somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

...।।...ভালোবাসার বৃষ্টি...।।...

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ১২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :







আজ প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে শিশির একরকম বন্দী জীবন যাপন করছে। এরই মাঝে চার তালার ছাদের চিলেকোঠার এই ছোট্ট ঘরটাকে অনেক আপন করে নিয়েছে। ঘরের এক কোনে পড়ে আছে একটা আধভাঙ্গা টেবিল- চেয়ার, কিছু অগোছাল বই, অপরিস্কার পানির মগ, ভাঙা একটা আলনা আর তাতে কিছু এলোমেলো ময়লা কাপড়। ছোট্ট একটু খানি জানালা দিয়ে মাঝে মাঝে দিনের সুর্য, আর রাতের চাঁদ-তারারা উঁকি দেয়। হয়তবা পথ ভুল করে কোন অচেনা পাখি উড়ে এসে বসে কার্নিশে, কিচির মিচির ডেকে চলে আপন মনে।

একমাত্র জানালা দিয়েই সে দেখে দূরের আকাশের মেঘ আর নক্ষত্রের মেলাকে। কত-শত রঙের মেঘ। ইশ সে যদি ছুতে পারত! সত্যিই মেঘের অনেক রঙ। আচ্ছা মানুষের জীবনেও তো অনেক রঙ, কিন্তু আমার জীবনটি ধূসর কেন? কেন এত তাড়াতাড়ি আমার জীবনটা থমকে দাঁড়াতে চায়? কেন হারাতে চায় গহীন আঁধারে? আরও কত প্রশ্ন উঁকি দেয় মনের কোনে। এসব ভাবতে ভাবতে একসময় ঝিমুনি চলে আসে, হয়তবা একটু ঘুমও। হঠাত বৃষ্টির ফোটার স্পর্শে জেগে ওঠে। জানালা বন্ধ করতে ভুলে গিয়েছিল হয়ত। বালিশে হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে বাইরে তাকিয়ে আপন মনে বৃষ্টি দেখতে থাকে। কি অপরূপ সুন্দর বৃষ্টিটা! খুব ইচ্ছা হয় সেগুলো গায়ে মাখতে। কিন্তু...........।

আজ সকাল থেকেই অঝোরে বৃষ্টি পড়ছে। মনে হচ্ছে সমগ্র আকাশটা কারও উপর অভিমান করে অঝোর ধারায় কাঁদছে। কোনকিছুর বিনিময়ে যেন এই কান্না থামবার নয়। বিছানাটা বেশ খানিকটা ভিজে যেতেই সে নিতুকে ডাকতে থাকে। কিন্তু সে আসে না, হয়ত বৃষ্টিতে ভিজছে। মনটা কেমন জানি উদাস হয়ে ওঠে। পুরানো স্মৃতিরা ভিড় করে বুকের মাঝে, ভেসে ওঠে চোখের কোনে। কত সুন্দর সময়ই না ছিল তার। এমন ঝুম বৃষ্টিতে সেও কত ভিজেছে একসময়। আর এখন.........।

এরমাঝে কখন নিতু এসেছে সে বলতে পারে না। চমক ভাঙে নিতুর ডাকে, ভাইজান আপনার চা, আপনি না আজ বাইরে যাবেন। চায়ে চুমুক দিতে দিতে বলল, দেখিস না বাইরে কেমন বৃষ্টি, কিভাবে যাব? কিন্তু বের তো ওকে হতেই হবে। এই দিনটার জন্যই সে অপেক্ষা করে আছে, কত স্বপ্ন, শত আশা নিয়ে বুক বেঁধে আছে এই দিনের প্রতীক্ষায়। কিন্তু মাঝ থেকে বাধ সাধল এই মরার বৃষ্টি। জামা পরতে পরতে আপন মনেই বলে উঠল, বৃষ্টিটা আজকে না হলেই কি হত না? কি-আর করা, আমার ইচ্ছাতে তো বৃষ্টি আর আসবে যাবে না।

হ্যাঁ, সত্যিই তো তার ইচ্ছাতে তো বৃষ্টি আর আসবে যাবে না। বৃষ্টি তো এখন অনেক দূরের কেউ। আর এই দূরত্ব শুধু পথের না মনেরও। বৃষ্টি আজ ট্রেনে করে যাবে। খুব কাছের এক বন্ধুর মাধ্যমে এই খবর সে পেয়েছে। বাড়ির পাশের যে লোকাল ষ্টেশনটা যেখানে ট্রেন থামে মাত্র ৫ মিনিটের জন্য। এরই মাঝে ওর যা করার করতে হবে। আজ দীর্ঘ ৫ বছর পর ওর সাথে দেখা হবে, ভাবতেই কেমন জানি লাগে। সত্যি হবে তো? এই ৫ বছরে ওর সাথে কোন যোগাযোগ নেই। ভাবতেই অবাক লাগে একসময় একদিন যাকে না দেখলে কেমন অস্থির থাকত, সে কিভাবে পারল এতটা দিন এভাবে কাটাতে? আসলেই মানুষ নামক প্রাণীটি বড়ই অদ্ভুত! বৃষ্টি নাকি জানালার পাশে বসেছে, হ্যাঁ তাইতো বসার কথা। ট্রেনে চড়ে জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখতে খুব ভালবাসত ও । আর আমি ওর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতাম, বাতাসে ওর খোলাচুল উড়ত, কি যে সুন্দর লাগত! মনে হত পৃথিবীর সব সৌন্দর্য ভর করেছে ওর উপর। যতবার ওকে নিষেধ করতাম বাইরে হাত বের কোর না, আর ততবারই অবাধ্য শিশুর মত হাসতে হাসতে বলত, বাইরে হাত দিলে কি হয়? বলতাম, তুমি যদি ব্যাথা পাও? ও হেসে বলত, না হয় পেলামই একটু। কতক্ষন পর কানের কাছে আস্তে আস্তে বলত, “এত ভালো কেন বাস আমায়? যদি কোনোদিন হারিয়ে যায় কি করবে তখন?” বলতাম, আমি তোমাকে হারাতে দিলে তো। তখন ও নির্ভয়ে আমার হাতটা আঁকড়ে ধরে থাকত। কি যে এক মায়াময় অনুভূতি........।

কিন্তু আমি পারিনি আমার কথা রাখতে। এই ব্যার্থতা কি শুধুই আমার? এজন্যই হয়ত আজও ছুটে চলেছি ওর পিছনে। জানি ও আমার হবার নয়, তারপরও ছুটছি.........। জানিনা কীসের আশায়......... কোন সে মায়ায়......... আজও খুঁজে ফিরি তাকে। চোঁখটা ঝাপসা হয়ে আসে ওর। আচ্ছা, দেখা হলে কি বলব ওকে? আমাকে চিনবে তো, নাকি না চেনার ভান করবে? আমার সাথে কথা বলবে তো? না-কি আমি শুধু দূর থেকেই দেখব? এসব ভাবতে ভাবতে একসময় কাকভেজা হয়ে সে ষ্টেশনে পৌঁছায়। হুইছেল বাজাতে বাজাতে একসময় ট্রেন এসে থামে। দু’হাত ভর্তি বাদল দিনের প্রথম ফোঁটা কদম ফুল নিয়ে শিশিরের উৎসুক দু’চোখ হাজারও অচেনা মানুষের ভিড়ে খুঁজে ফেরে সেদিনের সেই হারিয়ে যাওয়া বৃষ্টিকে............।


৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×