গতকালের সকালটা সাদেকুর রহমানের পরিবারে অন্য যেকোনো সকালে মতোই ছিল। সাদেকের কাছে সকালটা একটু আয়েশি। গতকাল সকালেও তিনি বাসায়ই ছিলেন। ঘরে ছিল তাঁর দুই মেয়ে। তবে স্ত্রী রোমানা নার্গিস ঘুম থেকে উঠে ঘরকন্না করেছেন। সবার নাশতার ব্যবস্থা করেছেন। তারপর নাতনি স্নেহাকে নিয়ে স্কুলে গিয়েছেন। তাঁর দম ফেলার ফুরসত নেই।
শনিবার স্ত্রীকে নিয়ে সাদেকের মালয়েশিয়ায় যাওয়ার কথা। বড় ছেলে শিহাব থাকেন সেখানে। ছেলে কত কী খেতে ভালোবাসে! মা তার জোগাড়যন্ত্র করছেন। শিমের বীচি শুকিয়ে নেওয়া হয়েছে, ছেলের জন্য নেবেন। আরও কত কাজ বাকি!
তাই নাতনিকে স্কুলে দিয়ে দ্রুত বাসায় ফিরে এসেছেন নার্গিস। এরই মধ্যে বাসার কলবেল বেজে উঠল। সাদেক দরজা খুলে দিলেন। দুই তরুণ ঘরে ঢুকল। একজনের নাম রুবেল।
‘আমি আব্বার গায়ে হেলান দিয়া সামনের রুমে বইসা ছিলাম। মাও সেখানে ছিল। আব্বা শুধু ওরে বলছিল—তুমি শান্ত হও। তুমি তোমার বাবা-মাকে নিয়া আসো। সঙ্গে সঙ্গে সে পিস্তল বাইর করল, আমি কান্নাকাটি শুরু করলাম, কিন্তু সে কিছু শুনল না। আমার সামনেই গুলি করল। দেখলাম, আব্বা সোফা থাইকা পইড়া গেছে। আম্মারেও গুলি করল। তারপর পিস্তল নিয়া আমাকে ধাওয়া করলে আমি দৌড়াইয়া নিচে নাইমা পড়ি। কত মানুষরে ডাকলাম, কেউ আসল না।’ এক নিঃশ্বাসে জানালেন সাদেকের মেজো মেয়ে।
স্কুলপড়ুয়া ছোট মেয়ে, যাকে রুবেল বিয়ে করতে চেয়েছিল, সে ছিল ভেতরের কক্ষের বাথরুমে। মা-বাবাকে গুলি করার পর হত্যাকারী রুবেল তার ঘরে গিয়ে চিত্কার করে বলেছে, ‘তোর বাপ-মারে মাইরা ফেললাম। এবার একলা একলা থাক।’
ঘটনার সময় বাড়ির অপর সদস্য সাদেকের পুত্রবধূ স্কুলে ছিলেন। তিনি লন্ডন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষক। সকাল নয়টার ক্লাস শেষে ফোন পেয়ে তিনি বাড়িতে ছুটে যান।
আতঙ্ক আর শোকে বিহ্বল সাদেকের দুই মেয়ে ও পুত্রবধূ এখন তাঁদের এক আত্মীয়ের বাসায় আছেন। গতকাল সন্ধ্যায় ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নাতনি স্নেহা বারবার মাকে জিজ্ঞেস করছিল, কোথায় তার দাদা-দাদি। স্বজনেরা দুই মেয়েকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিল। ছোট মেয়ে বিলাপ করছিল—‘এখনো বিশ্বাস হয় না, আব্বা-আম্মা নেই।’
মেজো মেয়ে ও স্বজনেরা জানান, মঙ্গলবার রাত দুইটার সময় হত্যাকারী রুবেল তাঁদের বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করেছিল। সাদেক তাকে পরদিন আসতে বলেছিলেন। ছোট মেয়ে জানিয়েছে, এর আগেও রুবেল ফোনে তাকে শাসিয়েছে—সবাই ওকে (রুবেল) ভয় পায়, তারা কেন পায় না!
বিকেলে সাদেকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাসা তালাবদ্ধ। বাড়ির বাইরে স্তম্ভিত, ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ আবদুল কুদ্দুসের স্ত্রী জ্যোৎস্না বেগম জানান, সাদেক নির্বিবাদী, ভালো মানুষ ছিলেন। তাঁর স্ত্রীও ছিলেন সদালাপী। তাঁদের এমন মৃত্যু কল্পনাও করা যায় না।
পুলিশ খুনিদের ধরতে পারেনি। নার্সারি মালিক সমিতির পক্ষ থেকে গতকাল বিকেলে খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে ব্যানার টাঙানো হচ্ছিল ৫৪/৪ বাড়িতে। বাড়ির ব্যালকনিতে লাল ফুলে ভরা একটি গাছ বাতাসে দুলছে। গাছটি কি জানে, এ বাড়িতে যিনি তাকে নিয়ে এসেছিলেন, আর যিনি তার যত্ন-আত্তি করতেন তাঁরা আর নেই?

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



