অনেক দিন পর একটা বাংলা সিনেমা
ভাবনাহীন প্রণয়ীযুগল দেখে বিষন্ন মনে প্রশান্তি জাগে। তাই রোমান্টিক সিনেমা ভেবে ‘ভালবেসে মরতে পারি’ দেখতে মনস্থির করলাম। হলে এসে কয়েকজন নারী দর্শক দেখে স্বস্তি পেলাম। যদিও বর্ষাকাল তবু লাল পেড়ে বাসন্তী রংয়ের শাড়িতে অতিরিক্ত লিপস্টিক, স্নো-পাউডার আর কাজলের কড়া মেকাপ। আষঢ়ের ঝুম বৃষ্টিতে গরম কম সেকারণে কোট-টাই পড়া একজন ভদ্রলোককেও পেলাম।
সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে সিনেমা হলে প্রবেশ করলাম। রোমান্টিক কিংবা এ্যাকশন জঁরায় ধন্দে লাগলেও আশাšি^ত হলাম ক্যামেরার পরিশীলিত ব্যবহারে। ক্যামেরার গোপন দৃষ্টি কোন শিল্পীর ছতরে নিক্ষিপ্ত হয় নি। ভাল লেগেছে এক সময়ের আবশ্যক উপাদান ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টা নেই একটাও। সিনেমা শেষে নায়িকাকে দিয়ে ভালবাসি বলানোটা গতানুগতিকতা থেকে বেরিয়ে আসার প্রচেষ্টা। মনপুরা জোয়ারের পর সিনেমার গানকে বিজ্ঞাপনের কাজ লাগানোর হচ্ছে, সে চেষ্টার ছাপ গানগুলোতে স্পষ্ট। সমাজে সন্ত্রাস-খুন-জখম ইভটিজিংয়ের মতো বিয়ষগুলো বেড়ে গেছে - এগুলো তুলে ধরা একজন শিল্পীর দায়িত্ব। কিন্তু এতই কী বেড়ে গেছে, এগুলোর পরিমিত ব্যবহার কি করা যেত না ?
পর্দায় সাকিব খানের আগমনের সময় তিনটি সমান্তরাল ঘটনাকে সমন্বয়ে সম্পাদকের আনাড়িপনায় সাসপেন্স তো বাড়েই নি বরং প্রথমেই বিরক্তির উদ্রেগ করেছে। কাজী হায়ৎ কী করে অভিনেতা হয় আমার মাথায় আসে না ? যে রাজনৈতিক অঙ্গণ থেকে বেডর“ম পর্যš— বিশ্রী তর্জনী দুলিয়ে একই ঢংয়ে কথা বলে। ওনার সারা জীবনে একটি মাত্র ছবিতে অভিনয় করা উচিত ছিল । কারণ ওনার বাকি সব ছবি প্রথমটার পূণরাবৃত্তি। তিনি বরং সিনেমার ট্রেলারে ভয়েস দিলে ভালো করবেন। বাংলা সিনেমার স্বর্ণযুগে দর্শক হলে আসতো তার কাহিনী শুনে। সিনেমা দেখে হাসতো-কাঁদতো, সাসপেন্সে শিহরিত হত, মুখে মুখে ফিরত কাহিনী।
পরিচালক বদিউল আলম খোকন সম্পর্কে একটি কথা বলি - যুগের ভাষা বুঝতে হবে, যাদের নিয়ে ব্যবসা করবেন তাদের টোন ধরতে পারবেন না, যা-তা খাওয়াবেন, তাইলে ক্যামনে হয়, কন? নতুন দর্শক গান, চটকদার সংলাপ আর এ্যাকশন ইয়ার-আলি-টিগিস-টিগিস জাতীয় বাতিকগ্রস্থ ফর্মূলার ছবি ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছে। সময়টা এখন নতুনের, অবাধ তথ্য প্রবাহের, যেখানে মেধাকে আটকে বা চাপা দিয়ে রাখা যায় না। সময় তাগিদ দিচ্ছে যাচাইয়ের সেখানে মেধাশূন্য দৃশ্যচোরদের স্থান বাতিলের দলে।
আমি জানি, আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। কারিগরী সমস্যা, উপযুক্ত প্রশি¶ণের অভাব, টাকা নেই, সময়ের অভাব। কিন্তু এদেশেই একটা সিঙ্গেল সটের জন্য কেউ দিনের পর দিন ভাবছে, চরিত্রের মুখে উপভোগ্য বিশ্বাসযোগ্য সংলাপ জুড়ে দেওয়ার জন্য রাতের পর রাত না ঘুিময়ে কাটিয়ে দিচ্ছে, চেয়ে চিšে— আনা ফিল্ম দিয়ে বিশ্বজয়ী চলচ্চিত্র বানাচ্ছে। সেই দেশের নাগরিক হয়ে আমরা কেন কোন তর“ণের ¯^প্নের এই সেলুলডের ফিতাকে একটা ফালতু সটে নষ্ট করব? আর যে পেশা থেকে আমার র“টির“জি আসে তাকে শ্রদ্ধার চোখে কেন দেখব না, সেটা সম্পর্কে সচেতন থাকব না? আমার এত কষ্টের ফসল দেখে মানুষ হাসবে, নাক সিটকাবে? কেন জবাবদিহিতা থাকবে না নিজের কাছে, সমাজের কাছে, দেশের কাছে? সর্বশেষে হাসান আজিজুল হক স্যারের একটি প্রশ্ন দিয়ে শেষ করছি, সবকিছুই কি লুপ্ত হতে দেব আমরা?
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১:৩৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




