somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাকিনী part3

৩০ শে জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


খুলনার সবচেয়ে বড় সোনার দোকান অমিয় জুয়েলার্স। মন্ময় চৌধুরী দোকানের মালিক। বিরাট ধনী লোক। কারও সাথে মেশেন না। দোকানের কাউন্টারে বালা দুটো রেখে সেলসম্যানকে বললাম, এগুলো আমি বেচতে চাই। সেলসম্যান প্রথমে খুঁটিয়ে দেখল। কষ্টিপাথরে ঘসে সোনার মান যাচাই করল। সবশেষে নিল ওজন। তারপর বলল,
'এ দুটোতে পাঁচ ভরি সোনা আছে। অনেক টাকার ব্যাপার। মালিককে দেখাতে হবে।'
'ঠিক আছে, দেখান আপনার মালিককে।'
ভেতরে চলে গেল সেলসম্যান। পাঁচ মিনিট পর ঘুরে এসে বলল,
'আপনাকে আমরা এ দুটোর জন্য পাঁচ হাজার পর্যন্ত দিতে রাজি আছি। দোকানে এত ক্যাশ নেই। সাহেব বলেছেন, এখন আড়াই হাজার দিতে। বাকিটা সন্ধ্যার পর আসলে পাবেন। কী করবেন দেখেন?'

সত্যি বলতে কী তিন হাজারের বেশি আমি আশাই করিনি। সেই তুলনায় পাঁচ হাজার অনেক বেশি। বললাম,
'ঠিক আছে, সন্ধের পর এসে বাকিটা নিয়ে যাব। একটা রশিদ লিখে দেন।'

সন্ধের পর আবার গেলাম অমিয় জুয়েলার্সে। আগের সেলসম্যান কাস্টমার নিয়ে ব্যস্ত। বুড়োমতো একজন এগিয়ে এল। বলল,
'আমি দোকানের ম্যানেজার। সাহেব আপনার সাথে দুমিনিট কথা বলতে চান। টাকাটা উনিই আপনাকে দেবেন। আমার সাথে একটু ভেতরে আসেন।'

কাউন্টার পার হয়ে শোকেসের পাশে সরু দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকলাম। বিরাট হলঘরের মতো কামরায় আবছা অন্ধকারে স্যাঁকরার দল লাইন দিয়ে বসে কাজ করছে। নাইট্রিক এসিডের ঝাঁঝালো গন্ধে দম বন্ধ হয়ে এল। লোকগুলো বছরের পর বছর এই পরিবেশে কাজ করছে কী করে? পেতলের সরু পাইপ মুখে লাগিয়ে গয়নার গায়ে অনবরত ফুঁ দিচ্ছে তারা। গাল ফুলে উঠেছে শ্রাবণ মাসের কোলা ব্যাঙের মতো। ফুসফুস এত চাপ সহ্য করে কীভাবে! হলঘর পেরিয়ে লাল কার্পেট মোড়া ছোট একটি প্যাসেজের মাথায় কাচ লাগানো সেগুন কাঠের দরজা। নক করে ম্যানেজার আমাকে নিয়ে ভেতরে ঢুকল।

প্রকাণ্ড জানালাঅলা ঝকঝকে কামরা। দেয়ালের একদিকে রেমিংটন কোম্পানির ইয়া বড় সিন্দুক। এই জগদ্দল পাথরের মতো ভারী বস্তু দোতলায় যে কারিগর উঠিয়েছে, তাকে অভিনন্দন। অন্য দেয়ালের পুরোটা জুড়ে বইভর্তি কাচের শোকেস। মন্ময় চৌধুরী আমার দিকে তাকালেন। মনে পড়ল রবীন্দ্রনাথের 'কিনু গোয়ালার গলি' কবিতার কথা। 'যত্নে পাট করা লম্বা চুল। বড়বড় চোখ। শৌখিন মেজাজ। কর্নেট বাজানো তার শখ।' পার্থক্য শুধু এই যে ইনার চুলগুলো ধবধবে সাদা। ছড়িয়ে আছে ঘাড়ের ওপর। ইস্ত্রি করা ফিনফিনে পাজামা-পাঞ্জাবি পরা। তবে ইনি যন্ত্র শিল্পী কি না বুঝতে পারছি না। ধারণা করেছিলাম, কালো মোটা ফতুয়া পরা ধূর্ত চেহারার কাউকে দেখতে পাব। মন্ময় চৌধুরী দেখতে রবীন্দ্রনাথের মতো। সাধক-টাইপ চেহারা। এই লোকের লেখালেখি করার কথা। মাঝে মাঝে সভাসমিতিতে বক্তৃতা। কাগজে কাগজে ইন্টারভিউ। মনোযোগ দিয়ে পুরোনো আমলের একটি ক্যাটালগ দেখছেন মন্ময় চৌধুরী। ইশারায় বসতে বললেন।
'আপনি সঞ্জয় বাবু?' গভীর কালো চোখ তুলে জিজ্ঞেস করলেন ম. চৌধুরী।
'আজ্ঞে, আমিই সঞ্জয়।'
'বালা দুটো পেলেন কোথায়?'
কোনো কিছু গোপন না করে তাঁকে সব ভেঙেচুরে বললাম।
'বুড়ির বাড়ির ঠিকানা কি আছে আপনার কাছে?'
'ছিল তো বটেই। তবে পুলিশ খাতাপত্র সব জব্দ করে মালখানায় রেখেছে। এখন আর সেটা পাব কীভাবে?'
'হুমম, বুঝতে পারছি। একটা প্রশ্ন করি। কিছু মনে করবেন না তো?'
'সেটা বোঝা যাবে প্রশ্ন শোনার পর। কী প্রশ্ন? বুড়ির বাড়ি গিয়ে ভেরিফাই করতে চান, আমি সত্যি বলছি কি না এইতো? তার প্রয়োজন নেই। আমি সত্যি কথাই বলছি। মিথ্যে বললে আপনি ধরে ফেলতেন।'
'ব্যাপারটা তা নয়। বুড়ির সাথে একটু কথা বলতে চাই আমি। বালা দুটো তার কাছে আসলা কীভাবে, সেইটে জানতে চাই। আপনি বলেছেন বুড়ি থাকে কালীঘাটে। এটাই বা জানলেন কীভাবে? খাতাপত্র মালখানায়। বাবা জেলহাজতে। বালা দুটো হাতে পেয়েই আপনি আমার এখানে।'
'মার কাছ থেকে জেনেছি। দুপুরে ভাত খাওয়ার সময় জিজ্ঞেস করেছিলাম। বাবা গয়নাপাতি বাসায় আনতেন খুব কম। পুরোনো গয়না মাকে কখনো দেননি। নতুন বানিয়ে দিতেন। বালাগুলো একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা। বাবাকে জিজ্ঞেস করে মা জানতে পারেন কালীঘাটের এক বুড়ির গয়না ওগুলো। আপনি যদি বুড়িকে খুঁজে বের করতে পারেন, তাহলে বলবেন। কিছু টাকা তাকে ফিরিয়ে দিতে চাই আমি।
'আপনার কোনো ফোন নম্বর থাকলে আমাকে দিয়ে যান। খোঁজ পেলে জানাব।'
লক্ষ করলাম, কথা বলার পুরো সময়টাতেই ম্যানেজার ঠায় দাঁড়িয়ে। বুঝলাম, কর্মচারীরা মন্ময় চৌধুরীকে খুব সমীহ করে। ভাবুক ধরনের এই মানুষটাকে এরা এত ভয় পায় কেন কে জানে?
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×