এমনিতেই সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায় ফসল এবং সড়কসহ অবকাঠামো খাতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে সিলেট অঞ্চলে। আর রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বোঝা তো রয়েছেই। অন্যদিকে আর্থিক ও জ্বালানি খাতে সীমাহীন দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে দেশের অর্থনৈতিক ও জ্বালানি সংকট চরম আকার ধারণ করছে। দেশের চালিকা শক্তি রেমিটেন্স প্রবাহ হ্রাস পেয়েছে আর জনশক্তি রপ্তানি তো দূরের কথা বরং যারা বিদেশে অবস্থান করতেছেন তাদের ফেরত আসার লাইন দীর্ঘ হতেই চলছে। অভ্যন্তরণী আর্থিক খাতের Good Governance অর্থাৎ সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণের পথে অন্তরায় সৃষ্টি হওয়ায় আজ তার অবস্থা নাজুক। শেয়ার বাজার-গার্মেন্টস ও শিল্প ক্ষেত্রে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অনাগ্রহতো রয়েছেই। শিক্ষিত কর্মহীন মানুষের সংখ্যাও দাঁড়িয়েছে প্রায় তিন কোটিতে।
এসব আমি আপনি স্বীকার করি আর না করি এক ভয়াবহ সংকটের দিকে আমরা পতিত। হ্যাঁ, রাজনৈতিক কারণে কিংবা রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে আমরা হয়তো এসব স্বীকার করি না কিংবা কেউ করলে বিরাগভাজন হই। কিন্তু বাস্তবতায় ৭০ টাকায় চাউল আমরা সবাই ক্রয় করতে হচ্ছে।
এসব সংকটের জন্য সরকাররেও ব্যর্থতা বিশেষ করে ধীরে ধীরে বিনিয়োগ নষ্ট করা, জনশক্তি রপ্তানি অঘোষিতভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া, অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক চালিকা শক্তিগুলো দুর্নীতির কারণে অনাস্থায় ও সংকটে ভোগা, খাদ্য মজুদ নীতি, দাতা সংস্থা ও উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলো থেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী সহায়তা না পাওয়ায় কূটনীতিক ব্যর্থতা, বিশেষ করে ব্যাংকিং খাতের ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণের বৃদ্ধিতা, সর্বোপরি ব্যাংকগুলোর গভর্ন্যান্স, অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ, ব্যবস্থাপনা, তদারকি এসব বিষয়ে দুর্বলতার কারণে আর্থিক খাতে সংকট বেড়েই চলা এবং সর্বস্তরে জবাবদিহিতার সংকট মোকাবেলায় ঘাটতির কথা না বললেই নয়।
কিন্তু এসব দোষ দিয়ে তো আর সমাধান হবে না। এখন করণীয় কি আমাদের তা কি আমরা ভাবিছি? সর্বক্ষেত্রে ব্যর্থতা কি আমাদের সামনে বিদ্যমান নয়?
এদিকে মারাত্মক বন্যার এবং বর্ষা মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় ভয়াবহ খাদ্যাভাবে পড়ার (ডিভাস্টেটিং হাঙ্গার) ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। বন্যায় বিপুল পরিমাণ কৃষিজমির ফসল ধ্বংস হয়ে গেছে। ফলে দীর্ঘ মেয়াদে বন্যার্তদের কাছে খাদ্য সরবরাহ দেয়াটাও ঝুঁকিতে পড়েছে।
এমতাবস্থায়, বর্তমানে সংকটের বহুমাত্রিকতা বিবেচনা করে আমরা কি কোন সমাধানের স্বার্থে কোন পথ খুঁজে নিতে পারি না? আলোচনা কেন নয় তাহলে? আমাদের চিন্তা, ধর্ম, সংবিধান, রাজনীতি ও রাষ্ট্র– সবই মানুষের কল্যাণের জন্য, মানবতার জন্য এবং অবশ্যই স্বদেশের স্বার্থে। সুতরাং আমাদের চিন্তা, বুদ্ধি ও কর্মের অনিবার্য পুনঃনিরীক্ষণ ও তদনুযায়ী পুনর্বিন্যাসপূর্বক এই মুহূর্তে উদ্দেশ্য হওয়া উচিত সংকট মোকাবিলার সাথে সাথে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করে রাজনৈতিক সংকটও নিরসন করা।
জনকল্যাণবান্ধব চিন্তাশীলতা-বুদ্ধিজীবিতার উন্নয়নে ও উত্তরোত্তর প্রসারণে মনোসংযোগী হলেই কেবল আমরা বর্তমান সময়ের মূল জাতীয় সংকট কাটিয়ে ওঠার পথ সুগম করতে পারবো বলে আমার ধারণা। অন্যথায় বিভক্তি-বিদ্বেষ-কোপাকুপি-হানাহানির বেড়াজাল থেকে মুক্ত হয়ে আমাদের জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলার আকাঙ্খা সুদূর পরাহত হয়েই থাকবে। মানবিক বিপর্যয় গ্রাস করবে আমাদের। এখনই সময় এক হওয়ার। সংকট মোকাবিলার। আসুন দেশের তরে চর্চা করি আমাদের মেধা, রাজনীতি
- মোহাম্মদ তরিক উল্যাহ
আইনজীবী
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০২২ সকাল ১১:১২