গ্রাম থেকে আমাদের পাশের বাড়ির জামাল চাচা হাসপাতালে এসেছেন তারঁ স্ত্রী এবং নবজাতক শিশুকে নিয়ে।আমি খবর পেয়ে হাসপাতালে গেলাম দেখতে ।জরুরী বিভাগ পার হয়ে দেখলাম একটা নতুন গেইট ।গেইটের এইপাশে মানুষের বিরাট ভিড় ।ঐ পাশে ৮ জন লোক পুরাতন পুলিশের পোশাকে । গেইটের কাছে গেলে বললো পাশ নিয়ে আসেন।পাশ কোথায় পাওয়া যায় ?
ঐ পাশের রুমে ।
কিন্তু ঐ পাশের রুমে তো কোনো লোক নেই।
তাহলে অপেক্ষা করেন।
আমার মেডিকেলের বন্ধুকে কল দিলাম ।
আমি অপেক্ষা করছি আর দেখছি তাদের কাজকর্ম।
গ্রামের অসহায় মানুষজন রোগীর খাবারের জন্য এমনকি ঔষুধের জন্যও বাইরে যেতে পারছে না পাশ ছাড়া ।কিসের পাশ ?
লাল পোশাকের লোকগুলোর হাতে যে যা পারছে দিয়ে বের হয়ে আসছে অথবা ঢুকে যাচ্ছে ।অনেকে তর্ক-বিতর্ক করছে ।তখন তারা উপরে সাইনবোর্ড দেখিয়ে দিচ্ছে ।যা পড়তে পারছে তারা বুঝতে পারছে সরকারের স্বাস্হ্য সেবাকে সাধারন জনগন হতে দুরে সরানোর দলিল এটি ।সাইনবোর্ডে লেখা আছে রোগীর সাথে দর্শনার্থীদের দেখা করার শীতকালীন সময় ৩ টা হতে ৫ টা।আদেশক্রমে কর্তৃপক্ষ।
আমার বন্ধু এসে ' পুলসেরাত পুল ' পার করলো ।মেডিকেলের বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলাম এই সিস্টেম কবে থেকে চালু হলো কেনো চালু হলো ?
গত মাস থেকে হাসপাতালে চুরি-ছিনতাই বেড়ে যাওয়ায় এ ব্যবস্হা নেয়া হয়েছে ।
আমি না হেসে পারলাম না।বন্ধু কে বললাম চুরি-ছিনতাই রোধে তাই বৈধ ডাকাত নিযোগ দেয়া হয়েছে।
বন্ধু হেসে যোগ করলো ঠিক বলেছো , চুরি- ছিনতাই তো কমেই নি বরং শুরু হয়েছে তাদের নতুন অত্যাচার।
তারপর বন্ধুকে নিয়ে আমার রোগীর নির্ধারিত ওয়ার্ডে গেলাম।জামাল চাচার সঙ্গে একজন তর্ক করছে ।আমি জিজ্ঞেস করলাম কী হয়েছে ?
চাচা বললো , " বাচ্ছাকে ডাক্তার মেডাম কইছে গ্লাসের ভিতর রাখতে কিন্তু উনি টাকা চায় ২০০ "
বন্ধু তাকে ধমক দিলে ঐ লোক বলে ,না স্যার সবাই কিছু দেয় চা-পান খাবার জন্য ।তাই চাইছিলাম।
বন্ধু চিকিৎসা কাগজ হাতে নিয়ে আমাকে বুঝালো , বাচ্ছার সম্ভবত জন্ডিস হয়েছে ।বাচ্ছার মা এবং বাচ্ছার বিভিন্ন টেস্ট দিয়েছে ।টেস্ট আসলে স্যার দেখাতে হবে ।আমি রাতে এসে আবার দেখে যাবো ।
বাচ্ছা মাকে টেস্ট করানোর জন্য লিফটে গেলে ।লিফটম্যান ৫০ টাকা চায়।
আমি তর্ক করলে চাচা বলেন ,আসার সময়ও টাকা দিতে হয়ছে ।ঝগড়া করার দরকার নেই বাবা কয়টা টাকা দিয়ে দাও ।২০ টাকা দিয়ে থাকে ম্যনেজ করতে হয়।
রাতে গিয়ে দেখি জামাল চাচার মন খারাপ।চাচা কাতর কন্ঠে বলে আজ সারা দিনে ৭ টা শিশু মারা গেছে ।আমি তাকে সান্ত্বনা দেই । বাঁচা -মারার মালিক আল্লাহ ।হায়াৎ থাকলে ইনশাআল্লাহ চিকিৎসায় ভালো হয়ে যাবে।
চাচা বলে যেতে থাকেন ,এখানে কারো তেমন সাহায্য পাওয়া যায় না ।তোমার মায়ের কথায় আমি হাসপাতালে আসি ।আমার ফুটফুটে মেয়েটা হাসপাতলে ভর্তির সময় ছিলো সাড়ে তিন কেজি এখন ২৪ ঘন্টায় হয়েছে ২ কেজি ।সারা জীবন তো কবিরাজ দিয়েই কাজ চালাইতাছি কোনো সমস্যা হয় না আবার এতো ঝগড়া-ঝাটিও করতে হয় না।
আমি চাচাকে বললাম ,আম্মা সরকারি হাসপাতলের খরব জানে না।জানলে হয়তো পাঠাতো না ।
আমি কাউকে সরকারী হাসপাতালে আসতে বলি না ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




