somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রোল নাম্বার ওয়ান

৩০ শে জুলাই, ২০২১ দুপুর ১২:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মাথার উপর গনগনে কড়া রোদের দুপুর। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষে শিক্ষক থাকবে কি গরীব অসহায় পরিবারের ছাত্র ছাত্রীর পর্যন্ত টেকা দায় হয়ে দাড়িয়েছে। মাথার উপরে একটি সিলিং ফ্যান আছে, তবে নস্ট! দেয়ালে ও ছাদে লোনতা পরেছে! ছাত্র ছাত্রী যার যার মতো বই খাতা দিয়ে পাখা করছেন হৈ হল্লা করছেন এমন সময় বিদ্যুৎ গতিতে ছাত্র ছাত্রীর গায়ের উপর পাহাড়ি বেতের অতর্কিত হামলার মতো ঝড় নেমে আসে! - সবাই বেতের মারে হতবিহবল - কান্না করা যাবে না, চিৎকার করা যাবে না! - তাহলে আরো বেশী মার পরবে। বেত হাতে ঘর্মাক্ত দেহে পশুর মতো যিনি ঝাপিয়ে পরেছেন তিনি স্কুলের সহকারি শিক্ষক মাস্টার শামসুল রেজা! ছাত্র জীবনে তাঁর নাম ছিলো “কোপা শামসু - কারণ প্রাইমারী থেকে হাইস্কুল পর্যন্ত তাঁর রোল নাম্বার কখনো এক থেকে দুই হয়নি, তিনি ছিলেন এক ও অদ্বিতীয় ফার্স্টবয়। ক্লাস টু থেকে ক্লাস টেন পর্যন্ত তাঁর রোল ছিলো - নাম্বার ওয়ান। অনেকটা নাম্বার ওয়ান শাকিব খান এর মতো আর তাই ছাত্রজীবনে “কোপা শামসু” নামকরন! ছাত্রজীবনে না সে কখনো কোনো ছাত্র ছাত্রীকে পড়ালেখা দেখিয়ে সাহায্যে সহযোগিতা করেছেন! না সে কখনো কারো কাছ থেকে সাহায্যে সহযোগিতা নিয়েছেন।

ক্লাস থ্রি। মারের চোটে ছাত্র ছাত্রী ডাঙ্গায় তোলা মাছের মতো কাঁপছেন ভয়ে - আতঙ্কে - ব্যাথায়! এরমধ্য তিনজন ছাত্র ছাত্রী রিতিমতো দাঁত বার করে হাসছেন তাদের রোল নাম্বার যথাক্রমে এক-দুই-তিন! - কারণ তাঁদের গায়ে মার পরেনি। বিচিত্র কারণে ক্লাসে ছাত্র ছাত্রীর উপর মার পরলে যারা সবচেয়ে বেশী খুশি হোন তারা হচ্ছেন ক্লাস ক্যাপ্টেন সহ রোল নাম্বার এক-দুই-তিন। ক্লাসের কেউ কম নাম্বার সহ ফেইল করলেও এই জাতি দাঁত বার করে হাসেন। আমাদের কোপা শামসু স্যার মাস্টার শামসুল রেজা সাহেবও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না।

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষে জীবনে হেন কোনো প্রতিষ্ঠান নেই যেখানে তিনি ইন্টারভিউ দেননি। সরকারি, আধা সরকারি, বেসরকারি, ব্যাংক, বীমা - সবশেষে চাকরি জুটালেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাও পিতার শেষ সম্বল জমি বিক্রয় করে স্থানীয় সাংসদ আবদুল মজিদকে নগদ পাঁচ লক্ষ টাকা সালামি দিয়ে। আর তাই তিনি ছাত্র ছাত্রীদের মেরে তক্তা করে প্রবল আনন্দ পান। ছাত্র ছাত্রীদের মেরে তিনি যেই স্বর্গীয় সুখ অনুভব করেন এই সুখ আর কিছুতেই খুঁজে পান না। আর দুঃখ ভুলে থাকেন তাঁর মতো নাম্বার ওয়ানের চাকরি হয়েছে মাত্র একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তাও সহকারি শিক্ষক হিসেবে।

রোল নাম্বার ওয়ান শামসুল রেজা ছাত্রজীবনে, লজিং জীবনে, বেকার জীবনে, চাকরি জীবনে প্রচুর প্রেম করেছেন কিন্তু বিয়ের মতো বাঁধনে তিনি এখনো জড়াতে পারেন নি - আর পারবেনই বা কিভাবে তার দরকার প্রবাসী সিটিজেন পাত্রী অথবা নিদেন পক্ষে রাজধানী বা বিভাগীয় শহরের কোনো বাড়িওয়ালার মেয়ে! পাত্রীর খোঁজে ফেসবুক টুইটার ইন্সটাগ্রাম পিন্টারেস্ট লিংক্ডইন হেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নেই যেখানে তাঁর আইডি নেই আর এমন কোথাও নেই যেখানে তিনি জানাতে ভুল করেন নি যে তিনিই - রোল নাম্বার ওয়ান। মা বাবা ভাই বোন আত্মীয় পরিজন পাড়া প্রতিবেশী সবাই তাঁকে নিয়ে গর্ব করেন। মজার বিষয় হচ্ছে - আমাদের কোপা শামসু স্যার মাস্টার শামসুল রেজা সাহেব একদিন সত্যি সত্যি প্রবাসী সিটিজেন পাত্রী পেয়ে যান। পাড়ি দেন প্রবাসে। প্রাইমারি স্কুলের চাকরি বাবদ সালামি পাঁচ লক্ষা টাকার পরেও প্রবাসে পাড়ি দেওয়ার আগে পাত্রীর চাহিদা ও ভিসা খরচ বাবদ শামসুল রেজা আরোও পনেরো লক্ষ টাকা পাত্রীর হাতে তুলে দেন - রিতিমতো বাবা মাকে বাড়ি ঘর থেকে উচ্ছেদ করে! ভিটা বাড়ি বিক্রয় করে! যাকে বলে ইমোশনাল ব্লাক মেইল অথবা ছলে বলে কৌশলে!

অসহায় বাবা মা ভাইবোন ভাবেন, ভাবতে থাকেন - ভাবতেই থাকেন! ছেলে শামসুল রেজা প্রবাসে গিয়ে তাঁদের বাড়ি ঘর করে দিবেন ভাইবোনকে প্রবাসে নিয়ে যাবেন। - কিন্তু বিধি বাম! শামসুল রেজা সাহেব বিয়ে করে পাত্রী নিয়ে প্রবাসে পাড়ি দিয়েছেন - গেলো তো গেলো, এমন ভাবে গেলো, আর জীবনে ফিরে এলো না! গন তো গন, গন গনা গন গন, আর এ ডিড নট কাম!

আত্মকথা: রোল নাম্বার ওয়ান টু থ্রি ছাত্র ছাত্রী বিচিত্র কারণে খুবই আত্মকেন্দ্রিক হোন। অবশ্যই ব্যতিক্রম আছে তবে তা হাতেগোনার মতো হবে হয়তো। তবে এরা ছাত্রজীবন থেকেই আত্মকেন্দ্রিকতা শেখে। কাউকে সহযোগিতার মনোভাব কখনো এদের মাঝে তৈরি হয় না। উপকার বা পরোপকার এই শব্দগুলো তাঁদের অভিধানে থাকে না। প্রথম হতে হবে সবাইকে পেছনে ফেলে প্রথম হতে হবে। এরা সবাইকে পেছনে ফেলে দিতে দিতে এক সময় মা বাবা ভাইবোন আত্মীয় পরিজন এমনকি দেশকে পেছনে ফেলে চলে যায় - দূর বহু দূর। আমার দেখা রোল নাম্বার এক দুই তিন এরা প্রবলভাবে স্বার্থপর হয়ে থাকেন। নেলসন ম্যান্ডেলা তাঁর নিশ্চয় রোল নাম্বার এক ছিলো না। এক দুই তিন রোল নাম্বার ছিলো না মাদার তেরেসা বা ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের। রোল নাম্বার এক ছিলো না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের! রোল নাম্বার এক ছিলো না আমাদের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের অথবা মাওলানা ভাসানি সাহেবেরও। এমন কি ব্যবসা সফল কোনো ব্যক্তি! - ছাত্রজীবনে যার রোল নাম্বার ছিলো না যথাক্রমে এক-দুই-তিন! - মার্ক জাকারবার্গ, বিল গেটস, জ্যাক মা - না কারো না! কেউ কি বলতে পারেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাসে কোনো গভর্ণর ছিলেন! - ছাত্রজীবনে যার রোল নাম্বার শুধুই এক-দুই-তিন ছিলো!

উপসংহার: সমগ্র ছাত্রজীবন ছাত্র ছাত্রীদের রোল নাম্বার এক দুই তিন হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। ভালো ছাত্র বা ভালো মানুষ রোল নাম্বার দিয়ে হয় না। রোল নাম্বার দিয়ে হয়তো পড়ালেখা হয়! - কিন্তু শিক্ষা যে হয় না তাতে আমি নিশ্চিত।

উৎসর্গ: ছাত্রজীবনে রোল নাম্বারকে যিনি মাদক হিসেবে বেছে নিয়েছেন। ভয়াবহ ড্রাগ। এর চিকিৎসা নেই। আউট অব অর্ডার। বিয়ন্ড সার্ভিসেস। স্ক্র্যাপ।



ছবি: পোস্টের কভার ফটোশপে করা।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার: সামহোয়্যারইন ব্লগ। নির্বাচিত পোষ্টে “উক্ত লেখাটি” স্থান দেওয়াতে সামহোয়্যারইন ব্লগ কর্তৃপক্ষকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।






সর্বশেষ এডিট : ০২ রা আগস্ট, ২০২১ রাত ১০:৪০
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×