কলেজ লাইফে এক মাইয়ার অনুরোধে একবার একখান এমএলএম এর সেমিনারে গেছিলাম। ওইখানে একজন কমপ্লিট পড়া পাবলিক একখান ল্যাপটপ, একখান প্রোজেক্টর নিয়ে বয়ান দেয়ার জন্য প্রস্তুত হইতে আছিলো, কিছুক্ষন পর প্যাচাল শুরু হইলো, প্রথমে কিছুক্ষন আজাইরা প্যাচাল পাইরা একখান প্রতিবন্ধি মানুশের জীবন সংগ্রাম দেখাইলো, ওইটা ভালা লাগছে ইন্সপাইরিং আছিলো। মাগার তার পর শুরু হইলো আসল বয়ান। প্রথমে এক ব্যাঙ্গের ছাতা নিয়ে আধ ঘন্টা বক্তৃতা দিলেন, শুনলাম তারপর সেই মাশ্রুম জাত বিভিন্ন পন্য নিয়ে ননষ্টপ আলোচনা হইলো। এক তুথপেষ্ট নিয়ে আধঘন্টা প্যাচাল । কপাল ভালো ছিলো ফোনে চার্জ ছিলো, বইসা বইসা মিগ ৩৩ এ চ্যাটাইলাম।
ওই বিষয় নিয়ে আর মাথা ঘামাইনি, মাইয়া খুশি হইসে ওইটাই অনেক। তবে এখন আর চুপ করে থাকতে পারছিনা, ওখানে এমএলএম এর সিষ্টেমের একটা ধারনা পেয়েছিলাম। সেটা এরকম , আপনি মেম্বার হবেন, মেম্বার হইলে, দুইটা ট্যাবলেট পাবেন(বিয়াফুক পাওয়ারফুল) নাম ভালোমত খেয়াল নাই। দুই কৌটার দাম ১৫০০ টাকা, ওই ১৫০০ টাকা দিয়েই রেজিষ্ট্রেশন।

এখন কথা হইল, আপনি পাবলিকরে এই কোম্পানির কেরামতি প্রোডাক্ট গুলার গুন কইবেন, কেও চাইলে, আইনা দিবেন। আইনা দিলে পয়েন্ট আছে। আর সবচেয়ে ভালো হয় আরো কাউরে যদি ওই ব্যাবসায় ইনক্লুড করতে পারেন। তাইলে আপনার চেইন বড় হইবো। আর সে যেই ১৫০০ টাকার ট্যাবলেট পাইবো সেইটার বোনাস তো আছেই।

খালি প্রথম কয়েকদিন খাইটা খাইটা কয়েকটা ভাইস্তা যোগাড় করে আপনার চেইন বড় কইরা ফালান। বাস। তারপর টাকা আপনা আপনি ই আসবে । তাহারা প্রোডাক্ট বেচিবে, আর আপনি পয়েন্ট পাইবেন । তাহারা তাদের চেইন বড় করলে তো কথাই নাই। আপনি তো পালের গোদা, তখন আরো মজা, তাদের ভাইস্তাগন বেচিবে, আপনার ভাইস্তারা পয়েন্ট পাইবে, আপনিও পয়েন্ট পাইবেন। পুরাই অস্থির অবস্থা। টাকাই টাকা। এভাবে কইতে গেলে সারাদিন লেগে যাবে তাও লেভেল শেষ হবেনা।

মুল কথা হচ্ছে আপনার বিরাট চেইনের একেবারে নীচের কেও কিছু বেচলে সেটাও আপনারে কিছু পয়েন্ট যোগাইবে। আবার যাহারা বেশী পয়েন্ট পাইয়াছেন তাহাদের বৈদেশ ভ্রমন।

তাহার মতে এমএলএম নাকি পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য । আহা কত চমৎকার সিস্টেম। শুনলেই মনটা ভইরা যায়।

তাহলে আমার সমস্যা কোথায়???

হুম, ধরুন,২৫০ টাকার একটা সাবান বেচার জন্য ১০ পয়েন্ট। আপনার চেইনের ৩য় মানুষ সেটা বিক্রি করলো। এখন সে পাবে ১০ পয়েন্ট , তার উপরের জন পাবেন ৫ পয়েন্ট আর আপনি পেলেন ২.৫ পয়েন্ট অর্থাৎ সব মিলে ১৭.৫ পয়েন্ট। এক পয়েন্টের জন্য যদি ১০ টাকা হয়। তবে এক সাবানের জন্য কোম্পানি কমিশন দেবে ১৭৫ টাকা!! বাকী থাকলো (২৫০-১৭৫)=৭৫ টাকা। আর লেভেল বেশী হলে আরো বেশী বোনাস দিতে হবে। আবার অনেক বেশী পয়েন্ট হলে বিদেশ ভ্রমন। সেই টাকাতেও সাবান বিক্রির টাকার ভাগ আছে। সব ভ্যাট / ট্যাক্স যোগ করলে আরো কিছু টাকা কমবে। তাহলে আপনাদের কেরামতি সাবানের দাম কততে গিয়ে ঠেকবে???

নাকি আপনার ওয়ান ড্রাগন কোম্পানি অনেক দয়ালু, আসলেই আপনাদের সাবানের দাম অনেক বেশী, কোম্পানি নিজের পকেট থেকে কমিশন দেয়। আহা কত ভালো।

সেরকম হলে আপনার সেই কোম্পানি অনেক আগেই বন্ধ হয়ে যেত।

এসব এমএলএম শুধুমাত্র মানুষের সরলতা আর বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে মানুষকে ঠকাতে ব্যাস্ত। দুঃখের বিষয় হল অনেক সরল, এমনকি ধর্মপ্রান মানুষও এদের বিশ্বাস করে এই ব্যাবসায় যুক্ত হচ্ছে আর শুধু তাই না, অনেক মানুষকে এই ব্যাবসায় টানছে।

আপনার এই কোম্পানি অবশ্যি ড্রাগন কোম্পানি তবে সেই ড্রাগন আপনাদের গ্রাস করছে। পন্য হয়ত আসলেই ভালো । কিন্তু সেই পন্যের দাম এরকমভাবে বাড়িয়ে বিক্রি করা কতটা নৈতিক? আর কতটাই বা ইসলামসম্মত?

ইস, মানুষের যে কবে বুদ্ধি হবে।