সত্যিই কি আমায় তুমি ভালোবেসেছিলে? একটুকুর জন্যে, একটিবারের জন্যেও? প্রথম যেবার আমাদের দেখা হলো, বাসে উঠার আগমুহূর্তে যখন হাতখানি বাড়িয়ে দিয়েছিলে আমার হাত ধরার জন্যে তখনো কি তোমার মনে ভালোবাসা ছিল না? এও কি সম্ভব! চৈতী কে তুমি চেন না? ওর অনেক গল্প করেছি তোমায়, আমার এক্কেবারে বাচ্চাকালের বন্ধু যার সাথে আমি লম্বা লম্বা চিঠি বিনিময় করতাম শুনে তোমার সে কি জ্বলুনি! হা হা হা, আমি তখন হেসেই মরে যেতাম আর তোমার রাগ আরো বেড়ে যেত, ফুঁসে উঠতে তুমি! কী ছেলেমানুষি কান্ড রে, বাবা!
চৈতী বলে, ছেলেদের মনে না কি কখনো ভালোবাসা থাকে না, থাকে কেবল আকর্ষণ, আর একবার আকৃষ্ট হয় যার প্রতি তার মনোযোগ পেয়ে গেলে সেই আকর্ষণ কর্পূরের মতো উবে যায়! সত্যিই কি তাই?চৈতীটা বড্ড ছেলেবিদ্বেষী, আমি ওর কথা বিশ্বাস করতাম না।কিন্তু নইলে যে আমার সাথে একবেলা কথা না হলে তুমি অস্থির হয়ে যেতে, ফোন করে করে মাথা পাগল করে ফেলতে সেই তুমি কেমন করে পারছ আমাকে ভুলে থাকতে!-------
ভালোবাসা ব্যাপারটা বড্ড অদ্ভুত, নইলে আমার মতো মারকুটে, প্রেম-বিয়ের ঘোর বিরোধী তেজী মেয়েটা এমন কী করে হয়ে গেল! চৈতী প্রায়ই বলে আমি না কি ব্যক্তিত্বহীন হয়ে গেছি, আমাকে ওর করুণা হয়! এ কী সর্বনাশ করেছ তুমি আমার! ছোটবেলা থেকে আমি স্বপ্নের যে পথ ধরে হেঁটেছি, তুমি এলে সে রাস্তা নিজের অজান্তে কখন বদলে গেল! আর তুমি আমাকে সেই স্বপ্নের মাঝপথে একা ফেলে রেখে চলে গেলে, স্বপ্নের সেই পথে যে একা হাঁটা যায় না, সূর্য!
হ্যাঁ, আমি তোমাকে ভেবেছিলাম আমার সূর্য; বালিকা বয়েসে সুনীলের একা এবং কয়েকজন এর সেই চরিত্রকে আমি ভয়ানক ভালোবেসে ফেলেছিলাম। আজ তুমি অন্য কারো আকাশে জ্বলছ, কী অদ্ভুত, তাই না! তোমার আমাকে 'অনি' নামে ডাকা (যে নাম ধরে আমি আর কাউকে কখনো আমায় ডাকতে দেই না), আমার ছোট্ট ছোট্ট দুষ্টুমিতে তোমার হুট হাট রেগে যাওয়া (কী যে সুইট লাগত তখন!), তুমি আমায় ভালোবাস তা বুঝেও না বোঝার ভান করলে তোমার গাল ফুলিয়ে অভিমান করা (আসলেই বাসতে ভালো?)- স-বকিছু আমায় বড্ড পীড়া দেয়, আমি কিচ্ছু মেলাতে পারি না, কিচ্ছু না!
অনেক কিছুই বুঝতে আমি বড় দেরী করে ফেলি, তোমায় যে ভালোবাসি তা বুঝতেও অনেক সময় লেগেছিল আমার! আর তারপর কখন যে পাশার দান উলটে গেল! আর পাঁচজন বন্ধুর মাঝে থেকেও হাসিবের চোখে যে অন্য আলো খেলছিল তা বুঝতেও দেরী করে ফেলেছিলাম, আমার চোখে কেবল তখন তুমি আর তুমি আর স্বপ্নভঙ্গের অনেক অনেক জ্বালা! বুঝতে পারি নি হৃদয়ের প্রান্তরে যে খরা-র জন্ম দিয়েছিলে তুমি, হাসিব তা পুনরায় সবুজ করতে চেয়েছিল। না না, ধর্মের বাধা বা পারিবারিক আপত্তি নয়; হাসিবকে প্রবঞ্চিত করতে চাই নি বলেই, নিজের সাথে প্রতারণা করতে পারি নি বলেই আমি ওর কাছ থেকে দূরে চলে এসেছি, অনেক অনে-ক দূরে!
তুমি আর আমার সেই সূর্য নেই যার হাসিমাখা মুখের জন্যে আমি জীবন বাজি রাখতে পারতাম! আমি ঘৃনা করি তোমাকে, প্রচ্চন্ড ঘৃনা- আমার আমিকে এমন ভেঙ্গে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেওয়ার জন্যে, উজ্জ্বল-উচ্ছল আমাকে সারাজীবনের জন্যে অন্ধকূপে বন্দী করে দেওয়ার জন্যে আমি ঘৃনা করি তোমাকে। কিন্তু তারপরেও কেন তোমাকেই আমি সবচেয়ে বেশী ভালোবাসি? কেন? কেন?
পরিশিষ্টঃ এই লেখাটিকে 'ভালো থাকিস, খুব ভালো' এর শেষ পর্বের পরের পর্ব ভাবা যেতে পারে!
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০১১ রাত ৮:৩০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




