somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সামহোয়‍্যার ইন...ব্লগ-এর সকল ব্লগার, পাঠক, লেখক, শুভানুদ্ধায়ী, মডারেটর, পৃষ্টপোষক সহ সকলকে জানাচ্ছি ঈদ-উল-আযহার শুভেচ্ছা, ঈদ মোবারক।

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লাইলাহা ইল্লাললাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবর ওয়ালিলল্লাহিল হামদ।
সামুর-এর সকল ব্লগার, পাঠক, লেখক, শুভানুদ্ধায়ী, মডারেটর, পৃষ্টপোষক সহ সকলকে জানাচ্ছি ঈদ-উল-আযহার শুভেচ্ছা, ঈদ মোবারক।


কোরবানী, কোরবানী সম্পর্কিত কয়েকটি আয়াত ও হাদীসঃ-
‘কোরবানী’ শব্দটি আরবী ‘কুরব’ ধাতু থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ নৈকট্য বা সান্নিধ্য। আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য আত্মোৎসর্গ করাই কোরবানী। শরিয়তের পরিভাষায়, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় তাঁর নামে পশু জবেহ করাকে কোরবানী বলে। ঈদ-ঊল-আযহা উপলক্ষে জিলহজ্জ মাসের ১০ থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর নামে নির্দিষ্ট কিছু হালাল পশু জবাই বা কোরবানী করা হয়।
এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক ঘোষণা করেন,
*‘আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কোরবানির নিয়ম করে দিয়েছি, যাতে আমি তাদের জীবনোপকরণস্বরূপ যেসব চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছি সেগুলোর ওপর তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে।’ (সূরা আল-হজ, আয়াত ৩৪)
*‘আদমের পুত্রদ্বয়ের (হাবিল-কাবিলের) বৃত্তান্ত তুমি তাদের যথাযথভাবে শোনাও। যখন তারা উভয়ে কোরবানি করেছিল তখন একজনের (হাবিলের) কোরবানি কবুল হলো এবং অন্যজনের কবুল হলো না।’ তাঁদের একজন বললেন, ‘আমি তোমাকে হত্যা করবই।’ অপরজন বললেন, ‘আল্লাহ মুত্তাকিদের কোরবানি কবুল করেন।’ (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত ২৭)
* ‘আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না তাদের (কোরবানির) গোশত এবং রক্ত; বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া। এভাবে তিনি এদেরকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর।’ (সূরা আল-হজ, আয়াত ৩৭)
* রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোরবানির দিন রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে প্রিয় কোনো আমল আল্লাহর কাছে নেই। কোরবানিকারী কিয়ামতের দিন জবেহকৃত পশুর লোম, শিং, ক্ষুর, পশম ইত্যাদি নিয়ে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে। কোরবানির রক্ত জমিনে পতিত হওয়ার আগেই তা আল্লাহর কাছে বিশেষ মর্যাদায় পৌঁছে যায়। অতএব, তোমরা কোরবানির সঙ্গে নিঃসংকোচ ও প্রফুল্লমন হও।’ (ইবনে মাজা, তিরমিজি)

হজরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে আমাদের শেষ নবী ও রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) পর্যন্ত সকল নবী-রাসুল ও তাঁদের অনুসারীরা মহান আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্টি লাভের আশায় কোরবানী করেছেন।
আমাদের আদি পিতা হজরত আদম (আঃ)-এর দুই পুত্র হাবিল-কাবিলের মাধ্যমে ইতিহাসে প্রথম কোরবানীর সূত্রপাত হয়।
এরই ধারাবহিকতায় হজরত নূহ (আঃ), হজরত ইয়াকুব (আঃ) ও হজরত মুসা (আঃ)-এর সময়ও কোরবানীর প্রচলন ছিল। প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বছর আগে মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইব্রাহিম (আঃ) স্বপ্নযোগে সবচেয়ে প্রিয় বস্তুকে কোরবানীর আদেশ লাভ করেন, পর পর তিনি তিন দিন দৈনিক ১০০ করে মোট ৩০০ উট কোরবানি করেন।কিন্তু তাঁর কোরবানী আল্লাহর দরবারে কবুল হলনা। স্বপ্নযোগে তিনি আবার আদেশ প্রাপ্ত হলেন, ‍‍"তোমার প্রিয় বস্তু কোরবানি করো" আবশেষে তিনি নিজের ভুল বুঝে বুঝতে পারলেন তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বস্তু প্রাণপ্রিয় শিশুপুত্র হজরত ইসমাইল (আঃ)। শিশুপুত্র হজরত ইসমাইল (আঃ)-কে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য উৎসর্গ করলেন। আল্লাহর রাস্তায় শিশুপুত্র হজরত ইসমাইল (আঃ)-কে কোরবানী করার মাধ্যমে মহাপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং এক অবিস্মরণীয় ইতিহাস সৃষ্টি করেন। শিশু হজরত ইসমাইল (আঃ) নির্দ্বিধায় আল্লাহর আদেশে সম্মত আত্মত্যাগের বিরল ও বিস্ময়কর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। হজরত ইব্রাহিম (আঃ)-এর প্রতি এটা ছিল আল্লাহর পরীক্ষা। তাই পিতার ধারালো ছুরি শিশুপুত্রের একটি পশমও কাটতে পারেনি; পরিবর্তে আল্লাহর হুকুমে দুম্বা জবাই হয়। পৃথিবীর বুকে এটাই ছিল স্রষ্টাপ্রেমে সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ কোরবানী। আত্মত্যাগের সুমহান ও অনুপম দৃষ্টান্তকে চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুহাম্মদির জন্য পশু কোরবানী করাকে ওয়াজিব করে দিয়েছেন। তাঁদের স্মরণে এ বিধান অনাদিকাল তথা রোজ কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, কাল পরিক্রমায় প্রতিবছর পবিত্র হজের পরে ঈদুল আজহা ফিরে আসে, যার প্রধান আকর্ষণ ও গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত কোরবানি। ঈদের দিন কোরবানীকে কেন্দ্র করে ধুমধামের সঙ্গে চলে মনের পশুপ্রবৃত্তি ত্যাগের মহোৎসব।
কোরবানির গোশত তিন ভাগ করে এক ভাগ নিজের, এক ভাগ আত্মীয়স্বজনদের ও এক ভাগ গরিবদের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া মুস্তাহাব। কোরবানির চামড়া বা তার নগদ অর্থ এতিমখানা বা গরিব-মিসকিনদের দান করতে হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত, দীন-দুঃখীরাও যাতে ঈদের আনন্দ করতে পারে সে লক্ষ্যে কেবল ভোগ নয়, ত্যাগ-তিতিক্ষার মনোভাব নিয়ে তাদের মধ্যে কোরবানির গোশত অকাতরে বিলিয়ে দিতে হবে এবং দান-সাদকা করতে হবে। হালাল উপার্জন, তাকওয়া ও একনিষ্ঠতাই হলো কোরবানি কবুল হওয়ার অপরিহার্য শর্ত।
ঈদুল আযহা শিক্ষা দেয় আল্লাহপ্রেমে তাকওয়া ও মনের একাগ্রতা নিয়ে কোরবানী করতে হবে, লোক দেখানোর জন্য নয়। জিলহজ মাসের ১০ তারিখ মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র ঈদুল আজহা শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়; এর প্রকৃত রূপ হলো মনের গভীরে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও তাকওয়া নিয়ে প্রিয় বস্তু তাঁর নামে উৎসর্গ করা। তাই উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা প্রভৃতি গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তু ও কোরবানির পশুর মধ্যে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কল্যাণ নিহিত রয়েছে।
আসুন কোরবানী থেকে সঠিক শিক্ষা নিয়ে গবীব-দুঃখীকে সঙ্গে নিয়ে সবাই মিলেমিশে ঈদের এই আনন্দকে ভাগাভাগি করে নেই। সবার সুস্বাস্থ্য ও সুন্দর জীবন কামনা করছি সেই সঙ্গে সবার জন্য রইল প্রাণঢাল শুভেচ্ছা ও শুভকামনা। ঈদ মোবারক।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১:০৮
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×