somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চট্টগ্রাম সেনা বিদ্রোহের ২৯ বছর পর ফিরে দেখা-পর্ব ৪

০২ রা জুন, ২০১০ রাত ১২:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পর্ব-১ পর্ব-২ পর্ব-৩

১ লা জুন, ১৯৮১।

আমি আর রফিক যে বিষয়টি সচেতনে এড়িয়ে গেছি এ ক' ঘন্টা, মোসলেহ সে বিষয়টিরই অবতারনা করলো। আমি হতভম্ভের শুনে গেলাম। মোসলেহ শেষ করার অনেকক্ষণ পর আমি বোঝার চেষ্টা করলাম কি হয়েছিল সে রাতে।

জেনারেল জিয়াকে সার্কিট হাউজ থেকে EBRC (East Bengal Regimental Centre) এ নিয়ে আসার জন্যে অফিসাররা সার্কিট হাউজ ঘেড়াও করে। কিছু গুলি বিনিময়ের পরে যাদের দায়িত্ব ছিল ভেতরে ঢোকার তাদের সবাইকে একটা করে কক্ষ বরাদ্দ করা হয়েছিল clear করার জন্যে। মোসলেহকে যেটা বরাদ্দ করা হয় সেটাতে জেনারেল জিয়ার থাকার কথা ছিল না। মোসলেহ দরোজায় টোকা দিতেই ভেতর থেকে দরোজা খুলে যায়। সাদা ধপধপে পাজামা পাঞ্জাবী পরা জেনারেল জিয়া বেরিয়ে আসেন। তাঁকে দেখে মোসলেহ ঘাবরে যায়। "কি ব্যাপার" তিনি জিজ্ঞেস করলে মোসলেহ বলা শুরু করে " স্যার আপনাকে আমরা...... এটুকু বলতেই প্রচন্ড জোরে ওর কাঁধে পেছন থেকে কেউ ধাক্কা দেয়। ধাক্কায় মোসলেহ মাটিতে পড়ে যায়। মাটি থেকে উঠতে উঠতে সে দেখতে পায় যে তাকে যে ধাক্কা দিয়েছিল সে জিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে করতে স্টেনের {SMG, 7.62 mm, type 56, Origin China (carbon copy of AK 47)} তিরিশটি গুলি ট্রিগারের এক চাপে, ওপর থেকে নীচে স্প্রে করে। গুলির ধাক্কায় জেনারেল জিয়ার দেহ পেছনে হটে যায়, তারপর মাটিতে আছড়ে পড়ে। হত্যাকারী ঘুরতেই মোসলেহ চিনতে পারে তাকে- লে. কর্নেল মতি {G-I, CI (General Staff Officer, Grade One, Counter Insurgency)}.পুরো হত্যাকান্ডটি ঘটতে ১ মিনিটের ও কম সময় লাগে। কর্নেল মতি দ্রুত পায়ে স্থান ত্যাগ করে।

বেশ কিছুক্ষণ হয় মোসলেহ চলে গেছে। আমি ঝিম মেরে পড়ে আছি।
"দোস্ত আমাদেরকে ওরা ঝুলিয়ে দেবে"।

"ওরা তোকে ঝুলিয়ে দেবে কেন? তুই প্রায় বারো ঘন্টার মত আগে আমার কাছে আত্মসমর্পণ করেছিস। আমি in writing তোর কাছ থেকে আত্মসমর্পণএর ব্যাপারটি নিয়েছি।It's sealed and signed- তোর কোন ভয় নেই। তোর কোন রকম বিচারই হবেনা।


আবার নিস্তব্ধতা।

"দোস্ত, তুই একদিন আমার রুমে আমার হাত দেখে বলেছিলি যে আমি ২৫ বছরের বেশী বাঁচবো না। আমি আবার কাঠ হয়ে গেলাম।"

ক্লাস টুতে পড়তে নানার সার সার বইয়ের আলমারিতে একটা বই আবিষ্কার করি "Chiro's Book of Numbers". Numerology (সংখ্যা তত্ব)র ওপর ঝোঁক হয় , নানা মারা যান, আমি তারঁ বইয়ের ভেতর থেকে কিরোর বইগুলো নেই। Palmistry তে হাতে খড়ি হ'ল। তখন বিভিন্ন হাতের ছবি দেখাটাই ছিল মূখ্য। বড় হ'তে হ'তে প্রধান তিন লাইন (Life, Head , Heart ) শেষ করে অপ্রধান লাইন (sun, health, fate)বিভিন্ন চিহ্ন (star, flag, island etc.) শিখতে শিখতে কেমন যেন নেশায় পেয়ে বসে আমাকে। মানুষের হাত যদিও খুবই কম দেখেছি। সব মিলিয়ে হয়তো বা সাকুল্যে দশ বারোটি।

দূর্ভাগ্যক্রমে আমার দেখা হাতের মধ্যে একটা ছিল রফিকের। কোন এক শনিবার রাতে ফান করতে করতে তার হাত দেখি । লাইফ লাইন সাধারন অন্য লাইফ লাইনের চার ভাগের একভাগে এসে বেশ কতগুলো আইল্যান্ড, তারপরই শেষ। এরকম হাত আমি কি্রোর কোন বইতে দেখিনি। নিজে নিজে এটার একটা অর্থ বের করতে চেষ্টা করছিলাম। অনেকক্ষণ আমাকে চুপ থাকতে দেখে রফিক বললো "দোস্ত কি দেখছিস?" শুধু মাত্র মজা করার জন্যে (আমি ওর হাতটা বুঝিনি) বললাম "তুই তো ২৫ বছরেই পটল তুলবি। তোর একটা মাত্র গার্ল ফ্রেন্ড তাও কত দূরে। যশোরে তাড়াতাড়ি কতগুলো বানা। সময় নেই।"
"নারে দোস্ত, একটাই সামলানো আমার জন্যে বিরাট ব্যাপার।"

আমি ওকে বোঝাতে চেষ্টা করলাম অনেক্ষণ, ও চুপ মেরে গেল।

গান শুনছি। রফিক গুন গুন করা শুরু করছে গানের সাথে। রাত চারটার সময় রুমের ফিল্ড টেলিফোন ক্রিং ক্রিং। বি এম ও প্রান্তে। "শোন তুমি তোমার সেনাদলে ফেরত যাও। ২৪ ডিভের বেশীর ভাগই সারেন্ডার করেছে। তোমার অধিনায়কের সাথে এক্ষুনি যোগাযোগ কর।" রানারকে পাঠালাম গাড়ী আনতে। ওয়্যারলেসে অধিনায়কের সাথে যোগাযোগ করতেই আমাকে তিনি আদেশ দিলেন আমার উপদল নিয়ে আমি যেন এক্ষুণি চিটাগাং রওয়ানা হই। চিটাগাং রেডিও স্টেশনের সৈনিকেরা এখনো Surrender করেনি। আমি যেন পরদিন সকাল ১১টার মধ্যে রেডিও স্টেশনের দখল নেই।

রফিকের সাথে বিদায়ের পালা। দু'জন দু'জনকে জড়িয়ে ধরলাম। অনেকক্ষণ পর আমি ওকে ছেড়ে দিয়ে কিছু না বলে ঊল্টো ঘুরে দরোজা দিয়ে বের হলাম :
............
Now I understand what you tried to say to me,
How you suffered for your sanity,
How you tried to set them free.
They would not listen, they did not know how.
Perhaps they'll listen now.
.............................................................................
.................For they could not love you,
But still your love was true.
And when no hope was left in sight
On that starry, starry night,
You took your life, as lovers often do.
But I could have told you, Vincent,
This world was never meant for one
As beautiful as you.


-চলবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০১০ রাত ৮:১৯
২৯টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×