"জাগো" ঝড়ে গত কয়দিনে অনালাইন মোটামুটি বিধ্বস্ত বলা যায়। ঝড়ে জেগে ওঠার বিরোধিতাটাই বেশী চোখে পড়েছে। বহুল পঠিত, শেয়ারকৃত, আলোচিত ও সমালোচিত একটা ব্লগ পড়ে আরও অনেকের মতই আমিও নেতিবাচক ধারনাটাই বেশী পাইছি, যেটা পরবর্তীতে পাকাপোক্ত হইসে বিপুল পরিমান কমেন্ট আর ফেসবুক পোষ্টে। বিপরীতে গতকাল পাভেল ভাইয়ের একটা স্ট্যাটাস আর আজকে রাহাত রাহমানের একটা নোট এই পর্যন্ত দুইটা শক্তিশালী কাউন্টার পোস্ট ছিল। রাহাত রাহমানের নোটটা পড়ার পর জাগোর কার্যক্রম সম্পর্কে যথেষ্ট ইতিবাচক ধারণা হওয়ার সুযোগ আছে এবং আমিও এখন সামগ্রিকভাবে জাগোর কার্যক্রমটা ইতিবাচকভাবেই দেখতে চাই।
জাগোর পক্ষ বিপক্ষ ভারী করার কোন সৎ বা অসৎ কোন উদ্দেশ্য নিয়া এই লেখা লেখতে বসি নাই। শুধু একটা প্রশ্নের উত্তর জানাটা খুবই প্রয়োজন বোধ করছি। এখন পর্যন্ত যে কয়টা লেখা পড়লাম, সবখানেই "বাংলা মিডিয়াম", "ইংলিশ মিডিয়াম" এই শব্দগুলা ব্যাপকভাবে উল্লেখিত হয়েছে। কেন এই শব্দগুলা আসছে?? জাগোর হয়ে যারা জবাব দিচ্ছেন তাঁরা বলছেন, বাংলা মিডিয়ামের ওরাই এই বিভাজনটা টানছে। কিন্তু তারা এই সুযোগটা কেন পাচ্ছে?? পাচ্ছে কারন কার্যক্রমটায় ইংরেজী মাধ্যম শিক্ষার্থীদের তুলনায় বাংলা মাধ্যমের কম উপস্থিতি। জাতি পুনর্গঠনের মতো একটা লক্ষ্য নিয়ে শুরু হওয়া একটা কাজে কেন এমন বৈষম্যমূলক শব্দ উচ্চারিত হবে? কেন বাংলা মাধ্যম শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণটা কম??
স্বাভাবিকভাবে প্রধানত দুইটা কারন হতে পারে,
১। বাংলা মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের মাঝে কার্যক্রমটা সেভাবে প্রচার করা হয় নি। না করার কারন হতে পারে, তাঁরা তাদের মতো যেমন স্মার্ট, মডার্ন ভলান্টিয়ার খুঁজছেন, তেমনটা বাংলা মাধ্যম থেকে পাওয়া সম্ভব না। এছাড়া অন্য কারন থাকতে পারে যেটা আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে কুলাইতেসে না।
২। হয়তো প্রচারের ক্ষেত্রে এরকম কোন বাছ-বিচার করা হয় নি, তবে শুনলাম এখানে ফী দিয়ে রেজিস্ট্রেশনের ব্যাপার আছে, চাঁদা-টাদাও দিতে হয়। হতে পারে বাংলা মাধ্যমের সংখ্যাগরিষ্ঠ মধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীরা তাই এতে অতটা আগ্রহ দেখায় নি।
তৃতীয় আরেকটা কারন হতে পারে যেটা একটু জটিল চিন্তাই, জাগোর ব্যাক সাপোর্ট, স্পন্সর এবং তাদের এই কার্যক্রমের সুদূরপ্রসারী উদ্দেশ্য নিয়ে অনেক কথাই উঠছে, যেগুলো নিয়ে বাংলা মিডিয়াম শিক্ষার্থীরা যতটা খোঁজ করবে ইংরেজী মিডিয়ামরা ততটা করবে না। তাদের ভেতর ব্যাপারটা ক্রেজ হিসেবে ছড়িয়ে দেয়াটা হয়তো অনেকটাই সহজ, বাংলা মাধ্যমে কোনভাবেই ততটা না।
এবার একটু আমার মতামতগুলা দেই। তৃতীয় কারনটা যদি হয়ে থাকে(মনে প্রানেই চাই এমন কিছু না হোক), তাহলে আতঙ্কিত হবার মতো ব্যাপারস্যাপার। যতভাবে যত প্যাচাইয়াই আপনি বলেন না কেন, পশ্চিমা পৃষ্ঠপোষকতা কখনই কোন উদ্দেশ্য ছাড়া হয় না। এ ব্যাপারে এখানে দীর্ঘ আলোচনার কোন ইচ্ছা নাই। আর "বাংলা মিডিয়াম শিক্ষার্থীরা যতটা খোঁজ করবে ইংরেজী মিডিয়ামরা ততটা করবে না" এই কথাটা নিয়াও তর্কের কোন অবকাশ নাই। আপনি স্বীকার করেন আর নাই করেন, আমাদের দেশের বাংলা মাধ্যম শিক্ষার্থীরা যে কোন বিষয়ে যতটা সচেতনতার পরিচয় দেয়, ইংরেজী মাধ্যমে যারা পড়ছেন তাদের বেশীরভাগই কখনই ততটা দেন না।
২য় কারণটা সত্য হবার সম্ভাবনা খুব কম বলেই মনে করি। কেননা এ ধরনের সামাজিক সচেতনতামুলক কার্যক্রম আমরা মধ্যবিত্ত বাংলা মাধ্যমের সবাই কম বেশী করে থাকি এবং সেটা সম্পূর্ণ নিজেদের খরচেই। সুতরাং টাকা-পয়সার জন্য এমন কার্যক্রমে বাংলা মাধ্যম শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ কম এটা মেনে নেয়া সত্যিই কষ্টকর।
১ম কারণটা যদি সত্যি হয়ে থাকে(আমার ধারণা এটাই সত্যি হবার সম্ভাবনা বেশী) তাহলে জাগোর বৃহত্তর সফলতা অর্জন প্রায় অসম্ভবই বলা চলে। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ বাদ দিয়ে আপনি বিপ্লবের যত শক্তিশালী পরিকল্পনাই করেন না কেন, সে স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে।
যে কারণগুলার কথা বললাম, এগুলো পুরোপুরিই আমার ব্যাক্তিগত চিন্তা, এগুলোর কোনটা সঠিক কিংবা আদৌ কোনটাই সঠিক কিনা তাও জানি না। আমি একেবারে পরিষ্কার মনে শুধু এটুকুই জানতে চাইছি, এত চমৎকার একটা উদ্যোগে(কথাটা পুরোপুরি রাহাত ভাইয়ের নোটের উপর ভিত্তি করে বলছি) কেন এত বাজে একটা দেয়াল তুলে দেয়া হচ্ছে?? জাগো সংশ্লিষ্ট কারও কাছ থেকে এ ব্যাপারে একটু সুস্পষ্ট বক্তব্য আশা করছি। আর যে কারনেই এ দেয়ালটা উঠে থাকুক, এটা ভাঙ্গার দায়িত্বটা কিন্তু আপনাদেরই, যদি সত্যি সত্যি nation rebuild করার কোন ইচ্ছা থেকে থাকে। ধন্যবাদ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




