
আত্ম-চিৎকারে আমানের ঘুম ভেঙে গেল। পাশের কক্ষে এক ভদ্রলোক হাউ-মাউ করে চিৎকার করে কান্না করছে। শোন, তুই দোষ স্বীকার করলেই তো ল্যাটা চুকে যায়। এই সামান্য জিনিসটা বুঝছিস না?
স্যার, আমার আল্লাহ কোরআনের কসম, আমি এই এলাকাতেই কখনো যাইনি। আর ধর্ষণ তো দূরের কথা।
আরে শালা, তুই তো যাসনি সেটা তো জানি-ই। এখন আমার উপর দায়িত্ব পড়েছে আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে সত্য উদঘাটন করতে হবে। তুই তো এমনিতেই মরবি, অমনেও মরবি। সমস্যা কী? ঐ যা সাপোর্ট লাগে দিবনি আমরা।
স্যার, আমারে অন্য যে কোনো মামলা দেন, মেনে নিবো। নারীঘটিত মামলা দিয়েন না। সংসার আছে, নিজের ঘরে মেয়ে আছে। মাদক-কারবারি করি, আপনি যতো বড়ো মাদকের মামলা হয় দেন। এই অভিশাপ গায়ে লাগাইয়েন না।
কিছু করার নেই মন্টু। উপরের নির্দেশ। ভিআইপি কেইস এটা। অন্যদিকে চিন্তা করার আগেই ঘটনা ঘুরিয়ে দিতে হবে। তোর জামিন, খালাস এসব আমরাই দেখবো তাহলে। তোর পরিবার খরচও পাবে সময় মতো। আর একটা সময় তুই তো খালাস পাবি-ই।
স্যার, এক কাজ করেন। আমারে ক্রসফায়ার দিয়ে দেন। এই জীবন আর ভালো লাগে না। ঢাকা শহরে আসছিলাম কাজের খোঁজে। রেল-লাইন থেকে নামতেই পুলিশ ব্যাগ চেক করতে গেলে দৌড় দেই। পাশের দুজন দৌড় দেওয়াতে আমিও বুঝে বা না বুঝে হোক দৌড় দিতে হয়। গ্রামে আগে আর্মি দেখলে আমরা কারণ ছাড়া দৌড়াতাম। কোনো কারণ ছাড়া দৌড়ালাম কেন এটাই অপরাধ। বাকিদের কাছে মাদক ছিল, আর আমিও ফেঁসে গেলাম। তাদের লগে জেলে থাকতে থাকতে আমিও প্রফেশনাল কারবারি হয়ে গেলাম। এক দৌড়-ই জীবনকে স্থির করে দিলো চিরতরে।
রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতার হয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছে আমান। এই অনিরাপদ ঢাকা কতো নিরাপরাধীকে মামলার যাঁতাকালে ফেলছে। গ্রেফতারের পর মন্টুর মতো পরিণতি আমারও হতে পারতো। হয়তো একে একে পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন সবাই মেনে নিতো অপরাধী হিসেবে। মা না মেনে নিলেও সয়ে যেত। আনমনে প্রশ্ন তুলতো, আসলেই এমনটি করে ও? মন্টুর মেয়ে সমাজের কাছে আমৃত্যু হেয়-প্রতিপন্ন হতে থাকবে। এক সময় মন্টুর জবানবন্দির উপর ভিত্তি করে হয়তো ফাঁসিও হবে কিন্তু প্রকৃত সত্য উদঘাটন তো দূরের কথা চেষ্টাও অন্ধকারে মিশে যাবে।
রিমান্ডের এক একটা দিন যেন এক একটা যুগের সমান। আমানের খুব ইচ্ছে হচ্ছে চা খেতে। গাঢ় দুধ চা। সাথে পাউরুটি চুবিয়ে খেতে পারলে যেন সব কষ্ট সয়ে যেতো। সেদিন জিজ্ঞাসাবাদ করতে আসা অফিসার একটার পর একটা সিগারেট খাচ্ছিল। আমানের খুব ইচ্ছে করলো বলতে, 'স্যার আমাকে একটা বিড়ি খেতে দিবেন। সব ইচ্ছে পূরণ নয় বরং প্রকাশ করাও যায় না। কিছু কিছু ইচ্ছেকে জন্মের পূর্বেই মৃত্যুর স্বাদ নিতে হয়।
সেদিন আমানের কথা হচ্ছিল কথিত গ্রেফতারকৃত এক আসামির সাথে। রিমান্ডে আনার পর ভদ্রলোককে গভীর রাতে নিয়ে যাওয়া হলো হাতিরঝিলে। ইসলামিক ব্যক্তিত্ব বেচারাকে লজ্জা আবরণের কাপড় ছাড়া অবশিষ্ট সব খুলে ছেড়ে দেওয়া হলো। হাতে ধরিয়ে দেওয়া হলো সিগারেট আর একটা বোতল। দুই দিক থেকে রাস্তা বন্ধ করে নিরবতা সৃষ্টি করা হলো। ভদ্রলোক ভাবছিলেন হয়তো ক্রসফায়ার দেওয়া হবে। না. তা করা হলো না। হাজির করা হলো অর্ধ-উলঙ্গ দুই রমণিকে। দুই রমণীকে পাশে বসিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে ছবি আর ভিডিও ধারণ করা হলো। কখনো জামিন পেলেও যেন মুখ খুলতে না পারে সেজন্য এমনভাবে ব্লাকমেইল করাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ হতে পারে তা তার জানা ছিল না!
গায়েবি শৃঙ্খল, শিকড় প্রকাশনী, পৃ-৬৩-৬৪
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ২:৩৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


