অনেক প্রাণীভোজী বা ভিগানিজমের ব্যাপারে দ্বিধাদণ্ডে থাকা মানুষের কাছে এই প্রশ্ন প্রায়ই শুনতে হয়। প্রশ্নটাকে যদি আরও বিস্তারিতভাবে যদি বলতে যাইঃ
"যেসব প্রাণী আমরা খাই সেসব প্রাণীগুলো অনেক দিন বাচে আর একটা দীর্ঘসময় তাদেরকে বার্ধক্যের কষ্টে ভুগতে হয়। নানা রোগবালাই তাদের আক্রমন করে। অনেক কষ্ট পেতে হয়। প্রাণীদের কষ্ট বা Suffering এ যদি এখানে মুখ্য হয় তাহলে কি আমাদের উচিত না তাদের দীর্ঘসময় কষ্ট না দিয়ে কম সময়ে সহজে মেরে ফেলা ? "
প্রাণীভোজীরা যারা জীবন কয়েকটি নির্দিষ্ট প্রাণী খাওয়ার প্রতি আকৃষ্ট থাকে। আর সেইসব প্রাণীর জন্যই তারা এই যুক্তিটি দেখায়। ধরে নিলাম একজন ভ্রমনকারি যিনি সাড়া পৃথিবী ঘুরেছেন, উনিই মাছ ও প্রাণীসহ সব মিলিয়ে ৫-৬ শত প্রজাতির বেশি প্রাণীর স্বাদ পেয়েছেন। পৃথিবী জুড়ে রয়েছে লক্ষ লক্ষ প্রজাতি আর তারা সবাই বার্ধক্যের কষ্টে ভুগে। এমনকি মানুষও।
এই যুক্তি যদি গ্রহণ করা হয়, তাহলে একে পৃথিবীর সকল প্রাণীর ক্ষেত্রে গ্রহণ করা লাগবে। তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে
১। যেসব প্রাণী আমরা খাচ্ছি শুধু সেসব প্রাণীর ক্ষেত্রেই কেন এই যুক্তি? যেখানে পৃথিবীর প্রায় ৯৯% প্রাণীকে আমরা না খাওয়ার ইচ্ছা রাখি, না খেতে পারবো।
২। বার্ধক্যের সমস্যা তো মানুষেরও আছে। আর আমাদের মস্তিস্তের গঠন যদি চিন্তা করি আমাদের ব্যথা অনুভব করার ক্ষমতাও অনেক বেশি। তাহলে মানুষ বার্ধক্যে চলে আসলে কি তাদেরও হত্যা করা উচিত ? আর পুষ্টির ওজুহাতে খাওয়া উচিত?
অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রাণীভোজীরা উত্তরে স্বাস্থ্যের কথা বলে।"যেসব প্রাণী আমরা স্বভাবত খাই সেগুলো স্বাস্থ্যসম্মত আর ক্ষতিকর উপাদান তার মধ্যে নেই" - সাধারন প্রাণীভোজীদের গড় উত্তর। অথচ ভিগানরা বারবারই প্রাণীভোজীরা যেসব প্রাণী খেয়ে থাকে তার সবগুলোই কোন না কোন স্বাস্থ্য সমস্যা ও পরিবেশ দূষণের কথা বলে এসেছে । অপচয়ের সাথে, দারিদ্র্যের সাথে, অনাহার, রোগ-বালাই, নিষ্ঠুরতার সাথে সম্পর্কের কথা বলে।
অনেকের একটা ভুল ধারনা হচ্ছে তারা মনে করে, প্রকৃতি সর্বদা আমাদের পক্ষে। প্রকৃতি আমাদের উপকারের, প্রকৃতি মঙ্গলের। অথচ এটা মোটেই সবসময় সত্য নয়। প্রকৃতি কখনো নির্মম হয়, আবার কখনো কল্যাণের হয়। প্রাণীর মধ্যে অপকার তো আছেই, অনেক উদ্ভিজ জিনিসও আমাদের জন্য ক্ষতিকর ও পরিত্যাজ্য ; যতই প্রাকৃতিক হোক না কেন।
বার্ধক্য এবং বার্ধক্যের কারনে কষ্ট এটাও প্রকৃতির নির্মম বাস্তবতা। বনে-জঙ্গলে, সমুদ্র গভীরে এমন অসংখ্য, অগণিত জীব আছে যারা এই নির্মম বাস্তবতার স্বীকার হচ্ছে, হয়েছে, জীব বিলুপ্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত হবে। আর সে ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করারও নেই। আর সবচেয়ে বড় কথা আমাদের কোন অধিকার নেই কোন সংবেদনশীল প্রাণী বেচে থাকবে কি বেচে থাকবে না সেটা নির্ধারণ করার। তাদের মরে যাওয়ার কোন ইচ্ছা নেই, তারা এই জগতকে আরও দেখতে চায়। তাই আমরা যখন তাদের হত্যা করার চেষ্টা করি তারা আত্মরক্ষা করে। একজন সাধারণ বৃদ্ধ মানুষও জীবন থেকে কষ্ট পেলেও তাদের কেউ বার্ধক্যের কষ্টের জন্য কেউ তাদের হত্যা করবে সেটা মেনে নিতে পারে না । তারাও তাদের জগতকে আরও দেখতে চায় । আমরা বেশি হলে আমাদের সাধ্যমত জ্যৈষ্ঠ মানুষ ও প্রাণীদের কষ্টকে প্রশমন করতে পারি। তাদের রোগ নিরাময়ের ব্যবস্থা করতে পারি। মিথ্যা অজুহাতে তাদের হত্যা নয়।।
আরও পড়ুন
ভিগানদের সম্পর্কে ভুল ধারনা (কিউ অ্যান্ড এ) পর্ব ১
আমাদের ক্যানিন দাত আছে, এর মানে কি এই নয় যে প্রকৃতি আমাদের মাংস খাওয়ার পক্ষে ?
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১১:৪২