মনে হচ্ছে, আধা পাগলের জীবন যাপন করছি, একই চেইন দিনের পর দিন! সকালে ঘুম থেকে উঠে গরম জল দিয়ে গোসল, দুইটা পরোটা, একটা ডিম ভাঁজি বা সামান্য সবজি সাথে এক্কাপ চা দিয়ে সকালের নাস্তা। ঠিক ১০টার আগে অফিসে পৌঁছা, সারাক্ষন কাজ (টাকা রুজির যত কলা কৌশল), কাজের ফাঁকে ফাঁকে অনলাইনে থাকা, এটাই সামান্য আনন্দ!
দুপুরে হোটেলে এক প্লেট ভাত, মাছ কিংবা সবজি। সন্ধ্যায় সামান্য পেয়ারা কুঁচি। সন্ধ্যার পরে বিদেশিক যোগাযোগ, বসের ঠেক মেরে বসে থাকা। বলা চলে রাত ৮টার আগে অফিস ছাড়ার কথা চিন্তা করাও যায় না আজকাল। কখনো কোন কোন দিন বেইলী রোডে সামান্য সময়ের আড্ডা, টার্গেট রাত ১০টার পর যেন না হয়! বন্ধু বলা যায় এমন কেহ অবশিষ্ট নেই তেমন!
রাতের ঢাকা দেখতে দেখতে মালিবাগ রেল গেইটে অবস্থান, কখনো হেঁটে, কখনো রিক্সায়। রেইল গেইটের পাশে ফারুকের চা দোকানে মিনিট দশ না বসলে চলে না। তার পর সোজা বাসায়! হাত মুখ ধুয়ে সোফায় এলিয়ে কিছু সময় ইঊটিউবে টেক বিষয়ক বা গান শোনা বা কুকিং প্রোগ্রাম। রাত ১২টার আগে বা পরে রাতের খাবার, আহমরি তেমন কি, এক প্লেট সাদা ভাত সাথে মাছ বা মুরগীর একটা তরকারী বা সবজি। এই তো!
শেষ সময় রাত ১টা, ধমক ধামক দিয়ে ছেলেদের বিছানায় পাঠানো, ওরা আমার চেয়েও বেশী আড্ডাবাজ। মনে হয় আরো কিছু সময় আছে, ধারনা করে ফেইসবুকে বসে পড়ি। ফেইসবুকে প্রথমে চেক করি, অনলাইনের কোন কোন বন্ধুর এক্টিভিটি নেই, তাদের খুঁজে বের করে বাদ দেই, বাদ দেয়ার আগে অনেক চিন্তা হয়, এত বছর সাথে ছিলো, গত এক/দুই বছর নেই, কেন! মারা পড়লো না তো, যে লোকটার সাথে ১০ বছরের বন্ধুত্ব, গত ১/২ বছরে তার কোন স্ট্যাটাস নেই কেন? বিষয়টা খুব ভাবায়! মনে অনেক প্রশ্ন জাগে! হারিয়ে যাওয়া মানুষদের কথা মনে পড়ে, নিজেরও একদিন হারিয়ে যাব ভাবনায় আসে!
এভাবে লাইট বন্ধ করে মুল দরজা জানালার ছিটকানি চেক করে সব রুম গুলো ভেতর চেক দিয়ে, ভেতরের ঘরে চলে যাই, কোল বালিশ জড়িয়ে ঘরে ঘুমের ভান করি, কিছু সময় পরে ঘুম আসে। আমি কয়েক মিনিটেই ঘুমিয়ে পড়তে পারি, আসলে শরীর নিস্তেজ বলেই। বয়সের ভার হয়ত।
দোয়াল ঘড়ি দেখি, মোবাইলে এলার্ম দেই (যদিও এর দরকার হয় না তেমন, শরীর উঠিয়ে নেয় সময়মত)। রাত ২টা, মাথায় অনেক চিন্তা থাকে। সবচেয়ে বড় চিন্তা প্রতি মাসে কমের পক্ষে এক লক্ষ টাকা খরচ আছে, সেই খরচের টাকা উপার্জন করতেই হবে, সাথে কিছু জমানোর চিন্তাও আসে! এতটা বছর এই শহরে কাটিয়ে দিলাম, এখনো বড় কোন সঞ্চয় নেই, স্থায়ী কোন আবাসন নেই, ব্যবস্থা করতেই হবে। শরীরের সমস্যায় টাকা না থাকলে উপায় পাবো না, তাও চিন্তা হয়! এমন আরো কত কি!
আরো ভাবনা হয়, সকালে উঠেই চুলায় ঠান্ডা জল গরম করতে হবে, যদিও আজকাল আর তেমন শীত অনুভব হচ্ছে না! বড় ছেলেকে গতরাতে দেখলাম, ফ্যান চালিয়ে খালি গায়ে ঘুমাচ্ছে!
আর একটা কথা না বলেই নয়, আমাদের বাসায় চারটে দোয়াল ঘড়ি আছে, চারটাতে চার সময়। ড্রয়িং কাম ড্রাইনিং রুমের ঘড়িটা দেখে আঁতকে উঠি, সেটা সব সময়েই ১৫ মিনিট ফাস্ট থাকে! আজকাল এই ফাঁদ ঘরের সবাই বুঝে গেছে, তবে ঠিক করার কেহ নাই! মুল দুনিয়া এমনই, খাবারের লোক আছে কাজের লোক নেই! আর ঘরে আমি সেরা অলস ব্যক্তি বটেই!
বিদ্রঃ সারা দিনের কর্মসুচীতে সামান্য কয়েকটা ঘটনা ইচ্ছা করেই লুকানো হয়েছে মাত্র! সেই ঘটনা গুলো আপনারা কল্পনা করতে পারেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:০৬