
বিশেষ ট্রাইব্যুনালে জামিন শুনানি চলছে। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির তাগিদে কয়েকটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। যদিও রাজনৈতিক ঘটনা সম্পৃক্ত মামলার আধিক্য বেশি থাকায় অনেকে বিষয়টি নিয়ে ভিন্ন মত পোষণ করছে। জামিন শুনানিতে আসামি পক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবীর উপস্থাপনার বিশেষ দিক হলো, মাননীয় আদালত আমার আসামি কোনোভাবেই বিরোধী দলীয় মতাদর্শের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নন। তিনি ক্ষমতাসীন দলের উপজেলার সহ-আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক। তার আপন শ্যালক ক্ষমতাসীন দলীয় নমিনেশন নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তার পরিবারের কেউ-ই বিরোধী দলীয় মতাদর্শের রাজনীতিকে ধারণ বা লালন করেন না। তিনি যে ক্ষমতাসীন দলের পোড়খাওয়া নিবেদিত নেতা সেটার স্বপক্ষে জেলা, উপজেলা কমিটির প্রত্যয়নপত্রও রয়েছে এবং সংযুক্তি হিসেবে ফিরিস্তিযোগে দাখিল করা হয়েছে। মূলত একই নামের বিরোধী দলের এক আসামির জায়গায় ভুলবশত তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
লার্নেড, তা না হয় বুঝলাম। কিন্তু চার্জশিটে তো সুস্পষ্টভাবে আপনার মক্কেলের নাম, পিতার নাম, ঠিকানাসহ উল্লেখ আছে এবং তা আপনার দাখিলকৃত কাগজপত্রের সাথেও মিলছে।
বিজ্ঞ আদালত, ঘটনা তো এখানেই। আপনি জানেন, দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বিদ্যমান। আমার মক্কেলকে হয়রানি করার হীন প্রয়াসেই উদ্দেশ্যমূলকভাবে এমনটি করা হয়েছে।
আপনার মক্কেল যদি নির্দোষই থাকে তো এতোদিন পরে কেন আসলেন? পুলিশ তো আর স্থানীয়দের বিষয়ে এতো কথা জানে না। তাহলে কী নিজ দলের লোকজনেই এমনটি করেছে বলবেন?
বিজ্ঞ আদালত, আপনি বিষয়টি আঁচ করতে পেরেছেন। আমার মক্কেল উপজেলা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ প্রত্যাশী। নিজ দলের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চক্রান্তেই এমনটি হয়েছে মর্মে অনুমেয়। আর তিনি ঘুণাক্ষরেও তো কখনো কল্পনা করেননি তার নামে কেউ মামলা করতে পারে। মামলার বিষয়ে অবহিত হওয়া মাত্রই সন্দেহ দূর করার নিমিত্তে বিজ্ঞ আদালতে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণপূর্বক জামিনের প্রার্থনা করিছেন।
আদালত নথি পর্যালোচনায় এক ঘণ্টা পর আদেশ দিবেন মর্মে জানালেন। আসামি পক্ষে সরকার দলীয় একনিষ্ট নেতা তার যুক্তির স্বপক্ষের মূল কাগজপত্র দাখিল করলেন। উপস্থিত সবাই বিষয়টি হাসি-ঠাট্টায় নিলেও নিরুর মাথায় ধরছে না। তাহলে কী বিচারের ক্ষেত্রে অপরাধ নয়, অপরাধীর রাজনৈতিক পরিচয়ই মুখ্য? বিচার হবে তো অপরাধের, রাজনৈতিক মতাদর্শের নয় এবং এটি কখনোই বিচারের মানদণ্ড হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না।
গায়েবি শৃঙ্খল, শিকড় প্রকাশনী, পৃ-৪০-৪১
লেখকের অন্যান্য গ্রন্থ- আইন বিষয়ক উপন্যাস 'অসমাপ্ত জবানবন্দী' এবং 'নিরু'; মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস 'মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ' এবং 'একাত্তরের অবুঝ বালক' ।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


