কখনো কখনো তারকাদের ভাল কাজগুলো এতটাই বেশি প্রচারিত হয় যে, তাদের অনুসরন করা মানুষেরা এতে অনুপ্রাণিত হয়ে সে কাজগুলো করতে থাকে, যদিও বাস্তব জীবনে তারকারা মানুষ হিসেবে খুব একটা ভাল নন। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে খেলার জগতে লিওনেল মেসির বিয়ের আদ্যপান্ত সবচেয়ে বেশি আলোচিত। ব্যক্তিগত জীবনে এই মানুষটির খুত ধরা খুব কঠিন যেমনটা খেলার জগতে । তার বিয়ের অনুষ্ঠানটির শেষ প্রান্তে এসে অন্যরকম মাত্রা পেয়েছে। সেটা বিয়ের অনুষ্ঠানের অতিরিক্ত খাবার দান করা নিয়ে। সে মানুষ হিসেবেও অনুকরণীয় তার প্রমাণ আবারো রেখেছে।
নিজ ঘরের অতিরিক্ত খাবার অভুক্তদের কিংবা পথচারীদের দিয়ে দেয়ার উদ্যোগ হাতে নিয়েছিলেন ফিকলা ইয়েল নামে একজন অষ্ট্রেলিয়ান । গতবছরের রমজান মাসে তিনি তার বাড়ি সামনে অন্যদের খাবার জন্য অতিরিক্ত খাবারগুলো রেখে দিতেন। ব্যপারটি আরো বেশি অলোচিত হয় যখন আরব আমিরাত সরকারী উদ্যোগে দেড়শতের ও বেশি ফ্রিজ স্থাপন করে। হয়তবা প্রতিবেশি দেশের এমন উদ্যোগে অনুপ্রাণিত হয়ে সৌদি আরব মসজিদ্গুলোতে বড়মাপের ফ্রিজ স্থাপন করে। ধনী পরিবারগুলোর রাতের অতিরিক্ত খাবার ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বেঁচে যাওয়া অতিরিক্ত খাবার যা তারা সংরক্ষণ করতে পারছেনা, সে খাবারগূলো যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য এই ফ্রিজগুলো স্থাপন করা হয়েছে। আগে অতিরিক্ত খাবার ডাস্টবিনে ফেলে দিত। দেরীতে হলেও আরবদের টনক নড়ছে।
এই অবস্থা গুলো সৃষ্টির পেছনে সিরিয়া যুদ্ধ অনেকটা দায়ী। যুদ্ধের পর আরব আমিরাতে সিরিয়ার রিফিউজি বেড়েছে । ভিক্ষাবৃত্তিও শুরু হয়েছে। তাদের ফ্রি খাবার যোগান দেয়া কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। সৌদি আরবে দিন্ দিন প্রবাসী বাড়ছে, দরিদ্র বাড়ছে। পথচারী, মুসাফিরদের অতিরিক্ত খাবারগুলো খাইয়ে দিতে পারলে মন্দ হয়না। পরিস্থিতি যাই হউক, উদেশ্য খুব ভাল। মানুষ অস্ত্র আর যুদ্ধের প্রতিযোগিতায় না নেমে এমন অন্যদের মুখে বিনা নামকরনে, বিনা মিডিয়া কভারেজ নিয়ে ক্ষুধার্তদের মধ্যে খাদ্য বিলিয়ে দিলে কত শান্তিই না হত আমাদের পৃথিবীটা। ভারত , ইসরাইল, আমেরিকা, সৌদিয়ারব, কাতার, কুয়েত, রাশিয়া, চীন, ফ্রান্স যেভাবে অস্ত্র চুক্তি করতে হুমরি খেয়ে পড়েছে তার কিঞ্চিৎ যদি ধনী দেশগুলো দরিদ্র দেশগুলোর খাদ্যাভাব মেটাতে ব্যয় করত, তাহলে পৃথিবীতে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা অর্ধকেরও বেশি কমে যেত ।
আমাদের দেশেও এমন উদ্যোগ নিলে মন্দ হয়না। মাত্রাতিরিক্ত জনসংখ্যা ও দূর্নিতিপরায়ন মনোভাব এধরনের উদ্যোগের জন্য প্রতিবন্ধকতা। তবে একটু পজেটিভলি চিন্তা করলে ব্যপারটা অন্যরকম দাঁড়ায়। আমরা যারা অতিরিক্ত খাবার অন্যদের দিয়ে দিচ্ছি, সেগুলো প্রকৃত ক্ষুধার্তের কছে না পৌছুলেও এই ভেবে শান্তি পেতে পারি খাবারগুলো অন্তত নষ্ট হচ্ছেনা। আপনার অতিরিক্ত খাবারগুলো ব্যকটেরিয়ার খাদ্য হবার চেয়ে কোন মানুষের কিংবা প্রানীর খাবার হওয়াটা বেশি ভাল নয়কি ?
সুতরাং আপনি আপনার অতিরিক্ত খাবার অভুক্তদের দিয়ে দিচ্ছেন তো ..
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ৯:৪৯