somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অথচ সুনিশ্চিত

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ ভোর ৪:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মৃদু ঝাঁকুনি।ধীরে ধীরে বাড়ছে।বোতলের শিশির মত ঝাঁকাচ্ছে নাকি? না, ঝাঁকুনি তো না, কেমন মৌমাছির গুঞ্জনের মত একটা শব্দ…ভোঁ ভোঁ করেই যাচ্ছে, করেই যাচ্ছে…

লাফ দিয়ে উঠলাম। মৌমাছি কই, ফোন বাজছে। উফফফ…চমকে উঠেছিলাম।

এষার ফোন। কয়টা বাজে? দুরের ফ্যাক্টরি থেকে আলো আসছে, মোহনীয় নয়, বিরক্তিকর আলো। মোলায়েম রাতটাকে নষ্ট করা আলো। ঐটুকু ছাড়া রুমে আর কোন আলোর আভাস নেই। মোবাইলের আলোতেই দেখলাম, রাত ৩.১৭।

আমার সাথে ওর এত রাতে কথা হয়না এমন না। তবু অনেক দিন পর এত রাতে ফোন করে ঘুম ভাঙালো। তাছাড়া কথা তো হয়েছে আজ। মন খারাপ নাকি? রিসিভ করলাম। এষামনি, কি খবর?

কেমন অন্ধ নিস্তব্ধতা। কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল, গভীর ঘুম থেকে তুললাম?

তা তো তুলেছ অবশ্যই। তাতে কি? প্রিয় আধাঁরে ঢাকা পড়ে আছে কতো কতো রাত জাগার অপূর্ব স্মৃতি, কতো দীর্ঘ রাত এমনিই কাটিয়ে দিয়েছি তোমার কথা ভেবে ভেবে, কত অমূল্য মুহূর্ত কেটেছে রিসিভারে তোমার প্রিয় কন্ঠ শুনে, ঘুমের আর মূল্য কতটুকু সে স্মৃতির কাছে! যাক, কথা চেপে রেখে বললাম, ঘুমিয়ে ছিলাম সত্যি, তাতে অসুবিধা নেই। ঘুমানো যাবে, পড়ে আছে পুরো রাত ই। তোমার কথা বলো। মন খারাপ?

চেনা নিরবতা। ছোট একটা দীর্ঘশ্বাস, বলল, না, আমি ঠিক আছি।
বুঝলাম, মন খারাপ। কিছু হয়েছে নিশ্চয়ই গত কয়েক ঘন্টায়। এর আগে তো কথা হল, তখন ত মন খারাপ ছিলনা।কথা বাড়ালাম না, চাপাচাপি করলে আর বলবেই না জানি। অন্য কিছু নিয়ে কথা বলা শুরু করি, হয়তো একটু পর নিজেই বলবে।

বলল একটু পরই। না বললেই ভালো হত। জাহিদ ফোন করেছিল।

এ অনুভূতি টা পুরোনো হয়না কখনোই। প্রতিবার এটা শুনেই টের পাই সাঁড়াশি দিয়ে চেপে ধরেছে কেউ হ্রদপিন্ডটাকে। হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসে, সব এলোমেলো হয়ে যায় মুহূর্তেই। বললাম, কি বলল জাহিদ?

এষা চুপ। অনুমিত। বলতে চাইবে না, রাগারাগি করবে জানতে চাওয়ার জন্য, তারপর ভালো লাগলে বলবে, নইলে বলবে না। থাক। জানতে নাই চাইলাম। কে হায় হ্রদয় খুড়ে, বেদনা জাগাতে ভালোবাসে? কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে ও বলতে শুরু করলো।

কয়েকটা তক্ষক কি ডেকে গেল আশপাশ দিয়ে? রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে চুরমার, নাকি আর গাঢ় হচ্ছে? এষা একঘেয়ে গলায় বলে যাচ্ছে। আমি ক্রমান্বয়েই ঢুকে যাচ্ছি ঘোরের মধ্যে, যেন অনন্তকাল ধরে আমার এই ছোট্ট পুরোনো ঘরটাতে চুঁইয়ে আসা কিছু মৃত আলোর মাঝে রাখা একটি কফিন।

জাহিদ আসতে চায়। সাড়ে তিন টা বছর ধরে যে অন্ধ ভালোবাসা বেসেছে এষা এই ভাগ্যবান ছেলেটাকে, দেরিতে হলেও সে ভালোবাসার স্বীকৃতি দিতে চায়। অনেকদিন নিজেকে সরিয়ে রাখার পর বুঝতে পেরেছে সে, কি অমূল্য উপহার মিস করতে যাচ্ছিল।

দুজনেই চুপ। ওপারে এষা কাঁদছে কিনা জানিনা, আমার দুচোখে আতংকিত বিস্ময়। হ্যাঁ সত্য, আমি ওকে অনেকবার বলেছি জাহিদ ফিরে আসবে, বলেছি তখন দেখবো তুমি আসলে কি করো, মনে মনে ভেবেওছি এটা নিয়ে, কিন্তু বিকৃততম নাইটমেয়ার ও তো মানুষ দেখে। সত্যি হবার জন্য নিশ্চয় দেখেনা।

ঘড়ির কাঁটা টিকটিক করছে। নাকি এটাও নাইটমেয়ার, রুমে তো ঘড়ি নেই। কেমন উদ্বায়ী লাগছে নিজেকে, বোধবুদ্ধিহীন, অনুভূতিহীন। বললাম, এখন কি চাও তুমি?

বলল, জানি না। অনেক্ ক্ষণ চুপ করে থেকে বলল অবশ্য।

ভাবছি। ভাবার জন্য অনুভূতি মনে হয় নিষ্প্রয়োজন। এটা ঠিক, এষা আমাকে পছন্দ করে। একটূ না, অনেক পছন্দ করে। আমাকে নিয়ে সে মনে হয় সুখীই হবে-অনেকবার বলেছে। খুব সামান্য দেখা হবার অদ্ভূত আনন্দময় মুহূর্তগুলো কিভাবে কাটিয়েছি সে বিশ্লেষনে আমি যেমন দিশেহারা হই, সে ও যে হয়না তা নয়। এটা যতটুকু সত্য, তারচেয়ে অনেক বড় সত্য এই যে ও আমাকে ভালোবাসেনা। অনেক দুর্বল মুহূর্তেও কখনো “ভালোবাসি” শব্দটা বের করতে পারিনি ওর কাছ থেকে। কেন পারিনি, সেটা ও আমাকে খুব ভালো করে ব্যাখ্যা করেছে, যদিও না করলেও আমি খুব ভালই বুঝতাম।

এতগুলো বছর ধরে একটা মানুষ কে এভাবে ভালোবাসা যায়? তাও এত অবহেলা, অপমানের পর? ঈর্ষায় নাকি গা জ্বলে মানুষের, আমার দুচোখে আসে জল। শুধু ঈর্ষায় নয়, অক্ষমতায় ও। এর দশমাংশ ভালোবাসাও যদি পেতাম……

এই একটা ইস্যুতে আমি পুরো অসহায়। পঙ্গু, দুর্বল, অথর্ব। আমাকে কখনই ভালোবাসেনি এষা, পছন্দ করলেও। বরং জাহিদের প্রতি ওর তীব্র ভালোবাসা অনেকবারই আমার সামনে প্রকাশ করেছে এক্সপ্লিসিটলি, কখনও অবচেতনে, কখনও হয়তো আমাকে কষ্ট দেবার জন্যও। কখনও কিছু বলতে পারিনি, কারন অন্তত আমার চেয়ে ভালো করে তো আর কেউ কখনও জানেনি ওর এই ভালোবাসার কথা। সবসময় উভয় সংকটে থেকেছি, ওহ কি যে তীব্র সে সংকট, একদিকে বন্ধুর প্রতি ওর টান, আরেকদিকে ওর প্রতি আমার টান। কতদিন কত খারাপ ব্যবহার করেছে, একটু ভালো ব্যবহারে ভুলে গেছি সব। ভালোবাসি সে তো মিথ্যে নয়।

নিরবতায় ছেদ। বলল, চুপ কেন?

ভাবলাম, চুপ কেন? “একদিন, একরাত, করেছি মৃত্যুর সাথে খেলা”। বললাম, ভালোই তো হল। যাকে এতদিন ধরে ভালোবেসেছ, সে আজ তোমার কাছেই আসতে রাজি। আমার তো মনে হয়, এটা একটা ভালো সুযোগ তোমার জন্য। জাহিদের প্রতি তোমার ফিলিংস আমার সাথে রিলেশন হলেও যে থাকবে, এটা আমি মেনে নিয়েছিলাম। এখন তোমার জন্য সহজ হবে তোমার নিজের বন্দীদশা থেকে মুক্তি পাবার। যদি জাহিদের কাছে যেতে চাও, তাহলে গিয়ে আমাকে ভুলে যাও। আর আমার কাছে আসলে জাহিদের কথা ঝেড়ে ফেল, কারন এখন তো আর না পাবার দুঃখ নিয়ে ওকে স্মরণ করার কিছু নেই।

“কি জানি, বানিয়ে বললেম নাকি!” অস্তিত্বের প্রতি রন্ধ্রে যে তীব্র আকুতি চিৎকার করে বলতে চাইছে ভিন্ন কথা, মুখের ভাষায় কি কিছুই ফোটেনি তার!! জানিনা আর কি বলতে পারতাম। এষা হয়তো আরও কিছু বলতো, কি ভেবে চুপ করে গেলো।

ফোন রেখে বসে আছি। ভাবছি। জানি, ও আমার কাছেই থাকবে। দ্বিচারিণী নয় ও কখনই। কিন্তু যে তীব্র ভালোবাসা পায়ে ঠেলে ও আসবে, তার মূল্য যে বড় বেশি। আমি কি পারব জেনেশুনে ওর আমার কাছে আসা টা মেনে নিতে?

অবুঝ মন! ভাবতে ইচ্ছে করে, “একদা এমনি বাদল শেষের রাতে………”









৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×