মানুষ নানান কারনে আত্মহত্যা করে, তবে আমার কাছে মনে হয়, একজন মানুষ যখন সমস্যায় পড়ে এবং তার থেকে উদ্বারের আর কোন পথ দেখে না, তখনই সে এই সিধান্ত নেয় যে, এই দুনিয়াতে আর থাকবে না। মুলত প্রত্যেক মানুষের একটা লক্ষ্য থাকে, বয়স বাড়ার সাথে সাথে সেই সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে চেষ্টা করে, পরিনিত বয়সে সেই লক্ষ্য চুতি কিংবা সেই লক্ষ্য পূরণে বাঁধা পেলেই মানুষের বেঁচে থাকার আগ্রহ চলে যায়, মানুষ এই দুনিয়া ছাড়ার চিন্তা করতে থাকে।
পেন্সিলের মোহাম্মদ আনোয়ার কয়েকদিন আগে আত্মহত্যা করে সেই কথাই যেন বলে গেলেন! অত্যান্ত মেধাবী আনোয়ার মুলত একজন ফুল টাইম সাহিত্যিক হতে চেয়ে ছিলেন বলে আমার মনে হয়, তার পেন্সিলে ভুমিকা দেখে, সাথে কয়েকটা চ্যাট পড়ে এটা আমার কাছে মনে হয়েছিল। মেধাবী আনোয়ার ইটালীতে পিএইচডি করার সুযোগ ছাড়া কিংবা বড় কোম্পানীতে চাকুরী করার সুযোগ পেয়েও তা হাতছাড়া করেছিলেন, তিনি চাইলেই মাসে কয়েক লক্ষ টাকা রুজি করে স্ত্রী ও দুই মেয়ে সন্তান নিয়ে আরামে জীবন কাটাতে পারতেন, তবে তার মন এটা চায় নাই, তিনি লিখে মানুষের মনে স্থান করে নিতে ছেয়েছিলেন। দুনিয়াতে সব মানুষ অর্থ উপার্জনের জন্য আসে না বা চায় না, আনোয়ারও শুধু অর্থ উপার্জন আর পরিবার নিয়ে পড়ে থাকতে চান নাই।

যতদুর অনলাইনে তার আত্মহত্যার বিষয়ে পড়তে গিয়ে বুঝলাম, তিনি যা মনের ইচ্ছায় করতে ছেয়েছিলেন তা পারেন নাই বা বুঝতে পারেন এই হবার নয়। তবে একজন এই ধাচের ব্যক্তি হিসাবে আমি যা আরো বুঝতে পারছিলাম, তিনি বিবাহিত ও পারিবারিক জীবনেও সুখি ছিলেন না, একজন পুরুষের পারিবারিক জীবনে সুখি হবার যে সূত্র তাতে তিনি ছিলেন না বা যেতেও চাইছিলেন না। বিবাহের পরে একজন পুরুষের মুলত একটাই কাজ থাকে, তা হচ্ছে, প্রচুর উপার্জন, স্ত্রী সন্তান চাহিবা মাত্র দিতে পারলেই সে ভাল স্বামী হয়, না হলেই সে কখনো স্ত্রীর কাছে সন্মান আশাও করতে পারে না বা হয় না। স্ত্রীকে প্রচুর অর্থ সম্পদ দিয়ে তবেই তাকে চুপ রাখতে হয়, ভালবাসা পেতে হয়! আপনারা আমাদের দেশের দুর্নীতি করে অর্থ উপার্জনের নায়কদের দেখলেই বুঝবেন, এদের স্ত্রীরা স্বামীদের আকাম কুকাম দেখেও টু শব্দ করে না, কারন নিজের তো হাজার কোটি হয়, খেয়াল খুশি মত চলা যায়, পরা যায়, শোয়া যায় ইত্যাদি! হা হা হা। মোহাম্মাদ আনোয়ারে মেধাবী হলেও এটা বুঝতে পারছেন কিনা জানি না, আর বুঝতে পারলেও কেন বিবাহে গেলেন তাও অজানা।
মোহাম্মদ আনোয়ারের আত্মহত্যার পরে দেখা যায়, তিনি হাজার হাজার ছেলে মেয়েদের সাথে ছবি তুলেছিলেন, বিশেষ করে মেয়েদের সাথে বেশি এবং এই মেয়েরা এখন অনলাইনে ভাইয়া বলে ছবি দিচ্ছেন এবং তার সাথে লেখালেখি বিষয়ক কথা চ্যাট তুলে দিচ্ছেন, মানে দাঁড়ায় মোহাম্মদ আনোয়ার বন্ধু প্রিয় ছিলেন, পেন্সিলকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য তিনি কোমর বেঁধে নেমেছিলেন, এর ধারাবাহিকতায় তিনি সকলকে আপন করে নিয়ে ছিলেন, যখন ইচ্ছা যারতার সাথে কথা বলেছিলেন। কিন্তু পারিবারিক জীবনে কোন স্ত্রী রাত নাই দিন নাই কোন স্বামীর ফোনে কথা বা চ্যাটিং মেনে নেয় বলে আমি মনে করি না! এটা পড়ে হয়ত কেহ কেহ হাসছেন, হাসুন কিন্তু যা সত্য তা বলে গেলাম। আমার ধারনা ্তার স্ত্রী এই সবেও তাকে সন্দেহ করতেন এবং জীবন অতিষ্ট করে তুলছিলেন! একজন স্বামী সব চেয়ে বেশী কষ্ট পায় স্ত্রীর এই অহেতুক আচরণে এবং কটু কথায়! ভাত দিতে পারস না, আবার মেয়েদের সাথে কথা কস ও ছবি তোলস! হা হা হা। ছবি না তুলেও বাংলাদেশের প্রায় প্রত্যেক স্বামী যেখানে স্ত্রীর এই সন্দেহের তালিকায় থাকে সেখানে এভাবে গড়ে ছবি তুলে মোহাম্মদ আনোয়ারের কি অবস্থা তা ভাবতেই আমার গায়ের লোম খাড়া হয়ে যাচ্ছে, বেচারা কি মানসিক অত্যাচারে থাকতে পারে।
এবার বাদ থাকলো পেন্সিল বিষয়ক কথা। আমি পেন্সিলের শুরু থেকে একজন সদস্য, এই গ্রুপের পোষ্ট ও নানান কর্মের উপর আমার খেয়াল আছে। ব্লগে লেখার কারনে পেন্সিলের অনেকের সাথে আমার হালকা পরিচয় আছে। পেন্সিল মুলত একটা ফেইসবুক গ্রুপ ছিলো আছে। মোহাম্মদ আনোয়ার এবং অন্যান্যদের (নাম গুলো উল্লেখ করছই না) চেষ্টায় এটা লেখক, শিল্পীদের একটা আড্ডাস্থল হয়ে উঠেছিল। চার লক্ষের বেশী মানুষের একটা গ্রুপ কম কথা নয়। সাথে যুক্ত হয়েছিল পেন্সিল পাব্লিকেশন ও পেন্সিল ফাউন্ডেশন, যেখানে মোহাম্মদ আনোয়ারের সরাসরি অবদান ও ফুল টাইম সময় দেয়া ছিল। কিন্তু যা বুঝা যায় কোন অন্তকলহে তিনি পেন্সিল থেকে বের হয়ে যান বা পদত্যাগ করেন, এমন কি আজকেও তাদের মডারেশন প্যানেল দেখলাম তাতে মোহাম্মদ আনোয়ার নেই, মানে তিনি সব কিছু থেকেই বাদ পড়েছিলেন বা নিয়েছিলেন! এটাও তার জীবনে হতাশা নিয়ে আসতে পারে, এই কষ্ট ভুলে যাবার নয়।

যাই হোক, মোহাম্মদ আনোয়ার নিজকে শেষ করে দিয়ে হয়ত হিরো হয়ে গেছেন। তবে আমি মনে করি আজকাল দেশে অনেক মানুষ আত্মহত্যা করছে, প্রতিটা আত্মহত্যার কারন খুঁজে বের করে সঠিক কারন দেশবাসীকে জানানো উচিত, এই কাজে সরকারের বিশেষ একটা ইউনিটের কাজ করা উচিত। মানুষ যত জানবে তত অভিজ্ঞ হয়ে নিজের আচরণ শুদ্ধ করার চেষ্টা করবে।
লম্বা লেখা ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য ধন্যবাদ ও শুভেছা নিন। তবে এই লেখা অনেকে পড়ে রাগ করে ফেলতে পারেন বা আমাকে উলটাপালটা কথা লিখতে পারেন, লিখুন। বিশেষ করে যারা নাস্তিক, তারা খুব রাগ করবেন জানি, করুন। আর একটা কথা পেন্সিলের মডারেটরগণ কেন জানি আমার লেখা কখনোই এপ্রুভাল দিতেন না, ফলে পেন্সিলে আমার মাত্র ২টা লেখা আছে, তাও ২০১৯ সালের। আমি অনেক গুলো লেখা দিয়ে বার বার রিজেক্ট হয়েছিলাম, কেন আমার লেখা মডারেশন পাশ দিতো না তা বুঝতে পারতাম না, ফলে পরে আর কখনো লিখি নাই, কে আমার লেখা রিজেক্ট বা ডিক্লাইন করে দিত তার পরিচয় জানলে ভাল হত, হা হা হা। ভাল থাকবেন, এই লেখাও আমি পেন্সিলে দিবো না, কারন এটা নিশ্চিত রিজেক্ট হবেই!
মিঃ মোহাম্মদ আনোয়ার, আপনিও ভাল থাকুন, এত অভিমান ভাল নয়, নিজকে হত্যা না করে জঙ্গলেও পালিয়ে যেতে পারতেন, আমিও জঙ্গলে যেতে চাই, আপনি থাকলে দুইজনে, সাথে আরো কয়েকজন ভুল বিবাহ করা লোক নিয়ে আমাদের জঙ্গলের আড্ডা জমে উঠত!
মালিবাগ, ১৩ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ইং

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



