
আমার দেখা সামহোয়্যারইন ব্লগে কখনও দেশবিরোধী লেখা আসেনি। আর তাই হয়তো সামহোয়্যারইন ব্লগে আমি লেখালেখি করে আসছি এতোদিন যাবত। কিন্তু এখন ব্লগে দেশবিরোধী লেখা আসছে। প্রতিদিন প্রতিনিয়ত দেশবিরোধী লেখা আসছে। ব্লগে প্রশ্ন আসছে সত্যি সত্যি কি দেশে মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ মানুষ হত্যা হয়েছেন? অতি নিম্ন শ্রেনীর কিছু দলিল উপস্থাপণ হচ্ছে।
১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ মানুষ হত্যা হয়েছেন এবং তারও বেশি হত্যা হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে হত্যার তালিকায় মনিরাম মুচি থেকে শুরু করে শ্রী শষীকান্ত রায় ব্রাহ্মণ আর এক মাস বয়সের শিশু আলী হোসেন থেকে শুরু করে জমিদার পরিবারের সাহেব মীর্জা কেউ বাদ যায়নি। এই দেশে এক একটি বন্যা হয়েছে সাইক্লোন হয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষ হারিয়ে গিয়েছেন। এই দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছেন। মৃতের কোনো হিসাব নাই। হিসাব রাখা সম্ভব হয়নি। গরিব দেশ। গরিবের একটাই চিন্তা থাকে আর তা হচ্ছে পেটের ক্ষুধা। কে বা আপন, কে বা পর - যিনি মারা গিয়েছেন যিনি হারিয়ে গিয়েছেন তাঁকে নিয়ে আর চিন্তা করার সময় হয় না। চিন্তা করার সময় কোথায়? অভাগা দেশ অভাগা দেশের মানুষ, এই দেশের মানুষ সাবান কিনতে পারেনি, মাথায় তৈল দিতে পারেনি। অভাব অনটনে জীবন পাড়ি দিয়েছেন। একদিন দুনিয়া ছেড়ে চলে গিয়েছেন কেউ কাউকে মনে রাখেনি। মনে রাখা উচিত ছিলো, কিন্তু অভাবের তাড়নায় সম্ভব হয়নি।
১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে দেশে এমন কোনো বড় বাজার, নগরের বাজার, গঞ্জের বাজার নেই - যেই সব বাজার উজার করে মানুষ হত্যা করা হয়নি। বাজার ভর্তি ছিলো হিন্দু মহাজনি আড়ত। হিন্দু সওদাগর, স্বর্ণকার, রৌপকার, হিন্দু পাইকারী দোকানী। এই দেশের মাটিতে এখনও যতো বড় বড় পুরাতন স্কুল কলেজ আছে সবগুলো হিন্দু জমিদারদের তৈরি করা। দেশে ডাক্তার উকিল শিক্ষক থেকে শুরু করে বাজারের ছোট বড় ও মাঝারি ব্যবসায়ী ছিলো হিন্দু, মিষ্টির কারিগর ছিলো হিন্দু, দইওয়ালা ছিলো হিন্দু। কাঠমিস্ত্রি, কামার কুমার ধোপা ছিলো হিন্দু। মোটা কাঁচের চশমা পড়ে বাজারের গলিতে বসে যারা কাপড় সেলাই করতো এরা ছিলো হিন্দু। বাজারে পিড়ি টুলে বসিয়ে যারা চুল কাটতো এরাও ছিলো হিন্দু। বাড়ি বাড়ি ঘুরে কবিরাজি করতো আশ্চর্য ব্রাহ্মণ। স্কুল কলেজে যাদের ভয়ে ছাত্র ছাত্রী পড়ালেখা করে করে মানুষ হয়েছে সেই সকল শিক্ষক ছিলেন হিন্দু। আমি সেই সকল হিন্দু শিক্ষকদের জন্য আজও প্রার্থনা করি যারা ত্রিশ টাকা বেতনের চাকরিতে মানবেতর জীবন যাপন করে এই দেশের মানুষকে মানুষ করতে চেয়েছিলেন। কুমার পাড়া, কামার পাড়া, নন্দি পাড়া, জেলে পাড়া, তাঁতী পাড়া এইগুলো হিন্দু পাড়া আর হিন্দু পরিবারের বসত বাড়ি। উল্লেখিত পেশা সহ বহু পেশার হিন্দু সম্প্রদায় ১৯৭১ এ নিহত হয়েছেন। তাঁদের বেঁচে যাওয়া আত্মীয় পরিজন দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। তাঁরা কখনও দেশে এসে নিজেদের কথা বলেনি, দেশ হতে কোনো সুযোগ সুবিধা আদায়ের জন্য নিজেদের নাম লিখেনি। - আর এখন আজ অর্ধশত বছর পর মুক্তিযুদ্ধে হত্যার হিসাব চাইছে দেশের তথাকথিত নষ্ট নর্দমার কীট!
এই অভাগা দেশে রাজনৈতিক কোনো দল গোষ্টি দেশের ভালো চাহেনি। মুক্তিযুদ্ধ না আওয়ামী লীগের বাবার সম্পত্তি! মুক্তিযুদ্ধ না বিএনপির বাবার সম্পত্তি। মুক্তিযুদ্ধ - রাজাকারদের শত্রু ছিলো, শত্রু আছে, শত্রু থাকবে অনন্তকাল। যারা আজ ত্রিশ লক্ষ শহীদের কথা সত্য মিথ্যা যাচাইয়ে প্রশ্ন তুলছে তাদের একটি কথাই বলতে চাই - “ইতিহাসে মানুষ নামক কলঙ্ক আছে। ইতিহাসে বিভীষণ ছিলো, ইতিহাসে মীরজাফর ছিলো, ইতিহাসে রাজাকার ছিলো। আজ যে বা যাহারা মুক্তিযুদ্ধে নিহত ও শহীদ নিয়ে প্রশ্ন করছে এরা মানুষ নামের কলঙ্ক এরা মানুষ নামের অভিশাপ। এরা সমাজের কলঙ্কিত মানুষ বলেই নিজের পাপ আর অনাচার দিয়ে অন্যকে বিচার করার চিন্তা করে”।
আমি ব্লগে একটি কথা প্রায়ই বলি, “সময় ও সুযোগ করে লিখবো”। এই সময় ও সুযোগ অর্থ কোনো ছুটির দিন নয়। কোনো ঘড়ির সময় নয়। সময় ও সুযোগ বলতে বুঝিয়েছি - দেশের পারিপার্শ্বিক অবস্থা যদি মিনিমাম অনুকূলে থাকে, তাহলে আমি লিখবো। লেখালেখি করা আমার পেশা বা নেশা নয়। আমার কর্ম করে খেতে হয়। আমি একজন অতি সাধারণ কর্মী মানুষ। আমার কর্ম করতে হয়। আমার নিজের জন্য কর্ম করতে হয়। কিছু মানুষের জন্য আমার কর্ম করতে হয় যাদের কাছে আমি ঋণী।
শেষ কথা: দেশকে যারা মায়ের মতো শ্রদ্ধা করেছেন ভালোবেসেছেন, সেই সন্তানেরা মায়ের জন্য যুদ্ধ করেছেন। মায়ের জন্য শহীদ হয়ে মায়ের বুকে মিশে একাকার হয়ে গিয়েছেন। তাঁদের জন্য থাকবে অন্তরের গভীর থেকে অকৃত্রিম ভালোবাসা অনন্ত অনন্তকাল - কাল মহাকাল। দেশের প্রতি মায়ের প্রতি ভালোবাসা, মায়ের ত্রিশ লক্ষ সূর্য সন্তানদের প্রতি ভালোবাসা, মায়ের ত্রিশ লক্ষ সূর্য সন্তানদের প্রতি ঋণ কেউ মুছে দিতে পারবে না। আমি বিশ্বাস করি, মায়ের প্রতি ভালোবেসে যারা আত্মত্যাগ করেছেন স্বয়ং ঈশ্বর আল্লাহ ভগবানও এই ঋণের কাছে ঋণী হয়ে থাকবেন।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: আমার লেখাটি যদি কেউ ফেসবুক সহ যে কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেন অথবা শেয়ার করেন। - আমার পক্ষ হতে কোনো আপত্তি নেই। আমি খুশি হবো আমি কৃতজ্ঞ হবো, আপনার কারণে আমার লেখাটি দেশের অনেকে পড়তে পারবেন।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


