এই নতুন তারকার ভিতরে কয়েক বিলিয়ন বছর সয়ংক্রিয়ভাবে নিউক্লিয়ার ফিউশান রিএকশান চালিয়ে যাওয়ার মত হাইড্রোজেন অনু মজুদ থাকে।এবং জীবনচক্রের এই বিশাল সময় সময় ধরে এটি তাপ এবং আলোকশক্তি উৎপাদন করতে থাকে।যদি সোউরজগতের অন্যান্য শর্তসমূহ যেমন গ্রহের সৃষ্টি,গ্রহের হ্যাবিটেবল জোনে থাকা বা তারকা থেকে গ্রহের সঠিক দূরত্ব,পানির উপস্থিতি,পর্যাপ্ত তাপ ও আলোকশক্তির সরবরাহ এগুলো নিশ্চিত হয় তবে সেই সৌরজগতে প্রাণের বিকাশ সম্ভব।যতক্ষণ পর্যন্ত সৌরজগতের তারকা সুস্থিত(Stable) থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত ঐ প্রাণীজগতের উপর বড় ধরনের কোন বিপর্যয় থাকবে না।
একটি তারকার এত দীর্ঘ সময় ধরে সুস্থিত থাকার কারণ হলো এর অভ্যন্তরে সৃষ্ট দুইটি বিপরীতধর্মী অত্যন্ত শক্তিশালী বল যা পরস্পরের মধ্যে সাম্যাবস্থা সৃষ্টি করে।এর মধ্যে একটি হল মহাকর্ষ বল যা তারকার বহির্ভাগকে তীব্র অন্তর্মুখী চাপের মাধ্যমে ভেতরের দিকে টেনে আনে।বিগলম্যান এবং রিসের মতে যেহেতু সূর্য বৃহস্পতি থেকে প্রায় কয়েক হাজার গুণ ভারী তাই সেহেতু এটা যদি উত্তপ্ত বস্তু না হত তাহলে এর মহাকর্ষের ফলে এটা এতই সঙ্কুচিত হত যে এর ঘনত্ব সাধারণ কঠিন পদার্থ থেকে কয়েক মিলিয়ন গুণ বেশি হত।সেক্ষেত্রে এর আয়তন হত আমাদের পৃথিবীর মতই কিন্তু এর ভর হত পৃথিবীর ভরের প্রায় তিন লক্ষ ত্রিশ হাজার গুণ।
কিন্তু আমরা জানি যে সূর্য আসলে একটি উত্তপ্ত গোলক এবং এটা ঠান্ডা নয়।সূর্যের মত নক্ষত্র এর অভ্যন্তরে প্রচুর পরিমাণ শক্তি উৎপাদন করে যেটা দ্বিতীয় প্রকারের বলের উৎস।নক্ষত্রের কেন্দ্রে নিউক্লিয়ার রিএকশানের মাধ্যমে প্রচন্ড তাপ,আলো এবং ক্ষুদ্র বস্তুকণা উৎপন্ন হয় যা বাইরের সার্ফেসের দিকে ধাবিত হয়।উদাহরণস্বরূপ সূর্যের অভ্যন্তরে প্রতি সেকেন্ডে যে পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয় তা ১০০ মিলিয়ন(=১০কোটি) পারমাণবিক বোমা একত্রে বিস্ফোরিত হলে যে পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয় তার সমতুল্য।যখন এই বিশাল শক্তি বাইরের পৃষ্ঠের দিকে ধাবিত হয় তখন তা তীব্র বহির্মুখী চাপের সৃষ্টি করে।এই চাপ মহাকর্ষের ফলে অন্তর্মুখী বলকে প্রতিহত করে।বিগলম্যান এবং রিস সংক্ষেপে বলেন,
“সূর্যের কেন্দ্রের দিকে(core) এ তাপমাত্রা প্রায় ১৫ মিলিয়ন ডিগ্রী যা এর বাইরের উজ্জ্বল পৃষ্ঠের তাপমাত্রা থেকে কয়েক হাজার গুণ বেশি।এই উচ্চ তাপমাত্রায় সূর্যের অভ্যন্তরে পারমাণবিক নিউক্লিয়াসসমূহ ১০০ কি.মি./সেকেন্ড গতিতে ছুটোছুটি করে।এই শক্তির মাধ্যমেই সূর্য এবং এর মত অন্যান্য নক্ষত্র এর ভিতরের তীব্র মহাকর্ষ বলকে প্রতিহত করে।
পরস্পরবিমুখী এই দুই বলের ভারসাম্যের ফলেই সূর্য এবং এর মত অন্যান্য নক্ষত্র সুস্থিতি লাভ করে।জোর্তিবিজ্ঞানীদের মতে আমাদের সূর্য কয়েক বিলিয়ন বছর ধরে এর সুস্থিত অবস্থায় আছে এবং আরও কয়েক বিলিয়ন বছর এই অবস্থা বিরাজ করবে।যার মানে হল মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীর মতই সূর্যও অনন্তকাল বেঁচে থাকবে না।এর জ্বালানী ফিরিয়ে যাবার পরিণামস্বরূপ এটি মৃত্যুর পথ ধরবে এবং আকস্মিকভাবে এটি এর অভ্যন্তরের অধিকাংশ বস্তু নিয়ে তীব্র ঘনত্বের বস্তু সৃষ্টি করবে।তারকার প্রাথমিক ভরের উপর ভিত্তি করে এটি তিন ধরণের বস্তুতে পরিণত হতে পারে যার প্রতিটি ক্ষেত্রেই একটি সুপারডেন্স অবজেক্ট সৃষ্টি হবে।যার মধ্যে দুইটি হচ্ছে শ্বেত বামন(হোয়াইট ডর্ফ) এবং নিউট্রন তারকা(নিউট্রন স্টার)। আর তৃতীয়টি হচ্ছে ব্ল্যাক হোল নিজেই।
ব্ল্যাক হোল-৯ এ থাকছে হোয়াইট ডর্ফ সম্পর্কে বিস্তারিত।
ব্ল্যাক হোল নিয়ে আগের লেখাগুলোর লিঙ্কঃ
ব্ল্যাক হোল-১( অ্যাস্ট্রোফিজিক্স-অসম্ভব অজানার মুখোমুখি)
ব্ল্যাক হোল-২(ব্ল্যাক হোল সম্পর্কে জানা প্রয়োজন কেন?-এস্ট্রোফিজিক্স
ব্ল্যাক হোল-৩(ব্ল্যাক হোলের প্রাথমিক ধারণাসমূহ)
ব্ল্যাক হোল-৪(মুক্তি বেগ এবং অদৃশ্য তারকারাজি)
ব্ল্যাক হোল-৫(মহাশুন্যের বক্রতা ও মহাকর্ষ কূপ এবং জেনারেল থিওরী অফ রিলেটিভিটি)
ব্ল্যাক হোল-৬(সুপারডেন্স বস্তু থাকা কি সম্ভব???)
ব্ল্যাক হোল-৭(মিনি ব্ল্যাক হোল এবং এদের প্রভাব)

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




