somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাহাদাত উদরাজী
সাহাদাত উদরাজী'র আমন্ত্রণ! নানান বিষয়ে লিখি, নানান ব্লগে! নিজকে একজন প্রকৃত ব্লগার মনে করি! তবে রান্না ভালবাসি এবং প্রবাসে থাকার কারনে জীবনের অনেক বেশী অভিজ্ঞতা হয়েছে, যা প্রকাশ করেই ফেলি - 'গল্প ও রান্না' সাইটে! https://udrajirannaghor.wordpress.com/

মুরগী বিক্রেতা ফারুক ভাই ও আমি!

২৬ শে জুলাই, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিছু কিছু মানুষের সাথে আমার চরম বন্ধুত্ব হয়ে যায়, তেমনি মালিবাগ বাজারের মুরগী বিক্রেতা 'ফারুক ভাই' একজন, আমাদের বন্ধুত্ব প্রায় ৮/৯ বছরের কাছাকাছি, আমি মালিবাগে বাসা নিয়ে এলে বাজার করতেই তার সাথে পরিচয়, এবং তার কাছেই আমি দেশি বা ফার্মের মুরগী কিনি! এবার আমার মুরগী কেনার ধরন বলি, ধরেন আমি নয়াপল্টনে আছি, রিক্সায় উঠছি, ফোন করলাম ফারুক ভাইকে, '৪টা দেশি ৪টা ফার্মের, সাফাই করে ব্যাগে ভরেন, আসতেছি, দুই হাজারের বেশি যেন না হয়, দেশি গুলার সাইজ ভাল হতে হবে'! এবার আমার যেতে যতক্ষন, সব পিস করে রেখে দিবে, আমি গিয়েই টাকা দিয়েই বাসায় নিয়ে যাই। এখানে বলে রাখা ভাল টাকা না থাকলেও অসুবিধা নেই বা আমি যদি বলি বাসায় দিয়ে যেতে তাও ব্যাপার না। তিনি আমার চরিত্র বুঝেন, টাকার চিন্তা করেন না, বাসাও চিনাইয়া দিচ্ছি!

যাই হোক গত কয়েকদিন আগে রিক্সায় কাকরাইলে বসে ফোন দিলাম, আমারে কয়, সাহাদাত ভাই আমি আর ঐ মুরগী দোকানে কাজ করি না। আমি বললাম, মানে? ফারুক ভাই কয়, আমি আসলে সেই দোকানের মালিক ছিলাম না, কর্মচারী ছিলাম, আমার এক আত্মীয়ের দোকান ছিলো, আমিই চালাতাম, আমিই কেনা বেচা করতাম, উনাকে উনার লাভ দিয়ে বাকী টাকা আমরা নিতাম। প্রায় ৯ বছর এই দোকান চালাইছি নিজের মত করে, এখন সেই আত্মীয় উলটা পালটা কয়, জগন্য ভাষা ব্যবহার করে, এর পরে রাগ করে ছেড়ে দিচ্ছি। আমি বললাম আরে ফারুক ভাই বলেন কি, আমি তো আপনাকে সেই দোকানের মালিক মনে করতাম, তা এখন কি করেন, কোথায় আছেন, আমি মুরগী কিনতে আসতাছি, মুরগী লাগবো! ৪টা ফার্মের, বড় সাইজ!

ফারুক ভাই বলেন, আসেন, রেললাইনের ধারে খোলা জায়গায় একটা ছোট দোকান নিচ্ছি, দেশি এখনো উঠাইতে পারি নাই, ফার্মের আছে, আসেন, রেলগেইট এসে ফোন দিয়েন দোকানে নিয়ে আসবো।

আমি যেয়ে (দোকান খুঁজে বের করতে ৫/৬টা কল করতে হয়েছে) দেখি, হ্যাঁ, শান্তিবাগের শেষ মাথায় সত্যি একটা ছোট খোলা মুরগী দোকান নিয়ে বসেছেন, আমার মুরগী গুলো এক সাইডে রাখা। বললেন, চলেন চা খাবেন, আমি চা খেতে চাই না! আমি জানতে চাইছি, কেন কি হল কেন এমন করে সেই দোকান থেকে চলে এলেন, আর আমি তো আপনাকেই সেই দোকানের মালিক ভাবতাম! অনেক আফসোসের কথা শুনালেন, বললেন ৯ বছর সকাল ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ছুটি ছাড়া কাজ করেছি, তবুও মালিকের মন ভরাতে পারি নাই! কি আর করবো ফলে এখন নিজে এই ছোট দোকান নিয়ে বসলাম, দেখি আল্লাহ ভাগ্যে কি রেখেছেন! আরো জানালেন আপনাদের মত যারা ফোন দিয়ে আসেন তারা সবাই আসছেন বলে সাহস পাচ্ছি!

হাতে ব্যাগ নিয়ে হাসি মুখের ফারুক ভাইকে বিদায় জানাতে আমিও মনে মনে ভাবছিলাম, আরে এ যেন আমারই গল্প! ৯টা বছর চাচার ফার্মে কাজ করে আমিও আমার চাচার মন ভরাতে পারলাম না, এই ৯ বছরে উনাকে শুন্য থেকে কোটিকোটি পতি হতে দেখলেও বাস্তবে আমি লক্ষপতিও হতে পারলাম না অথচ তাকে এমন ধনী বানিয়ে দিতে আমার চেষ্টার সামান্য কমতি ছিলো না, ছিলো না আমার সকাল সন্ধ্যা রাত! ভাবছিলাম চাচা ভাতিজা মিলে বাকী জীবন কাটিয়ে দিবো অথচ চাচা আমাকে কর্মচারীর চেয়ে আর বেশি কিছু ভাবতে পারেন নাই!

হ্যাঁ, আমি এখন ফারুক ভাইয়ের মতই, এই ৯ বছরে যেহেতু এই একটা কাজ শিখেছি ফলে এই কাজ ফেলে নুতন কাজে যেতে মন চাইছে না, এখন ছোট পরিসরে আমিও নুতন দোকান নিয়ে বসেছি আজ মাসখানেক! বাকী বিধাতার খেলা এবং আপনারা সাক্ষী!

(২০২০ সালে মালিবাগ বাজারের একটা ভিডিও করেছিলাম, সেখানে ফারুক ভাই সেই মুরগী দোকান থেকে হাত নেড়েছিলেন, ভিডিওটা ইউটিউবে আপ্লোড করেছিলাম, মালিবাগ বাজার দেখতে চাইলে লিঙ্কে ক্লিক করতে পারেন, কমেন্টে লিঙ্ক)

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:০৫
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ময়ুরপুচ্ছ ধারণ করলেই কাক ময়ূর হয়ে যায়না

লিখেছেন অনল চৌধুরী, ৩০ শে মার্চ, ২০২৩ রাত ১১:০৯



বিরাট সংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব নামধারী হঠাৎ নীতিবাগীশ সাজা মামুন আলমের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়ার পর যথারীতি তার দলবল তার পক্ষ নিয়েছে। আর প্রকৃত নীতিবান ব্যাক্তিরা আলমকে সমর্থন না করলেও মামুনের এসব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবি ব্লগ - "আলো ছায়া"

লিখেছেন ঠাকুরমাহমুদ, ৩১ শে মার্চ, ২০২৩ রাত ১:০৪



আমাদের ছোটো নদী চলে বাঁকে বাঁকে
বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে।
পার হয়ে যায় গরু, পার হয় গাড়ি,
দুই ধার উঁচু তার, ঢালু তার পাড়ি।

আর-পারে আমবন তালবন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৃতীয়লিঙ্গ না, অসীমলিঙ্গ

লিখেছেন তানভীর রাতুল, ৩১ শে মার্চ, ২০২৩ ভোর ৫:৫৭

সামাজিকভাবে বহিষ্কৃত, অবহেলিত, প্রান্তিক আর প্রায়শই সহিংসতার শিকার বাংলাদেশের লিঙ্গান্তরী নাগরিকরা এমন একটি দিনের স্বপ্ন দেখেন যখন তাদের অস্তিত্ব কেবল সহ্যই করা হবে না, তাদের ব্যক্তিপরিচয়টাও উদযাপন করা হবে। তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পশ্চিমের পথে এক গুনাহগারের পবিত্র ওমরাহ যাত্রা(২য় পর্ব)

লিখেছেন জুন, ৩১ শে মার্চ, ২০২৩ সকাল ১১:২৫


মসজিদে কুবা, হযরত মোহাম্মদ (সাঃ ) এর নিজ হাতে গড়া পৃথিবীর প্রথম মসজিদ
দ্বিতীয় দিনের ভোর শুরু হলো ফজরের নামাজ দিয়ে। মসজিদে নববীর বিখ্যাত সবুজ নরম কার্পেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শক্তিশালী ব্লগারদের ব্লগে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হোক

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ৩১ শে মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৪:৫৮

আমি কোন স্বর্নালী যুগের ব্লগার নই। ব্লগে এসেছি পাঁচ বছর হল। রেজিস্ট্রেশন করার আগে এই ব্লগে মুলত পাঠক ছিলাম। অজানা অচেনা মানুষের লেখা পড়তে বেশ ভাল লাগায় , ব্লগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×