
কয়েকদিন যাবত এক মৃত ব্যক্তির দোষগুণ নিয়ে দেশের আপামর জনতা অনলাইন মোটামোটি গরম করে রেখেছেন। মৃত ব্যক্তিটি হচ্ছেন আমাদের দেশের সবচেয়ে নামী দামী ও সম্পদশালী লেখক। আমাদের দেশে দুইজন লেখক লেখালেখি করে সবচেয়ে বেশি সম্পত্তি করেছেন। একজন কাজী আনোয়ার হোসেন সাহেব আরেকজন হুমায়ূন আহমেদ সাহেব। হুমায়ূন আহমেদ সাহেব গত হয়েছেন এক যুগেরও বেশি সময় হয়ে গিয়েছে। অনলাইনে যেই বিষয়ে তাঁকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সেই ঘটনা আজ থেকে মোটামোটি ৪০-৫০ বছর আগের কথা। এখন হুমায়ূন আহমেদের পক্ষে ও বিপক্ষে অনেকেই যুক্তি অযুক্তি দিয়ে তর্ক করছেন।
ব্লগে আমার লেখা যারা অল্প বিস্তর পড়েছেন তারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন আমি কারও বা কোনো দলের পক্ষে লিখিনা। আমি লিখি নিরপেক্ষ অথবা আত্মপক্ষ হয়ে। পেশাগত কারণে আমার আইন নিয়ে পড়তে হয়েছে। আমি আইন বিশেষজ্ঞ নই তবে আইনের ছাত্র ও আইনের একজন কর্মীও। আমি হুমায়ূন আহমেদ সাহেবের নিয়োজিত উকিল নই। তাঁর প্রথম পক্ষের বা দ্বিতীয় পক্ষেরও উকিল নই। এবং উক্ত মামলার সাথে আমার দূর দূর পর্যন্ত কোনো সম্পর্কও নেই। পূজার ছুটিতে অবসর আছি তাই ব্লগে লেখালেখি করছি। আশা করছি, আবার কোনো ছুটি পেলেই আপনাদের মাঝে চলে আসতে পারবো। আমার নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোন থেকে আমি যা দেখতে পাচ্ছি তা হচ্ছে, এই যে আলোচনার মাঠ গরম হয়েছে - মূলত তা হচ্ছে ময়মনসিংহের ভাষায় “দুই সতীনের কাইজ্যা”। দুই সতীন নিজ নিজ পক্ষ থেকে অনেক কিছুই হয়তো বলবেন, কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ আত্মপক্ষে কিছুই বলতে পারবেন না, কারন তিনি সকল বলা না বলার বাইরে।
দুই সতীনের কাইজ্যা’র মূল বিষয় বস্তু হচ্ছে - অর্থ সম্পত্তি। প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদ এতো সম্পত্তি রেখে গিয়েছেন! যা নিয়ে আগামী লম্বা সময় আমাদের অনেক কিছু দেখতে হবে। হুমায়ূন আহমেদ কেনো বুড়ো হাবড়া বয়সে অল্প বয়সী একটি মেয়েকে বিয়ে করতে গিয়েছেন। আর তার প্রথম পক্ষের স্ত্রী কেনো এই বুড়ো হাবড়া বয়সে আবার বিয়ে বসতে গেলেন! এইগুলো এখন আর মূখ্য বিষয় না। মূখ্য বিষয় হচ্ছে প্রথম স্ত্রী এখন ক্ষমতার খুব কাছাকাছি আছেন। ক্ষমতা আর টাকার অপব্যবহার করেন না এমন মানুষ বাংলাদেশে বিরল। অর্থ সম্পত্তির লোভ লালসায় এই দেশে ভাই ভাইকে হত্যা করে। স্বামী স্ত্রীকে হত্যা করে, স্ত্রী স্বামীকে হত্যা করে। এই সকল কর্মকান্ড আমাদের দেশের প্রতিদিনের বিষয়। এমন আহামরি নতুন কোনো কিছু না। সিভিলিয়ানদের সামনে সকল খবরাখবর আসে না। হাসপাতাল থানা কোর্ট রুমে ফাইলের সংখ্যা বাড়তে থাকে, ফাইলের ওজন বাড়তে থাকে। শুধু সেই খবরগুলো পত্রিকা ম্যাগাজিনে প্রচারিত হয় - যারা দেশের বিশেষ পরিচিত অথবা নায়ক নায়িকা তারকা, নেতা নেত্রী ইত্যাদি।
দুই সতীন সোয়েটার জ্যাকেট গায়ে কাইজ্যা করছেন বিধায় সিভিলিয়ান তাদের মূল সমস্যা ধরতে পারছেন না। এখন এই দুই সতীন যদি দেশের সাধারণ জনতা হতেন তাহলে কেউ জানতেনও না - এরা কারা? কে - কোথায় - কি? এমনকি দুই সতীন যদি কাইজ্যা করে করে একজন আরেকজনের মাথার চুল টেনে ছিড়ে ফেলতেন তাহলেও সিভিলিয়ান জানতেন না। একজন আরেকজনের গালের মাংস কামড়ে দিলেও দেশের সিভিলিয়ান জানতেন না। কারণ এইগুলো দেশের নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়। এইগুলো জানে দেশের সরকারি হাসপাতাল, থানা আর কোর্ট।
উপসংহার: দুই সতীনের কাইজ্যা’র মূল বিষয় বস্তু হচ্ছে - অর্থ সম্পত্তি। দুই সতীনের কাইজ্যা’র মাঝে আমাদের আসলে কোনো কাজ নেই। তাদেরকে কাইজ্যা করতে দিন। আমরা নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করি। সামহোয়্যারইন ব্লগের বহু লেখক ও পাঠক ভালো জ্ঞান রাখেন। আশা করি আমার ব্যাখ্যা তাঁদের পছন্দ হবে। সবাইকে ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১২:৩৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


