somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইভান পানফিলোভঃসোভিয়েত ইউনিয়নের বীররক্ষক।

০২ রা এপ্রিল, ২০১১ রাত ১:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইভান পানফিলোভ(১৮৯২-১৯৪১) জন্মেছিলেন রাশিয়ার পেত্রভস্ক,সারাতভে।২য় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে তিনি ছিলেন সোভিয়েত কিরগিজস্থানের সামরিক কমিসার।
১৯৪১সালের ২২জুন জার্মান নাজী বাহিনী রাশিয়ার সমগ্র পশ্চিম সীমান্তজুড়ে আক্রমন করে বসে।ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী সেনাবাহিনী নিয়ে তারা বিপুল বেগে সোভিয়েত রাজধানী মস্কোর দিকে ধাবিত হচ্ছিলো।তখন সর্বোচ্চ সোভিয়েত প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয় শুধু চিন্তা করছিলো,মস্কোর পর্যাপ্ত প্রতিরক্ষার জন্য ২০-২৫দিন সময় খুবই দরকার,শত্রু ক্রমশ রাজধানীর নিকতবর্তী হচ্ছে।এখনও ট্যাংকবিরোধী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা,পরিখা খনন ,বিভিন্ন বাধা সম্পন্ন হয়নি।
কাদেরকে দিয়ে নাজী আক্রমন প্রলম্বিত করা যায়,এ মূহুর্তে দরকার একটি সম্পুর্ন পেশাদার বাহিনী,যারা ২০-২৫ দিনের জন্য সে আক্রমন ঠেকিয়ে রাখবে।
সমগ্র বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে সোভিয়েত বাহিনী খুব কমই ভূল করেছিলো,কারন যে অল্প কয়টি ভূল তারা করেছিলো তার ফলাফল হয়েছিলো ভয়াবহ।
সোভিয়েত জেনারেল গেওর্গি জুকোভ এ গুরুত্বপুর্ন কাজের দায়িত্ব দিলেন কমান্ডার ইভান পানফিলোভ ও তার ৩১৬ রাইফেল ডিভিসনের উপর।জুকোভ দায়িত্ব নেয়ার পর পানফিলোভকে বলেছিলো দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে আমি নিজে তোমাকে গুলি করে মারবো।মনে রাখবে,তোমার ততপরতার উপরই রাজধানীর নিরাপত্তা নির্ভর করছে।

দ্রুততম সময়ের মধ্যে পানফিলোভ তার ৩১৬ রাইফেল ডিভিসনের অমিততেজী যোদ্ধাদের নিয়ে আক্রমন রুখতে গেলেন।বস্তুত কোন দেশের রাজধানীর পরাজয় মানে সে দেশের মানুষের মানসিকতার উপর ভীষন আঘাত।

পানফিলোভ তার ডিভিসনকে নিয়ে মস্কোর পশ্চিমে স্মোলেনেস্ক-মস্কো মহাসড়কের নিকট ভলকলানস্ক মজাইস্ক প্রতিরক্ষা লাইনে নাজি বাহিনির সবচেয়ে শক্তিশালী ফর্মাসন গুলোর সাথে অসম যুদ্ধে লিপ্ত হলেন।বাকিটা শুধুই ইতিহাস।
৩১৬ ডিভিসনের যোদ্ধারা রাজধানী রক্ষার জন্য বীরের ন্যায় মৃতুবরন করছিলো।রাজধানীবাসীর জন্য এটা ছিলো অত্যান্ত বেদনার মুহুর্ত যে,যখন তাদের প্রিয় সন্তানেরা তাদেরকেই রক্ষার জন্য অতি সন্নিকটে মারা যাচ্ছিল।সময় গড়াচ্ছিলো দ্রুত,যারপরনাই কঠিন পরিস্থিতিতে।বীরত্ব সেদিন তাদের কাছে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা বলে মনে হচ্ছিলো।

আর জার্মান বাহিনীর জন্য এটা ছিলো এমন যে,এই প্রথম তারা যুদ্ধ শুরুর পর প্রবল বাধার সম্মুখিন হচ্ছিলো।যা তারা আশা করেনি।
রুশ সৈনিক সম্পর্কে তারা এই মন্তব্য করছিলো যে,এদেরকে পর্যাপ্ত গুলি করার পরও ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিতে হয়।
বাস্তবিকভাবে ৩১৬ ডিভিসন প্রবল বাধা দিয়ে জার্মান বাহিনী থেকে সময় কিনছিলো বিপুল রক্তের বিনিময়ে।
১৯৪১সালের ১৫নভেম্বর এ ডিভিসনের ২৮ জন যোদ্ধা নিজেদের জীবন দিয়ে মাত্র তিন ঘন্টার যুদ্ধে নাজী বাহিনীর অত্যাধুনিক ১৮টি ট্যাঙ্ক ধবংশ করে দিয়ে তাদের সবচেয়ে শক্তিশালী আক্রমন ব্যর্থ করে দেয়।এদের কোম্পানি কমান্ডার ভাসিলি ক্লচকভ মারা যাওয়ার পুর্বে তার সঙ্গীদের শুধু এটাই বলে যান,ভাইয়েরা শুধু মনে রাখবেন রাশিয়া বিশাল,কিন্তু আমাদের পিছু হঠা চলবে না।কেননা পিছনে মস্কো।তার এ ভাবনাতেই প্রতিফলিত হচ্ছিলো সমগ্র রাশিয়ার জন্য তীব্র ভালোবাসা ও উতকন্ঠা।

সর্বত্র কঠোর লড়াই চলছিলো,আর স্বয়ং ইভান পানফিলোভ সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলো।
কারন প্রবল গোলাবর্ষন ও ইস্পাতের ধারা বর্ষনে তার সেন্যরা টিকতে পারছিলো না।তার গোলন্দাজেরা কামানের পাশেই যুদ্ধরত অবস্থায় মারা যাচ্ছিলো।তিনি তাদের ছেড়ে না যেয়ে কামান গুলোর আবার দখল নিচ্ছিলেন,এটা দেখার পর তার সেন্যরা আর কেউ তাকে ছেড়ে যায় নি।
বিপুল ত্যাগের বিনিময়ে তারা তাদের লক্ষ্য অর্জন করেছিলো।তাদের এই তীব্র বাধাদানের ফলস্বরুপ মস্কো উপযুক্ত প্রতিরক্ষা নিতে সক্ষম হয়।

অবশেষে সোভিয়েত প্রতিরক্ষাবিষয়ক জনকমিসার সিদ্ধান্ত নেয় পানফিলোভকে পর্যাপ্ত যোদ্ধা দেয়া হবে এবং তাকে ও তার ডিভিসনকে সোভিয়েত ইউনিয়নের গার্ড মর্যাদা দেয়া হবে।কিন্তু অত্যান্ত দূঃখের বিষয় খবরটা তাকে দিতে যান মার্শাল রকসসভস্কি স্বয়ং,কিন্তু এর মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে সরাসরি সম্মুখযুদ্ধে মর্টারের আঘাতে ইভান পানফিলোভ ও তার সহযোদ্ধারা ঘটনাস্থলেই শহীদ হন।তিনি সবসময়ই চাইতেন যেনো সঙ্গীদের মাঝে তার মৃতুয় হয়।তার মৃতুয়তে সমগ্র রাশিয়া শোকাহত হয়।তিনি ‘”সোভিয়েত রাশিয়ার বীর”উপাধী পান।তার সন্মানে ৩১৬ রাইফেল ডিভিসনের নামকরন হয় পানফিলোভাইট।পরবর্তীতে যুদ্ধে তারা দারুন ভূমিকা পালন করে।এইসব অসংখ্য বীরদের নেতৃত্বেই রাশিয়া নাজী জার্মানকে চুড়ান্ত যুদ্ধে পরাজিত করেছিলো।



ইভান পানফিলোভ


পানফিলোভের সমাধি


কিরগিজস্থানের বিসকেকে পানফিলভের স্মারক মুর্তি
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×