প্রতিদিন সকালে এক ধরনের যুদ্ধ করি। নিজেকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলার যুদ্ধ। সম্ভবত ভোর এবং সকালের ঘুমটাই সবচেয়ে মজার। একধরনের আধো ঘুম আধো জাগরন, কেমন যেন শুন্য ভাসা ঝিম ঝিম অনুভুতি, নিজের ভেতর নিজে গুটিশুটি মেরে ঘুমোতে পারার যে সুখ তার তুলোনা আমি অন্তত জানিনা। কিন্তু আমরা যারা সকালে কাজে বের হই, অফিস যাই তাদের যে করেই হোক নিজেকে টেনে হেচড়ে তুলতে হয় এই মোহময়, সুখকর রাজ্য থেকে। ব্যক্তিগত ভাবে আমার কাছে পৃথিবীর সবেচয়ে কঠিনতম কাজ মনে হয় এটি। প্রতিদিন সকালেই একবার করে ইচ্ছে করে চাকরিটা ছেড়ে দিতে। আমি সিওর এই একই অনুভুতি আরো অনেকেরই হয়-------------।
আমি ঘুমাতে পছন্দ করি। সম্ভবত আমার সবচেয়ে প্রিয় কাজ ঘুমানো। মজার ব্যাপার হচ্ছে আমি বালিশে মাথা ছোয়ানো মাত্রই ঘুমিয়ে যেতে পারি। ছুটির দিনগুলো অলমোস্ট সারাদিনই ঘুমিয়ে কাটাই, এমন কি মাঝে মাঝে অফিস ফাঁকি দিয়ে বাড়িতে দেই লম্বা ঘুম । এই ঘুমোতে পারার ক্ষমতার জন্য মাঝে মাঝে আনন্দই হয়। আমার ধারনা সুস্হ এবং সুখি মানুষেরাই মজা করে ঘুমোতে পারে। না ঘুমোতে পারার কস্টও আমি দেখেছি। সম্ভবত এর চেয়ে নিষ্ঠুর, অস্হির কষ্ট পৃথিবীতে আর কিছুই নেই । আর সম্ভবত সে কারনেই পৃথিবী জুড়ে অহরহ বিক্রী হচ্ছে স্লিপিং পিল।
ঘুমের একটা দারুন ব্যাপার আছে। ঘুম মানে হচ্ছে পৃথিবীর সকল দুঃখ, কষ্ট, ব্যাথা, টেনশন, সুখ, সুখের অসুখ, স্মৃতি সবকিছু থেক প্রতিদিন একবার মুক্তি পাওয়া। ঘুম মানে কিছুই নেই, এমনকি ঘুমন্ত মানুষটিও। আমরা কিন্তু আসলে ঘুমোতেই চাই। সারাদিনের এত কাজ, দায়িত্ব, এত দৌড়, শেষেতো একই গন্তব্য, ঘুম। এবং অবশেষে সবকিছু সাঙ্গ করে আমরা ঘুমাই। চিরতরে।
এতক্ষনে অনেকেই সম্ভবত আমাকে ফাঁকিবাজ আর অলস ভেবেছেন। আসলে কিন্তু তা নই, এই নিঠুর সংসারে আমাকেও অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয়।(আমার বউ এখনো আমার সাথেই আছে, মনে হয় সে কাজটি ঠিকঠাক মতই করে চলেছি
আমার ছেলের বয়স সাড়ে তিন বছর। ও স্কুলে পড়ে। ওর স্কুল শুরু হয় সকাল সাড়ে নটায়। আমি অফিস যাবার সময় ও আর ওর মাকে নামিয়ে দিই স্কুলে। সাধারনত আমরা দুজন রেডি হয়ে ছেলেটাকে ডেকে তুলি যাতে ও একটু বেশি ঘুমাতে পারে। আজ সকালে আমি যখন রেডি, ওর মা ছেলেটাকে আদর করে ঘুম থেকে ওঠাতে চেষ্টা করছিল । ও উঠতে চাইছিল না কিছুতেই, প্রচন্ড বিরক্ত হচ্ছিল। আর অনুনয় করে বলছিল " মামনি আমি আর একটু ঘুমাবো, মামনি আমাকে আর একটু ঘুমাতে দাও"। ফুলের বোটা থেকে কুড়ি ছিড়ে ফেলার মতো করে ওর মা ওকে একটানে ছিনিয়ে নিয়েছিল বিছানা থেকে। কারন ওকেতো স্কুল যেতে হবে, অনেক বড় হতে হবে ওকে। ইচ্ছে মতো ঘুমাতে না পারার এই কস্ট, এই পরাধিনতা আমাকে ভাবিয়েছিলো খুব। কারন আমি জানি এই পরাধিনতার কস্ট ওকে পুরো জীবনে বহুবার পেতে হবে। (গাড়িতে স্কুল যেতে যেতে পুরোটা রাস্তাই আমার পায়ের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়েছিল ও)।
আসলে আমারা শেষ পর্যন্ত ঘুমাতেই চাই আর আমাদের সর্বশেষ গন্তব্যও ঘুম। ঘুমের চেয়ে সুখের আসলে কিছুই নেই।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ১০:৩৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





