(সংবিধীবদ্ধ সতর্কীকরন : ধুমপান এবং প্রেম স্বাস্হ্যর জন্য ক্ষতিকর)
এই ব্লগে অকপটে স্বীকার করিতে চাই যে, এই এক জীবনে বহুবার প্রেমে পড়িয়াছিলাম। স্বভাবটা এখনো যে পুরোপুরি বদলায়াছে ঠিক তাহা নহে, শুধু সাহসটাই কিন্চিত কমিয়াছে
তখন স্কুলের সবচাইতে উচু ক্লাসে পড়িতাম। ভেড়ার দলে বাছুর রাজার মতো স্কুলের সিনিয়র ছাত্র হিসাবে বড় ভাই টাইপের ভাব চলিয়া আসিয়াছিল শরীর এবং মনে।। হঠাৎ আবিস্কার কিরিয়াছিলাম যে আমি বড় হইতে শুরু করিয়াছি। আমার সমুখে মায়াবী এবং রহস্যময় এক জগতের দরজা ক্রমশ খুলিয়া যাইতেছে। নিশি স্বপ্নের মাঝে কোন এক ছলনাময়ি নারীমুখ আসিয়া বড় রোমান্টিকতায় ভাসাইয়া নিয়া আমাকে বিব্রতকর করিয়া রাখিয়া যাইতেছে।
আমাদের স্কুল ছিল শহরের বড় রাস্তার নিকটেই। সেই স্কুলে আমরা বালকেরাই শুধু পড়িতে পারিতাম। বালিকাদের স্কুল আমাদের স্কুল ছাড়িয়া আরো অর্ধমাইল দুরে। সেকারনেই তাহাদিগকে আমাদের স্কুলের সামনের রাস্তা দিয়াই যাতায়াত করিতে হইতো। আর ইহায় ছিল আমাদের নিকট সোনাই সোহাগা। যখন নিচু ক্লাসে পড়িতাম তখন স্কুলের বড় ভাইদিগকে ক্লাস শুরুর পুর্বে রাস্তাই দাড়াইয়া থাকিতে দেখিতাম। তখন তাহাদের সে আবেগ ধরিতে না পারিলেও পরে বেশ বধোগম্য হইয়াছিল কারন আমিও ঠিক সেই একই আবেগে ভাসিয়া যাইতে শুরু করিয়াছিলাম।
আমার একজন নেংটো কালের বন্ধু ছিল। একই স্কুলে একই ক্লাসে পড়িতাম। বসিতে, চলিতে, খেলিতে এবং পড়িতে একসঙ্গে গাঁটবাধিয়া থাকিতাম। দুজন একইসঙ্গে ডাগর হইয়া উঠিতেছিলাম এবং একই সঙ্গে অনুধাবন করিয়াছিলাম যে জগতে আমরা বালকেরা ছাড়াও বড়ই আকর্ষনীয় ও রহস্যময় আরো এক জাতি বিদ্যমান। তাহাতে অবশ্য লাভই হইয়াছিল। মনের ভেতর হঠ্যাৎ জাগিয়া ওঠা অচেনা আর রহস্যঘেরা প্রশ্ন গুলোর উত্তর দুজেনে মিলিয়া খন্ডাইতে চেষ্টা করিতাম।
আমাদের স্কুল বসিত সকাল দশটাই। কোন এক অজানা নেশাই আগে ভাগেই স্কুলে চলিয়া আসিতাম। তাহার পর কোন এক দেয়াল অথবা খুটিতে ঠেস দিয়া দাড়াইয়া পরিতাম বড় রাস্তার ধারে। বালিকারা কত রকম ঢং করিয়া স্কুলের পথে হাটিয়া যাইত। কেও কোমর দুলাইয়া, কেওবা বুকে বই চাপিয়া, মাথা নিচু করিয়া, কেও সখি গনের সাথে হাস্যরসে মাতিয়া পথ চলিত। দেখিতে বড় সুখ হইতো আর একই সঙ্গে বুকের ভেতর হইতে দীর্ঘশ্বাস নির্গত হইতো। হায় ইহাদের কাওকে যদি নিজের করিয়া পাইতাম !!
এরকম করিয়াই চলিতেছিল। হঠাৎ গোল বাধিল। পরির মতো দেখিতে এক অচেনা বালিকা আমার মন কাড়িয়া লইলো। আমি প্রেমে পড়িলাম। ফর্সা করিয়া, খয়েরি চোখের মেয়েটি আমাকে পাগল করিয়া দিল। বন্ধুর কাছে কাঁদিয়া বলিলাম এখন কি হইবে?
চেষ্টা চরিত্র করিয়া বন্ধু কন্যার সকল খবর বাহির করিয়া লইলো। কোন ক্লাসে পড়িত, কোথাই থাকিতো, মাতা পিতা কাহারা এমন কি ভাই বোনের সংখাও। আমরা মাঝে মাঝে বৈকালের অবসরে তাহার বাড়ির সামনে সাইকেলযোগে চক্রর দিতে শুরু করিলাম। সে দোতালার বারান্দাই দাড়াইয়া আড়চোখে দেখিয়া মুচকি হাসিত। আশার আলো দেখিতাম।
এভাবে ভালোই চলিতেছিল। মেয়েটি আমার পাগলামি বুঝিতে পারিয়া ইশারাই মানিয়া লইতেছিল। তাহার চোখের ভিতর ভালোবাসার আহবান টের পাইতেছিলাম। সবকিছ যেন এক প্রেমময় সন্ধির দিকে আগাইতেছিল। বিধাতা তা সহিলেন না।
একদিন হঠাৎ খবর আসিল, বন্ধু খবর আনিল কন্যার বিবাহ হইয়া যাইতেছে। শহরের নামকরা মাস্তান কন্যার রুপে ভুলিয়া বাহু বলে জোর করিয়া বিবাহ করিতেছে। মাথাই আকাশ ভাঙ্গিয়া পড়িল। প্রচন্ড দুঃখ পাইয়া মুষড়াইয়া পরিলাম (সত্যি দুঃখ পাইয়া ছিলাম কিনা আজ ঠিক মনে নাই তবে দুঃখ পাওয়ার ভান করিয়াছিলাম)। বন্ধুর সাইকেলের পিছনে চাপিয়া দুরে নদীর ধারে চলিয়া গিয়াছিলাম দুঃখ যাপন করিতে। দেবদাস আর পার্বতির গল্প জানিতাম। দেবদাস দুঃখ ভুলিতে মদ খাইতো। আমারো দেবদাস হইতে ইচ্ছা করিলো। দুঃখ কমাইতে নিষীদ্ধ কিছু খাইতে হইবে। মদতো অনেক বড় ব্যাপার আর আমার দুঃখও নিশ্চই দেবদাসের মতো ততটা বড় নহে। তাই বিকল্প খুজিলাম। বন্ধু দুইটা সিগারেট আর দেশলাই জোগাড় করিয়া আনিলো। দুঃখ ভুলিতে জীবনের প্রথম সিগারাটে টান দিয়া খুক খুক করিয়া কাশিতে লাগিলাম। নিষীদ্ধ কিছু করিতে পারিয়া বড় উত্তেজনাকর আনন্দ হইলো যাহা কোন অংশেই প্রেমের আনন্দের চেয়ে কম নয়।
এ লেখাটিকে যাহারা প্রথম প্রেমের গল্প বলিয়া ভাবিয়াছেন তাহারা ভুল করিয়াছেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:১০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





