somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পিশাচ উপন্যাসিকা 'বংশালের বনলতা' part2

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৭:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


তিন ব্যাটারির এভারেডি টর্চ কিনে চা খেয়ে ফিরে এসে দেখি, মুকুলের মা ঝেড়ে-মুছে ক্লজিটটা তকতকে করে ফেলেছে। ওটার ভেতর আর বাইরের মেঝে ভেজা ভেজা। না শুকানো পর্যন্ত চকের দাগ দেওয়া সম্ভব নয়। মুকুলের মাকে বিদায় করে ক্লজিটে টর্চের আলো ফেললাম। ভেতরটা বেশ চওড়া, অনায়াসে একজন মানুষ ঢুকতে পারবে। সামনের ধূসর দেয়ালে পড়ে ঝিকিয়ে উঠল আলো। বালি-সিমেন্টের প্লাস্টার করা সাধারণ দেয়ালে আলোর প্রতিফলন তো এমন তীব্র হওয়ার কথা নয়। বিষয় কী? পরীক্ষা করে দেখলাম, প্লাস্টারের বদলে ওখানে মার্বেল স্ল্যাব বসানো। ক্লজিটের ডান দিকের দেয়ালও মার্বেল মোড়া। বাঁ দিকে আলো ফেললাম; কিন্তু কই, আলোর প্রতিফলন অন্য দুই দেয়ালের মতো তো তেমন জোরালো হলো না। দেয়ালের রংটাও কেমন যেন মরা মরা মনে হলো। কাছে গিয়ে ভালো করে দেখলাম দেয়ালটা, নখ দিয়ে একটা আঁচড়ও দিলাম। যা ভেবেছিলাম, তা-ই। ওখানকার আসল দেয়াল একটা কাঠের তক্তা দিয়ে আড়াল করা। বহু পুরোনো তক্তা, আঙুলের গাঁটের টোকা দিয়ে বুঝলাম, বেশ পুরু। মনে হলো, এই আলগা তক্তার ওপাশেও কিছুটা ফাঁকা জায়গা আছে। ওই বাড়তি অংশটাই তক্তা দিয়ে আলাদা করা হয়েছে। লোহার ছেনি, হাতুড়ি কিংবা একটা শাবল পেলে চাঁড় মেরে খোলা যেত। থপথপ শব্দ শুনে পেছন ফিরে তাকালাম। মুকুলের মা রান্না শেষ করেছে, এখন চলে যাবে। আমি যেন খেয়ে নেই, এ কথাটা বলতে এসেছে। বলে কী, ভাত খাব! উত্তেজনায় আমার পেট গুড়গুড় করছে তখন।

বংশাল মোড়ে ‘বিউটি ভলকানাইজিং’ গাড়ি আর মোটরসাইকেলের পাংচার টায়ার সারে। ছেনি-হাতুড়ি ওদের কাছ থেকে চেয়ে আনলাম। ছেনি মেরে দেয়াল থেকে আলগা করলাম তক্তাটা। যে জায়গায় তক্তা ছিল, সেখান থেকে ভেতর দিকে আরও ফুট চারেক এগিয়েছে ক্লজিটটা। স্যাঁতসেঁতে ধুলোভরা মেঝের ওপর চামচিকে-বাদুড়ের কঙ্কাল। হালকা আঁধারে ধবধব করছে এগুলোর সাদা দাঁত। ভক করে কটু একটা গন্ধ নাকে এসে লাগল, ঝিমঝিম করে উঠল মাথার ভেতরটা। কাত হয়ে পড়েই যাচ্ছিলাম। দেয়াল ধরে কোনো রকমে খাড়া রাখলাম নিজেকে। ক্লজিট থেকে বেরিয়ে টর্চটা নিয়ে আবার ফিরে গেলাম ওখানে। আলো ফেলে দেখলাম, সামনে-পেছনে একই রঙের মার্বেলের দেয়াল। শুধু শেষ মাথায় যে দেয়াল, সেইটে কুচকুচে কালো সাধারণ পাথর দিয়ে মোড়া। এরই মাঝখানে লম্বা-চওড়ায় ফুট দুয়েকের মতো কুলুঙ্গি-টাইপ গভীর একটা গর্ত। সেই কুলুঙ্গির ভেতর সাদা রঙের দেড় ফুট লম্বা একটি মূর্তি। ওপরে পুরু ধুলো জমে থাকায় ভালো করে দেখা যাচ্ছে না মূর্তিটা। বড় কুলুঙ্গিটার দুপাশে আরও দুটো ছোট ছোট কুলুঙ্গি দেখতে পেলাম। খুব সম্ভব মোমবাতি কিংবা কুপি জ্বালিয়ে রাখার জন্য তৈরি ওগুলো।

ফিরে এসে খাটের ওপর বসলাম। ক্লান্ত মনে হচ্ছে নিজেকে খুব। একে উত্তেজনা তার ওপর সকাল থেকে খাওয়া নেই, বমিবমি লাগছে। গোসল করে খেতে হবে কিছু। ছেনি-হাতুড়িও ফিরিয়ে দেওয়া দরকার। ভেবেছিলাম, কী না কী পেয়ে যাব। পেলাম তিনটে ফাঁকা কুলুঙ্গি আর ধুলোভর্তি একটি দেড় ফুট লম্বা মূর্তি। এসব মূর্তি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গৃহ-দেবতার হয়। গৃহের ঐশ্বর্য ধরে রাখাই এসব দেবতার কাজ, অন্তত যারা এগুলো রাখে, তারা তাই-ই বিশ্বাস করে। বেচলেও যে খুব বেশি টাকা পাওয়া যাবে, এমন নয়। ছাঁচে ঢেলে বানানো পোড়া মাটির তৈরি এগুলো, টেরাকোটা নামেই বেশি পরিচিত। মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর, কান্তজীর মন্দির থেকে শুরু করে বাজারের মন্দিরগুলো পর্যন্ত এসব টেরাকোটায় বোঝাই। তবে ধন্দে যেটা ফেলেছে সেটা হলো, একে এত গোপন রাখা হয়েছে কেন? আশপাশের দেয়ালে মার্বেল স্ল্যাবই বা কেন লাগানো? নাহ্, ভালোভাবে দেখতে হবে মূর্তিটা। একটা মাঝারি সাইজের রং করা ব্রাশ হলে পরিষ্কার করা যেত ওটা। মোছামুছি করতে গেলে ভেঙেটেঙে যেতে পারে। ড্যাম্পের ভেতর বহুদিন পড়ে থাকলে পোড়ামাটিও ভুসভুসে হয়ে ওঠে। ব্রাশ কিনতে হলে যেতে হবে হার্ডওয়ারের দোকানে। মনে মনে ভাবলাম, ভালো ঝামেলা হলো দেখছি, সারা দিন দোকানে দোকানেই কাটাব নাকি! ছেনি-হাতুড়ি ফেরত দিয়ে হার্ডওয়ারের দোকান থেকে মাঝারি সাইজের রং করা ব্রাশ কিনে এনে গোসল করে খেয়েদেয়ে বিছানায় যখন গা এলিয়ে দিলাম, শরীরে তখন পাশ ফিরে শোয়ার মতো শক্তিও আর অবশিষ্ট নেই।(চলবে)

প্রথম প্রকাশ- রহস্যপত্রিকা (২০১২)
[email protected]
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×