somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাহাদাত উদরাজী
সাহাদাত উদরাজী'র আমন্ত্রণ! নানান বিষয়ে লিখি, নানান ব্লগে! নিজকে একজন প্রকৃত ব্লগার মনে করি! তবে রান্না ভালবাসি এবং প্রবাসে থাকার কারনে জীবনের অনেক বেশী অভিজ্ঞতা হয়েছে, যা প্রকাশ করেই ফেলি - 'গল্প ও রান্না' সাইটে! https://udrajirannaghor.wordpress.com/

মঞ্চ নাটক ‘নিত্যপুরাণ’ ও কিছু কথা (একজন দর্শকের অভিজ্ঞতা)

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত কিছুদিন আগে শিল্পকলা একাডেমীতে মঞ্চ নাটক নিত্যপুরাণ দেখলাম। আমি মঞ্চ নাটক খুব পছন্দ করি, বলে রাখা ভাল আমি নিজেও একবছরের নাটকের (সামষ্টিক সব কিছু) একটা কোর্স করেছিলাম, থিয়েটার স্কুলে। অভিনয়ের চেয়ে আমার ব্যাক ষ্টেজে কাজ করতে ভাল লাগত। তবে আমি নিজে সেই সুযোগ কাজে লাগাই নাই, কারন এটা একটা সুদুর পরাহত বা সাফল্য দুরাহত ব্যাপার। মঞ্চ শুধু চর্চা চায়, এবং এই চর্চার সাথে বাকী কিছু থাকে না। মঞ্চে কাজ করে করে নিজকে এমন একটা পর্যায়ে নিজকে নিয়ে যেতে হয় যে, মঞ্চে উঠলেই যেন শরীর তেমনি হয়ে পড়ে।

আমি মনে করি, মঞ্চে নাটক বা অভিনয় করা সহজ কাজ নয়। মঞ্চে কিছু করে নিজকে তুলে ধরা দুনিয়ার অনেক কাজের চেয়ে কঠিন একটা কাজ, এটা যারা এই মঞ্চের সাথে জড়িত তারাই বুঝতে পারেন। বর্তমান দুনিয়ায় মঞ্চে কাজ করার লোক কমে যাবার পিছনে এই রকম নানান কারন আছে। তাছাড়া, মঞ্চ নাটকের ভবিষ্যৎ এই দেশে নাই বলা চলে। আমি সেই ২০০০ সালের দিকে ছেড়েছি, তখন থেকেই দর্শক নাই হতে থাকে এবং বর্তমানে তো ফ্রী দিয়েও দর্শক নেয়া যায় না! আর মঞ্চে যারা কাজ করেন তাদের আর্থিক অবস্থাও ফেরানোর চিন্তা করা যায় না! এটা নেহাত মানুষের একটা শখের জায়গা হয়ে গেছে এখন।

হ্যাঁ, সত্য কথা বলেই ফেলি, আমি আর্থিক কারনেই আর মঞ্চ মুখি হই নাই! বিবাহের পর আমি পরিস্কার বুঝতে পারি, পরিবার বাঁচাতে আমাকে অর্থই উপার্জন করতে হবে এবং সেটা ফ্লুয়েন্টলি হতেই হবে। আমি এই ভয়ে আর মঞ্চ মুখি হই নাই, মঞ্চে আমার যে ব্যাক ষ্টেজে কাজ করার ইচ্ছা ছিল সেটা আমি পরিত্যাগ করি, আমি দূর্বল মনের মানুষ! স্ত্রী সন্তান অর্থের অভাবে পড়বে এটা আমি কখনো চাই নাই! যাই হোক, কথা গুলো ইচ্ছা করেই লিখে ফেললাম, জীবনে কত কি করার কথা ছিলো, কত কি করেছি এবং বিবাহের পর মুলত টার্গেট একটাই ‘অর্থ’! আমি বুঝে গেছি অর্থ ছাড়া পরিবার বাঁচবে না!

নিজের ব্লগ, নিজের মত করে কথা বলা যায়! হা হা হা, আমি মুলত আজ মঞ্চ নাটক নিয়ে সামান্য কথা বলার জন্য বসেছি! নিত্যপুরাণ দেখার অভিজ্ঞতা বলতে চাই! এই নাটকের নাট্যকার জনাব মাসুম রেজা, তিনি অনলাইনে আমার ফেইসবুকের বন্ধু (বাস্তবে দেখা হয় নাই) এবং আমি তার স্ট্যাটাস পড়ি নিয়মিত। এই নাটক দেখার পিছনে তার দেয়া স্ট্যাটাস কাজ করেছে, তার স্ট্যাটাস দেখেই আমি আগ্রহী হয়েছিলাম। নাটক দেখার পরে মনে হয়েছে, তিনি এই সময়ের সব চেয়ে বেশী জনপ্রিয় মঞ্চ নাটক লেখক এবং পরিচালক। আমি তার আরো আরোও সাফল্য কামনা করি।

নিত্যপুরাণ নাটক মুলত প্রাচীন পৌরনিক গল্পের মাধ্যেমে একটা আধুনিক গল্প বা উপস্থাপনা। পৌরনিক বা মাইথোলজিক্যাল কাহিনী গুলোর উপর আমার জ্ঞান সামান্য এবং এই বিষয়ে আমার তেমন ভাল পড়াশূনা নেই, এই বিষয় মুলত অনেক বড় বিষয়। শিল্প ও সাহিত্যে এই সকল ঘটনা, গল্প বা কাহিনী গুলো একটা আলাদা স্থান দখল করে আছে। আমি খুব অল্প বা সামান্য কথায় এই নাটকের কাহিনী বলে দিচ্ছি, তবে এই নাটক সত্যই দেখার বিষয় এবং আপনি না দেখলে বুঝতে পারবেন না যে গল্প কাকে বলে, নাটক কাকে বলে? নাট্যকার প্রায় সময় বলেন, এই নাটক দেখলে আপনি মনে আনন্দ পাবেন, হ্যাঁ, আমি স্বীকার করে নিলাম। টানা পনে দুই ঘন্টা আমি নিজেই মন্ত্রমুগ্ধ্বের মত এই নাটক উপভোগ করেছি। আমার সাথে আমি এক বন্ধু নিয়ে গিয়েছিলাম, সেও আমার সাথে একমত হয়েছে।

নাটকের কাহিনী সামান্য তুলে ধরার লোভ সামলাতে পারছি না! আমি আমার ভাষাতেই বলছি। শহরে একজন নিন্ম বর্নের যুবকের আবির্ভাব, সে সর্ব বিদ্যায় নিজকে যোগ্য করে তুলেছে, তার একজন শিক্ষক আছে, শিক্ষকের আদেশ তার কাছে শিরোধার্য্য। সে নিজকে পঞ্চ পান্ডবের (পাঁচ জন যুবক, একই যুবতির পাণীপার্থী) সম ভাবে এবং তাদের সাথে তার চ্যালেঞ্জ হয়, সে নিজকে সেই উচ্চতায় নিতে চায়। নানান ঘটনায়, নানান পরীক্ষায় সে উত্তীর্ন হয় এবং পঞ্চ পাণ্ডবদের এঁকে এঁকে পরীক্ষা নিয়ে তাদের পরাজিত করে। কিন্তু পঞ্চপাণ্ডবেরা তাকে ছাড়তে রাজী নয়, তাঁরা কৌশলে সেই শিক্ষকের কাছে যায় এবং শিক্ষকের কৌশলে পরাভুত হয়ে যুবক তার হাতের আঙ্গুল কাটতে বাধ্য হয়, যুবক পরাজিত হয় এবং এক সময়ে প্রান দেয়। যত সহজে ঘটনা লিখে ফেললাম, নাটকে তত সহজে দেখানো হয় নাই। চমৎকার ভাবে একের পর এক ঘটনা উপস্থাপন করা হয়ে, মানুষ্য চরিত্রের নানান দিক সুকৌশলে দেখানো হয়েছে। শিল্প সাহিত্যের মুল কাজ এটাই, আপনাকে ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে ঘটনা মস্তিষ্কে প্রবেশ করিয়ে দেবে।

ন্যাটকার সফল হয়েছেন। অভিনেতা অভিনেত্রীরা তাদের চরিত্র সফলভাবে উপস্থাপন করেছেন। দর্শকেরা নিঃশব্দতায় এই নাটক উপভোগ করেছেন, যদিও দর্শকের একটা আকাল চোখে পড়েছে! চলুন কিছু ছবি দেখি, আমার ভাঙ্গা মোবাইল ক্যামেরায়, ঝুম করে তোলা ছবি গুলোর কোন বানিজ্যিক মুল্য নেই, তবে ছবি গুলো এটা প্রমান করে, আমি নাটকের একজন খাঁটি দর্শক। বহুদিন পরে এমনই একটা নাটক দেখলাম।



মঞ্চ নাটকে আলো, শব্দ, উপস্থাপন ইত্যাদি একদম টাইম টু টাইম হতে হয়। সামান্য ভুলে একটা দৃশ্য মারা পড়তে পারে, শব্দের অপ্রতুলতায় দর্শক বিরক্ত হয়ে পারে, আলোর যথাযত ব্যবহার না হলে একটা চরিত্র সস্তা হয়ে পড়ে ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি মনে করি, এই নাটকে এই সব কোন সমস্যা হয় নাই। বোঝা যায় প্রচুর সময় নিয়ে রিহাশেল করেছে এবং একটা মান সমত মঞ্চ নাটক দর্শকদের সামনে নিয়ে আসতে পেরেছে।



সবাইকে শুভেচ্ছা। মঞ্চের কাজ দেখুন, যে কোন কিছু লাইভ দেখার আনন্দ আলাদা, আনন্দ নিন।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:৪৮
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×