ছোটবেলা থেকেই আমার জীবনে এক্সাইটমেন্ট একটু কম। দুরে তো অনেক পরের কথা, পাশের বাড়ির ছাদেও উঠতে পারতাম না। মা আমাকে নিয়ে সবসময় অনেক ভয়ের মধ্যে থাকে। অনেক বেশী ভালোবাসা থেকে এই ভয়টা চলে এসেছে। যাই হোক মুল কথায় আসি।
৯ জুলাই ২০১১ , শনিবার।
দিনটা আর দশটা সাধারন দিনের মত শুরু হল। প্রতিদিনের মত আজও ক্লাসে লেট। ক্লাস যে সময় শুরু হয় তখন আমার সকাল শুরু হল। আমার বন্ধু সাদীর ফোনে ঘুম ভেঙ্গে গেল। কোনমতে নাস্তা করে গোসল করে দিলাম একটা দৌড়। ক্লাসে পৌছলাম ক্লাস শুরু হওয়ার প্রায় এক ঘন্টা পরে। আমরা পাচজন বন্ধু ক্লাসে সবসময় একসাথে বসি। আজ ক্লাসে গিয়ে দেখি আমার যায়গায় অন্য একটা ছেলে বসে আছে। বসলাম ক্লাসের এক কোনায়। ল্যপটপ অন করে ফেসবুকে ঢুকলাম। :p স্যার আনমনে পড়িয়ে যাচ্ছে আর আমি নটিফিকেশন চেক করা নিয়ে ব্যস্ত। ক্লাস শেষ হল। ক্লাসের পর ল্যব সেখানেও ফাকী দিলাম। তারপর কিছুক্ষন ষ্টাডী হলে সব বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিলাম। নাদিম , আমার অনেক পুরানো ফ্রেন্ড। তাকে বলেছিলাম আজকে রাতে আমার বাসায় থাকতে। প্লান ছিলো দুইজন ঘুরবো। সে একটা লুঙ্গি নিয়া চলে এসেছে। দুইজন মিলে বাসায় গেলাম। তখন বাজে বিকাল পৌনে ছয়টা।
আমাদের প্লান ছিলো ৩০০ ফুট রাস্তা দিহে হাটবো আর চা খাবো । পরের দুইদিন হরতাল , ভার্সিটি বন্ধ। মনের মধ্যে কেমন যেন লাগছে। নাদিম কে বললাম, চল টঙ্গী যাই। ও খুশিমনে রাজি হয়ে গেল। পথে সামির সাথে দেখা হল। তাকে বলতেই সেও রাজী হয়ে গেল। সামি গেল বাসায় ব্যগ রাখতে আর আমি আর হাসান ক্যফেটেরিয়াতে বসে মধু মামার চায়ে চুমুক দিতে দিতে একটা একশন প্লান বানালাম। যাবো টঙ্গী ষ্টেশন রোড। সেখান থেকে হাটতে হাটতে উত্তরা আসবো। (আজাইরা বলছি না। আমাদের হাটার অভ্যাস অনেক ভালো। একদিন ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে এন এস ইউ তে হেটে এসেছি আমি আর নাদিম) । উত্তরাতে এসে ভালো দেখে একটা ফুটপাত খুজে বের করবো । তারপর দুইজন মিলে ঘুমাবো। কিন্তু সামি আসায় ঘুমানোর প্লান ক্যনসেল করতে হল। প্লান হল , ষ্টেশন রোডে যাবো , তারপর ফিরে আসবো। আমরা বের হলাম। পরের দিন হরতাল তাই বাসে অনেক ভীর। আর বসুন্ধারা তে থাকতে থাকতে ফার্মের মুরগীর মত অবস্থা। বাসে ভীর দেখলেই ভয় লাগে। তারপরেও একটা মধ্যম লোডের তুরাগে উঠলাম। ঝুলতে ঝুলতে পুরাই অবস্থা খারাপ। উঠলাম তিনজন আর ভাড়া দিলাম দুইজনের । তাও ঝাড়ি দিয়ে ২ টাকা কম :p । আসলে এই বুদ্ধিটা নাদিমের আমার কোন দোষ নাই। :p । বাসটার ইঞ্জিনে টেকনিক্যাল প্রবলেম ছিলো। আমাদের নামিয়ে দিলো টঙ্গী বাজারে। সামি আগে টঙ্গী থাকতো। ওর অনেক পুরানো কথা মনে পড়ে গেল। তার মধ্যে একটা ছিল এক মিষ্টির দোকানে থেকে প্যকেট চুরি করা। আমরা সেই দোকান খুজতে লাগলাম । পেয়েও গেলাম। সবাই মিলে মিষ্টি খেলাম। বের হয়ে গেলাম কাছেই চমতকার একটা যায়গায়, কিছুক্ষন হাটাকাটি করলাম। পরে শুনলাম যায়গাটা নাকি খুব একটা ভালো না। তাই বের হলাম। বাসায় আসবো কিনা ভাবছিলাম। সামি বললো চল রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে ঘুরে আসি। আমরা হাটতে লাগলাম । সময় লাগলো দশ মিনিট। তখন বাজে রাত দশটা তিরিশ মিনিট। ষ্টেশনের পরিবেশ অনেক থমথমে । আমরা পৌছাতেই একটা ট্রেন ছেড়ে গেল। আর একটা ট্রেন প্লাটফর্মে দাড়িয়ে আছে। হটাত করেই মনে হল ট্রেনে যাই। দাড়িয়ে থাকা ট্রেনটার সামনে অনেকখন বসে রইলাম, ট্রেন ছাড়েনা। এর মাঝে দুইটা ট্রেন ছেড়ে গেল। তারপর এলো লালমনি এক্সপ্রেস। এই ট্রেন দিয়েই আমার ট্রেন জার্নির সাথে পরিচয় হয়। আবার সেই ট্রেন দেখে অনেক ভালো লাগলো। আমরা দৌড় দিলাম। দেখি সব বগি হাউসফুল । একটি বগি প্রায় খালি। আমরা খুশিমনে ওই বগির দিকে গেলাম। হাসান দুরে দাড়িয়ে তার তিন নাম্বর সিগেরেট শেষ করতে ব্যস্ত। সামি বগিতে উঠেই দ্রুত নেমে আসলো। আমি ঠিক বুঝলাম না আমিও উঠলাম । উঠে দেখি নীচেই একটা বস্তা, আর খুব অদ্ভুত একটা দুর্গন্ধ। ভালো করে তাকিয়ে দেখি পচা লাশ ! হটাত লাশ দেখে অনেক ভয় পেয়ে গেলাম। নেমে আসলাম। সামিও অনেক ভয় পেয়েছে। দ্রুত নাদিমের কাছে থেকে সিগেরেট নিয়ে কয়েক টান দিলো। আমি তো স্মোকিং করিনা। আমি তাদের দিকে শুধু চেয়ে থাকলাম। গিয়ে উঠলাম পিছনের দিকের একটা কম্পার্টমেন্টে। ট্রেন চলতে শুরু করলো। ট্রেন থামলো এয়ারপোর্ট ষ্টেশনে। সেখানে মাথা খারাপ করা ভীড়। যখন ভিড় ঠেলে বের হলাম মনে হল যেন ওয়ার্ন্ড কাপের সেমি ফাইনাল ম্যচ দেখে বের হলাম।
আমি হাসান আর সামি রাস্তা দিয়ে হাটতে লাগলাম। কোন বাস পাবো আশা করিনি, তবে বি আর টি সি এর একটা বাস খালি সিট সহ পেলাম
Re-Dhun এর গান বাজছে। আর আমি এই নোট টা লিখছি। দিনটআ হয়ত অনেক আলাদা না। তবে আমার জন্য অনেক আনন্দদায়ক। সামি আর নাদিম ড্রাইং রুমে আছে, এখনো লাঞ্চ করিনি। দেখি খাবারদাবারের কি অবস্থা।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



