somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালো থাকিস, খুব ভালো (২য় ও শেষ পর্ব)

২২ শে মার্চ, ২০১১ রাত ১০:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১ম পর্ব

সে তোকে ডাকত 'অনি' বলে; আর তাই অন্য কেউ তোকে এই নামে ডাকুক তুই চাইতিস না- হায় রে অবুঝ ভালবাসা! আমি কিন্তু তোকে তোর পুরো নামটা 'অনিন্দিতা' বলেই ডাকি সব সময়; কারণ তুই সত্যিই 'অনিন্দিতা', তুই 'নন্দিতা'। আমি তোর প্রেমিক ছিলাম না; তোকে জান্টুশ, ফান্টুশ, লি'ল বার্ড, লি'ল এঞ্জেল এর কোনটাতেই ডাকতে রাজী নই আমি- তোর যে কোন নিন্দা করা যায় না, শুধু তোকে ভালবাসা যায়।

'ভাই, দেইখ্যা চলেন না রাস্তা! মরবেন তো!'- রিক্সাওয়ালাটা একদম গায়ের উপরেই উঠিয়ে দিল রিক্সা, ব্যাটারা কোথাও যাবে না কিন্তু চালাতে গেলে আর হুশ থাকে না, ভুলেই যায় তার ইঞ্জিন নেই- পাল্লা দিতে চায় বাস আর গাড়ীগুলোর সাথে। অবশ্য রিক্সাওয়ালারই বা কী দোষ! তোর কথা ভাবতে গেলে আমিই তো স্থান-কাল ভুলে যাই! মনে পড়ে তোর? টি এস সি তে ডাসের পেছনে বসে আমার আর তোর সেই নিরর্থক কথামালা, কখন যে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নামত, গাড়ীগুলোর হেডলাইটের আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে যেত অথচ আমাদের কথা ফুরোত না! কী নিয়ে গল্প করতাম রে আমরা অত? আমার তো মনেই পড়ছে না, তোর মনে আছে?

হা হা হা! কী ছেলেমানুষই না ছিলাম আমরা! একটুতেই কী ভীষণ মান-অভিমানের খেলা! বাসে দুজন দুদিকে মুখ করে থাকা সারাটা সময়, অথচ আমাদের গন্তব্যস্থল একই আর ভাবতামও হয় তো একই কথা! নাহ! কী বোকা আমি! আমি ভাবতাম তোকে নিয়ে আর তুই নিশ্চয়ই আবীরের কথাই ভাবতিস! তুই কখনোই চাইতিস না তৃতীয় কাউকে না নিয়ে আমরা কোথাও যাই, ভয় পেতিস নিশ্চয়ই রাগারাগি করে আমরা আবার মুখ দেখাদেখি আর কথা বলাবলি বন্ধ করে জার্নিটাই খারাপ করব! আচ্ছা, আবীর কেমন ছিল? রাগ করত না তোর সাথে? আমার মতো খারাপ ব্যবহার নিশ্চয়ই করত না!

কী বোকা তুই! প্রায়ই কেন যে বলতিস, তোকে দেখতে ভালো নয় বলেই সেই গর্দভটা তোকে ছেড়ে গিয়েছে! কতোবার যে আমি তোকে বলতে চেয়েছি- 'তুই সুন্দরের কী বুঝিস!' পহেলা বৈশাখে লাল-সাদা শাড়ীতে, কোকঁড়া চুলে গোঁজা রজনীগন্ধা আর কপালে সেই গোল লাল টিপ, আমার বুকের ভেতরটায় বড্ড চিনচিনে একটা ব্যাথা হতো রে! করুণা হতো সেই গাধাটার উপর, কীভাবে পারে সে তোকে ছেড়ে যেতে! আর যেবার তুই সময়ের অভাবে শাড়ী পরতে পারলি না, আর আমায় অভিশম্পাত করলি! আমি তোকে দিয়েছিলাম এক গাদা গোলাপ, শাহবাগের সেই ফুলবাজার থেকে কয়েকশ একসাথে কিনে! ওগুলোকে জাত করে ফুলদানীতে পাচার করলি আর কত রাগ আমার উপর! আমিই বোকা, তোর উপরের রাগটুকু চোখে পড়ল আড়ালের আনন্দটুকু না! ইশ, পারিস কীভাবে তোরা এত লুকোতে!

শোন, সেদিন কী হলো! রিক্সাওয়ালা বলে কি, 'ভাইজান আপ্নে কি পাগল? ইমুন কইরা হাসতেছেন কেন?' তোকে ভেবে ভেবে এখন আমার পাগলই হওয়ার অবস্থা! অথচ তখন যে কেন.....। জানিস, আমার সামনের সীটে একজোড়া কপোত-কপোতী বসেছে, সেই বাসে ওঠার পর থেকে মান-অভিমান চলছে, এখন ছেলেটি উদাস মুখে বাসের ভিতরটা দেখছে, আর মেয়েটা অশ্রুভরা চোখে বাইরে তাকিয়ে আছে! কোথা থেকে এত চোখের জল পাস তোরা, বল তো! ঘন কোকড়া চুল মেয়েটার, একদম তোর মতন!

জানিস, সেদিন ইচ্ছে করে আমি তোর দেরী করিয়ে দিয়েছিলাম যেন তুই শাড়ী না পরিস; একটু সাজলেই সবাই তোর দিকে তাকায়, তোর প্রশংসা করে, আমি তোর প্রেমিক নই তবুও আমার ভালো লাগে না। সাধারণের মাঝে প্রতিটা দিন তুই আমার কাছে অনন্যসাধারণ হয়ে থাকতিস! আমি তোর যোগ্য নই রে একদমই! তোর সরলতা, নিষ্পাপ হাসি, উচ্ছলতা সবকিছু বড্ড বেশী ছোট করে দিত আমার কলুষিত মনকে তোর কাছে। তোর জন্যে নিশ্চয়ই কেউ কোথাও আছে, আমার চেয়ে অনেক ভালো আর অবশ্যই ওই আবীর কুত্তাটার চেয়েও। যে তোকে অনেক ভালবাসবে, অনেক অনেক। তোর সারল্য মাখা হাসি কখনো ম্লান হতে দেবে না। তুই অভিমান করলে আমার মতো পালটা রাগ করবে না, তুই যে বড্ড ছেলেমানুষ! তোর সাথে কি রাগ করে থাকা যায়! সে তোর সকল দোষ নিজের মাঝে নিয়ে নীলকন্ঠ হবে!

আমি প্রায়ই কল্পনা করি, লম্বা ঢ্যাঙ্গা একটা ছেলে ছোট্ট মতো তোর পায়ের কাছে হাঁটু ভেঙ্গে তোর মান ভাঙ্গাচ্ছে; খুব সুইট লাগে রে আমার! তোর মন খারাপের সময়ে তোকে সে কখনোই একা ছেড়ে যাবে না আমার মতোন। তুই অভিমান করে ফিরিয়ে দিলেও বার বার সে তোদের নতুন বাসার বারান্দার নীচে এসে ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে, তুই যে ফুল বড্ড ভালবাসিস! আমার মতো তোকে কষ্ট দেওয়ার জন্যে ইচ্ছে করে ছুঁড়ে ফেলে দেবে না কয়েকশ ফুলের ফুলদানী। তুই যে বড্ড বেশী অভিমানী, আমি পারি নি সেই অভিমানের পেছনের ভালবাসাটা বুঝতে; কেউ একজন নিশ্চয়ই পারবে! আমার মতো সে তোকে কাঁদাবে না! হা হা, হয় তো হেঁড়ে গলায় গান শুরু করবে, তখন যে তুই আর কিছুতেই মুখ গোমড়া করে থাকতে পারবি না! তোর মুখের একটুখানি হাসির জন্যে সে হাজারবার নিজেকে বিকিয়ে দেবে!

আবীর চলে যাওয়ার পর যে দরজাটাকে কঠিনভাবে তালাবদ্ধ করেছিস, শুধু তুই তোর সেই মনের দরজাটা একটু্খানি খোলা রাখিস, তাকে সূর্যের একটুখানি আলো হয়ে ঢুকতে দিস সেই ফাঁকা দিয়ে; সে তোকে আলো ঝলমলে সুন্দর এক আকাশ উপহার দিবে!

আর .......
আমার মন খারাপের পরেও
আমি ভাবছি তোর-ই কথা
আমার একশ দিবস যাবে
তোর ভাবনা নিয়ে একা...

আমার একশ দিবস যাবে
তোর ভাবনা নিয়ে একা ।









আমার মন খারাপের পরেও
আমি থাকবো তোকে নিয়ে ’...


(সমাপ্ত)

(শেষের চরণগুলো ব্লগার নস্টালজিকের আমার মন খারাপের পরেও ... থেকে ব্যবহার করা, অনুমতি নিই নি; তার 'পরী' গানটার মতোই সবার গান এই ভেবে ব্যবহার করা।)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০১১ রাত ১০:৩২
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×