


বাংলাদেশের বিগত চুয়ান্ন বছরের রাজনীতির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে প্রতিটি সময়ের শীর্ষ নেতৃত্বের পক্ষে-বিপক্ষে নানান আলোচনা-সমালোচনা আসে। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়ের রাজনৈতিক পরিক্রমায় শহীদ জিয়ার সততা আর সাদামাটা জীবন-যাপন নিয়ে তিনি অবিসংবাদিত এবং কিংবদন্তীতুল্য। একজন রাষ্ট্রনায়কের ব্যক্তিগত জীবন কতটুকু সাধারণ হতে পারে তা জিয়াউর রহমানের শাসনামল দেখলে চরম সমালোচনাকারীর মুখেও প্রশাংসা আসতে বাধ্য। আসুন তা একটু পর্যালোচনা করি।
শহীদ জিয়ার মন্ত্রিসভার সদস্য একেএম মাঈদুল ইসলাম মুকুল লিখেছেন:
‘একদিন প্রেসিডেন্ট জিয়ার সাথে হেলিকপ্টারে উঠলাম। তখন সময় সকাল সাড়ে নয়টা। প্রেসিডেন্ট সাহেবের হাতের ঘড়িতে দেখি ঘড়ির কাঁটা সাড়ে সাতটা। তখন আমি বললাম, স্যার আপনার ঘড়িটা বোধহয় ঠিক না। তিনি হেসে বললেন যে, আমার একটা ভালো ঘড়ি ছিল। আর্মিতে থাকার সময় কুমিল্লার এক মিটিংয়ে হারিয়ে ফেলেছি। পরে সেটাই ঠিক করা হয় এবং প্রেসিডেন্ট মাত্র সাড়ে চারশ টাকার ঘড়ি পরে মারা গেলেন। অথচ বঙ্গভবনে সে সময় ১৪-১৫টি দামি ঘড়ি ছিল, যেগুলোর এক একটির মূল্য ছিল প্রায় তিন লক্ষ টাকা। এ ঘড়িগুলো বিদেশিরা উপঢৌকন হিসেবে দিতেন। কিন্তু তিনি কোনোদিনই নিজের জন্য এগুলো ব্যবহার করেন নাই। বঙ্গভবনে সাজিয়ে রাখতেন। এগুলো আমাদের চোখের সামনে দেখা আদর্শ। ’ (১)
শহীদ জিয়ার জীবনযাপন সম্পর্কে বড় ছেলে তারেক রহমান লিখেছেন:
‘আব্বু সাদাসিধে জীবন কাটাতে ভালোবাসতেন। আমরাও কোনদিন কোনো দামি জামা-কাপড় জুতা ব্যবহার করিনি। কেউ আমাদের কোনো জিনিস দিলে আব্বু তা পছন্দ করতেন না। তিনি নিজেও কারও কাছ থেকে কোনো উপহার নিতেন না। সেজন্য আমাদের আত্মত্মীয়স্বজন আমাদের কোনোকিছু উপহার দিতে সাহস করতেন না। আব্বু-আম্মু আর আমরা দুই ভাই সাধারণ খাবার খেতাম। খুব সাধারণ পোশাক পরতাম। আব্বুর ব্যবহার করা প্যান্ট বা শার্ট আব্বুর ছোটবড় হলে সেগুলো কেটে আমাদের গায়ের মাপে দরজি জামা-প্যান্ট তৈরি করে দিত। ’ (২)
আনুষ্ঠানিক এবং সরকারি উপলক্ষ্যেই কেবল জিয়া ভালো পোশাক পরতেন। কিন্তু বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যে তিনি ছিলেন একজন খুবই সহজ-সরল মানুষ, এমনকি ছেঁড়া কাপড় রিপু করিয়েও পরতেন। (৩)
মৃত্যুর পর চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে তাঁর ব্যক্তিগত যেসব জিনিসপত্র পাওয়া যায় সে সম্পর্কে একটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে বলা হয়:
জিয়ার ব্যক্তিগত মালামালের মধ্যে নিম্নলিখিত জিনিসগুলি পাওয়া যায়: একটি পুরাতন চামড়ার সুটকেস। তাহা এত পুরাতন যে, উহার তালাও সঠিক কাজ করে না। একটি পুরাতন অতি সাধারণ টু-ইন-ওয়ান, তালাবদ্ধ একটি পুরাতন 'ইকোলাক' জাতীয় ব্রীফকেস, গায়ের আধছেঁড়া গেঞ্জি, ২/৩টি সাফারী শার্ট, একটি প্যান্ট, একটি ফাউন্টেন পেন, একটি সানগ্লাস। মৃতের মাথার কাছে পড়িয়াছিল কয়েকটি ক্যাসেট, তাঁহার বিছানার পার্শ্বেই পড়িয়াছিল জায়নামাজ ও সাদা গোল টুপি। (৪)
শহীদ জিয়া কে নিয়ে প্রবীণ সাংবাদিক এবিএম মুসাও সেই কথা বলেছেন:
‘একবার জিয়া আমাকে তাঁর সঙ্গে বঙ্গভবনে দুপুরের খাবার খেতে বললেন। খাবারের টেবিলে অপেক্ষা করছিল অপার বিস্ময়। একজন প্রেসিডেন্টের মেন্যুতে এমন সাধারণ মানের খাবার থাকতে পারে ভাবাও যায় না। ’ (৫)
তথ্যসূত্র :
(১) একেএম মাঈদুল ইসলাম মুকুল, আত্মসত্তার রাজনীতি এবং আমার ভাবনা, হাতেখড়ি,ঢাকা,২০১৫, পৃ-১৮০
(২)তারেক রহমানের সাথে ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার, ১৯ আগস্ট, ২০১৪ [প্রখ্যাত সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ সাহেবের রচিত 'প্রেসিডেন্ট জিয়া: রাজনৈতিক জীবনী' বইয়ের পৃ-৩৮]
(৩) জহিরুল হক, দৈনিক বাংলা, ১২ জুন ১৯৮১
(৪) দৈনিক ইত্তেফাক, ৪ জুন ১৯৮১
(৫)এবিএম মুসার সঙ্গে ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার, ২৩ জুলাই ২০১২ [প্রখ্যাত সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ সাহেবের রচিত 'প্রেসিডেন্ট জিয়া: রাজনৈতিক জীবনী' বইয়ের পৃ-৩৮]
** মোহাম্মদ তরিক উল্যাহ
অ্যাডভোকেট
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
০১৭৩৩৫৯৪২৮০
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে আগস্ট, ২০২৫ বিকাল ৩:১৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


