বর্তমান বিশ্বে নানান দেশের সব স্বৈরশাসকদের পিছনে যে দেশের অধিপত্য সব চেয়ে বেশি সেই দেশ হল চায়না, আজ বার্মাতে চায়নিজ পতাকা পুড়িয়ে জানান দিল এবং তারা লিখলো, 'সেইম অন চায়না'। এই সুত্রে আজ অনেক দেশের সাথে চায়নার সম্পর্ক এবং অনেক গুলো ভিডিও দেখলাম। এশিয়ার দেশ গুলোর চেয়ে আফ্রিকার অনেক দেশকেতো চায়না গিলেই ফেলেছে বলা চলে, প্রায় সব দেশের দারিদ্রতার সুযোগে সেই দেশে প্রবেশ করে এমন অবস্থা করেছে যে, এখন সেই দেশের সরকারও চায়নাকে কিছু বলতে আর সাহস পায় না, আফ্রিকার অনেক দেশে চায়না এমন ইনভেস্টমেন্ট করেছে যে, আগামী একশত বছরেও সেই সব দেশ থেকে চায়নাকে বের করা সম্ভব নয়! দেশের জায়গা স্থায়ী দখল সহ উন্নয়নের নামে যোগাযোগ সহ শিক্ষা প্রায় সব কিছুতেই তাদের অবস্থা নিশ্চত করে ফেলেছে।
চায়না ভিন্ন দেশ গুলোতে দুই ধরনের ইনভেষ্ট করে, একটা হচ্ছে সরকার টু সরকার এবং অন্যটা হচ্ছে চায়নার লোকেরা সেই দেশে গিয়ে চায়না এম্ভেসীর মাধ্যমে লোকালয়ে কলকারখানা, শিল্প, কৃষি সহ যে কোন বিষয়ে ইনভেষ্ট করে এবং এই ২য় শ্রেনীর চায়নিজের ইনভেস্টমেন্ট চায়নার সরকার সুরক্ষিত রাখে। প্রথম ইনভেস্টমেন্ট সরকার টু সরকার হওয়াতে সেটার ফসল তোলা দীর্ঘমেয়াদি হয়, তবে এর সুফলেই সেই সরকার দূর্বল হয়ে পড়ে কারন এই ইনভেষ্টমেন্টের টাকা ফেরত দেয়া সহজ কাজ হয়ে দাঁড়ায় না। আর ২য় ইনভেষ্টমেন্টের ফলাফল সরাসরি চায়নাতে চলে যায়, এক হচ্ছে ব্যক্তি তার অর্জিত টাকা চায়নাতে নিয়ে নেয় এবং খনিজ, কারখানার উৎপাদিত পণ্যও আবার চায়নাতেই রাপ্তানী হয়, ফলাফল এমন অন্য দেশে উৎপাদন করে নিজ দেশের উন্নতি। আর কিছু আছে সেই দেশ থেকে পন্য নিয়ে নিজ দেশে প্রসেস করে আবার ভিন্ন প্রোডাক্ট বানিয়ে আবার সারা বিশ্বে রাপ্তানী করে। সব দিক থেকে চায়না অর্থ পেয়েই থাকে।
কিছু দশক আগের কথা বিশ্বে এক সময়ে এমন করার চেষ্টা করত রাশিয়া এবং আমেরিকা। আমেরিকা কিছু দেশে সফল হলেও আমেরিকানরা নিজেরা বাইরের কোন দেশে থাকতে না চাওয়া এবং আমেরিকার সরকার তাদের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা না করতে পারা, যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়া এবং ভিন্ন দেশের অধিবাসিদের মাইগ্রেন্ট করার ফলে আমেরিকানরা এই সফলতা পায় নাই। রাশিয়ার রাজনৈতিক একটা চেষ্টা ছিল নানান উপায়ে, সমাজতন্ত্রের কথা বলে নানান দেশের উপর একটা নিয়ন্ত্রন রাখা কিন্তু সেটার উপর পানি ঢেলে দিয়েছিলেন মিঃ মিখাইল গর্বাচেভ! টাক মাথার এই ভদ্রলোকের জন্য ইউএসএসআর থেকে খন্ড খন্ড রাষ্ট্র হয়ে যায়, ফলে রাশিয়া আর সেই পথে চিন্তাই করতে পারে নাই। রাশিয়া এখন শক্তি দেখায় কিন্তু তাদের ভিন্ন দেশে কৌশলী হবার কোন মানুষই আর অবশিষ্ট নেই, ভদকা পানে নিজেরাই এখন দিনের পর দিন হাওয়া হয়ে পড়ছে, রাশিয়ার অনেক শহর, বাড়িঘর এভার্ডান হবার পথে। রাশিয়া যদি নুতন করে সারা বিশ্ব থেকে আবার মাইগ্রেন্ট না করে বিশেষ করে অন্তত ইউরোপ থেকে সহজে লোকবলকে না থাকতে দেয় তবে সেন্ট পিটার্সবার্গেও ধুলো জম্বে!
যাই হোক, চায়নাতে ফিরে যাই, মুলত চায়না ছাড়া সারা বিশ্বে রাজত্ব করার মত আর কোন দেশ দুনিয়াতে অবশিষ্ট নেই। তবে চায়না হারিয়ে গেলে হয়ত ইন্ডিয়া আস্তে পারত, কিন্তু ইন্ডিয়া এখনো ৭০ বছর পার করে সেই ধরনের শাসক পায় নাই, ইন্ডিয়াতে ধর্ম বর্নের ভেদ সমান করে চিন্তার শাসক আসলে হয়ত এগিয়ে যেত, বৃহৎ দেশ, অনেক মানুষ, কাজে লাগাতে পারলেই হত। অন্য দেশে রাজত্ব করতে হলে আগে নিজ দেশের মানুষকে একটা পর্যায়ে তুলতে হয়, সমাজ গড়িয়ে উপচানোর একটা অবস্থায় নিয়ে যেতে হয়। চায়না এই পর্যায়ে আসতে তারা তাদের সেই বুদ্ধিই কাজে লাগিয়েছে, আগে নিজের দেশের মানুষ ঠিক করেছে, শিক্ষা সহ যাবতীয় কলকারখানা তৈরী শেষে অন্য দেশের দিকে নজর দিয়েছে। চায়নিজ বুদ্ধি বলে যে কথা শুনা যায়, তার সঠিক প্রয়োগ করেছে। চায়নাতে মেথর মুচি থেকে রোবট মেকিং প্রোগ্রামারের সংখ্যা দেখলেই বুঝা যায়!
আপনারা হয়ত অনেকে জেনেছেন যে, কয়েকদিন আগে চায়না ইরানের সাথে একটা শক্তিশালী চুক্তি করেছে, এই চুক্তির ফলে চায়না এই অঞ্চলে আরো সুরক্ষিত হল। বার্মার সামরিক শাসকেরা এখনো টিকে থাকার পিছনে চায়নাদের কিছু না বলাও দায় বহন করে। চীনের বার্মা জয় মুলত মাঝ পথেই ছিল, আফ্রিকার দেশ গুলোর মত ছিলো না।
যাই হোক, চায়নার আগমনকে স্বাগত না জানিয়ে উপায় নেই, কৌশলী বুদ্ধিতে চায়না সব সময়েই এগিয়ে, যে সরকার নানান উপায়ে অত্যাচার করে মানুষের মন থেকে হারিয়ে যাবার পথে থাকে এবং সেই দেশে যখন একটা বিরোধী দল ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করে তখন চায়না সেই দলকে সমর্থন দেয় ও সফলতা লাগ করে, ক্ষমতা পরিবর্তন হলেই উন্নয়নের খাত গুলোতে ইনভেষ্ট করে, এটা একটা চমৎকার বুদ্ধি এবং আফ্রিকার অনেক দেশের স্বাধীনতা এনে দিতেও চায়না সাহায্য করেছে এবং পরবর্তী ফলাফলতো দেখতেই পাচ্ছি। যারা এই বিষয়ে আরো জানতে চান, ইউটিউবে সামান্য ঘাটলেই পেয়ে যাবেন।
তবে চায়নার এই সাফল্যের পিছনে আমি চায়নিজ সরকারের কর্মকান্ডকে দায়ী করলেও, এর মুল হচ্ছে চায়নার মানুষ, এই মানুষ গুলো একেকটা যেন রোবোর্ট। আপনি এদের সে দেশে যে কোন স্থানে থাকতে বলবেন, এরা সেই স্থানেই থাকতে পারে এবং সেখানেই আপনার স্থাপনা বানিয়ে দিতে পারে। চায়নার মানুষের এই বিস্ময়কর প্রতিভা সত্যই দেখার মত, যাদের চোখ আছে এবং জানতে ভালবাসেন, আপনারা চাইলেই জানতে পারেন।
আপনার মতামত কাম্য!
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১১:৩৪