“না মানুষের জমিতে মানুষ পতিত-অমানুষ”
তাসনীম জামান লাবীব
[এক সময় সবাই একসাথে মানুষ ছিল।তারপর ঈশ্বর একটু চালাকি করলেন।নিজেকে আবির্ভূত করলেন।চালাকিটা অন্যভাবে,কেউ ধরতে পারেনি,এক এক মানুষের কাছে এক ভাবে।চালাক মানুষ এবার ভাগাভাগি করল নিজেদের মধ্যে।কেউ নদীর এইপারে থাকল,কেউবা ঐপারে চলে গেল।যেতে যেয়ে মারাও গেল।তারপরও ক্ষ্যান্ত নয়,নিজের চোখকে তো অবিশ্বাস করা যায় না।তারপর মানুষ আরো বুদ্ধিমান হল।দেশ হল।মানুষ হিন্দু,মুসল্মান,খ্রিস্টান হল।আরো চালাক মানুষরা মালাউন,মুসলমানের বাচ্চা শব্দগুলো যোগ করল মহাকালের অভিধানে।আরো কিছুদিন পর মানুষ নিজেদের বোকামির জন্য মাথা চাপড়ালো,দেশের মধ্যে ধাতব কাঁটাতার দিল মানুষ বাচানোর জন্য]
সে দৌড়েচ্ছে, যত দ্রুত পারা যায়।এই জমি তাকে পার হতেই হবে।প্রাণ বাচানোর জন্য তাকে এই মানুষদের দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে,তার সাথে তার বাবাও দৌড়চ্ছে।তবে পার্থক্য হল তারা এখন পিতা-কন্যা পরিচয়ে দৌড়চ্ছে না।বরং তারা জীবসত্তার তাগিদে দৌড়তে থাকা দুটি অসহায় জীব,কোনো হিংস্র জীবের হাত থেক নয়, আরেক দল মানুষের হাত থেকে বাঁচার জন্য।সবার উপর মানুষ সত্য-কথাটা ভুল।ও তাই মনে করে।যে এই কথাটা লিখেছে সে মস্ত বড় প্রতারক,বা সে কোনোদিন মানুষ দেখেনই,বোধহয় বন্য মানুষ ছিল।
সামনের কাঁটাতার গুলো শুধুই কি কয়েকটি ধাতব তার,নাকি মানুষের বুদ্ধি আর চালাকিতার(ভালো অর্থেই কিন্তু) চিহ্ন?তাই মনে হয়।সে এখনো দোউড়চ্ছে,এখন যত দ্রুত পারা যায় তার চেয়েও বেশি।বাবা তার চেয়েও ভীত,অনেকটা কাটবিড়ালীকে তাড়া করলে যেমন লাগে তেমন,তাকে কেমন দেখা যাচ্ছে,কে জানে।বাবা প্রায় পৌছে গেছে।দুঃখিত; জীব সত্তার প্রয়োজনে দৌড়তে থাকা একটি জীব।এখানে তার মা থাকলে কেমন হত? অবস্থা কেমন থাকত,হয়তো উলটো থাকত এখন যেমন আছে,হয়তো সে সামনে থাকত আর মা পেছনে থাকত।আবার যেমন চলছে তেমনও চলতে পারত।আজকের আকাশে তেমন তেজ নেই,বরং কেমন যেন স্যাঁতস্যাঁতে,ঠিক ঘামে ভিজে যাঅয়া আকাশের মত।একটু পরেই ভেঙে যাবে যেন অঝোরে।বাবা পার করে ফেলেছেন কাটাতারটা-তিনি এখন বৈধ মানুষ।তার পিতাও বটে।সেও বৈধতা পাওয়ার জন্য ছুটছে,ছুতে পারবে কি?
”আর একটু মা,তাড়াতাড়ি কর”
সে চেষ্টা করছে,জীবন দিয়ে।“জীবন বাচানোর জন্য জীবন দিয়ে”-আশ্চর্য না,কিছুই নয়।অন্তত এই ঘামে ভেজা বিকেলে।
“আগে মাথাটা দে,মা” বাবা চীৎকার করছেন।
চিৎকারে কিছু আসবে যাবে কি? তাকে পৌছতে হবে বৈধতা পাওয়ার জন্য।এইওটাই এখন চরম সত্য।বাদবাকি মিথ্যা।যেমন করে তার গ্রামের হুযূর বয়ান দেয়ার সময় হিন্দু দেবদেবীদের এক ফুঁৎকারে উড়িয়ে দেন, অনেকটা সেই রকম।মিথ্যা
বৃষ্টি স্নান করিয়ে দিল তার সারা দেহ,যেন কেউ কোনো আড়াল থেকে চিত্রনাট্য পরিচালনা করছে।দূরে দাঁড়িয়ে আছে একটা লোক।যাদের দেহ থেক “দেশ রক্ষা”, “মানবসেবা”, “অতন্দ্র প্রহরী” আর তিন রঙের গন্ধ বের হচ্ছে। হঠাৎই নয়,তার হাত থেকে বের হওয়া ধাতব ছোট একটা কিছু যে তার বুকে বিধেছে সেটা অবাক করার মত কিছু নয়,চিত্র নাট্যে এটা লেখা ছিল লেখা ছিল।সে আর তার বাবা বুঝতে পেরেছিল না।ও হ্যা,সে মাথাটা গলাতে পেরেছে তারের মধ্য দিয়ে,এরপর কি করতে হবে,কেউ কি বলে দেবে?বাবা মনে হচ্ছে চিৎকার করছে।তবে ও ক্রমেই খালি মুখ নাড়ানোটা দেখতে পারছে,বাকি সব কেন যেন অসস্পষ্ট লাগছে,কেন?তার হাত দুটো ঝুলে আছে না মানুষের জমিতে-সে এখন কারোর নয়।বৈধ-অবৈধ,তিন রঙআ-দুই রঙা সব কিছুর উপরে সে। যার দেশ নেই তাকে কি বলে-নামানুষ নাকি অমানুষ।সে চেষ্টা করছে এখনো-বাবার মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।সে দূরে এখন দুইটা দেখতে পারছে,এক নল থেকে সদ্য বেরোনো ধোঁয়া আর শেতা ঢোড়ে আছে টাড় মূখে লক্ষ্যভেদের অমায়িক হাসি।অমায়িক।বাবা এখন দৌড়চ্ছে,তার দিকে নয়।দেশের দিকে?
না মানুষের জমিতে ঝুলে থাকা তার মৃতদেহ কত কিছুর জন্ম দিবে? অনেক আলোচনা,কিছু পৃথিবী ঘোরানো স্থিরচিত্র আর তার মার চোখে সারাজীবনের কান্না।বাবার মনে সারাজীবনের অপরাধবোধ।সে তো তা চায়নি।তার চোখ বুজে আসছে।সব কিছু কেমন মোহময় লাগছে।এই অসীম প্রান্তরে তার জন্য সাড়ে তিন হাত জায়গা আর একটু চোখের জল হবে কি?নাকি নামানুষের জমিতে সে অনাহূত থেকে থেকে যাবে-প্রকৃতি দূষণ করার জন্য?তার চিন্তা এখন তাই।সাড়ে তিন হাত জায়গা মাত্র।ওর ভীষণ হাসি পাচ্ছে-দুই দিন আগে অপারেশনে যেই ব্যাথা লেগেছিল তার ব্যাথা এখনকার ব্যাথার তুলনায় কিছুই না।তারপরও তার হাসি পাচ্ছে।সে মানুষ আছে তো?
মুহূর্ত আগে শেষ নিশ্বাস ফেলা কেউ কি মানুষ?হ্যা মৃত মানুশ-তারা কিছু শুনতে পায় না।
ফেলানীর সব যন্ত্রণার অবসান হল।সে এখন বহুরূপী মানুষের সৃষ্টিকর্তার কাছে ফিরে যাচ্ছে-সাড়ে তিন হাত জায়গা পেলেই হবে।হবে কি?
ফেলানী তো মারা যায় নি,তাদের ভাষায় -সে যা করছিল তা অবৈধ, সে উপযুক্ত শাস্তি পেয়েছে। তারাও তো কোনো অপরাধ করেনি,শুধু দায়িত্ব পালন করেছে,দেশ রক্ষা করেছে।দেশ তো মানুষ নিয়ে,না কথাটা ভুল।দেশ হল সেই দেশের মানুষ নিয়ে বাকিরা সেখানে অনাহূত,ফেলানীর লাশ তারই চিহ্ন।অন্য কিছু নয়। এইদেশে হাজারো সে আছে- সবারই দিন আসবে।ফেলানীর মৃতদেহ তার বাবার হৃদয়ে কি আঘাত দিল কেন জানে তিনি জীবনের মায়া ত্যাগ করে সে দিকেই ছুটতে লাগলেন,মৃতদেহের দিকে।কে যেন তাকে ওই পাশ থেক বেজন্মা বলে সাবধান করে দিল।থেমে গেলেন।শেষ্কর্ম করার জন্যও তো একজনকে বেচে থাকতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ২:৪৬

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



