১ম পর্ব
সে তোকে ডাকত 'অনি' বলে; আর তাই অন্য কেউ তোকে এই নামে ডাকুক তুই চাইতিস না- হায় রে অবুঝ ভালবাসা! আমি কিন্তু তোকে তোর পুরো নামটা 'অনিন্দিতা' বলেই ডাকি সব সময়; কারণ তুই সত্যিই 'অনিন্দিতা', তুই 'নন্দিতা'। আমি তোর প্রেমিক ছিলাম না; তোকে জান্টুশ, ফান্টুশ, লি'ল বার্ড, লি'ল এঞ্জেল এর কোনটাতেই ডাকতে রাজী নই আমি- তোর যে কোন নিন্দা করা যায় না, শুধু তোকে ভালবাসা যায়।
'ভাই, দেইখ্যা চলেন না রাস্তা! মরবেন তো!'- রিক্সাওয়ালাটা একদম গায়ের উপরেই উঠিয়ে দিল রিক্সা, ব্যাটারা কোথাও যাবে না কিন্তু চালাতে গেলে আর হুশ থাকে না, ভুলেই যায় তার ইঞ্জিন নেই- পাল্লা দিতে চায় বাস আর গাড়ীগুলোর সাথে। অবশ্য রিক্সাওয়ালারই বা কী দোষ! তোর কথা ভাবতে গেলে আমিই তো স্থান-কাল ভুলে যাই! মনে পড়ে তোর? টি এস সি তে ডাসের পেছনে বসে আমার আর তোর সেই নিরর্থক কথামালা, কখন যে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নামত, গাড়ীগুলোর হেডলাইটের আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে যেত অথচ আমাদের কথা ফুরোত না! কী নিয়ে গল্প করতাম রে আমরা অত? আমার তো মনেই পড়ছে না, তোর মনে আছে?
হা হা হা! কী ছেলেমানুষই না ছিলাম আমরা! একটুতেই কী ভীষণ মান-অভিমানের খেলা! বাসে দুজন দুদিকে মুখ করে থাকা সারাটা সময়, অথচ আমাদের গন্তব্যস্থল একই আর ভাবতামও হয় তো একই কথা! নাহ! কী বোকা আমি! আমি ভাবতাম তোকে নিয়ে আর তুই নিশ্চয়ই আবীরের কথাই ভাবতিস! তুই কখনোই চাইতিস না তৃতীয় কাউকে না নিয়ে আমরা কোথাও যাই, ভয় পেতিস নিশ্চয়ই রাগারাগি করে আমরা আবার মুখ দেখাদেখি আর কথা বলাবলি বন্ধ করে জার্নিটাই খারাপ করব! আচ্ছা, আবীর কেমন ছিল? রাগ করত না তোর সাথে? আমার মতো খারাপ ব্যবহার নিশ্চয়ই করত না!
কী বোকা তুই! প্রায়ই কেন যে বলতিস, তোকে দেখতে ভালো নয় বলেই সেই গর্দভটা তোকে ছেড়ে গিয়েছে! কতোবার যে আমি তোকে বলতে চেয়েছি- 'তুই সুন্দরের কী বুঝিস!' পহেলা বৈশাখে লাল-সাদা শাড়ীতে, কোকঁড়া চুলে গোঁজা রজনীগন্ধা আর কপালে সেই গোল লাল টিপ, আমার বুকের ভেতরটায় বড্ড চিনচিনে একটা ব্যাথা হতো রে! করুণা হতো সেই গাধাটার উপর, কীভাবে পারে সে তোকে ছেড়ে যেতে! আর যেবার তুই সময়ের অভাবে শাড়ী পরতে পারলি না, আর আমায় অভিশম্পাত করলি! আমি তোকে দিয়েছিলাম এক গাদা গোলাপ, শাহবাগের সেই ফুলবাজার থেকে কয়েকশ একসাথে কিনে! ওগুলোকে জাত করে ফুলদানীতে পাচার করলি আর কত রাগ আমার উপর! আমিই বোকা, তোর উপরের রাগটুকু চোখে পড়ল আড়ালের আনন্দটুকু না! ইশ, পারিস কীভাবে তোরা এত লুকোতে!
শোন, সেদিন কী হলো! রিক্সাওয়ালা বলে কি, 'ভাইজান আপ্নে কি পাগল? ইমুন কইরা হাসতেছেন কেন?' তোকে ভেবে ভেবে এখন আমার পাগলই হওয়ার অবস্থা! অথচ তখন যে কেন.....। জানিস, আমার সামনের সীটে একজোড়া কপোত-কপোতী বসেছে, সেই বাসে ওঠার পর থেকে মান-অভিমান চলছে, এখন ছেলেটি উদাস মুখে বাসের ভিতরটা দেখছে, আর মেয়েটা অশ্রুভরা চোখে বাইরে তাকিয়ে আছে! কোথা থেকে এত চোখের জল পাস তোরা, বল তো! ঘন কোকড়া চুল মেয়েটার, একদম তোর মতন!
জানিস, সেদিন ইচ্ছে করে আমি তোর দেরী করিয়ে দিয়েছিলাম যেন তুই শাড়ী না পরিস; একটু সাজলেই সবাই তোর দিকে তাকায়, তোর প্রশংসা করে, আমি তোর প্রেমিক নই তবুও আমার ভালো লাগে না। সাধারণের মাঝে প্রতিটা দিন তুই আমার কাছে অনন্যসাধারণ হয়ে থাকতিস! আমি তোর যোগ্য নই রে একদমই! তোর সরলতা, নিষ্পাপ হাসি, উচ্ছলতা সবকিছু বড্ড বেশী ছোট করে দিত আমার কলুষিত মনকে তোর কাছে। তোর জন্যে নিশ্চয়ই কেউ কোথাও আছে, আমার চেয়ে অনেক ভালো আর অবশ্যই ওই আবীর কুত্তাটার চেয়েও। যে তোকে অনেক ভালবাসবে, অনেক অনেক। তোর সারল্য মাখা হাসি কখনো ম্লান হতে দেবে না। তুই অভিমান করলে আমার মতো পালটা রাগ করবে না, তুই যে বড্ড ছেলেমানুষ! তোর সাথে কি রাগ করে থাকা যায়! সে তোর সকল দোষ নিজের মাঝে নিয়ে নীলকন্ঠ হবে!
আমি প্রায়ই কল্পনা করি, লম্বা ঢ্যাঙ্গা একটা ছেলে ছোট্ট মতো তোর পায়ের কাছে হাঁটু ভেঙ্গে তোর মান ভাঙ্গাচ্ছে; খুব সুইট লাগে রে আমার! তোর মন খারাপের সময়ে তোকে সে কখনোই একা ছেড়ে যাবে না আমার মতোন। তুই অভিমান করে ফিরিয়ে দিলেও বার বার সে তোদের নতুন বাসার বারান্দার নীচে এসে ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে, তুই যে ফুল বড্ড ভালবাসিস! আমার মতো তোকে কষ্ট দেওয়ার জন্যে ইচ্ছে করে ছুঁড়ে ফেলে দেবে না কয়েকশ ফুলের ফুলদানী। তুই যে বড্ড বেশী অভিমানী, আমি পারি নি সেই অভিমানের পেছনের ভালবাসাটা বুঝতে; কেউ একজন নিশ্চয়ই পারবে! আমার মতো সে তোকে কাঁদাবে না! হা হা, হয় তো হেঁড়ে গলায় গান শুরু করবে, তখন যে তুই আর কিছুতেই মুখ গোমড়া করে থাকতে পারবি না! তোর মুখের একটুখানি হাসির জন্যে সে হাজারবার নিজেকে বিকিয়ে দেবে!
আবীর চলে যাওয়ার পর যে দরজাটাকে কঠিনভাবে তালাবদ্ধ করেছিস, শুধু তুই তোর সেই মনের দরজাটা একটু্খানি খোলা রাখিস, তাকে সূর্যের একটুখানি আলো হয়ে ঢুকতে দিস সেই ফাঁকা দিয়ে; সে তোকে আলো ঝলমলে সুন্দর এক আকাশ উপহার দিবে!
আর .......
আমার মন খারাপের পরেও
আমি ভাবছি তোর-ই কথা
আমার একশ দিবস যাবে
তোর ভাবনা নিয়ে একা...
আমার একশ দিবস যাবে
তোর ভাবনা নিয়ে একা ।
আমার মন খারাপের পরেও
আমি থাকবো তোকে নিয়ে ’...
(সমাপ্ত)
(শেষের চরণগুলো ব্লগার নস্টালজিকের আমার মন খারাপের পরেও ... থেকে ব্যবহার করা, অনুমতি নিই নি; তার 'পরী' গানটার মতোই সবার গান এই ভেবে ব্যবহার করা।)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০১১ রাত ১০:৩২