'মরিলে কান্দিস না আমার দায়...!
হুমায়ূন আহমেদ মরিলে বাংলার সাহিত্য প্রেমিকরা কাদবে না তা কি হয়? যে লেখকের লেখায় বাঙালীরা নতুন করে সাহিত্যের প্রেমে পড়েছে তাকে কি ভোলা যায়?
হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন আমাদের মত মধ্যবিত্তদের লেখক। আমাদের মধ্যবিত্তদের জীবনের সুখ-দুঃখ-হাসি-কান্না তার লেখনীর ভাষায় জীবন পেয়েছে। সাধারন মানুষদের জীবনবোধ গল্পে, নাটকে, সিনেমায় তুলে এনে ১৯৯০ পরবর্তী প্রজন্ম কে এক নতুন ধারায়-নতুন জীবনে নিয়ে এসেছে।
হুমায়ূন আহমেদ আমাদের জীবনে কত বড় প্রভাব বিস্তার করে রেখেছিলেন তার উৎকৃষ্ট উদাহরন হচ্ছে ৯০ দশকে প্রচারিত বাকের ভাই নাটক৷ তখনকার সমাজ, বাস্তবতা, ভালোবাসা, কি তুলে ধরেন নি? বাকের ভাইয়ের ফাসি আটকানোর জন্য মানুষ মানব বন্ধন করেছে। এমনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত হুমায়ূন আহমেদ কে রিকুয়েস্ট করেছিলেন বাকের ভাইয়ের যেন ফাসি না হয়।
ইদ-কুরবানী কিংবা উৎসবে হুমায়ুন আহমেদের নাটক না হলে চলত না, উনার নাটক থাকত জনপ্রিয়তার শীর্ষে।
প্রত্যেকটা বই মেলায় উনার লিখা বই বেস্ট সেলার খেতাম পেতেন। হুমায়ুন আহমেদের বই নামে নতুন এক প্রকার উন্মাদনা।
হুমায়ুন আহমেদের লেখকীয় জীবন কে যদি দুই পর্যায়ে বিভক্ত করি তাহলে দেখতে পাই, উনার লেখা আগের সাহিত্যের সাথে পরে লিখা সাহিত্য গুলোতে একটু ভিন্নতা রয়েছে৷ সেই শঙখনীল কারাগার কিংবা নন্দিত নরকে এর মত লিখনী আর পরবর্তী তে পাই নি। ঐ প্যাটার্নে লিখা আর লিখেন নি, জনপ্রিয়তার পিছনে ছুটেছেন....! কারন, উনি বুজে গেছিলেন আমরা হয়ত এই টাইপ লিখা ই পছন্দ করি।
হুমায়ুন পড়ার অভ্যাস সেই ছোট বেলা হতে গড়ে উঠেছে। একে একে প্রায় সব বই শেষ করেছি। হিমু সমগ্র হতে মিসির আলী সমগ্র, জোছনা ও জননীর গল্প, চাদের আলোয় কয়েক জন যুবক, দেবী, কৃষ্ণপক্ষ, সম্রাট, বাদশা লামদার, রুপা, আজ চিত্রার বিয়ে, জলকন্যা, একজন মায়াবতী আরো ৮-১০ টা বই!!!
অনেকে হুমায়ুন আহমেদ কে বাজারী লেখক বলেন!! যাতে আমাদের কিছু যায় আসে না। আমাদের ছোটবেলাকে মধুময় করে তুলতে একজন হুমায়ুন আহমেদ কে কোনো দিন ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। ছোট বেলায় হিমু হওয়ার ইচ্ছে জাগত বা মিসির আলী, ইচ্ছে হত যদি হতে পারতাম হুমায়ুন আহমেদের কোনো গল্পের নায়ক!!!
এই নায়ক বা গল্পের জাদু সৃষ্টির মহামানব এর আজ প্রয়াণ দিবস! বাংলা সাহিত্য আছে যত দিন, একজন গল্পের জাদুকর হুমায়ুন আহমেদ থাকবেন ততদিন।