somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নির্বাচন করলে দুদকের মামলা খেতে হয় যেসব কারণে এবং রেহাই পাওয়ার উপায়

১৫ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ৩:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমরা দেখি বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ দুদকের মামলার আসামী হয়ে থাকেন। বিশেষ করে যারা সরাসরি নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেন তাদের পিছনে দুদক দৌড়ায় বেশী! কিন্তু কেন?
দুদকের/দুর্নীতি সংক্রান্ত এমন সব মা্মলা পরিচালনা করতে এবং প্রার্থীদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমার যে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা সঞ্চার হয়েছে তা থেকে কিছু বিষয় শেয়ার করার চেষ্টা করবো।
প্রথমত, যে সকল রাজনৈতিক নেতা সরাসরি নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেন তাদেরকে ধরা দুদকের জন্য সহজতর। কারণ, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর ১২(৩বি) অনুচ্ছেদ অনুসারে নির্বাচনে সকল প্রার্থীকে মনোনয়নপত্রের সাথে হলফনামার মাধ্যমে ৮টি তথ্য ও কোন কোন তথ্যের সপক্ষে কাগজপত্র দাখিল করতে হয়। এই সকল তথ্যের ভিত্তিতে দুদকের জন্য নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া ব্যক্তিকে জবাবদিহিতার আওতায় বিনা কষ্টে আনা যায়।
কারণ, ৮ টি তথ্যের মধ্যে প্রার্থীর নিজের ও তার উপর নির্ভরশীলদের পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী, কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে তদকর্তৃক একক বা যৌথভাবে বা তার উপর নির্ভরশীল সদস্য কর্তৃক গৃহীত ঋণের পরিমাণ অথবা কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা পরিচালক হবার সুবাদে ঐ সকল প্রতিষ্ঠান হতে গৃহীত ঋণের পরিমাণ, সম্ভাব্য আয়ের উৎসসমূহ, আয়কর রিটার্ণের ডকুমেন্টস্, ব্যবসা/পেশার বিবরণী দাখিল করতে হয়। আর এসব দাখিল করার প্রেক্ষিতে দুদকের জন্য পরবর্তী কাজ সহজ হয়ে যায়।

দ্বিতীয়ত, দাখিলকৃত পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণী বা আয়কর নথিতে প্রার্থীর নামীয় কোন সম্পদ না আসলে কিংবা অবমূল্যায়ন (কম দাম দেখানো) বা আয়ের বৈধ উৎসের বিবরণী নিয়ে সন্দে হলে দুদক নোটিশ করতে পারে। আর এসব তথ্য দুদক নয় চাইলে যে কেই নির্বাচন কমিশনের ওয়েব সাইট থেকেই সংগ্রহ করে যাচাই-বাচাই করতে পারেন।

কি মামলা করতে পারে দুদক?
দুদক প্রার্থীর দাখিলীয় হলফনামা ও বিবরণী দেখে প্রথমে দুদকের যদি মনে হয় প্রার্থী বৈধ উৎসের সহিত অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পত্তির দখলে রহিয়াছেন বা মালিকানা অর্জন করিয়াছেন তাহলে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬ (১) ধারার বিধান মোতাবেক উক্ত ব্যক্তিকে কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত পদ্ধতিতে দায়-দায়িত্বের বিবরণ দাখিলসহ উক্ত আদেশে নির্ধারিত অন্য যে কোন তথ্য দাখিলের নির্দেশ দিতে পারিবে৷
আর থ্য দাখিলের নির্দেশ দেওয়ার পর যদি কোন বই, হিসাব, রেকর্ড, ঘোষণা পত্র, রিটার্ণ বা কোন দলিল পত্র দাখিল করেন বা এমন কোন বিবৃতি প্রদান করেন যাহা ভিত্তিহীন বা মিথ্যা বলিয়া মনে করিবার যথার্থ কারণ থাকে,তাহালে ৩ বৎসর (তিন) বৎসর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয়বিধ দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন৷

আর প্রার্থীর দাখিলীয় হলফনামা ও বিবরণী দেখে যদি মনে হয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নিকট জ্ঞাত আয়ের উৎস বহির্ভূত সম্পত্তির দখল রয়েছে এবং সেক্ষেত্রে দুদক দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারার বিধান মোতাবেক মামলা করতে পারে এবং উক্ত ব্যক্তি অনূর্ধ্ব ১০ (দশ) বৎসর এবং অন্যুন ০৩ (তিন) বৎসর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদে কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং তদুপরি অর্থ দণ্ডেও দণ্ডনীয় হইবেন; এবং উক্তরূপ সম্পত্তিসমূহ বাজেয়াপ্ত যোগ্য হইবে৷

তাহলে করণীয় কি?
করণীয় হলো শুধু নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য হলেই হবে না বরং নমিনেশন ফরম সংগ্রহ থেকে জমা দেওয়ার যাবতীয় কাজ অত্যন্ত নিখুঁতভাবে করতে হবে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর ১২(৩বি) অনুচ্ছেদ অনুসারে নির্বাচনে সকল প্রার্থীকে মনোনয়নপত্রের সাথে হলফনামার মাধ্যমে ৮টি তথ্য ও তথ্যের সপক্ষে কাগজপত্র দাখিল করতে হয় সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং আয়কর নথির সাথে দাখিলকৃত হলফনামার সামঞ্জস্যতা থাকতে হবে।
সর্বোপরি, এই সংক্রান্তে নির্বাচন সংক্রান্তে অভিজ্ঞ লোক এবং দুদকের মামলা পরিচালনা করেন এমন আইনজীবীর সহায়তা নেওয়া উত্তম। এসব ছাড়াও এমন কিছু সুক্ষ্ম বিষয় রয়েছে যা একজন প্রার্থীর মাথায় আসে না এবং নির্বাচনী ব্যস্ততার কারণে তখন বুদ্ধি খাটিয়ে কাজ করাও সম্ভব হয় না। পরে, নানান জটিলতায় বিশেষ করে মামলা মোকাদ্দমার গ্লানি টানতে হয়। নির্বাচিত হলে তো ঝামেলা আরো বেশী বেড়ে যায়।


--মোহাম্মদ তরিক উল্যাহ
অ্যাডভোকেট
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
০১৭৩৩৫৯৪২৭০ ( কল করার পূর্বে হোয়াটস্অ্যাপে ম্যাসেজ দিন)

লেখক- আইন বিষয়ক উপন্যাস 'নিরু" এবং 'অসমাপ্ত জবানবন্দী', মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস 'মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ' এবং 'একাত্তরের অবুঝ বালক' ।





সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৯
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইনকিলাবের বীজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪


সদ্য শিশু জন্ম নিয়ে সদ্য খুলেছে আঁখি,
মা বলে, কথা দাও বাছা—হাদি হবে নাকি?
শিশুর মুখে কান্নার রোল, হাদি হবার দায়,
বাবা বলে, এই তো হাদি—বুকে আয়, বুকে আয়।

ঘরে ঘরে আজ হাদির... ...বাকিটুকু পড়ুন

=একটি ডায়াটের গল্প, যেভাবে ওজন কমিয়েছিলাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৮


১৬ ডিসেম্বরের খাবার ছিল। উপরের চায়ের ছবিতে ফেসবুকের দুই গ্রুপে দুটো পুরস্কার পেয়েছি প্রতিযোগিতায় আলহামদুলিল্লাহ।

মোবাইলে পোস্ট, ভুল ত্রুটি থাকিতে পারে, মার্জনীয় দৃষ্টিতে রাখবেন।

জব করি বাংলাদেশ ব্যাংকে। সারাদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

'আই হ্যাভ অ্যা প্ল্যান'

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৯



১। মার্টিন লুথার কিং ১৯৬৪ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান।
আমাদের মহাত্মা গান্ধীর কর্মকান্ড লুথার খুবই পছন্দ করতেন। ১৯৫৫ সালে লুথার বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অব ফিলোসোফি ডিগ্রি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক উন্নয়নে ভারতের কি করণীয় ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৭


গত মে মাসে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি ফটোকার্ডে দেখানো হয়েছিল ভারতে আশ্রয় নেওয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের তালিকা। তখন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলেও এখন পরিস্থিতি নতুন মোড় নিয়েছে। গত ১১... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৈয়দ কুতুবের পোষ্ট: ভারতের করণীয় কি কি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৩



বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক ভালো রাখার জন্য ভারতের করণীয় কি কি?

০) শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো।
১) বর্ডার থেকে কাঁটাতারের ফেন্চ তুলে নেয়া।
২) রাতে যারা বর্ডার ক্রস করে, তাদেরকে গুলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×