somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাজকান্দির আতংক - প্রথম পর্ব

০৫ ই জুন, ২০১১ দুপুর ২:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-----------------------------------------
গল্পের বাইরে কিছু কথা যা বলতেই হবেঃ
গল্পটি আমি উৎসর্গ করছি ব্লগার দুখী মানবকে। গল্পটির আইডিয়া আমি তার রাজকান্দিঃ লুকানো রাজ্য নামক অসাধারণ লেখাটি থেকে পাই। ব্লগার টিনটিন কেও ধন্যবাদ। তার ব্লগ পড়েই মূলত আমি এ জাতীয় গল্প লেখার উৎসাহ পাই। গল্পে জায়গার বর্ননা দিতে আমি সাহায্য নিয়েছি ২৪ মে ২০১১ এর প্রথম আলোর নকশায় প্রকাশিত প্রবন্ধের।
সবশেষে, গল্পে বর্ণিত প্রতিটি জায়গার নাম সত্য, গ্রামের বর্ননা সত্য। বাকি সবই আমার উর্বর মস্তিস্কের কল্পনা। কেউ যদি এর সাথে কোন কিছু মিল পান, তা হবে অনভিপ্রেত কাকতাল মাত্র।:P:P
-----------------------------------------


রাজকান্দি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সাম্প্রতিক কালে ট্রেকিং এর ফলে আবিস্কৃত ঝরনার কিছু দূরে আগুন জ্বালিয়ে গোল হয়ে বসে আছে অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় তিন তরুন। হামহাম ঝরনার অপূর্ব বর্ননা পেপারে আর ব্লগে পড়ে মাথা আর ঠিক রাখতে পারেনি তারা। উদ্যোগী অবশ্যই সিয়াম। সিয়ামের জীবনের লক্ষ্যই হচ্ছে ঘুরে বেড়ানো আর অদেখা কে দেখা। তার সাথে যুক্ত হয়েছে সুজন আর অনীক। তিনজনেই পড়ে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে। তবে সুজন আর অনীক বিবিএ আর সিয়াম আছে ইইই তে। সাবজেক্ট আলাদা হয়ে যাবার পরও তাদের বন্ধুত্বতে ছেদ পড়েনি। সুজন আর অনীক দুইজনের বাড়িই ঢাকার বাইরে। সিটি কলেজে পড়তে এসে তাদের সাথে সিয়ামের পরিচয়। তারপরে কি করে যে মানিকজোড় থেকে তারা থ্রী মাসকেটিয়ার্সে রূপান্তরিত হলো, ভালো করে কেউই মনে করতে পারে না। শুধু জানে, তিন জনে একেবারে আত্মার বন্ধু। কোন একটা পরীক্ষা শেষ হবার সাথে সাথে তিন বন্ধু বেড়িয়ে পড়ে এখানে সেখানে। এর মাঝে অবশ্য সুজন একবার প্রেমে পড়ে গন্ডগোল করে ফেলেছিল। শক্ত ধাতানি দিয়ে বাকি দুইজন আবার তাকে পথে এনে ফেলেছে। জীবন চলছিল সেই আগের মতই। পড়াশোনা, ক্রিকেট, আড্ডাবাজী, গিটার আর অ্যাডভেঞ্চার। আহ, জীবনে আর কি চাই?


হামহাম ঝরনার কাছে আসতে অবশ্য তাদের অনেক বেগ পেতে হয়েছে। পেপারে পড়ে এসেছিলো যে গাইড পাওয়া কোন ব্যাপার না। কিন্তু এখানে এসে দেখে ব্যাপার ভিন্ন। কেউই এ পথ মাড়াতে চায় না। চাম্পারাই টি এস্টেটের কলাবন পাড়া তো দূরস্থান, কাছের তৈলংকামী গ্রাম থেকেও কেউ রাজী হলো না। গ্রামবাসী কি যেন বলতে চেয়েও বললো না। গ্রামে ঢুকার পর থেকে গ্রামবাসী খুবই আদর যত্ম করেছে। ১৫ বছর বয়সী ফেলনার সাথে তো রীতিমত বন্ধুত্বই বলা যায়। কিন্তু ঝরনায় রাত কাটাবে শুনেই সবার মুখ শুকিয়ে গেলো। ফেলনাকে কোনভাবেই রাজী করানো গেলো না। ফেলনা তাদেরো যেতে দেবে না। ভয়ার্ত কন্ঠস্বরে বলতে লাগলো, “ দানু! ওবাইদি দানু আছুইন। যাইও না রে বা। এনো থাকি যাউক্যা”। দানোর কথা শুনে সুজনের মুখ শুকিয়ে গেলেও অনীক আর সিয়ামের হাসি আর ধরে না। এমনিতেই দুইজন কুসংস্কার মিটানোর ব্যাপারে বদ্ধপরিকর। পড়াশোনা শেষ করে তারা প্রত্যন্ত গ্রাম্য অঞ্চলে গিয়ে গিয়ে কুসংস্কার দূর করবে – এই তাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা। সুজন একটু মিন মিন করলেও দুইজনের টিজের যন্ত্রনায় শেষ মেষ হাল ছাড়লো।


তৈলংকামী গ্রামবাসীদের বিদায় জানিয়ে বেশ কয়েকটি টিলা ট্রেকিং করে তবেই ঝরনার দেখা পেয়েছে। কিছুদূর যেতেই মোবাইলের নেটওয়ার্ক নাই হয়ে গেলো। জুন মাসের ভ্যাপসা গরমে দর দর করে ঘামতে থাকে তিন জন।
“ধূরো! দেখ কেমন লাগে। এত সকালেই নেটওয়ার্ক গেলো!” বিরক্ত হয় সিয়াম।

তারচেয়েও বিরক্ত সুজন।
“জানলে একটু আগেই ছবি তুলে ফেসবুকে প্রোফাইল পিকচারটা চেঞ্জ করতাম! যত্তোসব”।

শুধু অনীক মাথা দোলায়। তার মোবাইল এমনিতেই পছন্দ না; নেটওয়ার্ক আসা যাওয়ায় তার মাথা ব্যথা নেই। ট্রেকিং করতে গিয়ে সিয়ামের কেমন যেন খটকা লাগছিলো। এটাই তাদের প্রথম ট্রেকিং নয়। মাত্র ৫ মাস আগে তারা ট্রেকিং করে বগা লেক সহ কেওকারাডং এর উপরে উঠেছে। সিলেটের লাউয়াছড়ায় ট্রেকিং করেছে। এমনকি সুন্দরবনের এক প্রত্যন্ত গ্রামেও তারা গেছে, যেখানে বাঘের আক্রমনে প্রতি বছরই মানুষ মারা যায়। কিন্তু এরকম নীরব নিথর বন কোথাও সে পায় নি। না আছে কোন পাখ পাখালির ডাক, না আছে কোন পোকা মাকড়ের শব্দ। এমনকি ঝিঁঝিঁ পোকার যে টানা ডাক বন মাতিয়ে রাখে, তাও ভীষনভাবে অনুপস্থিত। কেমন যেন অশুভ এক চাপা আতংক বিরাজ করছে চারিদিকে। সিলেটের যে কোন বনে বানরের আধিক্য। এখানে এই পর্যন্ত একটাও তাদের চোখে পড়েনি। সুজনই প্রথম কথা বলে উঠলো,
“দোস্ত, দেখেছিস এই বনে কোন পাখি ডাকে না?”

সিয়াম হেসে উড়িয়ে দেবার চেষ্টা করলো।
“ডাকবে কি করে? দানো এসে সব খেয়ে ফেলেছে না?”

এবার অনীক ও হাসিতে যোগ দিলো। “হ্যাঁ, দানো পাখি, বান্দর মায় পোকা সবই খেয়ে ফেলেছে”।

তাদের অট্টহাসি যেন প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে ফিরে এলো। সুজন তখনকার মত চুপ করলো বটে; কিন্তু অনীক আর সিয়াম একবার চোখাচোখি করে নিলো। তারাও একটু চিন্তিত। কিন্তু এখন সেটা প্রকাশ করলে সুজনকে সামলানো মুশকিল হয়ে যাবে। তাদের এই বন্ধুটির নার্ভ কিঞ্চিত উত্তেজিত থাকে সবসময়ই।


ঝরনা দেখে সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। কি টলটলে নির্মল পানি। কলকল শব্দে পাথুরে পাহাড়ের গা ঘেঁষে প্রায় ৭০ ফুট উপর থেকে পড়ছে। তাদের কষ্ট সার্থক। অনীকের প্রফেশনাল ক্যামেরার শাটার পড়তে লাগলো ঝটপট। এই ছবি যে পরশু দুপুরের মাঝেই ফেসবুকে আপ হয়ে একটা তোলপাড় কান্ড ঘটাবে, যে নিয়ে সিয়াম পুরোপুরি নিঃসন্দেহ। পানিতে পা ডুবিয়ে সুজন আনন্দে তার প্রিয় গান ধরলো,
“ও পরানের পাখি রে, দিলি তুই ফাঁকি রে! শূন্য করলি খাঁচাটা! আ আ!”

অনীক আর সিয়ামও গলা মেলালো, “তোরে ছাড়া আর না রে, কি করে বাঁচি রে! বুঝলি না মনের জ্বালাটা! আ আ !”

এরপরে সম্মিলিত হাসি। কিছুক্ষনের মাঝেই সব অস্বস্তি ভুলে তাঁবু আর রান্না করার কাঠ নিয়ে দৌড়াদৌড়ি পড়ে গেলো। তিন বন্ধু হাসছে, একে ওকে মারছে, ক্লাসের জিনাত বেশী সুন্দর না রূপা – এই নিয়ে জটিল তর্ক চলছে। সুজন দুইজনেরই প্রেমে পড়ে বসে আছে; সে খুবই চিন্তিত কাকে সে প্রপোজ করবে। আসার পথেই ঠিক হয়েছে, রাতের খাবার শেষ করে ঝরনার পাড়ে কয়েন টস করা হবে। হেড উঠলে জিনাতকে সুজন প্রপোজ করবে; টেইল উঠলে রূপা। এইসব বড়লোকি কারবার দেখে অনীক বেচারা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
“শালার চেহারা খারাপ বইলা কোন মাইয়াই পাত্তা দেয় না। এত সুন্দর ছবি তুলি; সবাই তেংকু অনীক বইলা ছবি নিয়া চইলা যায়। আর এই বদমাইস সুজইন্যা কুন কামের না। তারপরেও সব মাইয়া ওরে লইয়াই যাইবো কফি খাইতে। আবার বিল মাইয়ারাই দিব। দুনিয়ার এই কি বিচার!আইজ ওরে মাইরা ঝরনায় ফালামু”।

বলেই তাড়া করে সুজনকে। সুজন “অ্যাই খবরদার, অ্যাই খবরদার” বলে চেঁচিয়ে দেয় ছুট। এদের কাজ কারবার দেখে হাসতে হাসতে সিয়াম পাশের জংগলে ঢোকে শুকনো কাঠ পাতা জোগাড়ের জন্য। কেমন যেন অস্বস্তি হতে থাকে সিয়ামের। কেউ যেন গভীর দৃষ্টিতে সিয়ামকে লক্ষ্য করছে। ঝট করে ঘাড় ঘোরালো সিয়াম। কেউ নেই; কেউ থাকার কথাও না। সিয়াম বেশ ডাকাবুকো ধরনের ছেলে। এই ধরনের অনুভূতির সাথে সে বেশী পরিচিত না। দানো বলতে কি সত্যি কিছু আছে? ভূত-প্রেত তো অবশ্যই না; তবে বন্য কোন প্রানী হতে পারে। নাহ, সতর্ক থাকতে হবে। হাতের দা দিয়ে সিয়াম শক্ত দেখে নীচু হয়ে থাকা একটা গাছের ডাল কেটে নেয়। ফিরে এসে দেখে, সুজন আর অনীক মিলে প্রায় এক হাঁড়ি মাছ ধরে ফেলেছে। মাছগুলি বড্ড বোকা।


আগুন জ্বালাতে গিয়ে সবার নাভিশ্বাস অবস্থা। “সরকারের উচিত সব জায়গায় গ্যাস সাপ্লাই দেয়া”-এরকম যুগান্তকারী মতবাদ যখন সুজনের মাথা থেকে বেরুচ্ছে, তখনই আগুনটা জ্বলে উঠলো। রান্না করতে গিয়ে দেখা গেলো লবণ নেই। কি ব্যাপার? লবণ ছিলো সুজনের ব্যাগপ্যাকে। কোন ফাঁকে যে তা পড়ে গেছে, সেও বলতে পারে না। সুজনকে ইচ্ছা মত গালি দিতে দিতে সিয়াম আরেক প্যাকেট লবণ বের করলো। সুজন অবাক।
“কি রে? তুইও লবণ এনেছিস?”

“অবশ্যই। তোর কি ধারনা আমার মাথায় এতই কম ঘিলু যে তোর ব্যাগে আমি ব্যাকআপ ছাড়া কোন কাজের জিনিস রাখবো? মাথামোটা কোথাকার!”

সুজন ভেংচি দিলো। খেতে বসে সবার অভিমত, “এত চমৎকার খাবার জন্মে খাইনি!” সুজন বললো যে সে অবশ্যই তার প্রেমের সিভিতে এই মূল্যবান তথ্যটি যোগ করবে যে সে রাঁধতে পারে। যদিও কুটা বাছাতেও সুজন হেল্প করতে পারে নাই। “সুজন কোন কাজ করে নাই”- এই যুক্তিতে হাড়ি পাতিল সুজনকে মাজতে দিয়ে সিয়াম আর অনীক আরাম করে ঝরনার পাশে শুয়ে পড়লো। কলকল ধ্বনিতে চারপাশ মুখরিত। রাগে গজগজ করতে করতে কিছুদূরে গেলো সুজন বাসন মাজতে। হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠলো,
“ওই! অনীক! সিয়াম! দেখ দেখ এইডা কি!”

দূর থেকেই চেঁচালো অনীক, “কি? কুনো মাইয়ার ফডু? না ফুন নাম্বার?”

“আরে ধ্যাত্তেরিকা! খালি বেশী কথা বলে। দেখ না”। বলে সুজন তা তুলে ধরে।

সিয়াম অবাক হয়, “কি রে, দেখে তো মনে হচ্ছে একটা খাতা”। সিয়াম এবার কাছে গিয়ে সুজনের হাত থেকে খাতাটা নেয়।একটা ডায়েরী। খুলে দেখে লিখা, “অর্থহীনের অর্থহীন প্রলাপ”। আর কোন নাম ধাম কিছু লেখা নেই। এক ঝলকে সব পাতা উল্টিয়ে সিয়াম দেখে ডায়েরীর বেশ কিছু পাতা ভরা লিখা। ঝরনার পানি এবং বৃষ্টিজলে বেশ ভিজলেও মলাটের উপর পলিথিন থাকায় ভিতরটা বেশ অক্ষত আছে। তিনজনেই ভয়াবহ উত্তেজিত। ততক্ষণে সন্ধ্যার আঁধার ঘনিয়ে এসেছে। হাঁড়ি পাতিল ওখানেই রেখে তারা আগুনের পাশে ফিরে এসে গোল হয়ে বসে। সিয়ামের হাতে ডায়েরী। তবে আশার কথা, আঁধার নামার সাথে সাথে ঝিঁঝিঁ পোকারা কোরাস শুরু করেছে। পোকার ডাক এত ভালো লাগবে, জীবনেও ভাবেনি সিয়াম। সাথে পানির কলকল শব্দ ছাড়া আর কোন শব্দ নেই। মৃদু মন্দ বাতাস বইছে। গল্প শোনার চমৎকার পরিবেশ। অনীকের গা ঘেঁষে বসে সুজন বললো,
“দোস্ত, ডায়রী টা পড়। দেখি কে ফেলে গেছে এই ডায়রী”। সিয়াম পাতা উলটালো।


ডায়রীর প্রথম দিকে কিছু কবিতা লিখা। কিছু পড়া যায়, কিছু পানিতে ভিজে নষ্ট। এই বছরেই শুরু করা হয়েছিল ডায়েরী লিখা।ঝকঝকে মুক্তার মত হাতের লেখা। সিয়াম কবিতা আবৃতির মত করে পড়লো,

৪ঠা জানুয়ারী ২০১১, রাত ৩:১০
মাঝে মাঝে মনে হয় হাঁটতেই থাকি, হাঁটতেই থাকি
জানি না কোথায় যেতে চাই,
জানি না কি দেখতে চাই
এটাও জানি না কাকে স্পর্শ করতে চাই...
শুধু মনে হয়, ঘর থেকে বের হয়ে যাই...
কোন একটা পথ খুঁজে হাঁটতেই থাকি।

অন্যসময় হলে কবিতা শুনে অনীক আর সুজন দুইজনেই সিয়ামের ভাবুকতা নিয়ে টিজ করতো। কিন্তু এখন এই পরিবেশে তারা শান্ত ভাবে শুনতে লাগলো।

৭ই জানুয়ারী ২০১১, রাত ৯:৪০
অসহ্য হয়ে গেলাম পরীক্ষা নিয়ে। নতুন বছরে একটু প্লান প্রোগ্রাম করবো, তা না; টানা পরীক্ষা। ছাতা, মেডিকেলে ভর্তি হয়েছিলাম কোন দুঃখে! আজ ওয়ার্ড থেকে ফিরেই লিখতে বসলাম, মনটা ভীষন খারাপ লাগছে। একেবারে চোখের সামনে বাচ্চা একটা মেয়ে মারা গেলো। ভাইয়ারা দৌড়াদৌড়ি করেও কিছুই করতে পারলোনা। আর ভালো লাগে না, কবে যে ডাক্তার হবো।

এর পরে পাতাগুলি সবই পানিতে ভিজে নষ্ট। সিয়াম চোখ কুঁচকে অনেক চেষ্টা করে, কিন্তু কিছুই পড়তে পারে না। অনীক কেড়ে নিয়ে সে খানিক চেষ্টা করে। ধূর, সবই প্রায় নষ্ট। প্রায় ৩০/৩২পৃষ্ঠা। এখনো লেখকের পরিচয় ই বোঝা যাচ্ছে না। অন্তত এটুকু জানা গেছে যে সে কোন এক মেডিকেলের ছাত্র। মেডিকেলে পড়ে এত চমৎকার হাতের লিখা? অবাককর ঘটনা।

“আরে দে দে, পরের টুকু পড়ি। এই যে আছে, তাই তো অনেক; পানিতে তো সবই নষ্ট হবার কথা”। সিয়াম বলে।

“ঠিক” সুজন তাল মেলায়। “এছাড়া এখন এই রাতে আমাদের করার কিছুই থাকতো না। নেক্সট বার কোন ট্রেকিং এ গেলে কিন্তু আমরা গান নিয়ে আসবো”।

“আচ্ছা আচ্ছা, এখন পড় তো। আগুন নিভে গেলে কিন্তু সর্বনাশ হবে”। অনীক বলে।

“কেন? সর্বনাশ হবে কেন? দুইটা যে পাঁচ ব্যাটারীর টর্চ আনলাম? সেগুলি দিয়ে পড়বো”। বলেই সিয়াম টর্চের বাটনে চাপ দেয়। সে কি! জ্বলছে না। সিয়াম অস্থির ভাবে বার বার চাপ দেয়।

“এই অনীক, তোর টর্চটা দেখ তো”।
অনীক টর্চ জ্বালানোর চেষ্টা করতে থাকে; জ্বলে না। ব্যাটারী খুলে আবার ভরে; তাও টর্চ জ্বলে না। রাগে অনীক গালি দিতে থাকে দোকানদারকে। সুজন আতংক ভরা চোখে তাকিয়ে থাকে।
“দোস্ত, এই জায়গার কোন সমস্যা আছে। চল, আমরা গ্রামে ফিরে যাই”।

“হু, এখন এই অন্ধকারে তুই গ্রামে যাবি!! রাস্তা চিনবি? এই রাস্তা যে আমরা গাইড ছাড়া এসেছি, তাই তো বেশী। দেখিস না কি বিশাল জঙ্গল”। সিয়াম রাগত স্বরে বলে।

তিন বন্ধু চুপ হয়ে যায়। সুজনের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। তিনজনেরই বুকের মাঝে কেমন যেন ধড়ফড় শুরু হয়েছে। ঝিঁঝিঁ পোকার আওয়াজ বড্ড কানে বাজছে। গাঢ় অন্ধকারের মাঝে শুধু তাদের জ্বালানো আগুন দপ দপ করছে। সিয়ামই প্রথম নিজেকে সামলে নেয়। কাশি দিয়ে গলা পরিস্কার করে বলে,
“দোকানদারের একদিন কি আমার একদিন! আগে ঢাকা যেয়ে নিই, দাঁড়া”। -নিজেই কেমন যেন বল পায় না। এই ভয়ংকর বন থেকে কি তারা কোনদিন বের হতে পারবে? একেকটা সেকেন্ড সিয়ামের কাছে এক এক ঘন্টার মত দীর্ঘ মনে হচ্ছে। ভ্যাপসা গরমটা যেন হঠাৎ করে অসহ্যকর হয়ে যাচ্ছে। বাতাস এত কম কেন?

অনীক পরিস্থিতি শান্ত করতে ডায়েরী হাতে নেয়।
“চুপ করে বস তো তোরা। এখন কি আর দোকানদারকে গালি দিয়ে লাভ আছে? দোষ আমাদেরই। আরো ভালো ভাবে চেক করা দরকার ছিলো। এখন শোন, আলো থাকতে থাকতেই আমরা ডায়েরী পড়ে ফেলি”।

রাজকান্দির আতংক - শেষ পর্ব




সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুন, ২০১১ রাত ২:০৯
৪৭টি মন্তব্য ৪৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×