॥
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের ছোট্ট একটি গ্রামের নাম রাজ্জাকপুর। এ গ্রামের এক সূর্য সন্তান আবদুর রহিম। অত্যন্ত মেধাবী বাকপটু ও তুখোড় ছাত্রনেতা ছিলেন তিনি। যার আত্ম বলিদানের বিষয়টি ঠাই পায়নি কোথাও। হ্যা, ইতিহাসের কোথাও তার নাম লেখা না থাকলেও বয়সের ভারে নতজানু মা, কিংবা পঞ্চাশোর্ধ ভাই বোনদের স্মৃতিতে পরম শ্রদ্ধায় স্মরণের আবরণে আছেন তিনি।

একজন শহীদের কথা বলছি। একজন মেধাবী ছাত্রনেতার কথা বলছি। একজন দেশপ্রেমিকের কথা বলছি। একজন জ্ঞান হিতৈষী তরুণের কথা বলছি...

শহীদ আবদুর রহিম। বাবা এসহাক ব্যাপারি। মা সাহেদা বেগম। পরিবারে ৭ ভাই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। ছোট বেলা থেকেই তিনি অত্যন্ত মেধাবী। প্রাথমিক বৃত্তি ও গোপালপুর আলী হায়দার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেণীতে মেধাবৃত্তি, ১৯৬৬ সালে একই বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগে কুমিল্লা বোর্ডে সম্মিলিত মেধা তালিকায় তৃতীয় স্থান অধিকার করেন। ১৯৬৮ সালে একই বোর্ডের অধীনে চৌমুহনী কলেজ (বর্তমানে চৌমুহনী এসএ কলেজ) থেকে এইচএসসি তে সম্মিলিত মেধা তালিকায় দশম স্থান অধিকার করেন। এসময় তিনি কলেজ ছাত্র সংসদ থেকে সাহিত্য সম্পাদক নির্বাচিত হন। এসময় তিনি স্কুল ও কলেজ জীবনে তিনি এলাকার অসহায়, দরিদ্র ছেলেমেয়েদের বিনা মূল্যে পড়াতেন। তখন থেকে তিনি বাঙ্গালীর বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। এইচএসসি পাশের পর উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের জন্য তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে অনার্স কোর্সে ভর্তি হন। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সিনিয়র অধ্যাপক শরীফ উল্লাহ ভূইয়া একই স্কুল ও কলেজ থেকে একই শিক্ষাবর্ষে আবদুর রহিমের সাথে মেধা তালিকায় স্থান নিয়ে উর্ত্তীর্ণ হন এবং একই বর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। শহীদ আবদুর রহিম ছিলেন অধ্যাপক শরীফ উল্লাহ ভূইয়ার ঘনিষ্ট বন্ধু। শহীদ আবদুর রহিম সম্পর্কে তার কাছে জানা অজানা অনেক তথ্য পাওয়া যাবে বলে সহদর আবদুল মন্নান জানান।

আবদুর রহিমের ছিলো দেশের প্রতি পরম মমত্ববোধ। অগ্নিচেতনায় উজ্জীবিত একজন তরুণ। উত্তাল মার্চে জাতীর জনকের মন্ত্রমুগ্ধ ভাষন, ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি হায়েনাদের নির্বিচারে গণহত্যা ভাবিয়ে তুলেছিলো তাকে। তারপরই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌহদ্দি থেকে চলে আসেন নিজ গ্রাম রেজ্জাকপুরে। সেখান থেকে মুক্তিযুদ্ধের একজন একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে নিজেকে নিয়োজিত করেন। রণাঙ্গণে প্রত্যক্ষভাবে সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাপিয়ে না পড়লেও তিনি মুক্তি বাহিনীর জন্য বিভিন্ন উপায়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার সংগ্রহ, রাজাকার এবং পাকবাহিনী সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ, মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় ও বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতার বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সংগঠিত এবং উজ্জীবিত করতে থাকেন। মুক্তিযুদ্ধে তার কর্মতৎপরতা রাজাকার আল বদরদের কর্ণগোচর হয়। ১৯৭১ এর ৩০আগস্ট তিনি নিজ গ্রাম থেকে জেলার বাণিজ্য কেন্দ্র চৌমুহনীতে তার এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে গেলে রাজাকাররা তাকে ধরে নিয়ে যায়।

শহীদ আবদুর রহিমের সহদর আবদুল মন্নান জানান, পাশের গ্রাম পদিপাড়ার (বর্তমানে সোনাইমুড়ি উপজেলা) রাজাকার রুহুল আমিন মাস্টার, তার ছেলে মিজানুর রহমান নিজাম, গিয়াস উদ্দিন মিঠু ও ফারুকসহ রাজাকারের একটি দল আমার ভাইকে ধরে নিয়ে চৌমুহনীর পোস্ট অফিসের একটি কক্ষে আটক করে রাখে। পরে রাতে তাকে চৌমুহণী রেলস্টেশনের দক্ষিণ দিকে আটক করে বেয়নেট দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে ভোর রাতে স্থানীয় আটিয়া বাড়ি পোলের নিচে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। দু’দিন অনেক খোজখুজির পর রাজাকার ক্যাম্পের রান্নার কাজে নিয়োজিত এক লোকের কাছে আমরা জানতে পারি আমার ভাই রাজাকারদের এমন নির্মমতার শিকার হয়েছেন। বড় সন্তান কে হারিয়ে আমার বাবা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। আমৃত্যু তিনি আর সাভাবিক হতে পারেননি।

আবদুল মন্নান আক্ষেপ করে বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তীকালে স্বাধীনতা বিরোধী ওই রাজাকারের দল বহাল তবিয়তে ছিলেন এবং এখনো আছেন। রাজাকার রুহুল আমিন মারা গেলেও তার সন্তান মিজানুর রহমান নিজাম এখন আওয়ামীলীগ নেতা, এখনো ঢাকার নিলক্ষেত স্কুলের হেডমাস্টার। ওয়ান ইলেভেনের সময় দুর্নীতির দায়ে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয় পরে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর একই পদে নিজাম রাজাকারকে পূণর্বহাল করা হয়। তার ছোট ভাই রাজাকার গিয়াস উদ্দিন মিঠু সক্রিয় জামায়াত কর্মী এবং ঢাকা বারের আইনজীবী, আরেক ভাই রাজাকার ফারুক নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ কৃষি ইন্সটিটিউটে চাকরি করছেন।

এদেশে স্বাধীনতা বিরোধীদের এমন শান সওকাত বৃদ্ধ বাবা কৃষক এসহাক মিয়া ভারসাম্যহীন হওয়ায় জানতে পারেন নি কোনো কালেই। কিন্তু শহীদ জননী সাহেদা বেগম ৮৫ বছর বয়স নিয়ে বেচে থেকে আশায় বুক বাধেন তার সন্তানের খুনিদের, পাক হানাদার দোশরদের বাংলার মাটিতে বিচার হবেই হবে একদিন। পরিবারের সকলের আকুতিও তাই।
স্বজনদের প্রত্যাশাও বেশি নয় কেবল মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় আবদুর রহিমের নাম থাকলেও কখনোই তারা সরকারের তরফ থেকে কোনো সহযোগিতা পাননি। তাতেও দুঃখ্য নেই তাদের তবে নিজ গ্রামের বাংলাবাজার থেকে পদিপাড়া পর্যন্ত সড়ক শহীদ স্বজন আবদুর রহিমের নামে নামকরণের দাবি জানিয়েছেন তারা।

লেখক :: সম্পাদক-আমারসংবাদডটইনফো, জেলা প্রতিনিধি-আরটিভি ও বাংলানিউজ২৪.কম.বিডি
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ৩:৩৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×