
''I am the state-আমিই রাষ্ট্র" কথাটি বলেছিলেন ফরাসি সম্রাট লুইস। ফরাসি আন্দোলনের আগে। এমন কি মধ্যযুগের সব রাজা এবং শাসকেরা তাই মনে করতেন। তবে একবিংশ শতাব্দীতে এসে যখন বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠী এবং তাদের বুদ্ধিজীবীরা মধ্যযুগীয় নীতির পুজা করতে থাকেন এবং সেই প্রসাদ আমাদের খেতে হয় তখন এর চাইতে অপমানের আসলে আর কিছু থাকেনা। প্রগতীর ধারক-বাহক নেতা যখন "I am the state" বলে যা খুশী তাই করতে থাকেন, তখন চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে- এ স্টেটের আমি কেউ নই!
এবার লিংক সহ আমি কিছু পত্রিকার শিরোনাম দিচ্ছি।
Moja Losss admin held for ‘anti-govt posts’ - ডেইলি স্টার
সরকার বিরোধী কটূক্তি করার অপরাধে ফেসবুক পেজ ‘মজা লস’-এর অ্যাডমিন গ্রেফতার -বাংলাট্রিবিউন
সরকার বিরোধী প্রচারনার দায়ে ফেসবুকের জনপ্রিয় পেজ 'মজা লস' এর এডমিন আটক
শিরোনামগুলো খেয়াল করুন। মজা লসের এডমিন রেফায়েতকে গ্রেফতার করা হয়েছে 'অ্যান্টি-গভর্ন্মেন্ট' মানে সরকার বিরোধী কাজের গুরুতর (!)অভিযোগে। এখানে সিগনিফিকেন্ট ব্যাপার হলো- 'অ্যান্টি-স্টেইট' অর্থাৎ রাষ্ট্র-বিরোধী নয়; বরং সরকার বিরোধী কাজ। সরকার এবং রাষ্ট্রকে গুলিয়ে ফেলছেন সরকারীদল। তাতে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দিচ্ছেন- তাদের পক্ষে যারা লিখে থাকেন তারা। বলা হচ্ছে- সরকারই হল রাষ্ট্র, সুতরাং সরকারের বিরুদ্ধে কিছু বলা মানে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বলা। আমাদের সরকার বাহাদুর এই ফ্যাসিস্ট ঘোল খাওয়াইয়ে মগজে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন যে, সরকার/শাসক এবং রাষ্ট্রের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই।
অর্থাৎ বর্তমান দখলদার আওয়ামী সরকারের কোন কাজের সমালোচনা করলে-তা রাষ্ট্রবিরোধী কাজ বলে বিবেচিত হবে। কি দারুণ এক ব্যাপার।
আজ যারা রেফায়েত এর মুক্তির দাবীতে প্রচুর লিখছেন তারা যদি একটু রিকল করেন যে, এর শুরুটা কখন কোথায় কিভাবে হয়েছিলো তাহলে দেখতে পাবেন, আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদকের গ্রেফতার এবং হয়রানীর মাধ্যমে এই আমলের আওয়ামী সরকার প্রথম ক্ষত তৈরি করেছিলো। সেই ক্ষত তখন আপনারা ইগনোর করে গিয়েছেন। আজ রেফায়েতের গ্রেফতারিকে ইনফেকশন মনে করে অ্যান্টিবায়োটিক চাইছেন। অথচ অশনীসংকেত তখনই বাজিয়ে দেয়া হয়েছিলো।
কলম বন্ধ করতে বাধ্য করা একটি ভয়ংকর অন্যায়। সে চাপাতির কোপে হোক কিংবা চৌদ্দশিকের আঘাতে হোক। আফসোসের ব্যাপার এই যে, মাহমুদুর রহমানের কলম বন্ধের সময় চাপাতির আঘাতপ্রাপ্তরা কিংবা হুমকিপ্রাপ্তরা এই জিনিসটা বুঝতে পারেনাই। সেই কলম বন্ধে আনন্দ ছিলো প্রচুর। আমাদের সু-শীল সমাজ ও তখন ভাবেনাই কলম বন্ধের ট্রেন্ড সেট হইতে যাইতেছে। আজকে জেল কালকে খুন। উহারা সরকারকে সাধুবাদ জানাইয়া আসিয়াছেন।
সরকার খুব ভালো মতই জানে 'মজা লস' পেইজের কারণে তাদের বিন্দুমাত্র কোনও লস নেই। রেফায়েত মুক্তি পাবে এমনিতেই। আপনি মুক্তি চাইলেও অথবা না চাইলেও। তাকে অন্যান্যদের মত রিমান্ডে নিয়ে পেটানো হবেনা, পঙ্গু করা হবেনা এবং হাত-পা বেঁধে গুলিতে গুলিতে পাঁজরের হাড়গুলো চূর্ণ করা হবেনা। রেফায়েতকে আমি একধরণের পোষ্টার বয় হিসেবে দেখছি।
তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে শুধুমাত্র বাকিদের ভয় দেখাবার জন্য। ভয়ের এবং আতংকের একটি সংস্কৃতি তৈরি করবার জন্য। তারা ভাবছে, এই ভয় বৃক্ষের ফল দিয়ে তারা আরো কিছু বছর উদরপূর্তি করে নেবে। এরপর যা হবার তা পরে দেখা যাবে। নইলে এভাবে মারধোর এবং চোখ রাঙানো কখনই অন্তত সরাসরি সুবিধেভোগী ছাড়া বাকিরা সমর্থন করতে পারেনা। একটি দলে সবাই অন্তত এরকম নির্বোধ হতে পারেনা দেশের ব্যাপারে।
তারা ভালোমতই জানে এধরণের সংস্কৃতি শুভকর কিছু আনবেনা কখনই। তবুও তারা যেভাবে এই নীতিতেই অটল রয়েছেন তাতে ভয়ংকর কিছু সন্দেহ হয়। সন্দেহ হয় এই দেশ আমাদের হাতে নেই। এখানে যে সরকার তা এখন সম্পূর্ণ ভারতের পুতুল। আর তাই এরকম খোলাভাবে ভয়ের কালচার তৈরি করছেন তারা। কারণ দেশের মানুষের ভালোবাসার দরকার নেই তাদের। তাদের দরকার মানুষদের ভয় দেখিয়ে দমন করে রাখা। সরকার বিরোধী মানেই রাষ্ট্র বিরোধী- এই তরকা সমেত তরকারী খাইয়ে যতদিন পারা যায় ক্ষমতায় থাকা।
এবং এই বিষয়গুলো আওয়ামী বান্ধব সাংবাদিক লেখক ও বুদ্ধিজীবীরা যারা সরকারের সাথে সরাসরি জড়িত নন তারা যত দ্রুত বুঝবেন তত পুরো জাতির মঙ্গল। তা নাহলে এই অন্ধকার টানেলের মুক্তি নাই।
সাতচল্লিশে শুরু হয় ষড়যন্ত্র, যার এক মাইলস্টোন ‘৭১ এ। তারপর থেকে সময়-সুযোগ বুঝে চলতে থাকে সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, ভৌগলিক, অর্থনৈতিক আগ্রাসন। চুড়ান্ত পর্যায়ের কাছাকাছি এসে Police state দেখতে পাচ্ছি।
কেফায়েতের গ্রেফতারের সাথে রাষ্ট্রকেও জড়িয়ে ফেলে আমাদের বীর সরকার বাহাদুর জনগনকে একটা বার্তা দিতে চাইছে। বার্তাটি কি ? আপনি-আমি সবাই ই তা জানি
আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছে- সরকার আর রাষ্ট্রকে এক করে "মজা লস"? এই মজা আখেরে খুবই ভয়ংকর। খুব।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:১১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



