somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মু‘জিযা

২৪ শে জুন, ২০১৫ ভোর ৫:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুজাহিদ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রা: ) বলতেন, আল্লাহ্‌র কসম, যিনি ছাড়া কোন (হক) ইলাহ নেই। আমি ক্ষুধার যন্ত্রণায় উপুড় হয়ে পড়ে থাকতাম।আর কখনও পেটে পাথর বেঁধে রাখতাম। একদা আমি তাঁদের (রাসূলুল্লাহ (সাঃ ) এবং ছাহাবীদের) রাস্তায় বসেছিলাম, যেখান দিয়ে তারা বের হ’তেন। আবূ বকর (রা: ) রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। আমি তাঁকে কুরআনের একটি আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম।আমি এ উদ্দেশ্যেই তা করলাম, যেন তিনি আমাকে কিছু খেতে দিয়ে পরিতৃপ্ত করেন। কিন্তু তিনি চলে গেলেন, কিছুই করলেন না। এরপর ওমর (রা: ) আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁকেও সেই একই উদ্দেশ্যে কুরআনের একটি আয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। কিন্তু তিনিও চলে গেলেন, কিছুই করলেন না।

অতঃপর আবুল কাসেম [অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সাঃ )] আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, আমাকে দেখে তিনি মুচকি হাসলেন। তিনি আমার চেহারা দেখে মনের কথা বুঝতে পারলেন এবং বললেন, ‘হে আবূ হুরায়রা (রা: )! আমি বললাম, ‘হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাঃ )! আমি উপস্থিত। তিনি বললেন, ‘তুমি আমার সঙ্গে চল’! অতঃপর তিনি চললেন, আমি তাঁর অনুসরণ করলাম। তিনি বাড়ীতে প্রবেশ করলেন। অতঃপর আমি ভিতরে প্রবেশের অনুমতি চাইলাম। তিনি অনুমতি দিলে আমি প্রবেশ করলাম। তিনি ঘরে প্রবেশ করে একটি পেয়ালায় কিছু দুধ দেখে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এ দুধ কোথা থেকে এসেছে’?বাড়ির লোকজন উত্তর দিল, ‘অমুক পুরুষ অথবা অমুক মহিলা আপনার জন্য হাদিয়াস্বরূপ দিয়েছে’। তিনি বললেন, ‘হে আবূ হুরায়রা (রা: )’! আমি বললাম, ‘আমি হাযির হে আল্লাহ্‌র রাসূল’! তিনি বললেন, ‘আহলে ছুফ্ফার লোকদেরকে গিয়ে এখানে ডেকে আন’।

(রাবী বলেন) ‘আহলে ছুফফা’ ছিল ইসলামের মেহমান। তাদের পরিবার- পরিজন, ধন-সম্পদ কিছুই ছিল না। আর এমন কেউ ছিল না, যার উপর ভরসা করা যায়। যখন কোন ছাদাকার মাল রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট আসত, তখন তিনি তাদের জন্য পাঠিয়ে দিতেন। নিজে সেখান থেকে কিছুই গ্রহণ করতেন না। আর যদি কোন হাদিয়া (উপঢৌকন) আসত, তিনি সেখান থেকেও এক অংশ তাদের জন্য পাঠিয়ে দিয়ে এতে তাদেরকে শরীক করতেন এবং নিজে এক অংশ গ্রহণ করতেন। (আবু হুরায়রা বলেন) রাসূলুল্লাহ (সাঃ )-এর আদেশ শুনে আমি হতাশ হয়ে পড়লাম। (মনে মনে) বললাম, এতটুকু দুধ দ্বারা ‘আহলে ছুফফা’র কি হবে? আমিই এ দুধ পানের বেশী হকদার। আমি তা পান করলে আমার শরীরে শক্তি ফিরে পেতাম। যখন তারা এসে গেলেন, তখন তিনি আমাকে আদেশ দিলেন, আমিই যেন তাদেরকে দুধ পান করতে দেই। আর আমার আশা রইল না যে, এ দুধ থেকে আমি কিছু পাব।

কিন্তু আল্লাহ্‌ ও তার রাসূল (সাঃ )-এর আদেশ মান্য করা ছাড়া আমার কোন গত্যন্তর ছিল না।সুতরাং আমি ‘আহলে ছুফ্ফার নিকট গিয়ে তাদেরকে ডেকে আনলাম’। তারা এসে (ঘরে প্রবেশের) অনুমতি চাইলে তিনি তাদেরকে অনুমতি দিলেন। তারা ঘরে এসে নিজ নিজ আসন গ্রহণ করলেন। তিনি বললেন, হে আবূ হুরায়রা! আমি বললাম, আমি হাযির হে আল্লাহ্‌র রাসূল! রাসূলুল্লাহ (সাঃ ) আমাকে বললেন, এটি তাদেরকে দাও। আমি (দুধের) পেয়ালা হাতে নিয়ে দিতে শুরু করলাম। এক ব্যক্তির হাতে দিলাম, সে পান করে পরিতপ্তৃ হ’ল এবং আমাকে পেয়ালা ফেরত দিল।

অতঃপর আমি অন্য একজনকে দিলাম, সেও তৃপ্তি সহকারে পান করে পেয়ালা ফেরত দিল। তৃতীয় জনকে দিলে সেও তাই করল। এভাবে আমি (সর্বশেষে) রাসূলুল্লাহ (সাঃ )-এর নিকট পৌছলাম। সবাই পরিতৃপ্ত হ’ল। তিনি পেয়ালা নিলেন এবং আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন, ‘হে আবূ হুরায়রা’! আমি বললাম, ‘আমি হাযির হে আল্লাহ্‌র রাসূল’! তিনি বললেন, ‘এখন আমি আর তুমি বাকী’। আমি বললাম, ‘আপনি ঠিকই বলেছেন হে আল্লাহ্‌র রাসূল’। তিনি বললেন, ‘বসে পড় এবং পান কর’। আমি বসে পান করলাম। তিনি (পুনরায়) বললেন, ‘পান কর’। আমি পান করলাম। তিনি একথা বলতেই থাকলেন, অবশেষে আমি বলতে বাধ্য হ’লাম যে, ‘আল্লাহ্‌র শপথ! যিনি আপনাকে সত্য সহকারে পাঠিয়েছেন, আমার পেটে আর জায়গা নেই’। তিনি বললেন, ‘তাহলে আমাকে দাও’। আমি তাঁকে দিলে তিনি আল্লাহ্‌র প্রশংসা করলেন এবং বিসমিল্লাহ বলে বাকী দুধ পান করলেন (ছহীহ বুখারী হা/৬৪৫২, ‘রিকাক’অধ্যায়, অনুচেছদ-১৭, মিশকাত হা/৪৬৭০ ‘শিষ্টাচার’অধ্যায়, ‘অনুমতি’অনুচেছদ)।

শিক্ষা:
১. রাসূল (সাঃ) ছিলেন অত্যন্ত বিচক্ষণ। তিনি তাঁর ছাহাবীদের মুখ দেখেই তাদের অন্তরের অবস্থা বুঝতে পারতেন।
২. বসে পান করা সুন্নত।
৩. বিসমিল্লাহ বলে পান করতে হবে।
৪. আমন্ত্রিত ব্যক্তি অনুমতি না নিয়ে বাড়ীতে প্রবেশ করবে না।
৫. পরস্পর ভ্রাতৃত্ব বৃদ্ধির জন্য হাদিয়া বা উপঢৌকন প্রদান করা সুন্নত।
৬. বিপদগ্রস্ত বা অভাবগ্রস্তে ক সাহায্য করা মুমিনের অবশ্য কর্তব্য

সৌজন্যেঃ
আসুন প্রতিদিন একটি ইসলামিক ঘটনা সর্ম্পকে জানি
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০১৫ ভোর ৫:৩২
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×