আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ, যুদ্ধোপরাধী, রাজাকার নিধন, এসব নিয়ে প্রচুর লিখালিখি হয়েছে। হয়েছে নানান আকারের আর প্রকারের আন্দোলন। দেশে আছে আগুনঝরানো লেখক, সাংবাদিক, বিপ্লবী স্পিরিট। লাভ কি হয়েছে? হলে কতটুকু? যেটুকু হয়নি, কেন হয়নি?
সবাই সব জানার পর আইনের ফাঁক (অথবা আমাদের নপুংসতা?) গলে স্বাধীনতা বিরোধী, ৭১এর খুনী, তাদের সহযোগীরা আর মদদদাতারা সবাই শুধু বেরই হয়ে যায়নি এদের অনেকেই হয়েছে প্রতিষ্ঠিত এবং বিশাল শিল্পপতি, খবরের কাগজের মালিক অথবা সম্পাদক, রাজনৈতিক নেতা, সমাজসেবক (?) ইত্যাদি। ব্যার্থতার গ্লানিতে, ব্যাথায়, রাগে, হতাশায়, আক্ষেপে আর ঘেন্নায় সারা শরীরের স্নায়ু-পেশী হয়ে আসে সংকুচিত, বিকৃত।
সবাই কি সব বোঝে আসলেই? বিশাল জনগোষ্ঠীকে করে রাখা হয়েছে অশিক্ষিত। এরা কতটুকু কি বোঝে? আমার মত অগনিত বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মানুষই যখন খুব কমই বোঝে, থেকে যায় কনফিউজড্? উত্তর পায়না প্রশ্নের? যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নাই কেন? কেন একটা উদহরনও নাই? যারা কিছু করতে পারতেন তাদের যদি আইডিয়ার অভাব হয়ে থাকে সে আশংকায় এই লেখার শেষে একটা আইডিয়ার নির্দেশনা দিতে পারি মাত্র।
আমার কাছে আইডিয়া থাকলে নিজে কিছু করছিনা কেন তাও কখনও বলবো।
অনেক 'নাই' আর নাপাওয়ার লিস্টের মধ্যে উঠে আসে একটা বড় 'নাই': নেতা পাইনি, নেতা নাই। দেশটা বাপ-মড়া মেয়ের মত - সবাই তার গার্জেন আসলে কেউই না। সবাই বাহাদুরী করতে আসে, সুবিধা নিতে এসে নিজেদের ভেতরে মারামারি করে। বাপ-মড়া মেয়ের যা হবার তা'ই হয়।
যুদ্ধ শুধু এদেশেই হয়নি। যে সমস্ত পরিবার এবং ব্যাক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের ক্ষতির কখনোই কারো সঙ্গে তুলনীয় নয়। তারপরও কখনো প্রশ্ন জাগে আমরা খুব সস্তায় দেশটি পেয়েছি কি? জার্মানী আর জাপানের মত মূল্য কি আমাদের দিতে হয়েছে? নতুবা এমন হবে কেন আমাদের দেশপ্রেমের মাত্রা এবং তার রকমসকম?
নিজের পারিবারিক যে ক্ষতি হয়েছে, যে কষ্টের ভেতর দিয়ে গিয়েছি তাতে সেই শিশু মনেই ক্ষোভ জন্মেছিলো শত্রু চিহ্ণিত করে শাস্তি দেয়ার। হয়নি। বাস্তবতা আর তদ্ভুত অক্ষমতার জন্যেই।
আমার নায়ককে আমি হারিয়েছি। আশায় বড় হয়েছি এক নায়ককে দেখবো বলে যে সবার হয়ে বদলা নেবে। বেঈমানী করেছে সময়। সময় সেই নায়কের জন্ম দেয়নি। কে জানে হয়তো দিয়েছে? এখনও একটু একটু আশার আলো কোথায় যেন একা একা জ্বলে যায়। হাসিব, আরিফ জেবতিক, মানবী এদের এবং আরো বেশ ক'জনের কথাগুলো নতুন করে আশা জাগায় - কেউ কোথাও আছে। এতগুলো চিন্তা কারোনা কারো কাজে পরিণত হবে। হয়েছেতো বহুবার, এদেশেই। আর একটা বার? শুধু একটা বার?
শুরুতে যে আইডিয়াটার কথা বলছিলাম:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসী কন্সেস্ট্রেশন ক্যাম্পে একজন আর্কিটেকচারাল ইঞ্জিনিয়ার চার বছর নির্যাতিত হন। তার নাম Simon Weisenthal। একজন অস্ট্রিয়ান ইহুদী, জন্ম ১৯০৮, মৃত্যু ২০০৫। কন্সেস্ট্রেশন ক্যাম্পের পর বাকী জীবন কাটিয়েছেন পালিয়ে বেড়ানো নাৎসী যুদ্ধপরাধিদের খুঁজে বের করে তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করাতে। যুদ্ধপরাধ আর মানবতা বিরোধী অপরাধের কারনে তাদের কাঠগড়ায় দাড় করান সায়মন ভিজেন্দাল। কোথ্থেকে শুরু করেন তিনি? কন্সেস্ট্রেশন ক্যাম্প থেকে যখন মুক্ত হন তখন তার উচ্চতা ৫ফুট ১১ ইঞ্চি আর ওজন ৪৫কেজি!! স্বাস্থ্য একটু ভালো হয়ে আসার সাথে সাথেই আমেরিকান আর্মির হয়ে নাৎসী যুদ্দপরাধের বিচারের ডকুমেন্টশন শুরু করেন। তার জীবদ্দশায় বহু যুদ্ধপরাধীকে বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করান সায়মন। তার এই অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলার কাহিনী জানতে তার লেখা Murderers Among Us বইটি পড়ে নিন। তার সম্পর্কে জানতে উইকিপিডিয়ার এই লিংকটি দেখুন Click This Link
সায়মন, তার জীবন আর কাজ আমাদের ইন্সিপিরেশন জোগাতে পারে। হয়তো দিক নির্দেশনাও। যদিও মিল আছে প্রেক্ষাপট, ডিনামিকস সাথে অন্যান্য অনেক কিছুরই, অমিলও কম নয়।
আফটার অল আজিব দেশ আমার এই প্রিয় জন্মভূমি। তবুও আমারই।
আর একজন নায়ক? সামহোয়্যার? এমং আস?
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০০৭ রাত ৮:০৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





