
সাহারা মরুভূমি। শীত আর গরম একে অপরের সাথে কার কতো শক্তি এই বিবাদ থেকে যুদ্ধ শুরু হয়েছে আজ বেশ কয়েকদিন যাবত। রাতে শীত নামে সাথে শীতল বাতাস আর দিনের বেলায় - দিন বাড়ার সাথে সাথে শুরু হয় গরমের সাথে উত্তপ্ত বাতাস। কেউ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান এমন অবস্থা। এই যুদ্ধ থামার নয়। সময় ৫৯০ বিসি।
বিকাল পেড়িয়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। পূর্বের দুর দিগন্তে একজন ঘোড়াসওয়ারীকে দেখা যাচ্ছে মরুভূমির বুক চিড়ে কোনাকুনি পথ ধরে উত্তরের দিকে যাচ্ছেন। ধুলি ধূসরিত জামা গায়ে ক্লান্ত অবসন্ন, ক্ষুধার্থ, পিপাসার্ত। - মনে হচ্ছে অনেক কষ্টে পাড়ি দিচ্ছেন পথিক তার পথ। কিন্তু শীত আর গরমের তাতে কিইবা আসে যায়! তাদের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে। তাতে কার ক্ষতি কার লাভ এতোকিছুর হিসাবে শীত গরমের চিন্তা চলে না। তারা বাজী ধরলো, যে পথিককে কাপড় খুলতে বাধ্য করতে পারবে সেই হবে জয়ী!
শীত আগে চেষ্টা করবে ঠিক হলো। সন্ধ্যার সাথে শীতের ঠান্ডা শীতল হাওয়া বইতে লাগলো জোরে আরো জোরে, ভীষন জোরে। পথিক দেখলো কাপড় চোপড় যেন উড়েই যাবে ঠান্ডা শীতের হাওয়ার সাথে, সে আঁকড়ে ধরে রাখলো তার সহায় সম্বল পুরোনো জরা জীর্ণ কাপড়। শীতের কনকনে ঠান্ডা বাতাসের দাপটে সে ভেড়ার চামড়ার আরও একটি জামা গায়ে জড়িয়ে নিতে বাধ্য হলো। রাতভর শীতের ঠান্ডা বাতাসের প্রবল তান্ডবে বহু চেষ্টা চরিত্র করেও পথিকের কাপড় খুলে নিতে পারলোনা! রাত শেষে শীত ক্লান্ত হয়ে গরম’কে বললো এবার তুমি চেষ্টা করে দেখো!
ভোরের আলো ফুটে উঠছে আস্তে আস্তে শীত কমে গেলো। সূর্য তখন মিষ্টি রোদ ছড়িয়ে দিলো সাহারা মরুভূমির বুকে। একটু পরে বেলা বাড়ার সাথে সাথে রোদের সাথে পাল্লা দিয়ে গরম বাড়তে থাকে বাড়তেই থাকে। পথিক উপায়ন্তর না দেখে ভেড়ার চামড়ার জামা সহ গায়ের জামাও খুলে রাখেন, কিছুক্ষন পর খুলে ফেলে দিলেন তার শেষ জামাটিও! তপ্ত গরমে অস্থির পথিক!
দুর দিগন্তে পানি দেখা যাচ্ছে পথিক পানির দিকে ছুটে যান কাছাকাছি গিয়ে দেখেন মরিচিকা! জামা কাপড় দুর দুরের চিন্তা এখন তপ্ত গরমে নগ্ন গাত্রে পথিকের এখন হয়েছে বাঁচা মরার প্রশ্ন?
আত্মকথা: ইরানের মেয়েরা কি কাপড় আর কেমন কাপড় পরবেন তার চিন্তা ইরানের মেয়েদের হওয়ার কথা! এমন কি ইরানের মেয়েদের বিক্ষোভ করতে দেখছি তারা তাদের আবায়া বোরকা হিজাব পরেই বিক্ষোভ করছেন। অর্থাৎ তাদের বিক্ষোভ তাদের পোশাকের বিরুদ্ধে নয়। তাদের বিক্ষোভ ইরানে নারীদের অবরুদ্ধ করার সরকারি আইনের বিরুদ্ধে। তাদের বিক্ষোভ দিনের পর দিন ইরানী নারীদের নির্যাতনের বিরুদ্ধে। অথচ আমি আশ্চর্য হতবাক হয়ে লক্ষ্য করছি সমগ্র বিশ্বের এক শ্রেণীর মানুষ তাঁদের কাপড় চোপড় খুলে ফেলার জন্য উন্মাদ হয়ে উঠে পরে লেগেছেন। ইন্টারনেট সার্চ দিলে দেখা যায় কি পরিমান বর্হিবিশ্বের মানুষ লেখার মাধ্যমে, প্রিন্ট ও অনলাইন নিউজ মিডিয়ার মাধ্যমে, নানান সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে কথার জালে - দুর্দান্ত কথার মার প্যাঁচে ইরানী মেয়েদের হিজাব সহ সমগ্র কাপড় খুলে ফেলার জন্য প্রভাবিত, প্ররোচিত, উদ্দীপ্ত, উদ্ধিগ্ন, রাগান্বিত করছেন দিনের পর দিন! সমগ্র বিশ্বে আরব নারীদের পোশাক নিয়ে যেই পরিমান লেখার আক্রমণ হয়েছে - হচ্ছে তার পরিমান কোনোদিন গুনে শেষ করা যাবে না।
ব্যাখ্যাঃ পোস্টের বিষয়বস্তু ইরানী মেয়েদের আবায়া বোরকা হিজাব নয়। বিষয়বস্তু - ইরানে নারীদের পোশাক আন্দোলনের নামে ইরানকে একটি অস্থিতিশীল দেশে পরিণত করার পেছনে কে বা কারা কাজ করছে। একটি নিউজকে কি পরিমান ফ্লাডিং করা হলে একটি আন্দোলন এতো উত্তপ্ত হতে পারে। এই উত্তপ্ত আন্দোলনে নিয়ে যেতে নিউজ মিডিয়ার যথেষ্ট শ্রম দিতে হয়েছে! দিন রাত হারাম করতে হয়েছে - তারা কারা? ইরানের বিরুদ্ধে কারা দিনের পর দিন প্ররোচনা দিচ্ছে, কারা দুর থেকে কলকাঠি চালনা করছে এটিই লক্ষ্য করার বিষয়।
উপসংহার: আমাদের সমাজে বেশ কিছু পরিবার আছেন যাদের পরিবারের নারী সদস্য বোরকার সাথে হাতমোজা পা মোজাও পরিধান করে থাকেন। যারা উক্ত পোশাক পরিধান করছেন তাঁদের নিজ পোশাক নিয়ে কি চিন্তা তা এই পোস্টে আপাতত লেখার প্রয়োজন মনে করছি না। তবে আমি লক্ষ্য করেছি, যারা চেয়ে চেয়ে দেখেন তাদের প্রবল প্রবল গাত্রদাহ সব সময় বেশী হয়ে থাকে। পোশাক পরিবার সমাজ দেশ ভেদে নানা রকম হয়ে থাকে। তবে অন্যর পোশাক নিয়ে কারও যে মাথাব্যাথার কারণ হতে পারে, তার জ্বলন্ত প্রমাণ বর্তমান টেলিভিশন, অনলাইন, ডিজিটাল ও প্রিন্ট মিডিয়া! পোশাক আন্দোলনের নিউজ ফ্লাডিং করে করে একটি দেশকে যে অস্থিতিশীল দেশে পরিণত করা যায় তার জ্বলন্ত প্রমাণ ইরান।
ইরানী হিজাব
গল্পের প্লট সূত্র: The North Wind and the Sun
ছবি সূত্রঃ Iranian women threw off the hijab
উৎসর্গ: আমার প্রতিটি লেখাই কাউকে না কাউকে উৎসর্গ করতে ইচ্ছে করে। হয়তো সব সময় সম্ভব হয় না। আজ, আজকের এই পোস্ট অত্যন্ত গর্বের সাথে আমাদের সামহোয়্যারইন ব্লগের একজন লেখকের নামে উৎসর্গ করছি, তিনি আমাদের শেরজা তপন ভাই।
সংবাদ ও তথ্য:
১। United States support for Iraq during the Iran–Iraq War
২। How the US Helped Create Saddam Hussein
৩। Iran Sanctions
৪। Iran Sanctions
৫। The social media myth about the Arab Spring
৬। The Transnational Effects of Social Media in the Arab Spring. The Cases of Egypt and Tunisia
৭। Social Media and the Arab Spring

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


