আমার ছোট ভাইয়ের ছয় মাস বয়োসি মেয়ে অরোরার জন্য একটা প্যারামবুলেটর কেনা হলো। তা দেখে আমার সাড়ে তিন বছরের ছেলে রায়ীদ অনেক বেশী উত্তেজিত এবং উৎসাহিত। অনেকটা বড়সড় খেলনার মতো দেখতে বলে প্যারামবুলেটর পুরোপুরি চলে গেলো রায়ীদের দখলে। এমনিতেই ওর প্রিয় বিষয় যে কোন ধরনের গাড়ী অথবা চাকা লাগানো খেলনা। এর মাঝে চার চাকার অদ্ভুত এক ঠেলা গাড়ি পেয়ে ওর কিছুটা মাথা খারাপের মতো অবস্হা হলো। প্যারামবুলেটারটাকে এ ঘর থেকে ও ঘর ঠেলে নেয়াটা হয়ে উঠলো রায়ীদের প্রধানতম কাজ। উত্তেজনাই প্রথমরাতে ঠিকঠাক মতো ঘুমাতে পারলোনা ও । পরেরদিন ঘুম থেকে উঠে গেলো খুব সকালে, আমি অফিস যাবার আগেই। ব্যাস্ত হয়ে অফিস যাওয়ার পথে ডাইনিং স্পেসে দেখা হলো রায়ীদের সাথে। ওর সাথে অবধারিত ভাবেই প্যারামবুলেটর। আর সেটার মাঝখানে বসে খেলছে অরোরা। দুজনেই সমান আনন্দিত। আমি ব্যস্ত হয়ে বেরিয়ে যাওয়ার ঠিক আগেই রায়ীদ আমাকে প্রশ্ন করলো "বাবা, অরোরার জন্য প্যারামবুলেটর কেনা হয়েছে কেনো ?
আমি হেসে উত্তর দিলাম " অরোরাতো ওর মামনীকে খুব জ্বালাতন করে, সারাক্ষন কোলে থাকতে চাই, তাই এটা কেনা হয়েছে, ও এটাতে বসে খেলবে আর ওর মামনি কাজ করতে পারবে"
রায়ীদ কি বুঝলো তা বোঝার আগেই আমি তাড়াহুড়ো অফিস চলে গেলাম।
রাতে অফিস থেকে বাড়ী ফিরে আবার রায়ীদকে দেখলাম প্যারামবুলেটরের সাথে। এবার ও নিজেই বসা সেটার মাঝখানে। আমি আলতো করে ওর গাল টিপে দিয়ে জানতে চাইলাম "বাবা, তুমি কেন প্যারামবুলেটরে বসে আছো?"
রায়ীদ স্মাটলি উত্তর দিল " আমিতো মামনীকে অনেক জ্বালাতন করি, এজন্যইএটাতে বসে আছি। দেখছোনা মামনী কাজ করছে"
প্রিয় সন্তানের এরকম বুদ্ধিদিপ্ত উত্তরে আমি প্রানখুলে হাসলাম কিছুক্ষন। কিন্তু সে হাসির খুব গভিরে কোথাও একটু দুঃখ লুকানো ছিলো তা বুঝেছিলাম পরে।
আমরা যারা খুব সাধারন, সমাজটাকে বদলে দিতে সামান্যতম অবদান রাখতে পারিনা, শুধুই স্বপ্ন দেখি-তাদের মাথাই খড়কুটো ধরে ভেসে থাকার মতো মাঝে মাঝে হাস্যকর কিছু ভাবনা আসে। আমারও-------
আমার সাড়ে তিন বছরের ছোট্ট ছেলেটি জানে সে তার মাকে জ্বালাতন করে। অথচ আমাদের ভন্ড রাজনীতিবীদ, চাপাবাজ মন্ত্রী, চাটুকার বুদ্ধিজীবি, ঘুষখোর পুলিশ, সরকারি কর্মচারী, টেন্ডারবাজ ছাত্রনেতা, দুর্নীতিবাজ ব্যাবসায়ী, মাস্তান, ছিনতাইকারি এরা কেনো বোঝেনা যে প্রতিনিয়ত তারা আমাদের দারুন ভাবে জ্বালাচ্ছে। পৃথিবীর কোথাও কি এমন কোনো বড়সড় প্যারামবুলেটর নাই যাতে বসিয়ে ওদেরকে শান্ত রাখা যায়? শহর থেকে ঠেলে ফেলা যায় দুরে। যেন দেশটা এগিয়ে যেতে পারে বাধাহীন।
খুব ইচ্ছাকরে আমাদের সন্তানদের জন্য নিরাপদ আর বাসযোগ্য বাংলাদেশ রেখে যেতে।
(দ্রষ্টব্য : এই পোস্টে আমার ছেলে রায়ীদের ছয়মাস বয়োসের ছবি ব্যাবহার করা হয়েছে)
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:০৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





