সিগারেট!! গ্যাঁদাকাল থেকেই এই বস্তুটার প্রতি ছিল আমার দুর্বার আকর্ষণ। ক্লাস ওয়ান-টু তে পড়ার সময় দেখতাম সাথের পোলাপাইন কিংবা বাপ-মা কোনোভাবে সিগারেটের গন্ধ পাইলেই নাকমুখে হাত দিয়া ধরতো নইলে কাশতে কাশতে নাড়িভুঁড়ি বাইর করার উপক্রম করতো। সেক্ষেত্রে আমি ছিলাম একটু উল্টা টাইপের। আমার বরং ভালোই লাগতো সিগারেটের ঐ গন্ধ। বাসার দারোয়ান যখন চিপায়-চাপায় গিয়া সিগারেট টানতো, আমি তখন চামে চামে তার আশেপাশে থাকতাম ঐ মায়াবী গন্ধের লোভে। মাঝে মাঝে বাসায় লুকায় কাগজে আগুন জ্বালায় টানার ট্রাই করতাম। সেই জিনিসে একটান দিয়াই ওরে কাশি রে! আর ভাবতাম বাকি লোকজন আমার মত কাশি দেয়া ছাড়াই টানে ক্যামনে। আজব তো! একবার হইলো কি এই কাগজের ডামি সিগারেট ধরাইতে গিয়া মা'র হাতে খাইলাম ধরা আর সে কি ধমকানি! যাইহোক এই ধমক খাইয়াও আমার সিগারেটপ্রেমী মনরে কেউ আটকাইতে পারলো না। ক্লাস ফাইভে পড়ার সময় একদিন ঠিক করলাম এইসব ঘোড়ার ডিম কাগজ-ফাগজ আর না। আসল জিনিসই টাইনা দেখা লাগবে, নাইলে জীবন বৃথা। যেই ভাবা সেই কাজ। বাসার থিকা একটু দূরে গিয়া একটা সিগারেটের দোকানের সামনে দাঁড়ায় অনেকক্ষণ অবজার্ভ করলাম যে কি কি সিগারেট আছে। দোকানের সামনে সাজানো অনেক রকম প্যাকেটের মধ্যে কেন জানি মার্লবোরোর প্যাকেটটাই মনে ধরল। ঠিক করলাম এইটাই কিনবো। ফর ইওর কাইন্ড ইনফর্মেশন, সেসময় মার্লবোরোর নিজস্ব কোন প্রোডাকশন বাংলাদেশে ছিল না। বাইরে থেকে আমদানি করা লাগতো আর দামও ছিল সবচেয়ে বেশি। ৫ টাকা!! তখন তো আর এতো কিছু জানি না তাই টেনশনে পড়লাম যে দাম না জানি কত হয়। পকেটে আছে একটা ছিঁড়া দশ টাকার নোট। কোনরকমে সাহস কইরা একটা মার্লবোরো নিয়া ঐ দশ টাকা দোকানদাররে ধরায় দিলাম এই ভয়ে যে আরও টাকা চাইয়া বসে নাকি ব্যাটা। নাহ, উল্টা দেখি আমারে ৫ টাকা ফেরত দিল। যাক, শান্তি!! কিন্তু ওমা এ কি?? সিগারেটটা হাতে নিয়া ঘুরতেই দেখি স্কুলের এক বন্ধু আমার দিকে হাঁ কইরা তাকায় আছে যেন আমি এলিয়েন এইমাত্র পৃথিবীতে আইসা নামলাম। এই শালার বাসা যে আবার ওই এলাকায়ই ভুইলাই গেসিলাম। বন্ধু কয়, "ছি ছি তানিম, তুই সিগারেট খাস?? দাঁড়া, আন্টিকে বলে দেবো।" কথায় আছে যে পৃথিবীর সকল পাপের মূল হচ্ছে মিথ্যা। আর এহেন ভয়াবহ দুর্যোগময় পরিস্থিতে ঐ মূল পাপ করা ছাড়া আর কোন উপায়ই দেখলাম না। সিনা টান টান কইরা বন্ধুরে কইলাম, "যা ক তর আন্টিরে। বাসায় মামা আসছে, ওনার জন্য নিলাম। তর আন্টি জানে।" বন্ধুরে ভুংভাং বুঝায় বাসায় আইসা পড়লাম। বাপের পোস্টিং তখন ঢাকার বাইরে আর মা তখন ব্যাঙ্কে সার্ভিস করে। মতিঝিল থিকা বাসায় আসতে আসতে রাইত আটটা। বাসায় থাকে ক্লাস ওয়ানে পড়া ছোটভাই আর চোখে কম দেখা নানী। বলতে গেলে আমিই তখন বাসার প্রেসিডেন্ট। তারপরও অতি সাবধানে সিগারেট টা নিয়া সুন্দর কইরা বাথরুমে ঢুইকা গেলাম, যাওয়ার সময় কিচেন থিকা ম্যাচটাও নিয়া নিলাম। এরপর ধরাইলাম জীবনের প্রথম সিগারেট। হালকা পাতলা কাশি দিলেও অতীতে কাগজের ধোঁয়া টানার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা বড়ই সাহায্য করলো। সিগারেট শেষ কইরা পড়লাম আরেক বাঁটে। বাথরুম ভর্তি ধোঁয়া আর গন্ধের কি করি?? জিনিয়াস ব্রেন আমার!! প্রথমে পুরা বাথরুমে ফিনাইল ছিটায় দিলাম এরপর জ্বালায় দিলাম কয়েল। নানী আইসা জিগাইলো এতো ধোঁয়া ক্যান। কইলাম বাথরুমে মশা, তাই কয়েল জালাইসি। পরের দিন কিনলাম বাংলা ফাইভ (555)। আহ! একটা সিগারেটই ছিল ঐটা। খুবই মিস করি। তো বাংলা ফাইভ কিনে সন্ধ্যায় বাসার পিছনের অন্ধকার বারান্দা যেইটায় কেউ যাইতো না সাধারনত ঐটার এক কোণায় গিয়া ধরাইলাম। কয়েকটান দিয়া ভুত দেখার মত লাফ দিয়া উঠলাম। আমার ক্লাস ওয়ানে পড়া ছোটভাই দেখি উঁকি দিয়া দেখতাসে আমারে। পকেটের শেষ সম্বল পাঁচ টাকা বাইর কইরা দিয়া কইলাম, "নে এইটা, কাউরে কইস না।" হায় হায়!! বিচ্ছু দেখি কয় টাকা নিবো না. জিগাইলাম চকলেট আইনা দিমু নাকি। কয় তাও নাকি নিবো না। মর জ্বালা! কই যাই এখন?? ঘুস নিবো না এতো বড় সৎ হইলো কবে?? যাইহোক, জিগাইলাম যে কি চায় ও। কইলো ওরে সিগারেটের এক টান দেয়া লাগবো নাইলে কইয়া দিবো সবাইরে। খাইসে আমারে!! এ তো দেখি আমার চাইতেও দুই ডিগ্রি বেশি পাকনা। বড়ভাই হইয়া ছোটভাইরে সিগারেট খাওয়ামু?? তাও আবার ক্লাস ওয়ানে পড়া ছোটভাই?? কিন্তু কি আর করা?? ফাজিল টা তো জায়গামত ব্ল্যাকমেইল কইরা ফেলসে। শেষমেশ খাওয়াইলাম এক টান। টান দিয়াই কাশতে কাশতে দৌড়ায় পালাইলো। যাক এইবারের মত বাঁচলাম। ঠিক করলাম এখন থিকা ঘরে আর না, সন্ধার পর ছাদে ট্যাঙ্কির উপরে অন্ধকারে বইসা কাম সারা লাগবে। তো প্রায় এক বছর ছাদের ঐ ট্যাঙ্কির উপরে বইসা বেনসন, গোল্ডলিফ, স্টার, নেভি হেন কোন ব্র্যান্ড নাই যেইটা টেস্ট করি নাই। যদিও তখন মোটেও রেগুলার খাইতাম না। ২ দিনে একটা, ৩ দিনে একটা এমন অবস্থা। ক্লাস সিক্সে ওঠার পর রেগুলার খাওয়া শুরু করলাম। একসময় আবিষ্কার করলাম যে একা একা এমনে বিড়ি টানার চাইতে ২-১ জন সঙ্গী নিয়া টানলে খারাপ হয় না। কিন্তু পুরা বন্ধুমহলে এক আমি ছাড়া আর তো কেউ সিগারেট ছুঁইয়াও দেখেনাই। কি করা?? শেষে আস্তে আস্তে কয়েকজনরে খাওয়া শিখাইলাম। যাক এবার গ্রুপে টানার মজাটা পাইলাম। সেসময় সবাই বাংলা ফাইভই খাইতাম। ২০০৩ সালে যখন বেনসন ৪ টাকা থিকা ৩ টাকায় নাইমা আসলো আর এদিকে বাংলা ফাইভও দিনে দিনে ডুমুরের ফুল হইয়া গেলো তখন আর উপায় না পাইয়া ধরলাম বেনসন। কয়দিন পর বেনসন লাইট চালু হইলে ঐটাও সপ্তাহখানেক টানলাম। কিন্তু অত জাতের মনে হইলো না ঐ বস্তুরে। এরপর মাঝখানে কয়দিন টানলাম রথম্যান্স। ২০০৫ সালে আমার সিগারেটজীবনে এক বড় বিপ্লব ঘটলো। সেবার গোল্ডলিফ কোম্পানি রেগুলার ফ্লেভারের পাশাপাশি আরও ৩ টা ফ্লেভার আনলো যার একটা ছিল জ্যামাইকান টোব্যাকোর "কিংস অ্যাম্বার"। নতুন আমদানি দেইখা একদিন টাইনাই পইড়া গেলাম এর প্রেমে। বুঝলাম বাংলা ফাইভের বিরহ ভোলা এইবার কঠিন হবে না মোটেও। এরপর ঐ অ্যাম্বার আর অ্যাম্বার। মাই ডার্লিং অ্যাম্বার!! কিন্তু কথায় আছে "কোথা যাও গোপাল, সঙ্গে যাবে কপাল!!" কয়দিন পর আমার প্রেয়সী অ্যাম্বারসহ ঐ স্পেশাল ৩ টা ফ্লেভারই মার্কেট থিকা ভ্যানিশ হইয়া গেলো।
(সামুতে আমার নিক দুইটা। আমার আসল নিকটি খোলার পর কিছু টেকনিক্যাল সমস্যার কারনে লগইন করতে পারছিলাম না। পরে একই নাম দিয়ে এই নিকটি ওপেন করি। তারপরই ঐ লগইনের সমস্যা ঠিক হয়ে যাওয়ায় এই নিকটি আর ব্যবহার করা হত না। কিন্তু দুদিন আগে ফারাবি ভণ্ডের ভণ্ডামি নিয়ে একটি পোস্ট করায় মডুরা ব্যাক্তি আক্রমনের কারন দেখিয়ে আমার আসল নিক টি ২ সপ্তাহের জন্য ব্যান করে দিয়েছে। "ফুটবলম্যানিয়া" সিরিজের পরের দুটি পর্ব রেডি থাকা সত্ত্বেও তাই পোস্ট করতে পারছিনা।)
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১২ রাত ১২:২০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




