somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আইন বিষয়ক উপন্যাস 'গায়েবি শৃঙ্খল' থেকে কিছু

২৯ শে আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আত্ম-চিৎকারে আমানের ঘুম ভেঙে গেল। পাশের কক্ষে এক ভদ্রলোক হাউ-মাউ করে চিৎকার করে কান্না করছে। শোন, তুই দোষ স্বীকার করলেই তো ল্যাটা চুকে যায়। এই সামান্য জিনিসটা বুঝছিস না?

স্যার, আমার আল্লাহ কোরআনের কসম, আমি এই এলাকাতেই কখনো যাইনি। আর ধর্ষণ তো দূরের কথা।

আরে শালা, তুই তো যাসনি সেটা তো জানি-ই। এখন আমার উপর দায়িত্ব পড়েছে আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে সত্য উদঘাটন করতে হবে। তুই তো এমনিতেই মরবি, অমনেও মরবি। সমস্যা কী? ঐ যা সাপোর্ট লাগে দিবনি আমরা।

স্যার, আমারে অন্য যে কোনো মামলা দেন, মেনে নিবো। নারীঘটিত মামলা দিয়েন না। সংসার আছে, নিজের ঘরে মেয়ে আছে। মাদক-কারবারি করি, আপনি যতো বড়ো মাদকের মামলা হয় দেন। এই অভিশাপ গায়ে লাগাইয়েন না।

কিছু করার নেই মন্টু। উপরের নির্দেশ। ভিআইপি কেইস এটা। অন্যদিকে চিন্তা করার আগেই ঘটনা ঘুরিয়ে দিতে হবে। তোর জামিন, খালাস এসব আমরাই দেখবো তাহলে। তোর পরিবার খরচও পাবে সময় মতো। আর একটা সময় তুই তো খালাস পাবি-ই।

স্যার, এক কাজ করেন। আমারে ক্রসফায়ার দিয়ে দেন। এই জীবন আর ভালো লাগে না। ঢাকা শহরে আসছিলাম কাজের খোঁজে। রেল-লাইন থেকে নামতেই পুলিশ ব্যাগ চেক করতে গেলে দৌড় দেই। পাশের দুজন দৌড় দেওয়াতে আমিও বুঝে বা না বুঝে হোক দৌড় দিতে হয়। গ্রামে আগে আর্মি দেখলে আমরা কারণ ছাড়া দৌড়াতাম। কোনো কারণ ছাড়া দৌড়ালাম কেন এটাই অপরাধ। বাকিদের কাছে মাদক ছিল, আর আমিও ফেঁসে গেলাম। তাদের লগে জেলে থাকতে থাকতে আমিও প্রফেশনাল কারবারি হয়ে গেলাম। এক দৌড়-ই জীবনকে স্থির করে দিলো চিরতরে।

রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতার হয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছে আমান। এই অনিরাপদ ঢাকা কতো নিরাপরাধীকে মামলার যাঁতাকালে ফেলছে। গ্রেফতারের পর মন্টুর মতো পরিণতি আমারও হতে পারতো। হয়তো একে একে পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন সবাই মেনে নিতো অপরাধী হিসেবে। মা না মেনে নিলেও সয়ে যেত। আনমনে প্রশ্ন তুলতো, আসলেই এমনটি করে ও? মন্টুর মেয়ে সমাজের কাছে আমৃত্যু হেয়-প্রতিপন্ন হতে থাকবে। এক সময় মন্টুর জবানবন্দির উপর ভিত্তি করে হয়তো ফাঁসিও হবে কিন্তু প্রকৃত সত্য উদঘাটন তো দূরের কথা চেষ্টাও অন্ধকারে মিশে যাবে।

রিমান্ডের এক একটা দিন যেন এক একটা যুগের সমান। আমানের খুব ইচ্ছে হচ্ছে চা খেতে। গাঢ় দুধ চা। সাথে পাউরুটি চুবিয়ে খেতে পারলে যেন সব কষ্ট সয়ে যেতো। সেদিন জিজ্ঞাসাবাদ করতে আসা অফিসার একটার পর একটা সিগারেট খাচ্ছিল। আমানের খুব ইচ্ছে করলো বলতে, 'স্যার আমাকে একটা বিড়ি খেতে দিবেন। সব ইচ্ছে পূরণ নয় বরং প্রকাশ করাও যায় না। কিছু কিছু ইচ্ছেকে জন্মের পূর্বেই মৃত্যুর স্বাদ নিতে হয়।

সেদিন আমানের কথা হচ্ছিল কথিত গ্রেফতারকৃত এক আসামির সাথে। রিমান্ডে আনার পর ভদ্রলোককে গভীর রাতে নিয়ে যাওয়া হলো হাতিরঝিলে। ইসলামিক ব্যক্তিত্ব বেচারাকে লজ্জা আবরণের কাপড় ছাড়া অবশিষ্ট সব খুলে ছেড়ে দেওয়া হলো। হাতে ধরিয়ে দেওয়া হলো সিগারেট আর একটা বোতল। দুই দিক থেকে রাস্তা বন্ধ করে নিরবতা সৃষ্টি করা হলো। ভদ্রলোক ভাবছিলেন হয়তো ক্রসফায়ার দেওয়া হবে। না. তা করা হলো না। হাজির করা হলো অর্ধ-উলঙ্গ দুই রমণিকে। দুই রমণীকে পাশে বসিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে ছবি আর ভিডিও ধারণ করা হলো। কখনো জামিন পেলেও যেন মুখ খুলতে না পারে সেজন্য এমনভাবে ব্লাকমেইল করাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ হতে পারে তা তার জানা ছিল না!

গায়েবি শৃঙ্খল, শিকড় প্রকাশনী, পৃ-৬৩-৬৪
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০২৫ দুপুর ২:৩৬
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×