somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রানী তোমানের মূর্তি (একখন্ডে সমাপ্ত সম্পূর্ণ ফ্যান্টাসি-হরর গল্প)

০৯ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ১০:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সূর্যটা প্রায় পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে। সূর্যের অস্ত যাওযার এই দৃশ্যটা প্রতিদিন মুগ্ধ হয়ে দেখে লিন্ডা, আর দেখে সরাইখানার বাইরের উঠানে রাখা রানী তোমানের মূর্তিটাকে।

টেক্সাস শহরের অনেকটা বাইরে অবস্থিত ক্রিস আর লিন্ডার অনেক কষ্টে তৈরি করা সরাইখানা "লিন্ডা'স লজ"। লিন্ডার স্বামী ক্রিসের বয়স প্রায় ৭৫ এর কাছাকাছি আর লিন্ডার বয়স ৬৮। কোন ছেলেমেয়ে নেই ওদের। দীর্ঘদিন ধরে এই সরাইখানা চালাচ্ছে ওরা স্বামী-স্ত্রী মিলে। সুখাদ্য আর অমায়িক ব্যাবহারের জন্য হাইওয়ের যাত্রীরা কিছুটা ঘুরে হলেও ওদের সরাইখানায় আসে, খেতে আর বিশ্রাম নিতে। বিয়ের পর থেকেই লিন্ডা বাইরের উঠানে রানী তোমানের মূর্তিটাকে দেখে আসছে। প্রায় ৭ ফুট উচু রানী তোমানের মূর্তি সগর্বে দাড়িয়ে আছে হাতে এক ভয়ঙ্কর দর্শন ছোরা নিয়ে। মাথায় ময়ুরের পালকের তৈরি মুকুট। কানে বেশ বড় ঝিনুকের তৈরি দুল। পায়ের কাছে জিভ বের করে দাড়িয়ে আছে ভয়ঙ্কর দর্শন এক জংলী কুকুর। যেন এক্ষুনি অদৃশ্য কোন শিকারের উপর ঝাপিয়ে পড়বে ওটা। বিয়ের পর প্রথম প্রথম মূর্তিটাকে দেখে বেশ ভয় পেত লিন্ডা কিন্তু এখন আর পায় না। ক্রিসের কাছে রানী তোমানের মূর্তিটার ইতিহাস শুনেছে লিন্ডা। ক্রিসের দাদার দাদা, রেমন্ড, অনেক আগে জঙ্গলে ঘেরা রেড ইন্ডিয়ানদের একটা গ্রামে গিয়েছিলেন শিকার করতে। সৌভাগ্যক্রমে রেড ইন্ডিয়ান সর্দারের একমাত্র মেয়েকে তিনি উদ্ধার করেন এক বন্য শুকরের কবল থেকে। কৃতজ্ঞতা স্বরূপ সর্দার রেমন্ডকে রানী তোমানের এই মূর্তিটা উপহার হিসেবে দেয়। রানী তোমান রেড ইন্ডিয়ানদের অনেক পুরোনো এক দেবী। ইন্ডিয়ানদের বিশ্বাস, যুগে যুগে তাদের উপর যত বিপদ এসেছে তার মোকাবেলা করে তাদেরকে নিরাপত্তা দেয় রানী তোমান। তোমান কে তাই তারা ডাকে নিরাপত্তার দেবী বলে। রেড ইন্ডিয়ান সর্দার রেমন্ডকে একটা কথা বলে দিয়েছিল, “কখনও অসম্মান করোনা দেবীর, দেখো বিপদে ঠিক তিনি তোমার পাশে এসে দাড়াবেন।”

সেই থেকে আজ পর্যন্ত রেমন্ডের বংশধররা দেবী তোমানের মূর্তিটা সযত্নে সংরক্ষন করে আসছে। লিন্ডা জানে ব্যাপারটা কুসংস্কার ছাড়া আর কিছুই না। কিন্তু কিছু বলেনি ক্রিসকে। থাকনা, যে যার বিশ্বাস নিয়ে।

রাত প্রায় ১২ টা। এখন আর কাস্টোমার আসবেনা বললেই চলে। লিন্ডা রান্নাঘরের সিন্কে এঁটো বাসন মাজছে। ক্রিস ক্যাশের হিসাব নিকাশ নিয়ে ব্যাস্ত। হঠাৎ দরজা খুলে তিনজন মুখোশ পড়া লোক হুড়মুড় করে ভিতরে এসে ঢুকলো। একজন দৌড় দিয়ে রান্নাঘরে ঢুকে পড়লো তারপর লিন্ডার মুখ চেপে ধরে টানতে টানতে নিয়ে আসল। অন্য একজন ক্রিসের মাথা বরাবর একটা শটগান চেপে ধরল। তারপর ফিসফিস করে ক্রিসের কানে কানে বলল,"জলদি, ক্যাশে যা আছে চটপট বের করো, বেশী সময় নেই। না হলে বুড়িটার বুক ঝাঁঝরা করে ফেলবো"। ততক্ষনে লিন্ডাকে যে ধরেছিল তার হাতে বের হয়ে আসলো একটা ছোট পিস্তল। লিন্ডার মাথার উপর পিস্তলটা ধরে কুৎসিত দাঁত বের করে হাসতে লাগলো সে।

শটগানধারী তৃতীয়জনকে উদ্দেশ্য করে বলল, "পল, সামনে রাখা সিন্দুকটার তালা ভেঙ্গে ফেলো, তাড়াতাড়ি।"

ছটফট করে উঠলো ক্রিস। ঐ সিন্দুকে তাদের সারাজীবনের সঞ্চয় রাখা আছে। শটগানধারীকে অনুরোধ করলো, বারবার মিনতি করলো কিন্তু কোন কাজ হলো না। বরং শটগানের বাটের এক বাড়ি খেয়ে ক্যাশের উপর ছিটকে পড়লো সে।

সিন্দুকটা খোলার অনেক চেষ্টা করলো পল, কিন্তু পারলো না। শটগানধারীর দিকে ফিরে বলল, "জ্যাক, কাজ হচ্ছেনা, বুড়োটার কাছে আনলক কোড জিজ্ঞেস করো।"

জ্যাক ক্রিসের কলার চেপে টেনে তুলল।
"কোড বল, বুড়ো, নাহলে বুড়ি খতম"
ক্রিস কিছু বলল না শুধু নিজেকে ছাড়ানোর প্রানপন চেষ্টা করতে লাগলো।
জ্যাক ক্রিসের গালে জোরে একটা চড় মারল। আবার ছিটকে পড়ল ক্রিস। তারপর লিন্ডাকে যে ধরেছিল, তার উদ্দেশ্যে বলল, "কেভিন, বুড়িটার মাথায় ২ রাউন্ড গুলি ঢুকিয়ে দে।"
"নাহ", চিৎকার করে উঠল ক্রিস, "আমি বলছি। সিন্দুকের কোড হলো ২৩৯৭...."

শেষ করতে পারলো না ক্রিস, তার আগেই কোথা থেকে যেন এক বিশাল জংলী কুকুর এসে ঝাঁপিয়ে পড়লো পলের গায়ের উপর। চিৎকার করারও সময় পেলনা পল, তার আগেই তার টুঁটি চেপে ধরল কুকুরটা। একটানে ছিড়ে ফেলল পলের কন্ঠনালী। মেঝেতে পড়ে কয়েক সেকেন্ড ছটফট করলো পল। তারপর একেবারে নিথর হয়ে পড়ে থাকলো।

চোখের সামনে এই ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখে আঁতকে উঠল জ্যাক। শটগানটা ক্রিসের মাথার উপর ধরলো আবার, কিন্তু গুলি করতে পারলো না। তার আগেই ক্যাশ টেবিলের উপর মুখ থুবড়ে পড়লো সে। ক্রিস অবাক হয়ে দেখলো, জ্যাকের গলা থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। কেউ যেন অত্যন্ত নিপুন ভাবে, ধীরে সুস্থে জ্যাকের গলার একপাশ থেকে অন্যপাশে ধারালো একটা ছুরির ফলা বুলিয়ে দিয়েছে।

এই ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখে ভয়ে চিৎকার করে উঠলো লিন্ডা। দ্রুত ঘুরে দাড়ালো ক্রিস কিন্তু পিছনে কেউ নেই। তাহলে? কে হত্যা করলো শটগানধারীকে?

ততক্ষনে লিন্ডাকে ছেড়ে দিয়েছে কেভিন।

"কে?" চিৎকার করে উঠলো সে। ঘরের চারদিকে কয়েক রাউন্ড গুলি করলো। বোঝাই যাচ্ছে ভয় পেয়েছে। ঘনঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছে, দরদর করে ঘামছে। পিস্তল ধরা হাতটা খুব জোরে কাঁপছে তার। আস্তে আস্তে পিছু হটতে লাগলো কেভিন। উদ্দেশ্য পরিস্কার, কোনভাবে দরজা পর্যন্ত যেতে পারলেই কোন একদিকে ছুট লাগাবে। হঠাৎ কেভিনের পিছে এসে দাড়ালো এক রেড ইন্ডিয়ান যুবতী। অবাক হয়ে তার দিকে তাকালো ক্রিস। খুব চেনা মনে হলো যুবতীর মুখখানা। কিন্তু কোনভাবেই মনে করতে পারলোনা মেয়েটা কে? হঠাৎ একটা ভয়ঙ্কর দর্শন ছুরি উঠে আসলো যুবতীর হাতে। বামহাত দিয়ে পেঁচিয়ে ধরলো কেভিনকে। মরন ভয়ে চিৎকার করে উঠলো কেভিন। ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করতে লাগলো। কিন্তু যুবতীর হাত যেন শক্ত পাথরে গড়া। একটুও নড়লনা তার হাত। ডানহাতে ধরা ছোরাটা কেভিনের গলার বামদিকে চেপে ধরল। তারপর খুব ধীরে বামদিক থেকে ডানদিকে ঘুরিয়ে আনলো ছোরাটা। ফিনকি দিয়ে টকটকে লাল রক্ত বের হয়ে আসলো কেভিনের গলা দিয়ে। চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল কেভিনের। আস্তে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো কেভিন। রক্তে ভেসে যেতে থাকলো সরাইখানার মেঝে।

বীভৎস এ দৃশ্য দেখে আতঙ্কে চিৎকার করে উঠল লিন্ডা। ক্রিস যেন কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। মেয়েটা ক্রিসের দিকে চেয়ে সামান্য মাথা ঝোকালো। তারপর একে একে তিনটা লাশ নিয়ে টানতে টানতে দরজা দিয়ে বের হয়ে গেল। যাওয়ার সময় হালকা একটা শিস দিল। লাফ দিয়ে কুকুরটা উঠে দাড়ালো তারপর পিছু নিল রহস্যময়ী রেড ইন্ডিয়ান যুবতীর।

নিজেকে সামলে নিতে কিছুটা সময় নিল ক্রিস। তারপর ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরল লিন্ডাকে।

"কে, কে ওটা," ভীত গলায় প্রশ্ন করলো লিন্ডা।
"আমি জানি না। তবে......." অনিশ্চিত গলায় বলল ক্রিস।
"তবে কি, বলো?"
"না কিছু না," একইভাবে অনিশ্চিত গলায় বলল ক্রিস।


সেরাতে আর ঘুম হলোনা ক্রিস আর লিন্ডার। সরাইখানার চারদিকে রক্তে মাখামাখি। পরিস্কার করতে করতে ভোর হয়ে গেল। পূর্ব আকাশে তখন কেবল হালকা লালচে আভা ফুটে উঠেছে। এক কাপ কফি হাতে ক্রিস সরাইখানার বাইরে বের হয়ে আসল। নরম ঠান্ডা একঝলক বাতাস বয়ে গেল ক্রিসের উপর দিয়ে। রানী তোমানের মূর্তি তার জায়গায় নীরবে দাড়িয়ে আছে। কিন্তু, কিন্তু কি যেন একটা অসামন্জস্যতা চোখে পড়ল ক্রিসের। মূর্তিটার দিকে এগিয়ে গেল সে। হ্যা, এবার বুঝতে পারলো ক্রিস। কুকুরটা রানীর বামদিকে ছিল আগে এখন কিভাবে যেন ডানদিকে চলে এসেছে। আর, আর রানীর ছুরিটা! ছুরিটার কিছু অংশ লালচে হয়ে আছে। রক্ত!!!

রাতে তাদেরকে সাহায্যকারী রেড ইন্ডিয়ান যুবতীর কথা মনে পড়ে গেল ক্রিসের। এখন বুঝতে পারলো, কেন এত চেনা চেনা লাগছিল মেয়েটাকে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০১২ রাত ১১:২৭
৩১টি মন্তব্য ৩১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×