somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘোরের পথে, দুঃস্বপ্নের দেশে (ছোট গল্প)

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শেষ ঘুমিয়েছিলাম শুক্রবার সকালে...
৯ টার দিকে।

আজকে কি বার জানি না। দিন তারিখ কিছুই মনে থাকে না। সোম কি মঙ্গলবার হবে। আগে ৪/৫ দিন না ঘুমিয়ে দিব্যি কাটিয়ে দেয়া যেত। এখন আর পারি না। এখন ২/৩ না ঘুমালে শরীরটা ভেঙ্গে আসতে চায়। চোখ গুলি বুজে আসে। বার বার বড় বড় করে হাই তুলি। চোখ দিয়ে পানি আসতে থাকে। চা কফি কিছুতেই আর শরীরটা মানতে চায় না। বড় ক্লান্ত হয়ে পড়েছে সে।

এভাবে আর কতদিন! নির্ঘুম রাত কাটানো, চুপচাপ বসে থাকা, মাঝে মাঝে রাস্তায় বেরিয়ে চায়ের দোকান খোঁজা। গভীর রাত এর প্রকৃতিটা কি কখনও দেখেছো? হয়তো, বারান্দাতে দাড়িয়ে, যখন তোমারও মাঝে মাঝে নির্ঘুম রাতগুলি কাটে। পুরনো ল্যাম্পপোস্টের হলদে সোডিয়াম আলোয় আলকিত রাস্তা। দু একটা কুকুর ছুটে যায়। কখনও বাঁশিতে কর্কশ আওয়াজ তুলে পাহারাদার চলে যায়। এদিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থাকে এত রাতে এভাবে উদ্ভট বেশে হেটে যাওয়া আমার দিকে।

সেদিকে খেয়াল নেই, আমি আপন মনেই হাঁটতাম। দুপাশের দালানগুলি ভুতুড়ে ছায়া পুরো পরিবেশটাকে একটু অন্যরকম একটা রুপ দিয়েছিল। তাও ব্যাপারটা একটু একঘেয়ে, শহর তো... গ্রামের পথ হলে হয়তো ব্যাপারটা একঘেয়ে হতো না। কখনও দেখা যেত একপাশে কয়েকটা খুপড়ি ঘর আর অন্য পাশে সুপারির বাগান। কখনও বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত। ধূসর আকাশে কখনও পূর্ণিমা, কখনও ফালি করে কাটা চাঁদ। সেই চাঁদ আর আর তার সঙ্গী তাঁরাগুলির আলোয় চারপাশ ক্যামন যেন ভুতুড়ে। মাঝে মাঝে মর্মর শব্দে কাঁটা দিয়ে উঠবে গায়ে। কিন্তু আশেপাশে তাকিয়ে দেখবো কথাও কেউ নেই। বিবেকের একটা অংশ বলবে ঢের হয়েছে, এবার আস্তানায় ফিরে চলো। অন্য আরকটা অংশ বলবে, কাপুরুষের মত ফিরে যাবে! দেখছো না জোছনায় প্রকৃতির কি রুপ! এতো ভীতু হলে কবে থেকে? তখন কখনও হেঁটে যাওয়া, আবার কখনও নিজের আস্তানায় ফিরে যাওয়া।

শহরে অবশ্য এরকম না। এখানে হাঁটার পথে চোখে পড়ে বিচিত্র সব দৃশ্য। এই মনে করো, রাস্তায় এলিফ্যান্ট রোড এর ফুটপাত ধরে হেঁটে যেতে যেতে দেখবে, উঁচু ঢিবির মত অবয়ব আশে পাশে। চাঁদর, আর পুরনো কম্বলের অবয়বের নিচে আস্রয় নিয়েছে দুটো তিনটে করে মানুষ। এরা কেউ সকালটাতে উচ্ছিষ্ট কুড়িয়ে বেড়ায়, কেউ বা মানুষের কাছে হাত পাতে আবার কেউ আস্তাকুড়-আবর্জনা থেকে এটাওটা যা পা আর কি। জীবন সেখানে অনিশ্চিত কিন্তু আশ্চর্য জনকভাবে দুশ্চিন্তামুক্ত। মাঝে মাঝে খুব অবাক হই মাথার নিচে বালিশ রেখে খাটে শুয়ে কি অস্থিরতা আর দুশ্চিন্তায় না কাটা রাতগুলি। ছটফট করতে থাকি সারাক্ষণ। আর এখানে যেন প্রকৃতি তার সব টুকু শান্তির আশীর্বাদ ঢেলে দিয়েছে।

আবার মাঝে মাঝে যখন ওই অদুরের রেলপথ ধরে হাঁটি, তখন চোখে পড়ে... স্টেশনের আশে পাশে দাঁড়ানো বগিগুলির ভিতরে আশ্রিত জীবনগুলি। মাঝে মাঝে মনে হয় আমিও শুয়ে পড়ি ওদের সাথে, একটু দেখি প্রকৃতি তার কোন জাদুটা ছড়িয়ে দিয়েছে। হয়তো এদের মুখে একদিন অন্ন জুটবে, দুইদিন জুটবে না। আর আমার আশে পাশে থাকবে খাবারের ছড়াছড়ি। কিন্তু ক্ষুধা টা আমার না, তাদের। প্রকৃতির এ ক্যামন খেলা আমার বোধগম্য নয়।


হঠাত থমকে দাঁড়ালাম।
সামনে পুরনো একটা দালান। বেশ পরিচিত। রঙ উঠে গেছে জায়গায় জায়গায়। ভেক্টর যোগের ফলাফলটা শুন্যই হল আর কি, নিজের আস্তানায় ঘুরে ফিরে চলে এলাম। হাঁটার সময়তো মনে হচ্ছিল না যে কথাও কোন বাঁক নিয়েছি।
যাকগে, ওসব চিন্তা থাক। ঘরের ছেলে ঘরেই ফিরে যাই।
শরীরটা বড় ক্লান্ত। সিড়ি ভেঙে উঠতে কেমন জানি লাগছে, একটু থেমে থেকে উঠছি... যেন অনন্তকাল ধরে উঠতে হবে। অবশেষে ক্লান্তির সাথে রীতিমত যুদ্ধ করে ঘরের দরজার সামনে দাঁড়ানো। মাথাটা উঠাতেই দেখি সামনে এক বিশাল পাহাড় দণ্ডায়মান।

এই পাহাড় আর কেউ নন, হাসান সাহেব... স্বয়ং আমার পিতা মহাশয়। পিছে দুশ্চিন্তার ছাপ মুখে দাঁড়ানো মিসেস... মানে আমার মা। ব্যাপারটা আজকাল অনেক স্বাভাবিক হয়ে গেছে। উনারাও দাঁড়িয়ে থাকেন আমিও রাত করে ঘরে ফিরি। আজ বোধহয় রাত টা একটু বেশিই হয়ে গেছে। পিতা মহাশয়ের রক্ত চোক্ষু তো সেটাই বলে। আমি আর তেনাদের দিকে না তাকিয়ে নিজের ঘরে ঢুকে দরজাটা আটকে দিলাম।

ওইদিকে বাহিরে বাবা বলে যাচ্ছে মাকে, “ছেলেকে দিয়ে মাথায় তুলেছো... এত রাতে কেন বাহিরে থাকবে... এই ছেলেকে নিয়ে তাঁর কোন আশা নেই”... এইসব। মা চুপ করে থাকেন। ঘরে অন্যসব মানুষকে সহ্য করতে না পারলেও এই মানুষটার দিকে কেন যেন আমি রেগে তাকাতে পারি না। মাঝে মাঝে চিল্লাচিল্লি করি, কিন্তু সে সময়টাতেও ক্যামন জানি লাগে। জীবনটা পাল্টে গেছে। আগের মত প্রাণ খুলে হাসা হয় না। খেলাধুলা, আড্ডা সব কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। একদিন তুমিও হারিয়ে গেলে। আমিই হারালাম না। কপালপোড়া আমি পড়ে আছি এখানে, একাকি।


ঘরে ঢুকে আলোটা জ্বেলে দিলাম।
নিজের ঘরের কথা বলবো কি বলবো না বুঝতে পারছি না। বাবা বলে গরুঘর। অন্য কেউ এলে এমন ভাবে হা করে তাকিয়ে থাকে...... কি বলবো। একটা আলমারি, তাতে কাপড়চোপড় দলাইমালাই করে রাখা। খাটের চাঁদর টানা। সাধারণত থাকে না, মা বোধহয় ঠিক করে দিয়ে গেছে। খাটের পাশেই টেবিলের উপরে লণ্ডভণ্ড খাতাবই। কোন কালে কেউ গোছানো অবস্থাতে দেখেছিল বলে মনে পড়ে না। আমারই তো মনে নেই। টেবিলে অনেক গুলি কাগজ আর কলম রাখা। পাশে মুঠো করা কাগজ ভর্তি ঝুড়ি। তোমাকে প্রায়ই চিঠি লিখি। কিন্তু পৌছাতে পারি না। সেগুলোর ঠাই হয় ঝুরি গুলোতে। তোমাকে নিয়ে আমার কত যে কবিতা, কিন্তু তোমাকে শোনাতে পারি না।
অযত্নে পড়ে থেকে ঝুড়িতে। কয়কদিন পর পর ঝুড়ি থেকে সেগুলি উধাও হয়ে যায়। জানি, এসব চিঠি আর কবিতা সবই অর্থহীন। তবুও লিখি। আজও লিখবো। মাথার মধ্যে অনেক অনেক চিন্তা। কিন্তু কখনও তোমাকে ঠিক মত প্রকাশ করা হয় নি, ইচ্ছে করেই করিনি।

প্রিয়জনের সাথে রূঢ় আচরণ করতে হয়, আর মধুর আচরণ দুর্জনের সাথে। নিজেকে অপ্রকাশিত রাখার এইটাই উৎকৃষ্ট পন্থা।
দরজা, জানালা বন্ধ করে একটা কয়েল জ্বেলে তারপর চেয়ারটা টেনে বসলাম। তুলে নিলাম কলমটা বাম হাতে। খসখস শব্দ তুলে আনমনে লিখা শুরু হল।

মাথার ডান পাশটা মনে হচ্ছে কেউ যেন চেপে ধরেছে। চোখের পাতা গুলি ভারি হয়ে আসছে। হাল্কা কাঁপুনি তাতে। অসম্ভব জ্বালা করছে। এক ফোঁটা জল কাগজের উপরে পড়লো। নাহ, আর পারছি না। গরম ভাপে শরীরটা জ্বলে যাচ্ছে, সাথে তীব্র কাঁপুনি। ওই যে চলে এসেছেন জ্বর মহাশয়া। বড় ছলনাময়ী সে। মৎস্যকন্যারা শুনেছিলাম নাবিকদের নিজেদের রূপ আর সুরেলা কণ্ঠে গাওয়া গান দিয়ে নিয়ে যায় পানির অতলে, এরপর সর্বনাশ করে ছাড়ে তাদের।

জ্বর মহাশয়াও আমার কাছে ঠিক এরকম একটা চরিত্র। সাদা শিফনের শাড়ি পড়ে, দুষ্টু এক চিলতে হাসি নিয়ে আর আবির্ভাব। মনটা ভুলিয়ে দেয় শরীরে প্রথমে একটু আলতো উষ্ণতা ছড়িয়ে দিয়ে। গা এলিয়ে দিই তখন। এরপর দেখা যায় তার হিংস্র রূপ। মিষ্টি সে চেহারার ভিতর থেকে বেরিয়ে আসে হিংস্র শ্বাপদময় গ্রাস।
আর পারা যাচ্ছে না। চেয়ার ছেড়ে ধপ করে পড়লাম বিছানাতে। সুনসান নিরবতা যেন বদ্ধ ঘরটাকে গ্রাস করেছে। একে তো জ্বরর উত্তাপ, অন্যদিকে কয়েলের ধোঁয়া......সব মিলিয়ে ভয়াবহ অবস্থা। পলকহীন তাকিয়ে আছি ঘরের ছাতের দিকে... উপরের অংশটাই শুধু ঝকঝকে, আর দেয়াল গুলি ক্যামন যেন পুরনো হয়ে গেছে। চোখ বন্ধ করতে গেলেই কেঁপে উঠে, অনেক জ্বালা আর সারা শরীরে কাঁপুনি।

সবকিছু ক্যামন যেন ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে। চোখের সামনে ছাতটা ঘুরতে শুরু করেছে। চোখ বন্ধ করতে চাচ্ছি। কিন্তু চোখটা মনে হলো অসাড় হয়ে গেছে। চোখের সামনে বিচিত্র সব জিনিষ ভেসে উঠছে।
ঘোরের মধ্যে চলে যাচ্ছি আমি। মায়ার সে ঘোর।


নিজেকে আবিষ্কার করলাম শহীদুল্লাহ হলের পুকুরের সামনে, ভাঙা ঘাটটাতে। বা হাতে বুট ভর্তি ছোট্ট একটা ঠোঙ্গা। সেখান থেকে কয়েকটা করে বুট তুলে নিয়ে মুখে ছুড়ে দিচ্ছি। ঝোপঝাড়ে পূর্ণ, ভাঙা শীর্ণ একটা ঘাট। পাশে আর পুকুরের ওপাড়েতে ভালো দুটি ঘাট আছে। কিন্তু ওখানে বসা হয় না। এই ঘাটে মানুষ তেমন বসে না, তাই আমি বসে থাকি আর কি। পেছন থেকে “মামা” বলে কেউ একজন ডাক দিল। দেখার জন্যে ঘাড় ঘুরিয়ে নিলাম।
মাঝ বয়সী একলোক, হাতে চা সিগারেটের সরঞ্জাম।
ঘাড় ঘুরাতেই বলল, “চলে মামা! চা-সিগারেট কিছু ?”
আমি বললাম, “না মামা, থাক”

লোকটি চলে গেল। আজকে তোমার সাথে দেখা করার কথা। তাই সিগারেট মুখে দিতে চাচ্ছি না। সিগারেট টানার পর মিন্ট ক্যান্ডি খেলে যে বিকট গন্ধের অবতারণা হয়, টা আমি টের না পেলেও আমার আশেপাশের মানুষ গুলি ঠিকই টের পাবে।
সিগারেট যে খুব টানা হয় তাও না। এইতো, দিনে দুই কি তিনটা। ব্যাটারা সিগারেটের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
বেনসন রেগুলার আর লাইট ছিল আট টাকা আর এখন নয় টাকা।
গোল্ডলিফ ছিল চার আর এখন পাঁচ।
মার্লবোরো ছিল আট এখন নয়।
সুইচ ছিল নয় আর এখন দশ।
গুদাম ছিল আঠারো আর এখন বিশ।
ব্ল্যাক পনেরো ছিল, এখন কত হয়েছে জানি না। অনেক দিন টানা হয় না।

হঠাত ডান পকেটে রাখা মোবাইল ভাইব্রেট করে উঠলো। বুট রেখে মোবাইলটা বের করে স্ক্রীনের দিকে তাকালাম।
স্ক্রীনে একটা নাম ভেসে উঠল, মেধা। যা ভেবেছিলাম, তোমার ফোন। আগে আরও সাতটা কল এসেছিল। ইচ্ছে করেই ধরিনি, বুট চিবুচ্চিলাম। হিহিহি...
এই কলটা ধরলাম। অপাশ থেকে রিনরিনে কণ্ঠস্বর ভেসে এল,
“হ্যালো?”
“হুম”
“ফোন ধরছো না কেন?”
“অনেক ব্যস্ত”
“মানে? আজকে না আমাদের দেখা করার কথা! কই তুমি?”
“ভার্সিটিতে, পুকুর পাড়ে”
“ওখানে কি ব্যাস্ত তুমি?”
“এইতো। বুট চিবুচ্ছি”
“ফাইজলামি করো!!”
“জি না, আমি ফাইজলামি করি না।”
“ফালতু কথা রাখ, আমি বেইলী রোড বুমারসে বসে আছি, তুমি এক্ষণই আস।”
এইকথা বলার পর খট করে ফোনটা রেখে দিলো।

বুট সহ ঠোঙ্গাটা রেখে হাটা ধরলাম। দু ভাবে যাওয়া যেতে পারে। শাহবাগ থেকে তরঙ্গ প্লাস ব্যাস ধরে, বাসটা গিরিগিটির মত রঙ পাল্টায়। প্রথম ছিল হাল্কা বেগুনি, এরপর কালো আর এখন সবুজ। নাহ এখন শাহবাগ যেতে গেলে দেরি হয়ে যাবে। এর চেয়ে রিকশা নাওয়া যাক। ত্রিশ টাকা লাগবে, বাসে গেলে ১০/১৫ টাকা লাগতো। তরঙ্গ আবার টিকেট ছাড়া উঠায় না। যাই হোক, আর দেরি করা ঠিক হবে না। একটা রিকশা নিয়ে রওনা হয়ে গেলাম। গন্তব্য, বেইলী রোড বুমারস।


বেইলী রোডের মধ্যে একটা শপিং সেন্টার, বেইলী স্টার।
তারই পাঁচতলায়, লিফট থেকে বের হলেই সোজা বুমারস ক্যাফে। ঢুকে দেখলাম একবারে গ্লাসের সাইডে বসে আছো তুমি। যেকোনখানে গেলেই তোমাকে একেবারে গ্লাসের সাইডেই বসতে দেখি। ছোট বাচ্চারা অথবা গাড়িতে কেউ নতুন উঠলে সাধারণত জানলার পাশে বসে। প্রথম প্রথম গাড়িতে উঠার কারণে কিংবা গতি অসুস্থতার কারণে গাড়ির ঝাঁকুনিতেই এদের নাড়িভুঁড়ি গুলিয়ে যেতে থাকে। তারপর শুরু হয় উগলে দাওয়া, সারাদিন যা খেয়েছিল। বাচ্চাদের মায়েদের সারাদিন ধরে ঠেলাঠেলি করে খাওয়ানোটাই বৃথা যায়।

না না, তোমার ব্যাপারে আমি টা বলছি না। আমি জানি তোমার কাঁচের ওপাশের ব্যস্ত শহরের কলাহল দেখেতে তোমার ভালো লাগে। আমারও লাগে। মজার ব্যাপারটা হল কাঁচের এপাশ থেকে শহরের কোলাহল শোনা যায় না। ব্যাপারটা দেখতে অনেকটা মূকাভিনয়ের মত মনে হয়।

শাড়ী পড়ে আসতে বলেছিলাম পরোনি। কি যে বলব তোমাকে... নাহ, বললে কখনও পরো না। আবার হঠাত হঠাত করে কোন একদিন হয়তো শাড়ী পরে হাজির। তখন অবশ্য ঘুরেও তাকাতেও ইচ্ছে করে না। জানি না কেন। নির্লিপ্ততা জিনিষটা কেমন জানি, কোন কিছুতে কোন আগ্রহও থাকে না, আবার অনাগ্রহও থাকে না, একঘেয়ে। শাড়ী পরেছো কি পরোনি এইটা আর জিজ্ঞেস করলাম না। কখনও করিও নি। ইচ্ছে করে নি। বলার দরকার ছিল বলেছি, না পড়ল কি আর করা। যাকগে, এত সাতপাঁচ না ভেবে সামনে সুবোধ বালক এর মত বসে গেলাম। একেবারে হুট করে। জানি এটা এখন তোমার কাছে নতুন আর কিছু না। আগে অনেক অবাক হতে, এখন তো অভ্যস্ত। কটমট করে তাকিয়ে থাকবে জানি। দেরি টা সবসময় আমিই করি। কয় কোটি বার যেয়ে সরি, দুঃখিত এইসব বলেছি, সেটা লিখে রাখতে চাইলে দিস্তা দিস্তা কাগজ শেষ হয়ে যাবে মনে হয়। কিছুক্ষণ চুপচাপ দুজনই, রেওয়াজ মত। এর পর তুমি মুখ খুললে।
“এতো দেরি করলে কেন?”
“বললাম তো ব্যস্ত ছিলাম”
“তোমার ব্যস্ততা আমার জানা আছে।”
“তাহলে এক কথা বার বার জিজ্ঞেস করো যে?”
“এইভবে কতদিন থাকবা? একটু তো ঠিক হও। আর ২ বছর পর তো পাস করে বের হবা, চাকরি-বাকরি করবা।”
“এইসব আমাকে দিয়ে মনে হয় হবে না।”
“মানে! তো পড়াশুনা করো কেন? আমাকে বিয়ে করতে তো হবে!!”
“সৌদি যাব, খেজুর খাব আর উট চড়াবো”
বলতে বলতে হাহা করে হেশে উঠলাম। ওইদিকে তোমার মেজাজ যে সপ্তমে উঠছে তা বুঝার আর বাকি নেই। রাগ্লে কিন্তু তোমাকে অনেক সুন্দর লাগে। এই জন্যেই রাগাই।
“সেভ ও তো করোনি”
পুকুরের ওপাড়েতে ফজলুল হক হলের সাথেই একটা সেলুন ছিল। অখানেই ছিলাম। মনে নেই। কিচ্ছু মনে থাকে না।
“না মানে ব্যস্ত ছিলাম......”
“বহুত শয়তানি হয়েছে। এখন চল। খাওয়ার অর্ডার দিব।”
“খাব না।”
“পিটাব তোমাকে!!!”
“আচ্ছা চল”, আর রাগানো ঠিক হবে না। উঠে অর্ডার দেয়ার জন্যে কাউন্টারের সামনে গেলাম।

দুপুর হয়ে এসচে। লাঞ্চ করতেই হবে। ক্ষিধা নেই, তবু জোর করে খেতে হবে। হুজুরনীর মেজাজ চড়ে আছে। পার প্লেট একশো আশি। চাওমিন আর তিনটা আইটেম। বিফ, প্রন, ভেজিট্যাবল। দেখতে ক্যামন জানি। আঠার মত থকথকে। কর্নফ্লাওয়ার দিলে নাকি এমন হয়। মাথা ঘামাতে ইচ্ছে করে না। খেতে খারাপ না। তো আর চিন্তা কিসের।
বেশ নীরবে খাওয়া চলতে থাকল। কোন কথা নেই।
মুখে খাওয়া দিতে দিতে বার বার লক্ষ্য করছি। এখনও রেগে মনে হয়। মুখটা পুরা লাল হয়ে আছে।

খাওয়া শেষে কিছু না বলেই উঠে গেলে। বিল আগেই দেয়া হয়েছে। তো আমিও উঠে গেলাম। খাওয়া শেষ করা হল না। শহীদুল্লাহ হলের পুকুর পাড়ে বসে দাঁতভাঙা বুট চিবাতে চিবাতে খাওয়ার রুচিটাই নষ্ট হয়ে গেছে। পিছে পিছে হাটা ধরলাম। নিচে নেমে দেখি একটা রিকশাও ঠিক ফেলেছো! বাহ, ভালো তো!! কই যাবে রিকশা? কি জানি। কি যে হচ্ছে আমার দিন দিন। দেখা যাক রিকশা আমাদের দুজনকে কই নিয়ে যায়।

উঠে বসলাম দুজন। পূর্বপশ্চিমের হিসাবটাও মনে থাকে না। বেইলী রোদ একমুখী রাস্তা। সামনে দিয়ে বের হয়ে ডানেই মৌচাক মোড়। ওইদিকেই তো যাচ্ছে দেখি। নীরবতা ভালো লাগছে না। আমিই ভাঙি তাহলে। নাহলে মনে হচ্ছে লাশবাহী রিকশা।
“তা... ভালো আছো?”
“এতক্ষণ পরে?”
“কতক্ষণ পরে সেটা আসল কথা না, জিজ্ঞেস করাটাই আসল কথা”
“তুমি কেমন আছো”
“আমি আগে জিজ্ঞেস করেছি”
“যাও বলব না”
“আচ্ছা বলছি, জীবিত”
“অও, আমি তো মনে করেছিলাম যে লাশের সাথে কথা বলছি”
“মানুষ...”
“থাক থাক, আর বলতে হবে না......”

কথাটা শেষ করতে পারলো না মেধা। ডান পাশ থেকে একটা বাসের ধাক্কা লাগলো সজোরে। রিকশা ছিটকে পড়লাম সাথে সাথে। ফুটপাতের এক পাশে আছড়ে পরলাম। মাথাটা প্রচন্ড ভারি ভারি মনে হচ্ছে। নাকের উপর দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পরছে। দৃষ্টি ঘোলাটে। শুধু দেখা যাচ্ছে রাস্তায় একটা দুমড়ানো রিকশার পাশে একটা নিথর দেহ পড়ে আছে। আরও একটু দূরে রিকশাওয়ালা কাতরাচ্ছে যন্ত্রণায়। আশপাশ থেকে লোকজন দৌড়ে ছুটে আসছে। বাসটা নেই। চলে গেছে সাথে সাথে।
আর পারা গেল না। ঝপ পরে চোখের সামনে নামলো এক পশলা আধার।


ধড়মড় করে উঠে বসলাম।
আবার, আবার সেই স্বপ্ন। না, দুঃস্বপ্ন। ঘোরের মধ্যে কখন ঘুমিয়ে পরেছি জানি না। জ্বর নেই। শরীরে ঘাম দিয়ে জ্বরটা ছেড়ে গেছে। হাত-পা ঠাণ্ডা। গায়ের উপর একটা কাঁথা দেয়া। মা, এই মানুষটার উপর এই কারণেই রেগে থাকতে পারি না।

চারপাশে একটু চোখ বুলিয়ে নিলাম। আলো নেভানো, দরজা জানালা খোলা। কয়েল নিভে গেছে, ধোঁয়াও নেই ঘরে। খোলা দরজা-জানালা দিয়ে আবছা আবছা আলো এসে ঘরে পড়েছে। এখন সময়টা ভোর নাকি সন্ধ্যা বোঝা গেল না। কাঁথাটা সরিয়ে উঠলাম বিছানা থেকে। মাথা এখন আর ঘুরছে না। কিন্তু খিদে লেগেছে মারাত্নক আকারে। মনে হচ্ছে ফ্রিজসহ সব খেয়ে ফেলতে পারব।
রুমের দরজাটা খুললেই ডাইনিং স্পেস। মা বসা সেখানে। আমাকে দেখেই কথা না বলে ভাত আর তরকারি এগিয়ে দিলেন। রুই মাছের দোপেয়াজা আর লালশাক। অসময়ে এই খাবার আমার কাছে অস্বাভাবিক কিছু না। গোগ্রাসে গিলতে লাগলাম। অনেক খিদে পেয়েছে। মা গালে হাত দিয়ে সামনে বসা। কিছু একটা বলতে চাচ্ছেন মনে হয়। নাহ, কথা বলার কোন সুযোগ দেওয়া যাবে না। কথা শুরু হলেই কথা বাড়বে। বুদ্ধিমানের কাজ, কোন রকমে ভাত গুলি গিলে উঠে যাওয়া। খাওয়া শেষে পানি কোনরকম গিলে বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম। পেছনে তাকানো যাবে না। ঘাড় ঘুরালেই মায়ের জেরা শুরু। আগে মা-বাবা অনেক খবরদারি করতেন। এখন আর করেন না। আমার উপর তাদের সব আশা শেষ। ঘরে যে ঢুকতে দেয়, এইটাই বেশী।

বাইরে গিয়ে দেখলাম ভোর না, সন্ধ্যা। চারদিক ইতিমধ্যে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে গেছে। শীত পড়েছে ভালো। চাদরটা আনা হয়নি। আনতে ইচ্ছে করছে না। ল্যাম্পপোস্টের সোডিয়াম আলো গুলি জ্বলে উঠেছে। তার অবশ্য দরকার ছিল না। ভরা পূর্ণিমার আলোয় চারদিক এমনিই আলোকিত। আজকে কি মাঘী পূর্ণিমা নাকি! মাসেরও তো ঠিক মত হিসেব রাখা হয় না। এরকম অদ্ভুত ছেলেটার সাথে তুমি সম্পর্ক করেছিলে কি করে কে জানে। যেই পূর্ণিমাই হোক না কেন, ফানুশ উড়াতে ইচ্ছে করছে অনেক। ফানুশ বানিয়ে বানিয়ে একটা একটা করে যদি আকাশে ছেরে দিতে পারতাম, সেই সাথে তোমাকে ঘিরে থাকা চিন্তা গুলি। প্রতিবার ঘুমাবার সময়েই একই দুঃস্বপ্ন দেখি।

এভাবে আর কতদিন! আমার ও তো জীবন বলে কিছু একটা আছে, নাকি! আশে পাশে আমার বয়সী ছেলেগুলিকে দেখি কত প্রাঞ্জল। আমারও তো ইচ্ছে করে ওদের মত করে থাকতে। কিন্তু পারছি না। তুমিই তো থাকতে দিচ্ছো না।
নাহ, এর একটা বিহিত করতেই হবে। পাগলামো তো এপর্যন্ত কম করিনি। আজকেও না হয় একটু করলাম।

হাটতে লাগলাম খেলার মাঠটার উদ্দেশ্যে। অনুমান সত্যি হয়ে থাকলে ওখানে সবাই মিলে ফানুশ উড়াবে। আর না হলে কি আর করা। ব্যাক্কলের মত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফ্লাড লাইটের আলোয় ফুটবল খেলা দেখবো আর কি।

মাঠটার কাছে যেতে না যেতেই দেখি এক উৎসবের আমেজ। অন্ধকারেও ঢিল মারলে মাঝে মাঝে তাহলে লাগে। আজ সত্যিই মাঘী পূর্ণিমা তাহলে! বৌদ্ধ ধর্মের কেউ তেমন না থাকলেও ফানুশ উড়াতে সবাই আসবেই। ওই যে, পুজা মন্ডপেও তো সবাই প্রসাদ খেতে যায়। ওইরকমই আর কি ব্যাপারটা।

মাঠে ঢুকতেই মাঝারি উচ্চতার গাঁট্টাগোট্টা একটা ছেলে দৌড়ে এলো।
“ আরে, নাহেজ ভাই!! আপনে দুই তিনদিন পর পর কইত্থে উড়াল দিয়া আসেন?”
“বাসা থেকে”, বললাম, নির্বিকার ভাবে।
“হওও, বললেই হইলো, আপনার বাসায় দৌড়াদৌড়ি করতে করতেই তো ওজন অরধেক হয়ে গেল।”
“দেখে তো মনে হয় আর বাড়তেসে”
“মজা নিয়েন না তো!! তো নাহেজ ভাই”
“হুম”
“ফানুশ উড়াবেন নাকি?”
“আসলাম তো এই জন্যেই”

শুনে মনে হল ছেলেটার মাথায় ঠাডা পরসে। চোখ হয়ে গেল টেনিস বলের মত। কারণ টা অবশ্যই বুঝা গেল না। বুঝার চেষ্টাও নেই। ছেলেটা গলা নিচু করে বলল,
“ভাই, মাল টাল কিছু খাইছেন, নাকি মাল খাওয়া ছাড়ছেন ?”
“কি কয়?”
“আপনেরে কদ্দিন পর কোন কিছু জিজ্ঞেস করার পর এককথায় রাজি হয়ে গেলেন, আপনি জানেন?”
“নাহ, দিন তারিখ মনে থাকে না আমার।”
“আসেন মিয়া, একটা কথা বলছেন, তাও কত্তোদিন পরে... এক্ষণই ব্যবস্থা করতেসি”

বলে ছেলে দৌড়। দৌড় প্রতিজগীতায় শেষের দিন দিয়ে ফার্স হওয়ার কোন কম্পিটিশান হলে এই ছেলে নিশ্চিত প্রাইজ পেতো, আমি লিখে দিতে পারি। দৌড়ে গিয়ে মাঠের মধ্যখানের জটলার মধ্যে গিয়ে আমাকে দেখিয়ে বাকিদের সাথে কি জানি সলাপরামর্শ করতে লাগলো। এদিন থেকে শোনা যাচ্ছে না কিছু। মাঝে মাঝে শুনলাম গলা উঁচিয়ে কথা বলতে। কথা শেষে আবার বিশাল বপু নিয়ে আমার সামনে হাজির। এইটুকু দৌড়াতেই তার জান অরধেক হয়ে গেছে। মুখ হা করে বড় বড় নিঃশ্বাস নিতে নিতে বলল,
“ভাই ব্যবস্থা হইছে, যতখুশি উড়াইবেন”
“একটা হলেই চলবে”
“একটা উড়াইয়া কি হবে! সবাউ একসাথে উড়ামুনে।”
“আচ্ছা। তোর কাছে মাঞ্জা সুতা আছে না?”
“মাঞ্জা সুতা দিয়া করবেন কি?”
“থাকলে নিয়ে আয়”

আমার ব্যাপারে এলাকার ছেলেদের ধারনা আছে। আমার উদ্ভট কাজ গুলি তারা খুব আনন্দ নিয়েই দেখে। তো সে দেরি না করে আবার দিল দৌড়। এই বার বাসার দিকে। ভাগ্য ভালো। আমার না অবশ্য। ওই ছেলের। বাসাটা গেট দিয়ে বেরুলেই। নাহলে মনে হয় স্ট্রেচারে করে হাস্পাতাল নাওা লাগত। বলা তো যায় না। যে ভাবে দৌড়াদৌড়ি করেতেসে, পাছে যদি আবার স্ট্রোক করে?
যাই হোক। কিছুক্ষণ পরে সে নাটাই সহ মাঞ্জা সুতা নিয়ে হাজির।
“কই নাহেজ ভাই! নেন”
“হুম”
“আসেন, ওইদিকে ফানুশ বানাইতেসে, একসাথে বানাই।”
“চল”

গেলাম মাঝখানে। মিন্টু ভাই, শাহীন ভাই, রানা, জিকু এরাও দেখি আছে। আমাকে দেখে একটু অবাক হলেও খুশি খুশি ভাব করে হাত, কাধ মিলালো। অবাক হওয়ারই কথা। কতদিন পর পর যে এখানে আসা হয়, অথচ আগে প্রদিন খেলাধুলা আর আড্ডলাবাজি চলতো সমান তালে। এখন আর হয় না। সবাই আগের মতই আছে। মিশুক, আন্তরিক। আর আমি, আমি এখনও সেই মৌচাক মড়েই পড়ে আছি।

একটা একটা করে বানিয়ে বানিয়ে উড়ানো শুরু হল ফানুশ। দুইটা কিছুক্ষণ উড়তেই জলে নষ্ট হয়ে গেল। আর বাকি গুলি পূর্ণিমার সেই একলা চাঁদকে সঙ্গ দিতেই যেন উড়ে উড়ে ভেসে ভেসে এতে লাগলো।
অদ্ভুত সেই পূর্ণিমার চাঁদের সঙ্গি হয়ে ফানুশ গুলি যেন আকাশের গায়ে নকশি কাথার মত নকশা হয়ে গেঁথে যেতে লাগলো।
আর দুইটা বাকি। আমি নাটাই থেকে মাঞ্জা সুতা পুরোটা খুলে একটাতে পেঁচালাম। সবাই তখন অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে। মানুষ ঘুড়ি উড়ায় মাঞ্জা সুতা দিয়ে আরেক ঘুড়ির সুতা কাটার জন্যে , আমিই বা কেন মাঞ্জা সুতা ফানুশে বাধছি!! এইখানে তো আর ফানুশ কাটার কোন খেলা নেই।

দেখতে দেখতে আরেকটা ফানুশ ও ওরা উড়িয়ে দিল। তর তর করে উঠে যেতে লাগলো সেটা। এইবার শেষের টার পালা। বা হাতে রঙ নিয়ে ফানুশটার গায়ে সুন্দর করে তোমার নাম নিখে দিলাম। অনেক স্পষ্ট করে লিখা “মেধা”।
অন্য হাতে সুতা। সবাইকে বললাম উড়িয়ে দিতে। উনারা ব্যাপারটা তেমন আমলে নিল না। নিওার কথাও না। আমিও তো এইসব নিয়ে কম হাসাহাসি করিনি।

উড়িয়ে দেওা হল শেষ ফানুশটাও। হালাকা করে সুতায় টান পরতে শুরু করেছে। আমিও হাল্কা করে ছাড়তে লাগ্লাম সুতা। সবাই আমার কান্ড দেখা শুরু করল। একবার ফানুশটার দিকে তাকায় আরেকবার আমার দিকে। যেন উন্মুক্ত মঞ্চের পারফর্মার আমি। অবশ্য সবাই এই দুনিয়ার মঞ্চের পারফর্মার। ডিরেক্টর তো বিধাতা নিজেই।
হাতে হাল্কা হাল্কা খোঁচার মত লাগা শুরু হয়েছে। শুতার কাচের চূর্ণ হাতে ঘষা খাচ্ছে। যত সময় যাচ্ছে সুতার কাঁচের চূর্ণ হাতে দাগ কেটে যাচ্ছে।

কেটে গেলে যাক। আজ এই ফানুশ এর সাথে তোমাকে উড়িয়ে দিতে এসেছি। আর কত দিন বল? আশেপাশে কাউকেই দেখো না কত শান্তিতে আছে! সবাই কত সুন্দর স্বাভাবিক দিন কাটাচ্ছে!! তাহলে আমি কি দোষ করলাম!!! আমাকে কেন এভাবে শাস্তি দিচ্ছ!!!!

সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে হঠাত হাতে একরকম শীতল স্পর্শ অনুভব করলাম। খুব চেনা চেনা লাগছে।
আহা! কত দিন সে কোমল হাতের স্পর্শ পাইনি। সাথে সাথে ডান পাশে ঘার ঘুরালাম দেখার জন্যে। তাকাতেই মনে হল মাথায় একটা বিস্ফোরণ ঘটলো। গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো।

একি! তুমি!!
তুমি কে!! কোত্থেকে!!!

সত্যিই কি তুমি?? নীল শাড়ীতে, হাতে নীল চুড়ি। করুণ এক দৃষ্টি, অনেক মায়া কাড়া।
আচ্ছা, ওইদিন কেন এলে না এভাবে? কি হতো আসলে? যাক আজকে তো এলে। কিন্তু তোমার সেই চিরাচরিত চাহনি আর নেই আজ। জানো তুমি রেগে গেলে কত সুন্দর লাগে তোমাকে? ইচ্ছে করেই তোমাকে রাগাতাম আর মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকতাম। আজ তোমার চাহনিটা একটু অন্যরকম। ছলছল করছে চোখ দুইটা। এতো মায়া এতদিন কই ছিল?
কিন্তু... কিন্তু তুমি তো নেই!!!! কোত্থেকে এলে!!!!! নাকি এ কোন নতুন দুঃস্বপ্ন!!!!!! আমাকে কি তুমি মুক্তি দিবে না!!!!!! আমারও তো ইচ্ছে করে আট দশ জনের মত বাঁচতে!!!!!

“নাহেজ! নাহেজ!!”,“নাহেজ ভাই! নাহেজ ভাই!!” সবাই ডাকাডাকি করতে লাগলো। সুতার কাঁচের চূর্ণয় হাত থেকে রক্ত পড়ছে। কয়জন এসে ছাড়াতে চাইল। কিন্তু আমার হাত শক্ত করে মুঠি করা। আবার ফানুশটা সুতায় টান লেগে ঝাঁকি খেয়ে পুড়ে পুড়ে নিচে পড়তে লাগলো। কেউ বিরক্ত, কেউ বিস্মিত।
কিন্তু আমার সেদিকে খেয়াল নেই। আমি ঠায় দাড়িয়ে আছি রক্তাক্ত হাতে সুতা ধরে। ডান দিকে ঘাড় ঘুড়িয়ে। কিন্তু তুমি আর সেখানে দাড়িয়ে নেই।

নিজে যখন ইচ্ছে হয় আসো, যখন ইচ্ছে হয় চলে যাও।
কিন্তু আমাকে তুমি আর ছাড়লে না। আমাকে বাধ্য করছো ঘোরের পথে দুঃস্বপ্নের দেশে হেঁটে যেতে।
এটা তো স্বপ্ন হবার কথা ছিল, দুঃস্বপ্ন কেন হল?
জানি না। কিছুই জানি না।

সব কিছু জানতেই হবে, এমন কোন কথা নেই।
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×