মানবিক বোধ, অনুভুতি, সত্য-মিথ্যা, ভালোবাসা-ঘৃণা সব কিছুরই ইন্টাপ্রিটেশন যার যার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা, বিশ্বাস, জ্ঞান আর উপলব্ধির উপর নির্ভর করে। অন্যান্য ব্লগার বন্ধুরাও তাদের নিজেদের খুঁজে পাওয়া মানেগুলোও শেয়ার করেছেন তাদের মন্তব্যে। বেশ মজার সব মন্তব্য। একজন বললেন "বিয়ের পর বুজবেন ভালোবাসা কি ?" তার উত্তরে ইমরোজ বললেন "আগের ভালবাইস্যা লই, হেরপর বিয়া, বহুত দেরী।" প্রথমজন বিয়ে আর ভালোবাসার বৈরীতার ইঙ্গিত দিয়েই ফেলেছেন আর ইমরোজও এমন ভাবে বল্লেন যেন তিনিও ব্যাপারটি আঁচ করতে পারেন আর সেজন্যেই বিয়ের আগে যতটুকু ভালোবাসা যায় তিনি বেসে নেবেন। ভালোবাসা আর বিয়ের বৈরীতার বিষয়টি কতটুকু প্রকট বা আদৌ আছে কি না আমার নিশ্চিতভাবে জানা নেই, তবে ইমরোজের স্ট্র্যাটেজিটাও মন্দ না।
আগে ভালোবাসা পরে হিসেব নিকেশ আর তার মানে খোঁজা।
ভালোবাসার মানে যাই হোক, ইংরেজী ভাষাভাষি মানুষেরা "love" আর "love making"শব্দগুলো প্রায় পাশাপাশি দিয়ে অবস্থাটা আরো ঘোলাটে করে ফেলেছেন। আরো মনে হয় তাদের চাইতে আমরা শব্দগুলো নিয়ে বিপদে পড়েছি যারা ইংরেজী গুলিয়ে ফেলি।
সে যাই হোক আমিও যে কিছু বলতে চাই? যদি অভয় দেন। মানুষের সামনে কথা বলতে এমনিই হাঁটু কাঁপে সঙ্গত কারনেই। আমি জানি আমি কতটুকু মুর্খ। ব্লগে সরাসরি কারো সামনে দাঁড়াতে হয়না বলেই, আর পঁচা ডিমে গা গন্ধ হওয়ার ভয় নেই বলেই এটুকু লিখার সাহস করছি। তারপরও নিজের কথা এড়িয়ে কিছু জ্ঞানী-গুণি মানুষের কিছু কথা শেয়ার করছি বার বার মনে যেগুলো ঘুরে ফিরে আসে। তাদের রেফারেন্স দিতে পারবোনা। ক্ষমা করবেন।
একজন বললেন "ভালোবাসা হচ্ছে সেই অনুভুতি যার জন্যে তুমি কম খাও যাতে তোমার প্রিয়জন বেশী আর ভালো খেতে পারে। এটা সেই অনুভুতি যার জন্যে তুমি নিজের জন্যে কমদামী পোশাক কেনো যাতে তোমার প্রিয়জন ভালো আর দামী পোশাকটি পড়তে পারে। এটা সেই অনুভুতি যার জন্যে তোমার সন্তানের স্কুলের গেটে ঘন্টা পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে পার। এটা সেই অনুভুতি যার জন্যে সেবিকা ভাড়া করার টাকা থাকা সত্ত্বেও তোমার অসুস্থ প্রিয়জনের পাশে থেকে নিজে সেবা কর।"
আরেকজন এটি ডিফাইন করতে গিয়ে বললেন "একটি বনের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্যে তার কাছে বারবার যাওয়াটা সেই বনের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ। ভালোবাসাটা আর থাকেনা যখনই আমরা হিসেব করতে শুরু করি বনে গাছের সংখ্যা, তা থেকে প্রাপ্য কাঠের পরিমান, তার দাম আর যখনই প্রস্তুতি নিতে শুরু করি বনের মালিকানা নেয়ার সেই কাঠ বিক্রীর উদ্দেশ্যে।" সম্ভবতঃ বার্ট্রান্ড রাসেলের বইতে পরেছিলাম। বহুবার দেখেছি আপাতঃ ভালোবাসার মানুষেরা একজন আরেকজনের মালিকানা নিতে গিয়ে শত্রুতেও পরিণত হয়েছেন।
আমরা শুধুই স্বেচ্ছায় নিজেকে সঁপে দিতে পারি। কেউ ছিনিয়ে নিতে আসলেই সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিহত করি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক নিয়মেই। প্রকৃতির এই নিয়মটিই কতবার নিজের অলক্ষ্যে ভুলে যাই। হায়...
চিকিৎসা আর শরীরতত্ত্ববিদরা ভালোবাসাকে শরীরে বিশেষকিছু হরমোনের আনাগোনা আর তার পরিমান দিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন। তারা কোন ভালোবাসার কথা বলেছেন জানিনা। শুধু এই টুকু বলতে পারি কোন হরমোনের আধিক্যে বা অভাবের কারনে আমার প্রিয় বনটিকে কেটে সাফ করতে পারবোনা, পারবোনা আমার প্রিয়জনকে বঞ্চিত করে ভালো পোশাক, খাবার দাবার, গান, কবিতা, কোনকিছুই উপভোগ করতে। তাকে বাদ দিয়ে জীবন যাপন করবোনা কোন হরমোন থাকুক আর নাই থাকুক। বাঁচি তার জন্যেই, তাদের জন্যেই। এই মানুষের জীবনে ফিরে আসতে ইচ্ছে করবে আবার শুধু যদি আমার ভালোবাসার মানুষদেরও ফিরে আসার গ্যারান্টি পাই। নয়তো নয়। পরম ভালোবাসার একটি জীবনের প্রাপ্তি নিয়েই অনন্ত পাড়ি দেবো।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০০৭ রাত ১২:৪৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





